somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ভুল মৃত্যু সংবাদ জন্ম দিলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ পুরস্কারের

১৩ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোবেল পুরস্কার । বিশ্বের সর্বোচ্চ ও মর্যাদাপূর্ন পুরস্কার।
১৯০১ সালে শুরু হওয়া এই মর্যাদাপূর্ন পুরস্কারের ১১০তম আসর বসেছিলো ৩-১৩ অক্টোবর নরওয়েতে। একে একে ২০১১ সালের জন্য মনোনীত সকল বিজয়ীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জেনে নেই নোবেল পুরস্কারের আদ্যোপান্ত........................

এই পুরস্কারের প্রবক্তাঃ
১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবরের কোন এক প্রহরে সুইডেনের স্টকহোমে জন্মগ্রহন করেন শিল্পপতি ইমানুয়েল নোবেল ও মা অ্যানড্রিয়েটি নোবেলের ৩য় সন্তান আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল। ।
তার অপর দুই ভাই হলো রবার্ট নোবেল ও লুডিগ নোবেল। আলফ্রেড নোবেল ছিলেন তৃতীয় ও সর্বশেষ ভাই। তিনি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও অস্ত্রনির্মান প্রতিষ্ঠানের মালিক।


আলফ্রেড নোবেলের মোট আবিষ্কারের সংখ্যা ৩৫৫। যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার ডিনামাইট। এতো বিশাল সংখ্যক আবিষ্কার করে প্রচুর টাকা রোজগার করেন সুইডেনে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী। সেই টাকা দিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার ‘নোবেল পুরষ্কার’।

পুরস্কার প্রতিষ্ঠার পিছনের কাহিনীঃ
নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা বেশ মজার। আলফ্রেড নোবেলের অধিকাংশ আবিষ্কারই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ডিনামাইট বা অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র যেমন মানুষের কল্যানের কাজে ব্যাবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসাত্বক কাজেও। সে কারনে অনেক নিন্দা জোটে আলফ্রেড নোবেলের কপালে।

১৮৮৮ সালের মার্চে আলফ্রেডের বড়ভাই লুডভিগ ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়ে ক্যানসিসে মারা যান। লুডভিগ ছিলেন তুখোড় একজন প্রকৌশলী, ভালো ব্যবসায়ী ও অসাধারন মানবিক। এক ফ্রেঞ্চ পত্রিকা ভুলে ধরে নেয় আলফ্রেড নোবেলই মারা গেছেন।
সেই পত্রিকা তখন আলফ্রেডের মৃত্যুর সংবাদ ছাপে।অথচ আলফ্রেড তখনো জীবিত। সেখানে তারা আলফ্রেডেকে বর্ণনা করে ‘মার্চেন্ট অব ডেথ বা মৃত্যুর সওদাগর’ হিসাবে, যার শিরোনামে লিখেছিলো "The merchand of death is dead"। আলফ্রেড মানুষ হত্যার বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেছেন, কিন্তু সেই টাকা পুরো মানব জাতির কল্যানের কোনো কাজে ব্যয় করেননি বলে তার প্রচন্ড নিন্দা করে এমনি তার বৈজ্ঞানিক আবিস্কার উদ্ভাবনের কথা উল্লেখও করেনি। পত্রিকার এই লেখাটি আলফ্রেড নোবেল নিজে পড়েন। পড়া শেষে তিনি বেশ কষ্ট পান।
তিনি উপলদ্ধি করলেন তিনি নিজেকে একজন "মৃত্যু ব্যবসায়ী" হিসেবে পরিচিত করে মরতে দিতে পারেন না। মানুষের মনে তার সম্পর্কে সম্মানজনক ইতিবাচক পরিচয় রেখেই মরতে হবে। কী করা যায় ? সে ভাবনায় পেয়ে বসে । ১৮৯৫ সালে এসে এ প্রশ্নের সমাধান তিনি পান।

অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর উপার্জিত অর্থ মানব কল্যানের কাজে ব্যয় করবেন। এরপর ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন নোবেল পুরষ্কার।
এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। ১৯৬৮ যোগ হয় অর্থনীতিতে।

