somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।। রেজা ঘটক

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ শান্তিপ্রিয়, সম্প্রীতি, সহমর্মিতা আর পারস্পরিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে নিজ নিজ কর্মই সাবলম্বী হবার পাথেয়। বিশ্বাস করে নিজ নিজ ধর্ম পালন এবং অপরের ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাই মানবতা। বিশ্বাস করে উৎসবে অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা সহমর্মিতা পারস্পরিক অংশগ্রহন। বিশ্বাস করে যদু মধু রাম শ্যাম রহিম করিম জোসেফ রিচার্ড ফুলবানু নূরজাহান কুলসুম শর্মিলা উর্মিলা পারুল মারিয়া গুলকেতিন সবাই এক টুকরো বাংলাদেশের বাসিন্দা। আইনের প্রতি বাংলাদেশের সাধরণ মানুষ সব সময়ই শ্রদ্ধাশীল। সকল ভাল কাজের প্রতি সব সময় সহানুভূতিপূর্ণ এবং সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অভ্যাস। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পারস্পরিক লেনদেন আদান প্রদান অনুষ্ঠান আচার উৎসবে পরস্পর পাশে দাঁড়াতে অভ্যস্থ।
কিন্তু বাংলাদেশে এই সহ-অবস্থানের মধ্যেও অত্যন্ত সুকৌশলে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন গড়ে উঠেছে। সেই রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন দুষ্টু ঘোড়ার মত ঘাড়ের উপর বড় হয়েছে। সেই দুষ্টু চক্রের ভয়াল থাবার নিচে বারবার এদেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। তীল তীল করে গড়ে তোলা সহায়-সম্পদ হারিয়েছে। বাড়িঘর হারিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হল নিজেদের জীবনও হারিয়েছে। মায়ের বুক খালি হয়েছে। সন্তান তার বাবা হারিয়েছে। বোন তার স্বামী হারিয়েছে। ভাই তার বউ হারিয়েছে। নির্যাতন হয়েছে আমার অবুঝ মা বোনের উপর। অত্যাচার হয়েছে আমার অবুঝ বাবা ভাইয়ের উপর। মা বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। বাবা ভাই হয় জীবন হারিয়েছে নয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এসবই হয়েছে কেবল রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের দুষ্টু চক্রের ভয়াল থাবায়।
একটি দেশে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন তখনই বিস্তার লাভ করে যখন সেই দেশে কার্যকর নেতৃত্বের অভাব থেকে যায়। কার্যকর নেতৃত্বের অভাবে সেখানে গড়ে ওঠে খুশি করার তোষামোদি নেতৃত্ব। তোষামোদি নেতৃত্ব তোষামোদের খপ্পরে পড়ে বাস্তবের সমাজ চিত্রের ধাবমান সারবস্তু পড়তে পারে না। তোষামোদের নেকড়ে বলয়ে থেকে সেই নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের হৃদয়ের ভাষা বুঝতে পারে না। ফলে তোষামোদি নেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে তৈরি হয় একটি বিশাল গ্যাপ। এই গ্যাপ সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর থেকে তোষামোদি নেতৃত্ব পর্যন্ত এতোটা দূরত্বের যে সেখানে আসল খবর পৌঁছানের কোনো কার্যকর ব্যবস্থাপনা থাকে না। তোষামোদি নেকড়ে বলয় সেই ব্যবস্থাপনায় এমন সব ছলছাতুরি অনুসঙ্গ তৈরি করে রাখে যে নানামুখী জটিল দুষ্ট সমীকরণের যজ্ঞ থেকে গোটা ব্যবস্থাপনা তখন সেই দুষ্ট বলয় থেকে বেড়িয়ে দুঃসাহসী হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা দেখাতে পারে না। বরং সেই ব্যবস্থাপনা তখন তোষামোদি নেকড়ে বলয়ের দুষ্ট জটিল ধাধার খপ্পরে হাবুডবু খায়।
তোষামোদি দুষ্টু বলয়ের প্রধান হাতিয়ার হল মেধা ও মননের প্রতি সর্বদা অসম্মান প্রদর্শন। পরিবর্তে সেখানে তারা এক মেধাহীন অসার তোষামোদি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। আসল মেধার প্রতি অবিচার করে, নানাভাবে নাজেহাল করে, সেখানে বরং অসৎ অসার নমনীয় আর চাটুকরী ব্যবস্থপনার বলয় গড়ে তোলে। সেই দুষ্টু বলয়ে যদি কেউ দুঃসাহসী হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চালায় তখন তাকে নানা মিথ্যা কল্পকাহিনী গুজব আর নষ্টামীতে জড়িয়ে এমনভাবে নাকানি-চুকানি করা হয় যে, সেই দুষ্টু বলয় থেকে এক সময় সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কাজের প্রতি সহনশীল, এবং মানুষের সবচেয়ে বড় যে ধন, বিবেক, সেই বিবেকের অপমৃত্যু হয়। মানুষের