এককথায় এই বাজেটে দুষ্টের লালন এবং শিষ্টের দমন পদ্ধতি অনুসরন করা হয়েছে। ঋণখেলাপীদের প্রতি এত দরদ, কালো টাকা সাদা করার জন্য এত সুযোগসুবিধা, এই বার্তা সাধারণ মানুষকে দুষ্ট হতে উৎসাহিত করবে। এমনিতে গোটা রাষ্ট্র দুর্নীতি ও অসততায় পরিপূর্ণ। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে খারাপ হতে উৎসাহিত করার জন্য এই বাজেটে যথেষ্ট ঘি ঢালা হয়েছে।
১. কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। আবার ভোক্তা বেশি দামে পণ্য কেনে। মাঝখানে মুনাফা ঘরে তোলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও দালাল-ফরিয়ারা। বাজেটে এই চরম বৈষম্য প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নাই। তার মানে কৃষক মরলে, সাধারণ ভোক্তারা মরলে, রাষ্ট্রের কিছু যায় আসে না। তাদের দরকার দুষ্ট সিন্ডিকেট-দালালদের সহযোগিতা ও তাদের লালন-পালন।
২. দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়োগবাণিজ্য আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সনদবাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার মান উন্নয়নের কোনো ইচ্ছা বাজেটে নাই। শিক্ষা ক্ষেত্রের চরম বিপর্যয় প্রতিরোধে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নাই। তার মানে শিক্ষার এই হাল নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নাই।
৩. স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান বড় বাজেট সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাবার কোনো নিশ্চয়তা দেয় না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার প্রতি মানুষের আস্থা পর্যন্ত নাই। স্বাস্থ্যখাতের এই চরম বিপর্যয় নিয়ে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য নাই। নিজেরা সর্দিকাঁশি হলেও বিদেশে চেকআপ করাতে যান। দেশের হাসপাতালের প্রতি নিজেদের যেমন আস্থা নাই, তেমনি জনসাধারণও আর আস্থা পায় না। অথচ দেশের হাসপাতাল ঠিক করার কথা কিন্তু সরকারের। তাহলে এই বরাদ্দ কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে জবাবদিহিতা নাই কেন? প্রতি বছর স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ে কিন্তু জনগণ চিকিৎসাসেবা পায় না। তাহলে এই বাজেট যায় কোথায়?
৪. প্রতিবছর দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। অথচ এদের কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নাই। অদক্ষ মানবসম্পদ দিয়ে দেশ কতদূর এগোবে? দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বাজেটে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এমন কি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতিও কোনো পরিকল্পনা নাই। তাহলে এত মানুষ নিয়ে দেশটা করবে কী?
৫. বর্তমানে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এবারের বাজেটেও ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি অর্থসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। একজন সাধারণ গ্রাহকের চেয়ে একজন ঋণখেলাপী ব্যাংকের কাছে বেশি সমাদর পাচ্ছে। তাহলে ব্যাংক ব্যবস্থা কীভাবে ঠিক করবেন? আর্থিকখাতের চরম অনিয়মগুলো প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থাপত্র বাজেটে অনুপস্থিত। তাহলে ব্যাংক সিস্টেমের এই লুটপাট বন্ধ হবে কীভাবে?
এককথায় এই বাজেট দুষ্ট লোককে আরো অনিয়ম করতে উৎসাহিত করবে। আর সহজ-সরল-সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেট চরম নাভিশ্বাস তুলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ৯:৩৭