আলফ্রেড নোবেলের উইলঃ


আমার সম্পত্তির পুরোটাই নিম্নলিখিতভাবে কাজে লাগানো হবে :
‘আমার অছিমণ্ডলী সমস্ত মূলধন নিরাপদ কোম্পানির কাগজে বিনিয়োগ করে একটি ফান্ড গঠন করবেন। এই মূলধন থেকে উপার্জিত সুদ প্রতি বছর পুরস্কারস্বরূপ বণ্টন করা হবে। আগের বছর যারা মানবজাতির কল্যাণে সর্বোত্তম সেবা করেছেন বলে গণ্য হবেন, চলতি বছর এ পুরস্কার তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। উল্লিখিত সুদের অর্থকে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে বণ্টন করা হবে—
* পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন যিনি, একভাগ পাবেন তিনি।
* সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাসায়নিক তথ্য আবিষ্কার বা তার উন্নয়ন করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।
* শরীরবৃত্ত অথবা ভেষজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।
* সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ আদর্শপূর্ণ অভিনব কিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন—একভাগ পাবেন তিনি।
* জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্য স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলোপসাধন বা হ্রাস করার জন্য এবং শান্তি পরিষদগুলোর অনুষ্ঠান ও উন্নয়নের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক অথবা শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।
পদার্থ ও রসায়নবিদ্যা সংক্রান্ত পুরস্কারগুলো সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক প্রদত্ত হবে।
শরীরবৃত্ত অথবা ভেষজ সংক্রান্ত পুরস্কার বিতরণ করবে স্টকহোমের ক্যারোলাইন ইনস্টিটিউট।
সাহিত্য ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদান করবে স্টকহোম একাডেমি।
শান্তিসেবীদের জন্য নির্দিষ্ট পুরস্কার বিতরণ করবে নরওয়েজিয়ান স্ট্যাটিং নির্বাচিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি।
আমার সুস্পষ্ট ইচ্ছে যে, পুরস্কারগুলো বিতরণ সম্পর্কে প্রার্থীর জাতীয়তার কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। তিনি স্ক্যানডিনেভিয়ান হন বা বা না হন, যোগ্যতম ব্যক্তিমাত্রই পুরস্কার লাভ করতে পারবেন।
প্যারিস স্বাক্ষর
২৭ নভেম্বর আলফ্রেড নোবেল

নোবেল ফাউন্ডেশনঃ
আলফ্রেড নোবেল উইলে স্বাক্ষর করেন ১৮৯৫ সালে, কিন্তু পুরষ্কার ঘোষণার সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর এই উইল বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় রাগনার সোহলমান এবং রুডলফ লিলিযেকুইস্ট নামের দুই ভদ্রলোকের উপর। ১৮৯৭ সালে আইনসভায় নোবেলের উইল পাস হওয়ার পর এই দুই ভদ্রলোক গঠন করেন নোবেল ফাউন্ডেশন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নোবেল ফাউন্ডেশন থেকে পুরষ্কার দেওয়া হলেও এই ফাউন্ডেশন নোবেল পুরষ্কারের বিজয়ী নির্বাচন করে না। এই ফাউন্ডেশনের মুল কাজ হলো নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরষ্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা।

পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব নোবেল ভাগ করে দিয়ে যান তার উইলে
* পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন এর পুরষ্কার ঘোষনা করার দায়িত্ব দেন রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সকে।
* চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরষ্কার দেওয়ার দায়িত্ব দেন ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটকে।
* সুইডিশ একাডেমি কে দায়িত্ব দেন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ঘোষনা করার দায়িত্ব।
* শান্তি পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব দেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে।
এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। তা হলো, যে সময় নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সুইডেন ও নরওয়ে ছিলো একসঙ্গে যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে যায়। ফলে নোবেল পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব ভাগ হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যে।

নোবেল মনোনয়ন প্রক্রিয়াঃ

শুরুতে নির্বাচক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নসুত্র থেকে কয়েক হাজার নাম সংগ্রহ করে নিজ নিজ বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠায়। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরী করা হয় । পরবর্তীতে তৈরী করা হয় মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত তালিকা।
সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী বছরের জন্য মনোনয়ন আহবান করে। ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। সেই মনোনয়ন থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এই তালিকার উপরে কমিটির সদস্যদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় পুরস্কার। পুরস্কার ঘোষনা হয় অক্টোবর মাসে। আর পুরো বছরে ধরে চলে মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

