খাঁ খাঁ দুপুর।মাঠ ও মাঠের চারপাশের রাস্তায় লোকজন তেমন একটা নেই।আমি সুধীর ভাইকে খুজছি, তিনিও নেই।মাঝে মাঝে তিনি দেরী করেন।তখনই দেখলাম একটা জুটি এসে হাজির হল।বেশ সাজ-সজ্জা করে,ম্যাচিং করে তারা পাঞ্জাবী ও শাড়ি পরে এসেছে।ছেলেটির পরনের সাদা ও কালো পাঞ্জাবীতে ধূসর রঙের অসংখ্য বর্ণমালা ছাপা,মেয়েটির শাড়িতেও তাই।মেয়েটি শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছে,ঠোটে তার গাঢ় ম্যাজেন্টা লিপস্টিক।ছেলেটি লম্বা, সুদর্শন।মেয়েটি শুকনা,বেটে।মেয়েটি সাথে করে অতিরিক্ত একজোড়া কালো-সোনালী রঙের হাই হিল জুতা এনেছে।এমন হাই হিল জুতা নাটক-সিনেমায় টিভিতে দেখা যায়;বাস্তবে কাউকে পরতে দেখা যায় না।সেটা পরার পরও মেয়েটি ছেলেটির বগলের নীচে পড়ে রইলো।দুজনের বয়স ২৫ এর বেশী হবে না। তাদের সাথে ছিল তাদের কোন ফটোগ্রাফার বন্ধু।তার নির্দেশনায় জুটি নানা ভঙ্গিমায় ছবি তুলতে লাগলো।ছেলেটি গাছের কান্ডে হাত রাখলো,মেয়েটিও ছেলেটির উচু করা হাতে হাত রাখলো।ফটোগ্রাফার নির্দেশনা দিতে লাগলো আর ছবি তুলতে লাগলো।
এমন সময় সুধীর ভাই গাড়ি নিয়ে চলে আসলেন---বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী।
আমি বই বাছাই করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর ছেলেটি গাড়ির ড্রাইভার কে ফটোশ্যূট করার জন্য একটা বই দেওয়ার অনুরোধ করলো।তবে বইটি---
১.কালো কভারের হতে হবে।
২.একটু কন্ট্রাস্ট হতে হবে।
৩.ভাষা অন্দোলনের উপর কোন বই হলে ভাল হয়,যেহেতু এটা ভাষার মাস।
ড্রাইভার সাধ্য মতো বই খোজা শুরু করলো।আমি একটু সরে দাড়াতে মেয়েটি আমার পাশে এসে দাড়ালো।লাইব্রেরির বইগুলোতে চোখ বুলাতে লাগলো।
তারা বই নিয়ে গাড়ির কাছেই ছবি তোলা শুরু করলো।কিছুক্ষণ পর ছেলেটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি লাইব্রেরিয়ান কিনা।আমি বললাম,লাইব্রেরিয়ান গাড়ির ভেতরে।ছেলেটি সূধীর ভাই এর কাছ থেকে কালো কভারের,একটু কনট্রাস্ট,ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বইটি পাশ্ববর্তী মাঠে নিয়ে ছবি তোলার অনুমতী নিল।যুবক,যুবতী এবং ফটোগ্রাফার মাঠে চলে গেল।
গাড়ির ড্রাইভার আমাকে বললো,"বই নিয়া চইলা গেল,মাইরা না দেয় আবার।"
একবার মনে হল বলি,চিন্তা করবেন না,সঙ্গে লেডিস আছে।