নিজের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা, আত্মসম্মান, চিন্তাচেতনা, মতামত ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে মাঝে মধ্যে ম্যানেজমেন্টের উত্তম মাধ্যম খাওয়ার নাম হলো প্রাইভেট কোম্পানীর চাকুরী।
.
আপাত দৃস্টিতে প্রাইভেট কোম্পানীর একজন চাকুরীজীবিকে ইন করে শার্ট-পার্ট পরিধান করা স্মার্ট, হাস্যোউজ্জ্বল ও সুখি ব্যাক্তি মনে হলেও তাদের অন্তরটা কিন্তু ততটা হাস্যোজ্জল বা সুখি নয়।
.
একটি ৭/৮ বছরের শিশু বাচ্চা তার মাকে প্রশ্ন করছে- “মা” প্রতিদিন খুব ভোরে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায় এবং অনেক রাতে যে লোকটা বাড়ীতে আসে সে কে? মা বলে ”তিনি তোমার বাবা- একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করে”।
.
কখনও প্রচন্ড রৌদ্র/ ট্রাফিক জ্যাম/ লোকাল বাস/ ঝড়বৃস্টি/ শৈত প্রবাহ/ সকালের একটি মিস্টি মধুর ঘুম উপেক্ষা করে সঠিক সময়ে আপনাকে অফিসে হাজির হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। ১০/২০ মিনিট অফিসে দেরি করে যান তারজন্য অনেক কথা/ঝাড়ি শুনতে হবে কিন্তু অফিস আপনাকে আপনার নির্ধারিত ডিউটির চেয়ে বেশি কাজ করাবে তারজন্য আপনি কাউকে কিছু বলতে পারবেন না।
.
একজন প্রাইভেট কোম্পানীর চাকুরীজিবিকে সাধারণত কি কি সমস্যা ফেস করতে হয় ?
১। নিজের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না
২। মাঝে মধ্যেই ঝাড়ি খাওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে
৩। ছোট ভুলে বড় ধরণের তিরস্কার, মাঝে মাঝে আপনার দুর্বলতা তুলে ধরার চেস্টা করবে।
৪। চাকুরী করতে এসেছেন মালিকপক্ষ/ উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আপনাকে মনে করবে যে আপনি অনেক অসহায়, অভাবী- তাই দায়ে পরে চাকুরী করতে এসেছেন।
৫। উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দ্বারা কুপ্রস্তাব পাওয়া (মেয়েদের ক্ষেত্রে)।
৬। অফিসের টাইমের চেয়ে বেশি ডিউটি করতে হবে আবার কোন প্রতিবাদও করতে পারবেন না। যেটা আপনার কাজ নয় সেই কাজের হুমুক করবে। প্রতিবাদ করতে যাবেন শোকস খাবেন বা চাকুরীও হারাতে পারেন।
৭। কাজ করবেন আপনি, পরিশ্রম করবেন আপনি আর তেলবাজরা চামচামি করে তাদের প্রমোশন নিবে।
৮। আপনার নির্ধারিত ডিউটি ছাড়াও অফিস যেকোন সময়ে আপনাকে তাদের প্রয়োজনে ফোন করে ডাকবে, ছুটির দিনেও ডিউটি দিতে পারে। হয়ত আপনি অফিসে শেষে কোথাও বেড়াতে গেছেন বা রেস্ট নিচ্ছেন অথবা সেই সময় পরিবারকে সময় দিচ্ছেন অথবা অথবা কোন রেষ্টুরেন্টে গেছেন। আপনাকে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক অফিসে উপস্থিত হতে হবে। এখানে আপনার ব্যাক্তিস্বাধীনতা বলতে কিছু থাকবে না।
.
আর আপনার এসব পরিশ্রম কার জন্য ? কিসের জন্য ? হয়ত পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটাতে অক্লান্ত চেস্টা। হয়ত আপনার আয়ের উপর চেয়ে আছে আপনার জন্মদাতা বৃদ্ধা মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন বা স্ত্রী-সন্তান। আপনি যদি একাই একজন একটা মানুষ হতেন তাহলে কি আর এত কস্ট করতে হত? একটি মানুষের চলাফিরা খাওয়া দাওয়া এমনিতেই ম্যানেজ হয়ে যায়।এত চিন্তা করতে হয়না।
.
আর সবশেষে বলবো- এসব প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী না করে, কোম্পানীর পিছনে ঘুর ঘুর না করে আমাদের নিজেদেরকে স্বনির্ভর বা উদ্যোক্তা হওয়া উচিত। হাতে যত সামান্যই টাকা পয়সা থাকনা কেন, অন্যের ঝাড়ি খাওয়ার চেয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে চা বিক্রি করা ভালো। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন চাকুরী করবো না, চাকুরী দিব। কিসের আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর কিসের আমার অভিজ্ঞতা। সারাজীবন যদি অন্যের ঝাড়ি খেয়েই থাকতে হয় তাহলে পরাশুনার করে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হতে পারলাম কই?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫২