somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বৈতসময়- প্রতিস্বরের শুরু - ০.১

০৬ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যু মানুষের মত বিছানায় শরিরটা পরে আছে। বিছানা থেকে কোন ভাবেই শরিরটা তুললে পারছে না হাসান সাহেব। মদ খাওয়ার অভ্যাস নেই গতরাতে শাহ-এমরান জোর করে খাইয়েছে মনে হচ্ছে একটু বেশি খেয়ে ফেলেছেন একটু না অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছেন। মদ শরির জন্য ক্ষতি এটা উনি জানেন তাই মদ খাওয়ার অভ্যাস কখনও হয় নি। শাহ-এমরান উনার বন্ধু প্রায়দিনই মদ খান, না খেলে নাকি উনার ভাত হজম হতে চায় না, শরির খারাপ লাগে অথচ মদ খেলে লিভারের উপর প্রচন্ড চাপ পরে অন্যান্য ক্ষতি তো আছেই। হাসান সাহেবকে প্রায় ডাকেন মদ খাওয়ার সময় আড্ডা দিতে উনি কখনই যান না আর গেলেও এস ব খেতে বসেন না, তবে মাঝে মধ্যে খুব জোরাজোরি করে তখন বাধ্য হয়ে অল্প একটু পান করেন। মিসেসঃ হাসান মদ খাওয়া একদম পছন্দ করেন না। কোনভাবে যদি বুঝতে পারেন হাসান সাহেব মদ খেয়ে ঘরে এসেছেন তাহলে সেদিন আর বেডরুমে জায়গা দেন না।
আজ হাসান সাহেবের বাসায় কেউ নেই, ফ্যামিলির সবাই দুইদিন আগে শশুড় বাড়ি বেড়াতে গেছেন। উনার মামা শশুড়ের মেয়ের বিয়ের অনুষ্টানে। ছোট ছেলেটা যাওয়ার সময় খুব কান্নাকাটি করেছে। বাবা সাথে যাচ্ছে না তাই তার খুব মন খারাপ। মন খারাপ হলে বাচ্চারা কান্না করে প্রকাশ করে দেয় বড়রা চাপিয়ে রাখতে পারে শত মন খারাপের মাঝেও হাসতে পারে, এই গুনটা মনে হয় শুধু পুরুষ মানুষের আছে, মেয়েদের আছে নাকি থাকতে পারে আমার মনে হয় আছে। বড়টার বয়স ১৭ বছর ওর তেমন কোন ফিলিংস হাসান সাহেব বুঝতে পারে নি হ্যাপি না কি স্যাড চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই। মানুষের চেহারা দেখে মাঝে মধ্যে বোঝা যায় কিন্তু কিইছু মানুষের চেহারা দেখে বুঝা যায় না। এই ছেলেটা হয়েছে সেই রকম কিছু বোঝা যায় না। হয়তো বাবা সাথে গেলে ইচ্ছে মত ঘুরতে পারবে না, যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারবে না তাই এই ভেবে খুশি বাবা যাচ্ছে না এখন মন মত সব করতে পারবে পুরো স্বাধীন কিন্তু বউয়ের খুব মন খারাপ। বার বার বলছিল সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু যাওয়ার সুযোগ নেই অফিসের গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন আছে। উনাকে ছাড়া আবার অফিস অচল প্রায় এ কথা উনার বস লতিফউদ্দিন সাহেব বলেন।
লতিফ সাহেব একটু লগ চড়া টাইপের মানুষ যা একবার বলবেন সেটাই যেন স্বর্নকারে লিখা হয় যায় শত চেষ্টা করেও কেউ মুছতে পারে না, বিস মানুষ উনার মুখের উপর কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তবে রেজাউল চট চট করে কিছু কথা বলে ফেলেন সেজন্য লতিফউদ্দিনের চোখে রেজাউল খারাপ কিন্তু রেজাউলকে কিছু বলতে পারে না কারণ এমডি স্যারের কাছের লোক উনি । যখন ছুটির আর্জি নিয়ে হাসান সাহেব লতিফউদ্দিনের কাছে যায় তখন উনি সোজা বলে দিলেন—
-আপনি তো জানেন আপনাকে ছাড়া তো স্বপ্নতরী গ্রুপের প্রজেক্টটা করা কতটা অসম্ভব কাজ হবে আবার মেঘনা ইন্ডাস্ট্রির প্রেজেন্টেশনটাও তো আপনাকে দিতে হবে সেই দিন। কাজগুলো কোম্পানির জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ বুঝতে পারছেন? কোম্পানিকে এতো বড় বিপদে রেখে ৬-৭ দিনের ছুটি চাচ্ছে একি হয় আপনিই বলেন?
