somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত!!! চালানই উঠতো না!!!

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকার বাহাদুরের হাতে আছে তথ্য প্রযুত্তি আইন। কথা একটু ত্যারা ব্যাকা হলেই সেই আইনে হয়ে যাবে কঠিন শাস্তি!! কিন্তু লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এই বাণিজ্যিক হিরিকে আমার কোনো সায় নেই। আসাদুজ্জামান নূর সাহেবরা অনেক বড় সমাজ সচেতন সংস্কৃতসেবী। ওনারা চেতনা নিয়ে ব্যবসা করতে ভারী পারদর্শী। কিন্তু তাই বলে একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়েও ব্যবসায় নামতে হবে? আর সেই হুজুগে সরকার বাহাদুরও সায় দেবে এটা ভেবে মনে হচ্ছে, আসলে এই দেশে ব্যবসা আর হুজুগ এই দুইটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলেই আপনার বাড়ি গাড়ি বিলাসী জীবনযাপনে আর কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের জন্য কারা এই বিদেশি ভূতের আমদানি করল তা খতিয়ে দেখার সময় এখন। গিনেস একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তাদের নিশ্চয়ই বিমানের আসা যাওয়ার টিকিট, পাঁচ তারকা হোটেলে বিনা পয়সায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ইত্যাদি এই আয়োজকদের করতে হয়েছে। কিছু নামি-দামি তারকা শিল্পীদের জন্য একই রঙের পোষাক বানাতে হয়েছে। কিছু চা-কফি-হুইস্কি-খিচুরির পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে। কিছু লোককে কিছু নগদ নারায়নও দিতে হয়েছে। ব্যানার ফ্যাস্টুন টুপি পতাকা বানাতে কিছু খরচ গুনতে হয়েছে। নষ্ট রেডিওর মত কিছু নষ্ট সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করতে হয়েছে। মঞ্চ সায়মানা বানাতে কিছু খরচ গেছে। আয়োজকদের কিছু উপরি পকেট খরচের ব্যাপার আছে। সব মিলিয়ে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের ব্যবসাটা নূর সাহেব বেশ ভালোয় ভালোয় করতে পারলেন। এমন চেতনাধারী একজন মানুষকে সংস্কৃত মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে আজ থেকে জাতির গর্ব করা উচিত।
ইসলামী ব্যাংক থেকে মাত্র তিন কোটি টাকা নেওয়ার ব্যাপারটা না হয় নাইবা বললাম। এমন হুজুগে একটি রেকর্ডের পেছনে যখন একটি রাষ্ট্রও সরাসরি অংশগ্রহন করে, তখন বুঝতে হবে এই রাষ্ট্রের কোথাও কোনো নাটবল্টু একটু ঢিলা আছে। যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় তিন কোটি মানুষ দু'বেলা খাবার পায় না। যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় লাখ লাখ লোক বস্তিতে নিপিড়িত জীবনযাপন করে, যে রাষ্ট্রে এখনও প্রায় সারা দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার অবস্থা ভঙ্গুর, যে রাষ্ট্রের রাজধানী ঢাকায় এখনও কেবল যানজটের কারণে হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়, সেই রাষ্ট্র কিনা গিনেস বুকে নাম লেখাতে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইল! আহা দেখার মত দৃশ্য বটে।
গোটা মাস প্রচার বিজ্ঞাপন করা হল ২৬শে মার্চ সকাল ১১টায় লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। এত বড় একটা অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানের সময় জ্ঞান কত স্লো রে জব্বার!!! মাত্র ২০ মিনিট স্যার!! সঙ্গে ছাতা নেওয়া যাবে। বেশ ভালো কথা। এইবার ছাতা বন্ধ করার জন্য মহান ঘোষকদের সে কী আকুতি, না দেখলে বোঝানো যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমরা রোজ স্কুলে ক্লাশ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। নড়াচড়া পর্যন্ত করা যেত না। আর এরা দেখি জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে পারলে নৃত্য করে!!! একটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় কী কী করা যাবে না, এই বোধটুকু এখনো যারা শিখতে পারেনি, তাদের নিয়ে মহান নূর সাহেবরা একটা মস্তবড় রেকর্ড গড়লেন। আহা মরি মরি।
বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর প্রধান কাজ হল খারাপ মালকেও ভালো বলে প্রচার করে লোকজনকে তা ধরিয়ে দেবার একটা প্রাণান্ত চেষ্টা। সোজা বাংলায় যাকে বলে খপ্পরি। ধাপ্পাবাজি করেই এরা পরের টাকায় পোদ্দারি দেখায়। কিন্তু একটি দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর কিছু বিষয় থাকে যেমন মানচিত্র, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় দিবস, যেগুলো সেই দেশের মানুষ মাত্রই অন্তরে তা সগর্বে লালন করেন। তা নিয়ে যখন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ব্যবসা করার চিন্তা করেন, তখন বোঝা যায় এরা আসলে কারা!!! এরা আসলে চেতনার নামে একদল মুতসুদ্দি। ধর্ম ব্যবসায়ীদের চেয়ে এরা কোনো অংশে কম নয়। চেতনা ব্যবসায় এরা হাত পাকিয়ে এখন জাতীয় বিষয় নিয়ে ব্যবসা করার নতুন আইডিয়া বের করছে।
এদের ঘোমটার আড়ালের আসল চেহারা বোঝার কোনো উপায় নেই। কারণ এরা বড়ই ধুরন্দর টাইপের। এদের কথাবার্তায় কারো বোঝার উপায় নেই এরা কিসের মধ্যে কিসের ব্যবসা খুঁজে পান।
মাত্র একশো কোটি টাকা খরচ করে কে কত ব্যবসা করলরে কামাইল্যা!!! হেইডা মুই কইতে পারতাম না। মুই তো লাইনে খাঁড়ানোর আগেই কারবার শ্যাষ স্যার!! কস কি হারামজাদা, তুই না আজ ছুটি নিছিলি? স্যার, ছোডো মুহে এট্টা বড় কতা কমু? ক, কি কইতে চাস? স্যার, সোনার বাংলা নিয়ে ব্যবসা কিন্তু অনেক দিন ধইরাই চলতাছে। তয় মাইনষে খালি বড়োডা নিয়েই প্যাচাল পারে। হ বুঝছি, এখন তুই কামে হাত লাগা। আইজ মোর চালানই উঠতো না...
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×