ফোর্ট হুড হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে পরের খবরে বলা হয়, আল আওলাকি নাকি তার ওয়েবসাইটে সন্দেহভাজন হত্যাকারীর তারীফ করেছেন। তিনি নাকি ওয়েবসাইটে বলেন, নিদাল জামান হচ্ছেন একজন বীর নায়ক। আল আওলাকি নাকি আরো বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনীতে ঐ সমস্ত মুসলমান কাজ করার যোগ্য যারা নিদাল ২৮ সালের মতো দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করবেন এবং প্রয়োজনে নিদাল হাসানের পদাংক অনুসরণ করবেন।
আল আওলাকি এই মর্মে দুঃখ প্রকাশ করেন যে, মার্কিন মুসলিম সংস্থাগুলো প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সুরে সুর মিলিয়ে নিদালের নিন্দায় মুখর দেখা যাচ্ছে। আওলাকি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথা পাশ্চাত্যে রাষ্ট্রীয় বিধিনির্দেশ ও কর্মব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা বর্তমানে মুসলিম জনগণের জন্য ক্রমশ দুঃসাধ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। পশ্চিমারা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের গরজে মুসলমানদের এমন সব কাজকর্মে অংশ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছে, মুসলমানের ন্যায়বোধ ও বিবেকের তাড়নায় যা সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমেরিকা ও পাশ্চাত্যে ইসলাম বৈরী পরিবেশে মুসলমানের বসবাস ক্রমশ দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে বলেন আওলাকি।
আল আওলাকি কোনো উপেক্ষণীয় ব্যক্তিত্ব নন। ভর্জিনিয়া গ্রেট ফলে দার আল হিযরাহ মসজিদে স্বল্পকাল তিনি ইমামতি করেন।
বলা হয়, ঐ সময় ২০০১ সালে নিদালের মায়ের জানাজা অনুষ্ঠান তিনিই সম্পন্ন করেন। ইউকের কয়েকটি সুখ্যাত ইসলামী সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েকটি সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার জন্য আওলাকিকে দাওয়াত দেয়া হয়। এবং বলা হয় ১৯৯০ দশকের শেষ বছরগুলোয় অত্যন্ত জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে গণমঞ্চে তিনি আবির্ভূত হন। আজকের দিনেও বৃটেনের বিভ্রান্ত তরুণ মুসলিম সমাজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী সৃষ্টির তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন।
তখনকার দিনে আওলাকি সুবিবেচক ব্যক্তি স্বরূপ গৃহীত ছিলেন। তার বক্তব্যে চরম পন্থার আবাস সেদিনগুলোয় অনুপস্থিত ছিল। ৯/১১ আক্রমণকান্ডের পর ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অত্যন্ত পরিচিত ও যুক্তিশাসিত ভঙ্গীতে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী আল আওলাকি তুলে ধরেছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা বলেন, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসী যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আওলাকির বিশ্বদর্শনে আমূল রূপান্তর সূচীত হতে দেখা যায়। ২০০৪ সালে তিনি ইয়েমেনে চলে যান এবং ২০০৬ সালে তাকে ১ বছরের বেশি সেখানে কারাদন্ড বরণ করে নিতে হয়- যদিও কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে খাড়া করা হয়নি।