-কিন্তু স্যার আমার ফ্যামিলি প্রোগ্রাম।
-পরে এক সময় গিয়ে দেখে আসিয়েন আমি আপনাকে ১০ দিনের ছুটি দিবো। এখন না প্লিজ।
হাসান সাহেব মন খারাপ করে ডেস্কে চলে আসলেন। কি আর করার Boss is Always Right. বসের কথা তো ফেলে দিতে পারেন না। সেদিন কাজে আর মন বসাতে পারে নি।
বাসায় খালি এটা শাহ-এমরান জানতো তাইতো দুই বোতল নিয়ে রাতে চলে এলো উনার বাসায়, সাথে চিপস, চিকেন কাবাব আরো কত আয়োজন। সারারাত আড্ডা দিবেন তাই আয়োজন করেই এসেছেন। রাতটা এখানেই থাকবেন। আড্ডাটাও হল অনেক বড় দুই বোতল মদ দুই বন্ধু মিলে খেয়ে একদম ফুললোড। হয়ে কখন ঘুমিয়েছে মনে নেই।
হাত-পা কাঁপছে বিছানা থেকে উঠতে গেলেই মাথা চক্কর দিচ্ছে কানের পাশে বোঁ বোঁ শব্দ করছে। হাত দুটোর উপর ভর দিয়ে বিছানা থেকে হালকা করে উঠে বসলেন হাসান সাহেব। পাশে শাহ-এমরান ছিল রাতে ওকে দেখা যাচ্ছে না, হয়তো সকালে উঠে বাসায় চলে গেছে। চারিদিকে চেঁচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছে এতো শব্দ তো হওয়ার কথা না। চোখে সবকিছু ঝাপ্সা দেখেছেন, দুইহাত দিয়ে চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকালেন, প্রায় ১২টা বাজে ঘড়িটা একটু অন্য রকম লাগছে অনেকটা পুরোনো দিনের ঘড়ির মত। এমন একটা ঘড়ি ছোট বেলায় উনার গ্রামের বাড়িতে ছিল। টিকটক শব্দ হতো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় শুনতে ভালই লাগতো। উনি শব্দ গুনে গুনেই ঘুমিয়ে পরতেন। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার অফিস বন্ধ তাই দেরি হলেও সমস্যা নেই। আস্থে আস্থে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেলেন, দরজা খুলে ভেতরে ডুকে দেখেন বারান্দায় চলে এসেছেন। কি ব্যপার ওয়াশরুমটা গেলো কোথায় আর এইটা কার ঘর? ঘরটা অপরিচিত। বারান্দার দরজা দিকে তাকালে বাহিরের খোলা উঠান দেখা যাচ্ছে ঠিক যেন ছোট বেলার গ্রামের বাড়িতে ছিল তেমনটা লাগছে। উঠান কুড়িয়ে ঝাড়ু ও এক পাতা ভর্তি টুকরি হাতে বারান্দার দরজা দিয়ে এক মহিলা ডুকছে বাড়ির ভেতরে হাসান সাহেবকে দেখে জিজ্ঞাসা করলো- ''পাপ্পু উঠেছিল, এতো দেরি করলি কেন? নামাজে যাবি না? আজ জুম্মাবার ভুলে গেছিস? যা গোসল করে আয় আমি নাস্তা দিচ্ছি''
হাসান সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন। এই মহিলা কে? পাপ্পু কে? এই নামে শুধু বাবা-মা, গ্রামের মানুষ ডাকত! শহরে কেউ এই নাম জানে না। গোসল/নামাজের কথা বলছে, কিন্তু এটা কার বাসা? মহিলার চেহারা ভাল করে দেখতে পায় নি চোখে এসব কিছু গোলাটে দেখেছে। চোখ কচলে আবার ভাল করে তাকিয়ে দেখে উনার মা'র মত লাগছে মহিলার চেহারা। চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন, বাড়ির দেয়ালগুলো মাটির, নিচে খড়ের ছাউনি দেওয়া উপরে টিন দেওয়া ছাদ বৃষ্টির পানি ও গরম ব্যালেন্স করতো গ্রামে এভাবে, কাঠের জানালা। সব কিছু পুরোনো পুরোনো লাগছে যেন উনি হুট করে ছোট বেলায় এসে পড়েছেন তিনি। মাথা ঝাঁকি দিয়ে ঘোর কাটানোর চেষ্টা করলেন, কিছুই হল না সব আগের মতই আছে। শরীর ঝিম ঝিম করছে, মাথাটাও ভারি লাগছে। তিনি চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় পা বাড়ালেন চশমাটাও সাথে নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন—এটা তার শহরের আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট নয়, গ্রামের পুরোনো বাড়ি। বাতাসে ভেসে আসছে ধানক্ষেতের সুঘ্রাণ, নারকেল গাছের মাথায় ঝুলে থাকা ডাবের সারি, বাড়ির ঘাটায় দেখা যাচ্ছে বাঁশের সাঁকো, সবকিছুই চেনা-পরিচিত —
এই বাড়িটা তো..

চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৫১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×