somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার এক মাসে বাংলাদেশের চিত্র!

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৮ মার্চ ২০২০ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছিল। আজ ৮ এপ্রিল সেই সংখ্যাটি এখন ২১৮ জন। আর ইতোমধ্যে মারা গেছে ২০ জন। খেয়াল করুন, ৮ মার্চ করোনা আক্রান্তের খবরের পরেও সরকার কিন্তু ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিষয়টি মোটেও গুরুত্ব দেয়নি। প্রায় তিন মাস প্রস্তুতির সময় হাতে পেলেও সরকার সেই সুযোগ মোটেও কাজে লাগায়নি। ফলে করোনা ভাইরাস ধীরে ধীরে বাংলাদেশে কম্যুনিউটি পর্যায়ে ছড়িয়েছে।

দ্বিতীয় যে জিনিসটি ভয়াবহ দুঃখের, সেটি হলো, দেশের জনস্বাস্থ্য কাঠামো যে কতোটা ভয়াবহ মাত্রার দুর্বল, সেই চিত্রটি এই এক মাসে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ সরকার বাহাদুর বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার কম্যুনিটি হাসপাতাল গঠনের খবর, মানুষের ঘরের দরজায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছেন বলে এতদিন ফাঁকা চিৎকার করেছেন।

তৃতীয় বিষয়টি হলো- করোনা দুর্যোগের সময়েও সরকার দলীয় লোকদের দুর্নীতি বন্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গরীব মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল প্রদানের কথা মুখে বললেও, ১০ টাকা কেজিতে চাল কিনে নিয়েছে নেতারা। আর তাদের এজেন্টরা ২০ টাকা কেজিতে সেই চাল বিক্রি করছে এখন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাল চোর ধরা পড়েছে কয়েকশো।

চতুর্থ বিষয় হলো- করোনা মোকাবেলায় ডাক্তার-নার্স-হাসপাতাল কর্মী যারা প্রধম সারির সৈনিক, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট এবং পিপিই ব্যবস্থা না করে সরকারি আমলাদের মধ্যে পিপিই বিতরণের খবরে খোদ প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। অথচ এসব বিষয়ে দেশের মন্ত্রীরা গত তিন মাস করোনা মোকাবেলায় বিশাল প্রস্তুতির মিথ্যা গুজব ছড়িয়েছে।

পঞ্চম বিষয় হলো- ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে সরকার এখন পর্যন্ত কাঠমোল্লাদের নির্দেশিত ফরমান চালু রেখেছেন। যেখানে গোটা বিশ্ব কম্যুনিটি পর্যায়ে সামাজিক দূরত্বকে কঠোরভাবে পালন করার কথা বলছে। সেখানে সরকারিভাবে এখনো মসজিদে অন্যান্য দিনে ৫ জন এবং জু'মার দিনে ১০ জনকে এলাউ করা হচ্ছে। যা খুবই হাস্যকর যুক্তি।

ঘষ্ঠ বিষয় হলো- করোনা মোকাবেলায় সরকার গার্মেন্টস গুলো নিয়ে যে ভয়ংকর খেলাটি খেললো, এটি বাংলাদেশে করোনা সামাজিক পর্যায়ে ছড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

সপ্তম বিষয়টি হলো- এখন পর্যন্ত সরকার বাহাদুর করোনা বিষয়ে জনগণের চাপে সকল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। কোনো পরিকল্পনা সরকার নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করে নাই। তার মানে হলো, সরকার এখনো করোনা প্রস্তুতিতে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সকল মন্ত্রণালয়গুলো, পেশাজীবীদের নিয়ে, প্রাইভেট সার্ভিসগুলোকে নিয়ে যে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করার কথা, সেটি এখনো পুরো মাত্রায় সক্রিয় হয়নি। এখন পর্যন্ত এক মন্ত্রণালয়ের খবর অন্য মন্ত্রণালয় খুব একটা জানে না। ফলে গাফিলতি এখনো সুস্পষ্ট।

উপরের কথাগুলো মোটেও সরকারের বিরোধিতা করার জন্য বলা হয়নি, এগুলোই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা। করোনা মোকাবেলায় সরকারকে আরো কঠোর ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে। নইলে বাংলাদেশ একটি মৃত্যুপুরীতে পরিনত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

করোনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে আরো সক্রিয় করতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে জরুরি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু করতে হবে। দেশের খেলার মাঠ ও স্টেডিয়ামগুলোকে জরুরি মোবাইল হাসপাতাল গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। লকডাউন মানার জন্য জনসচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার-নার্সদের কয়েকভাগে ভাগ করে ব্যাকআপ টিম রাখতে হবে। এসব সাধারণ নিয়ম কানুন গুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে।

সরকারের উদাসীনতা কিছুটা কাটলেও সরকারি দলের লোকজনের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি করোনা দুর্যোগে নতুন মহামারীতে রূপ নিচ্ছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যক্তি পর্যায়ে টেস্ট কিট ও পিপিই আমদানি বন্ধ করতে হবে। নতুবা এসব টেস্ট কিট ও পিপিই নতুন ঝুঁকি তৈরি করবে। জাতীয় দুর্যোগে রাজনীতি বন্ধ করে সবাইকে নিয়ে একসাথে করোনা যুদ্ধ মোকাবেলা করতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা এখনো যদি আমাদের হুস না আসে তাহলে করোনা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। এজন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকেই সবচেয়ে সঠিক ও নির্ভুল হতে হবে। আজ থেকে এসব বিষয়ে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে পারলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ হয়তো মরতে মরতে বেঁচে যাবে। কিন্তু আজকের পর আর যদি ন্যূনতম গাফিলতি করা হয়, তাহলে আর কারো বাঁচার উপায় দেখি না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×