যে সব বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়ঃ
* পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন যিনি, একভাগ পাবেন তিনি।
* সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাসায়নিক তথ্য আবিষ্কার বা তার উন্নয়ন করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।
* শরীর অথবা ভেষজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যার আবিস্কার গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচিত হবে, তিনি পাবেন এক অংশ( উইলকৃত অর্থ মনোনীত ব্যক্তিকর্তৃক নিরাপদ খাতে বিনিয়োগপ্রাপ্ত লাভের)
* সাহিত্য ক্ষেত্রে যার কাজ মানবের আদর্শকে সবচেয়ে দারুন ভাবে চিত্রায়িত করেছে - একভাগ পাবেন তিনি।
* যিনি জাতিতে জাতিতে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্য স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলোপসাধন বা হ্রাস করার জন্য এবং শান্তি পরিষদগুলোর অনুষ্ঠান ও উন্নয়নের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক অথবা শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।

অর্থনীতিতে কোন নোবেল নাই.........


আলফ্রেড নোবেলের উইলে অর্থনীতিতে নোবেল দেয়ার কোন উল্লেখ নাই। মূলতঃ নোবেলে স্মৃতিতে দ্য ব্যাংক অব সুইডিশের দেয়া পুরস্কার ।যা নোবেলের একই সময় ও একই সমমানের হওয়ায় তা নোবেল পুরস্কারের মতো। সুইডেনের ব্যাংকের ৩০০ তম বার্ষিকীতে ১৯৬৮ সালে প্রবর্তিত হয়ে ১৯৬৯ সাল থেকে দেয়া হয় এই পুরস্কার। এর নাম "The Sveringes Riksbank Prize in Economic Scicenes in Memory of Alfred Nobel"

পুরস্কার হিসাবে যা প্রদান করা হয়ঃ
১৯০০ সালের নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার কিছু নিয়ম নির্ধারন করা হয়। সেই নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা, একটি গোল্ড মেডেল এবং একটি সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে। এই অর্থের পরিমান নির্ভর করে নোবেল ফাউন্ডেশনের আয় এর উপর। যদি একাধিক ব্যক্তি একই ক্ষেত্রে পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হন, তাহলে তাদেরকে এই ভাগ করে দেয়া হয়। শুধু মাত্র শান্তি পুরষ্কারের জন্য কোনো ব্যাক্তির বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানকেও নির্বাচন করা যায়।

প্রথম নোবেলঃ
এই সব নিয়ম কানুন ঠিক করে প্রথম পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় ১৯০১ সালে- আলফ্রেড নোবেলের উইল স্বাক্ষরের ৫ বছর পর।
* পদার্থ বিজ্ঞানে পুরষ্কার পান জার্মান বিজ্ঞানী রন্টজেণ্ট। এক্স-রে আবিষ্কার করার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরষ্কার পান তিনি।
* রসায়নে অনবদ্য অবদান রাখায় জ্যকব হান্ট হফ নোবেল পান সেই বছর।
* চিকিৎসায় নোবেল পান এমিল বেরিংডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ।
* সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয় সুলি ফরুডহোমকে।
* শান্তিতে যুগ্ম ভাবে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন ফরাসী নাগরিক ফেডেরিক পুসি এবং রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্ট।
আর এভাবেই পথ চলা শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার- নোবেল পুরষ্কার।

নোবেল প্রদানের সময়কালঃ
আলফ্রেড নোবেলে মৃত্যুদিবস ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের অসলোতে শান্তিু পুরস্কার এবং সুইডেনের স্টকহোমে বাকী পুরস্কার তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। শান্তি পুরস্কার অসলোতে দেয়া হয় নোবেলের ইচ্ছানুযায়ী।

পুরস্কার ঘোষনাকারী সংস্থাঃ
১.নোবেল কমিটি অব দ্য নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট--------শান্তি
২.রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সাইন্সেস----------------পদার্থ,রসায়ন,অর্থনীতি
৩.সুইডিশ একাডেমি------------------------------------সাহিত্য
৪.ক্যারেলিনস্কা ইনস্টিটিউট-----------------------------চিকিৎসাবিজ্ঞান