পাশ্চাত্যে সহিংসতার পথে মুসলিমদের প্ররোচিত করায় আওলাকির প্রভাব যেভাবে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন সেই প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার সমুচিত মোকাবেলার জন্য মুসলিম আলেম ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বনের ধারায় মুসলিম জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার স্বার্থে জোরালো ভূমিকায় ময়দানে নামা উচিত। বর্তমানে কানাডার বাসিন্দা সুবিখ্যাত ইসলামী পন্ডিত ডক্টর জামাল বাদাবি পোর্টহুড হত্যাকান্ড সম্পর্কিত আওলাকির বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গীর কঠোর বিরোধিতা করেছেন।
আল কুরআন ও সুন্নাহর কারণবিহীন শক্তি প্রয়োগের ঘোর বিরোধিতা করা হয়েছে। শুধুমাত্র নিপীড়ন প্রতিরোধে ও আগ্রাসনের মুখে আত্মরক্ষার গরজে শক্তি প্রয়োগের অনুমোদন রয়েছে। শান্তিপূর্ণ জনগণকে বিশ্বাসঘাতকের ভঙ্গীতে আঘাত হানা ইসলামের আহবান নয়। পিঠে ছুরিকাঘাত মুসলিম চরিত্রের বিরোধী কাজ। মুসলমান শহীদ হয় সম্মুখ যুদ্ধে।
একাধারে শান্তিকামী এবং সত্য ও ন্যায়ের জন্য শহিদ হতে প্রস্তুত মুসলিম চরিত্রের মর্যাদা সম্মুন্নত রাখার মহতী আহবান ধ্বনিতে হয় গত মাসে সৌদি আলেম সালমান আল উদাহ্য়ের কণ্ঠে। তিনি তার আহবানে আলকায়েদার নিন্দা জানান। দুঃখের বিষয় যে, ২০০৭ সালের শুরু থেকে শেখ ইউসুফ আল কারদাবির মতো ইসলামী ব্যক্তিত্বের বৃটেনে প্রবেশ সে দেশের সরকার নিষিদ্ধ রেখেছে।
বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্তে তাড়না রয়েছে সেখানকার ইসরাইল সমর্থক লবির। এর আগে বরাবর বৃটেন ভ্রমণে গিয়ে এই বিশ্বখ্যাত আলেম সেখানকার মুসলমানদের সব ধরনের অকারণ সহিংসতা থেকে বিরত থাকার এবং নবপ্রজন্মকে উত্তম শিক্ষা দানে সমুন্নত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার উপস্থিতি ও বক্তব্য উপস্থাপিত ও প্রচারিত হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
আল-আওলাকির উগ্র বক্তৃতাবিতরণ এবং ইউকে জুড়ে নতুন উদ্যমে শুরু ম্যাকাথীয় তল্লাশি ও ধরপাকড় তথা ত্রাস সৃষ্টির পটভূমিতে এই মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজন ছিল মুসলিম বিরোধী প্রচারণার উপযুক্ত জবাব দেয়ার যোগ্য ইসলামী বিজ্ঞ ও আলেম ব্যক্তিত্বদের বৃটেনে আগমন সুগম করা এবং শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানমূলক পরিবেশ রচনায় তাদের সহায়ক অবদান বরণ করে নেয়ার। ম্যাকার্থিজমের এই নতুন মত্ততা অবশ্যই প্রতিহত হতে হবে। সিবিএস-এর প্রখ্যাত সাংবাদিক এডওয়ার্ড আর মারোর অনুসন্ধানী তৎপরতায় ম্যাকার্থিজমের কার্যে স্বরূপ এর আগে বিশ্ববাসীর দেখার সুযোগ হয়েছে।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলেই মুসলিম সমাজ তাকে প্রমাণিত বল মেনে নেবে না। অভিযোগের বস্তুভিত্তি তুলে ধরতে হবে। মুসলিম জনগণের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
মুসলমানের সুদীর্ঘ ইতিহাস হচ্ছে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে অটুট-নির্ভীক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। যাত্রা শুরুর প্রথম দিনটিতে আচারিত ধর্মানুষ্ঠান এবং গৃহীত জীবন ও জগত দৃষ্টি ইতিহাসের উত্থানপতনের ধারাবাহিকতায় অক্ষুণ্ণ রাখার সংগ্রামে মুসলমান সমাজ অনন্য ও অনবদ্য সাফল্য কায়েম করে রেখেছে ও কায়েম করে চলেছে। এবং কায়েম করে যাবে জীবন বাজি রেখে।
-ইসলাম অনলাইন অবলম্বনে