somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেশিরভাগ মানুষ জেনে বা না জেনে বিভিন্নভাবে সুদের সাথে জড়িত। এই সুদ আসলে কতটা মারাত্মক?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রাসূল (সা) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেনদেনের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের উপর লা’নত করেছেন এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান। (মুসলিম)


সুদের কারবারের সাথে জড়িত গ্রাহক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, জামানতদার- সকলই সমান পাপী ও সবার উপর রাসুল (সা) এর লা'নত বা অভিশাপ দিয়েছেন।
রাসূল (সা) এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, দু’ব্যাক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেলেন। তারা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছিলেন। সেই নদীর মাঝখানে একজন এবং নদীর তীরে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে। তীরে দাঁড়ানো ব্যক্তির সামনে পাথর পড়ে রয়েছে।
নদীর মাঝখানের লোকটি যখন কিনারার দিকে আসতে চাচ্ছে, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে সে যতবারই পাড়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হয়। রাসুল (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, 'এ কে'?
সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। (সহিহ বুখারি)
সুদ একটি জঘন্য রকম পাপ। বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা জনপ্রিয় হওয়ার কারণে সুদ আরো ভয়াবহভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। জেনে বা না জেনে আমরা প্রত্যহ সুদের সাথে জড়িয়ে পড়ছি।
রাসূল (সা ) বলেছেন, মেরাজের রাতে আমি এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল (আ) ! এরা কারা? তিনি উত্তরে বললেনঃ এরা সুদখোরের দল। (ইবনে মাযা ও আহমদ)
যেকোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সাবধান হওয়া উচিত। শুধু লেনদেনের ক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী করার ক্ষেত্রেও সাবধান হওয়া উচিত।
কারণ কোন সুদি প্রতিষ্ঠান যেমন- সুদি ব্যাংক, মাইক্রো ক্রেডিট, কিস্তি, সুদি সমিতি ইত্যাদিতে চাকুরী করলে, সেখান হতে প্রাপ্ত বেতনের আয় সম্পুর্ন হারাম আয়।
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা, ঘুষ এর মাধ্যমে যেমন কোন কিছু আয় করা হারাম, তেমনি সুদি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন কিছু আয় করাও হারাম।
আর হারাম আয় দিয়ে বিন্দুমাত্র হারাম খাদ্য ভক্ষণেও ইবাদত কবুল হয় না। এই জিনিসটা মাথায় রাখা উচিত।
রাসূল (সা ) বলেছেন, "ঐ শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম খাদ্য দ্বারা গঠিত হয়েছে"। (মিশকাত)
ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে-
১. যদি সকল ব্যাংকই সুদের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে সম্পদ নিজের কাছে রাখতে হবে।
২. ব্যাংকিং ও লেনদেন যদি করতেই হয়, তবে ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেমের উপর নির্ভর করা উচিত।
যদিও বাংলাদশ ব্যাংক, মাল্টি ন্যাশনাল ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত থাকায়, ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ সুদমুক্ত হতে পারছে না, কিন্তু বাধ্য হয়ে কিছু করার হিসেব আলাদা।
তারা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ব্যাংক চালায় বলে দাবী করে এবং এর চেয়ে ভাল বিকল্প কোন কিছু না থাকায় আপাতত তাদেরকে বিশ্বাস করে লেনদেন করা যায়।
এরপরেও তারা যদি গোপনে সুদের সাথে জড়িত থাকে, সেটার দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা তখন তাদের। আল্লাহর কাছে এর জবাবদিহিতার দায়িত্ব আমার না।
ইসলামের একটি দিক হল মানুষের বাহ্যিক দিকের প্রতি বিশ্বাস করা। কেউ যদি বলে আল্লাহ এক এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লার রাসুল, এবং প্রকাশ্যে ইসলামের কোন ক্ষতি না করে কিংবা ইসলামের বিপক্ষে কথা না বলে তাকে আপনার মুসলমান হিসেবে মেনে নিতেই হবে, যদিও সে গোপনে পূজা করুক বা অন্য কিছু করুক।
এরপরেও কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে মনে করে বা কারো সন্দেহ থাকে ইসলামী ব্যাংকিংও সুদের সাথে জড়িত, তবে সেক্ষেত্রে তার জন্য ইসলামী ব্যাংকেও লেনদেন করা বৈধ নয়।
এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে এমন এক মাধ্যম বা পথ নিজেই খুঁজে নিতে হবে, যেটা তার জন্য সম্পুর্ন সুদমুক্ত মনে হয়। যদি না খুঁজে পায়, তবে নিজের কাছে টাকা রেখে দিবে। কারণ সবার নিজের জবাদিহিতা সবার নিজেকেই দিতে হবে।
৩. যদি নিজের বিপদ বা সম্পদ হারানোর ভয় থাকে, সম্পদ নিজের কাছে রাখা সম্ভব না হয় ও কোন দেশে ইসলামী ব্যাংকিং না থাকে, তবে যে সকল ব্যাংক সবচেয়ে কম সুদের সাথে জড়িত, সেখানে অর্থ লেনদেন করা যেতে পারে।
তবে প্রাপ্ত সুদের এক টাকাও নিজে ভোগ করা যাবে না। সুদের পরিমাণ হিসেব করে বের করে সেটার পুরোটা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিতে হবে।
৪. সরকারি চাকুরীজীবীদের জিপিএফ ফান্ডে বাধ্যতামূলক কিছু টাকা রাখা হয়। এখানে সুদের পরিমাণ অনেক বেশি, লোভনীয় ও চক্রবৃদ্ধি হার হওয়াতে অনেকেই বেশি বেশি টাকা রাখেন।
যারা জিপিএফে সুদের সাথে যুক্ত না হতে চান, তারা চাইলে হিসাব রক্ষন অফিসার বরাবর আবেদন দিয়ে আপনার জিপিএফ একাউন্টটি বিনা সুদের করতে পারেন। অর্থাৎ আপনি জিপিএফ ফান্ডে টাকা জমা দিবেন কিন্তু সুদের হিসেব হবে না অর্থাৎ মূল টাকাই থেকে যাবে। আমি নিজে এটা করেছি।
৫. অনেকের সুদি ব্যাংকে বেতন হয়। এক্ষেত্রে বেতনের পুরো টাকা সাথে সাথে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিয়ে হয় নিজের কাছে রাখতে পারেন কিংবা কোন ইসলামী ব্যাংকে জমা করতে পারেন।
আমরা যাই কিছু করি না কেন আমরা, আল্লাহ সবসময় আমাদের নিয়ত ও প্রচেষ্টা দেখেন। দেখেন আমাদের কতটুকু চেষ্টা ও আন্তরিকতা আছে।
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার"। (সুরা আলে ইমরান- ১৩০)
.
লেখক : ডাক্তার তারাকি হাসান মেহেদী
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×