নোবেল পুরস্কার ২০১১ এর বিজয়ীরাঃ
১। পদার্থবিজ্ঞান (Physics)

এবছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন
*আমেরিকান বিজ্ঞানী সউল পার্লমুটার
*এড্যাম জি রাইস
*আমেরিকান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান ব্রায়ান পি. স্মিড।
কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের অতিকায় নক্ষত্রের বিস্ফোরণ দেখে প্রমানিত হচ্ছে মহাবিশ্ব ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে, ছড়িয়ে পড়ার গতিটা ক্রমেই বাড়ছে “-এই কথাটা প্রমান করে তারা এবছর নোবেল জিতলেন।পার্লমিউটার কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির সুপারনোভা কসমোলজি প্রজেক্টে। স্মিডট গবেষণা করছেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। অন্যদিকে রিজ গবেষণা করছেন জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে।পুরষ্কার হিসেবে তারা পাবেন সুইডিশ ১ কোটি ক্রোনার।

২। চিকিৎসা বিজ্ঞান (Physiology or Medicine)

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবছর নোবেল পেলেন আমেরিকান,লুক্সেমবার্গ ও কানাডার তিন বিজ্ঞানী।
তারা হলেন যথাক্রমে ব্রুস বয়েটলার, জুলস হফমান ও রালফ স্ট্যানম্যান।
এদের মধ্যে ব্রুস বয়েটলার, জুলস হফমান কে “শারিরিক রোগ প্রতিরোধ প্রথমে ক্রিয়াশীল হয়” তা আবিষ্কারের জন্য এবং রালফ স্ট্যানম্যান কে “ড্রেনড্রিটিক কোষ কিভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে সেই প্রক্রিয়া” আবিষ্কারের জন্য এই পদকে ভূষিত করা হয়।

৩। শান্তি (Peace)

নোবেল শান্তি ২০১১ পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনজন নারী।এর মধ্যে দুইজন লাইবেরিয়ান এবং একজন ইয়েমেনি।
*এরা হল লাইবেরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট “জনসন সারলিফ” ,
*শান্তিকর্মী লেইমাহ রবার্তো বোউই
* ইয়েমেনের আল ইসলাহ’র সিনিয়র সদস্য ও ইয়েমেনি রাজনীতিবিদ তাওয়াকুল কারমান।
নারী উন্নয়ন ও নারী অধিকার বাস্তবায়নের জন্য অহিংস শান্তিপুর্ন আন্দোলনের অবদানস্বরূপ তারা এই পুরষ্কার পান।

৪। সাহিত্য (Literature)

সুইডিশ কবি, মনস্তত্ববিদ, অনুবাদক টোমাজ ট্রান্সট্রোমার সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৫০ সাল থেকে ট্রান্সট্রোমার সুইডিশ সাহিত্যে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাছে সম্ভবত তিনিই সবচেয়ে পরিচিত স্ক্যান্ডিনেভিয় কবি। ০৬ অক্টোবর ২০১১ সুইডিশ একাডেমীর স্থায়ী সচিব পিটার ইঙলান্ড এ বছরের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে টোমাজ ট্রান্সট্রোমার-এর নাম ঘোষণা করেন। ইঙলান্ড ৩৫ সেকেন্ডের ঘোষণায় ট্রান্সট্রোমারকে পুরস্কার দেবার কারণ হিসেবে বলেন ‘ঘন, আবছা চিত্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবতায় আমাদের প্রবেশ তরতাজা করে দেন তিনি।’

৫। রসায়নে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন ইসরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র বিজ্ঞানী ড. ড্যানিয়েল শেচম্যান কোয়াসিক্রিস্ট্যালের কাঠামো আবিষ্কার করে নোবেল অর্জন করলেন।

৬। অর্থনীতি (Economic Science)

এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরুষ্কার পেলেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ টমাস সার্জেন্ট ও ক্রিস্টোফার সিমস।
”নীতি বা কর্মপন্থা কীভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে” এই সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্যই তাঁরা নোবেল পেয়েছেন। রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস জানায়, তাঁরা পুরস্কার হিসেবে পাবেন এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার (১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার)