বিবেকের মৃত্যু মানে তাকে দিয়ে তখন যা খুশি তা করানোর কাজটি ওই তোষামোদি দুষ্টু বলয় নিজেদের স্বার্থে করিয়ে নিতে পারে। তখন সেখানে সৃষ্টি হয় এক ভয়ংকর অসততার মিথস্ক্রিয়া। সেই অসৎ মিথস্ক্রিয়া মানুষকে বিবেকশূন্য করে দেয়। তখন তার মধ্যে তৈরি হয় লোভ আর লালসা। সেই লালসাকে উসকে দিয়ে তখন সেখানে আস্ফালন করে নীতিহীন সব কার্যকলাপ। তখন দুর্নীতি, ঘুষ, অর্থ সম্পদ লুটপাট, অবৈধভাবে অর্থ কামাই ইত্যাদি হয়ে ওঠে সেই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকগুলোর একমাত্র আখেরি কার্যকলাপ। সেই সীমাহীন নৈরাজ্যে তখন তোষামোদি নেকড়ে বলয়ে আসল নেতৃত্বকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নেতৃত্ব তখন হয়ে যায় চাবি দেওয়া পুতুলের মত একটা নিরেট প্রতিচ্ছবি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সেই পুতুলের কোনো সত্যিকারের যোগাযোগ থাকে না। তোষামোদি দুষ্টু বলয় যখন যা যেভাবে নির্ধারণ করে, তাই বিশ্বাসে নিয়ে তখন আসল নেতৃত্ব হাবুডুবু খায় আর অসহায়ভাবে তা পালন করে অনেকটা দায় সারার চেষ্টা চালায়। সেই নেতৃত্বে তখন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না। কারণ, সেখানে তোষামোদি নেকড়ে বলয় ঘোলাজলের শিকার হাতছাড়া করার ব্যাপারে থাকে হায়ানার মত সজাগ। সেই হায়ানার পাহারা ডিঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের ভাষা বা সমাজ চিত্রের নির্মম বাস্তবতা আসল নেতৃত্ব আর সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। এই যে দুষ্টু বলয়, এই যে রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন, এই যে অসৎ ঘূর্ণিচক্র এ থেকে স্বয়ং নেতৃত্বেরও আর বেড়িয়ে যাবার উপায় থাকে না। ফলে সেখানে তৈরি হয় প্রতিক্রিয়াশীল আরেকটা চক্র। সেই চক্রটিও একই নিয়মে বেড়ে ওঠে। ফুলে ফেঁপে সেই প্রতিক্রিয়াশীল চক্র একদিন যখন কামড় বসাতে চায়, তখন তৈরি হয় সংঘাত। সেই সংঘাত একটি অনিবার্য সমাজ বাস্তবতার ফলাফল।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, সংঘাত নিরসনের উপায় কী? তার আগে খুঁজতে হবে সমাজের কোন শ্রেণী পেশার মানুষ এই সংঘাতের জন্যে দায়ী। ঘূর্ণিঝড় কীভাবে সৃষ্টি হয়? বায়ুমণ্ডলের বর্তমানে সূর্য আর সমুদ্র একটা লেনদেন খেলা করে। সেই খেলায় জল হল হাতিয়ার। সূর্য জল চুষে নিয়ে সমুদ্রের উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় বলয়ে একটা শূন্যতা সৃষ্টি করে। সেই শূন্যতা পূরণে বায়ুমণ্ডল খুব আবেগী সাড়া দেয়। শূন্যস্থান পূরণে বায়ুমণ্ডলের আবেগী সাড়া দেবার ধরন এবং মাত্রার উপর নির্ভর করে ঘূর্ণির আচার আচরণ। ঘূর্ণির সেই আচার আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে সূর্য। সূর্য সেই আচার আচরণে খুশি থাকলে খেলাটা জমে না। কিন্তু একবার যদি সূর্য অখুশি হয় আর সেই ঘূর্ণির আচরণে শঙ্খ বাজিয়ে দেয়, তো আর কথা নেই। সমুদ্র তখন ঘুম ভেঙ্গে গর্জন করে ওঠে। শাসাতে চায় সূর্যকে। শুরু হয় শক্তি পরীক্ষা। বায়ুমণ্ডল তখন সূর্য আর সমুদ্রের দু'জনেরই হাতিয়ার। ধরো অস্র, চালাও গুলির মত অবস্থা। শুরু হয় ঝড়। শুরু হয় তাণ্ডব। এক সময় সমুদ্র আর সূর্য দু'জনে হাঁপিয়ে ওঠে। দু'জনেই পরস্পর বার্তা বিনিময় করে। সংযমি একটা অলিখিত চুক্তি হয়। এক সময় থেমে যায় ঝড়, থেমে যায় তাণ্ডব।
সমাজে যে বিষফোড়া বড় হয়েছে সে তো ছড়াবে। সেই বিষফোড়া ভেঙ্গে স্বাভাবিক করার চিকিৎসা কে করবে? অবশ্যই সেই দুষ্টু রাজনৈতিক বলয়। কীভাবে সেই দুষ্টু রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন সেই বিষফোড়ার চিকিৎসা করবে তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী বিষফোড়ার বেড়ে ওঠা বা তাণ্ডব। সেই চিকিৎসা কীভাবে হবে, কোন উপায়ে হবে, তা নির্ভর করছে তোষামোদি দুষ্টু বলয়ের কর্ম কৌশলের উপর। সেই কর্মকৌশল যতোক্ষণ না নিজেদের দায় মনে না করবে ততোক্ষণ বিষফোড়ার তাণ্ডব চলবে। চিকিৎসা কীভাবে হবে তা সেই দুষ্টু তোষামোদি বলয়ের চিকিৎসার ধরনের উপর নির্ভর করবে। সাধারণ মানুষ সেখানে বায়ুমণ্ডলের মত কেবলই হাতিয়ার। তার আসলে করার কিছুই নেই।
..... চলবে......
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×