somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাসমান জীবনের গল্প!!!সদরঘাটের জীবন যাপন

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ঘর নেই ,তবু আছে ঘর করা”। তবুও আছে স্বপ্ন ও বেদনা।আছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জটিল হিসেব-নিকেষ ।

রাজধানীর সদর ঘাটের ঘরহীন মানুষগুলোর গল্পটা একটু অন্যরকম।ওদের মধ্যে কেউ কুলি,কেউ নৌকার মাঝি আবার কেউবা ফেরি করে বেড়ায় ।সেই ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত অবধি চলে তাদের জীবন যাপন।
হরিপদ কেরানীর মতো ওদের ঘরে আলো জ্বালাবার দায় নেই। তাই লঞ্চ ঘাটের টিকরে পড়া নিয়ন আলোতেই রাত্রি কেটে যায়। আবার ভোর হয়। লঞ্চের ভেঁপু বাজে।পুষ্টিহীন শরীরগুলোর ক্লান্তিহীন পথ চলা শুরু হয়।কিন্তু ওদের পথ চলা ,দুপুরে পেট পুড়ে খাবারের নিশ্চয়তা দেয় না।

অধুনিক নগর সভ্যতা এই মানুষ গুলোর একটা নাম দিয়েছে। ওদের বলা হয় ভাসমান মানুষ। এক সময়ের প্রমত্তা নদী বুড়িগঙ্গা এই বৃদ্ধ কালে এসেও আশ্রয় দিয়েছে সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালের এই ভাসমান মানুষদের।
চাঁদপুরের পঙ্গু মাজেদ আলী ,নোয়াখালীর হাশেম মিয়া, নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো রহিমা বেওয়া ওরা সবাই আজ রাজধানীর সদরঘাটের বাসিন্দা। জীবনের তিক্ত স্রোত ওদের সবাইকে নিয়ে এসেছে এই মোহনায়।
এদের মধ্যে হাশেম নৌকা বানায়। মেহগনি আর কাঁঠাল কাঠ দিয়ে বানানো নৌকা তার জীবিকা মেটায়। মাজেদ আলীর খাবার জোটে ভিক্ষে করে;পঙ্গুত্বই তাঁর জন্যে হয়েছে আশীর্বাদ।
ঘরহীন এই মানুষ গুলোর ঘরে ফেরার তাড়া নেই।প্রত্যাশার প্রাচীর নেই।আছে শুধু বেঁচে থাকা আর বেঁচে থাকার লড়াই।
প্রায় বিশ বছর আগে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন সদরঘাটের নৌকার মাঝি রমজান।তখন বুড়িগঙ্গার জল এতটা কালো ছিল না। বুড়িগঙ্গার এপার থেকে ওপার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে পারাপার করায় সে। দৈনিক উপার্জনটা মোটামুটি ২০০ টাকার মতন।
সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে আরেক শ্রেণির মানুষের দেখা পাওয়া যায় বেশ সহজেই। ভারী ব্যাগ-বস্তাসহ লঞ্চ ধরতে আসা যাত্রীদের দেখলেই ওরা ছুটে আসে। ওরা কুলি। সদরঘাট টু বরিশাল, সদরঘাট - সুন্দরবন,সদরঘাট টু শরীয়াতপুর মানুষ গন্তব্যে যায় আবার ফিরেও আসে। ভাসমানদের কোন ঘর নেই।তাই ওদের ফেরা কিংবা যাওয়ার কোন ব্যাপার নেই।

জীবনের নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার সাথে সখ্যতা গড়া সদরঘাটের এই মানুষ গুলো বাস করে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। শহরের সকল বর্জ্য গিয়ে মেশে যে বুড়িগঙ্গার জলে সেই জলেই চলে ওদের স্নান পর্ব।
ভাসমান মানুষদের খাবার জন্যে আছে ভাসমান খাবার দোকান। এখানে সকালের নাস্তা মেলে ১০-১৫ টাকায় আর ২০-২৫ টাকাতেই হয়ে যায় রাতের ভুঁড়ি ভোজ।

তেমনি এক হোটেলে রান্না করে শেফালির মা। রাত হলেই মা-মেয়ে ওয়াইজ ঘাটের দিকে ছোট্ট একটা জায়গায় জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। দশ বছরের শেফালির স্কুল যাবার ইচ্ছে,মাঝে সাজে টেলিভিশন দেখার ইচ্ছে ,একবেলা পেট পুড়ে মোরগ পোলাও খাবার ইচ্ছে ।
শেফালির মতো সদরঘাটের শিশুদের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের কঠিন পদাঘাতে। ভেঁপুর প্রচন্ড শব্দের মাঝেই দিন যাপন এদের। ফলে তাদের মানুসিক স্বাস্থ্যে ঘটছে ভয়াবহ ব্যাঘাত।

তবুও দাঁড়িয়ে আছে সদরঘাট আর সদরঘাটের মানুষজন।এদের মধ্যে হাশমত আর মমেনার গল্পটা একটু অন্য রকম। কুড়িগ্রামের মেয়ে মমেনার সাথে হাশমতের পরিচয় সদরঘাটেই। তারপর সখ্যতা এবং ঘর বাঁধা। পলিথিনে মোড়ানো কুঠুরিতেই চলছে তাদের সংসার।
সন্ধ্যার খানিকটা আগেই মমেনার উঁনুনে জ্বলে ওঠে আগুন। আকাশে মেঘ করলে সেদিনের মতো রান্না বান্না ওখানেই শেষ। খাবার নিশ্চয়তা নেই তবু চলে জীবন।
উৎসব আর উত্তাপ হীন ভাসমান জীবন এগিয়ে যায় অনাগত সন্ধ্যার পথে। একটু পরেই রাত্রি নামে। ক্ষুধার জ্বালা, অপ্রাপ্তির বেদনা,সবই মিলে যায় অন্ধকারে।
এরই মাঝে চলে ঘরহীন মানুষের ঘর করা অথবা ঘর করার স্বপ্ন বোনা।
ছবিঃইন্টারনেট থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×