রাজাকার নিজামী গংরা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে ইসলামের নামে মওদুদীবাদে দীক্ষিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামথেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে এসব গোঁড়া ধর্মান্ধরা ক্রোধান্বিত হয়ে এদেশের মানুষের উপর কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ড চালিয়েপ্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছিল। সেদিন বাঙালি হত্যায় কি পাশবিক উল্লাসে মেতেছিল এসব হায়েনার দল তা ১৯৭২ সালে ১৯ জানুয়ারি দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়।
দৈনিক পূর্বদেশ তৎকালীন বর্ষিয়ান নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখকরে, ‘হানাদার পাকবাহিনীর সহযোগীআল-বাদররা পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের পর যখন পালিয়ে যায় তখনতাদের হেড কোয়ার্টারে পাওয়া গেল এক বস্তা বোঝাইচোখ। এদেশের মানুষের চোখ। আল-বাদরের খুনিরা তাদের হত্যা করে চোখ তুলে বস্তা বোঝাই করে রেখেছিল।’
বয়ো বৃদ্ধ মাওলানা খেদোক্তি করে আরো বলেন, খুনিদের এই বাহিনীর নাম দেয়া হলো আল-বাদর বাহিনী। একি কোন মনঃপুত নাম? যে বদর যুদ্ধ ছিল আদর্শের জন্য, ইসলামের প্রথম লড়াই, সেই যুদ্ধের সাথে কি কোন সংযোগ এই নৃশংসতার মধ্যে ছিল? মাওলানা বলেন, হানাদারদের সহযোগীএই আল-বাদর বাহিনী শুধু ইসলামের শত্রু নয়, এরা হলো যালিম।
ঘাতক আল-বাদর বাহিনীর এই নৃশংসতার সাথে চীনের অত্যাচারী সম্রাট চেংসিয়েন চুং-এর হিংস্রতার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আন্দোলনকারী গ্রামবাসীদের সে নির্বিচারে হত্যা করেই শান্তি পায়নি। সৈন্যদের নির্দেশ দিয়েছিল নিহত গ্রামবাসীদেরকান এবং পায়ের পাতাকেটে আনার জন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মৃতদেহগুলো রাজধানীতে আনা অসুবিধা মনে করে সেএই নির্দেশ দিয়েছিল। এই কান ও পায়ের পাতা নাকি পিরামিডের মত উচু হয়েছিল; আর তাই দেখে নাকি প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজা পরম তৃপ্তি অনুভব করেছিল। তেমনিভাবে ঘাতক নিজামীরাও বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ আল-বাদরের হেড কোয়ার্টারে আনা অসুবিধা বিধায় শুধু চোখ উপড়ে এনে জমা করে পৈশাচিক উল্লাসে মেতেছিল।
উত্স : প্রথম আলো থেকে ।