নোবেল পুরস্কার সর্বমোট ৫৫৬টি
১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঘোষিত নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে ৫৫৬টি।
বিষয়'........এককক.....যৌথ(২জন).........যৌথ(৩জন).......মোট
পদার্থ................৪৭...........২৯....................৩১...............১০৭
রসায়ন..............৬৩............২২....................১৮...............১০৩
চিকিৎসা.............৩৮............৩১....................৩৫..............১০৪
সাহিত্য.............১০০.............৪.....................-................১০৪
শান্তি.................৬২...........২৮......................৪................৯৪
অর্থনীতি.............২২...........১৭......................৫................৪৪
মোট................৩৩২..........১৩১....................৯৩.............৫৫৬

পুরস্কার দেয়া হয়নিঃ
১৯০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫০টি বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৫০ বার পুরস্কার দেয়া হয়নি।


নোবলে জয়ী বাঙালীঃ
নোবেলের শতাধিক বছরের ইতিহাসে মাত্র ৩জন বাঙালী নোবেলর সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছেন।
১। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলীর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন
৩। ২০০৬ সালে শান্তিতে ড.মুহাম্মদ ইউনুস

এদের মধ্যে ড.মুহাম্মদ ইউনুস হলেন একমাত্র ও প্রথম বাংলাদেশী।

নোবেল টুকিটুকিঃ

* একাধিকবার নোবেল পেয়েছেন রেডক্রস ও UNHCR এই দুই প্রতিষ্ঠানসহ ৬ জন। এদরে মাঝে অন্যতম হলেন মাদাম কুরি।
* লিনাস পলিং একমাত্র নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব ,যিনি এককভাবে দুবার দু'ক্ষেত্রে নোবেল লাভ করেন।
* নোবেল লাভের গৌরব অর্জন করে ৪টি দম্পতি এরা হলো কুরি, জুলি, কোরি, মিরডাল দম্পতি।
* মা মেয়ে নোবেল পেয়ে গৌরব করে মাদাম কুরি ও তার মেয়ে ইয়েন জুলি-কুরি।
* পিতা পুত্র নোবেল পেয়েছে এমন পরিবার ৬টি।
* দুইভাই নোবেল লাভ করে জ্যান টিনবারজেন ও নিকোলাস টিনবারজেন
* কমবয়সী নোবেল জয়ী হলেন লরেন্স ব্রাগ। তিনি তার বাবার সাথে নোবেল পান ১৯১৫ সালে। বয়স চিলো মাত্র ২৫ বছর।
* নিয়ম না থাকলেও মরনোত্তর নোবেল পান ১৯৩১ সালে কবি এরিখ কালফেল্ট ও ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড।
* স্বেচ্ছায় নোবেল প্রত্যাখ্যান করেন দুইজন। কবি ফ্রান্সের জ্যঁ পল সার্ত্রে ও শান্তিতে ভিয়েতনামের লি ডাক থো
* নিজ দেশের সরকারের চাপে নোবেল প্রত্যাখ্যান করেন ৪ জন।
* পুরস্কার প্রদান কালে জেলে ছিলেন ৩ জন....১.জার্মান সাংবাদিক কার্ল ভন ওসিজেকি ২. মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি ৩. চীনের মানবাধিকার কর্মী লিউ জিয়াওবা
* মাতাত্মা গান্ধী ৫ বার নোবেলের জন্য মনোনয়োন পেয়েও । নোবলে কমিটির চোখে তিনি যথার্থ রাজনৈতিক বা যথার্থ সমাজসেবী ছিলেন না। পরে অবশ্য তারা তাকে নোবেল না দেয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে।
* শান্তিতে নোবেল লাভ করে ১৫জন নারী।
* শান্তিতে নোবেল লাভ করে ২০টি সংগঠন
* ৪জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নোবেল পুরস্কার পান।


যদিও নোবেল পুরস্কার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা রয়েছে । তবে প্রত্যাশা রইল নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হোক উপযুক্তদের হাতে।

এই লেখা আপনি পড়বেন কিনা জানি না কিন্তু একটি অলস মস্তিস্ককে কাজে লাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র এই পোস্ট।

তথ্যসূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স
৩. অন্য দিগন্ত ডিসেম্বর,১০
৪. কয়েকটি বাংলা ব্লগ
৫. সার্চ ইঞ্জিন গুগল
৬. কয়েকটি অনলাইন দৈনিক

যারা কষ্ট করে পড়েছেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×