সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়স্থ “বাংলাদেশ সু্ইডেন পলিটেকনিকাল ইনিস্টিটিউট” এ র্যাগিং এর কারণে নতুন যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদদের পালিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার ঘটনায় অভিবাবক মহলে মারাত্মক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে নতুন ভর্তিহওয়া শিক্ষার্থীদের রাত বারোটায় মাঠে নিয়ে মাথায় ইট তুলে দেওয়া, কখনো কখনো একজনের ভুলের কারণে পুরো জুনিয়র দলকে কান ধরে সিড়িতে উঠা নামা করানো, বড় ভাইরা হাটলে ওই পথ কিংবা সিড়ি দিয়ে হাটা নিষেধ করা, সিনিয়র খেতে গেলে ক্ষুদার্থ জুনিয়রদের ঘন্টার পর ঘন্টা উপোস থাকা, ড্রেস পড়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা, আওয়াজ করে কথা না বলা, দামি ফোন ইউজ না করা, বড় করে সালাম দেওয়া, এধরণের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের কারেণই ক্যম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। যারাও টিকে আছে নানান প্রতিকূলতার মধ্যেই টিকে আছে। কেউ কেউ ছুটিতে এসে ক্যাম্পাসে না ফেরারও সিদ্ধান্ত অভিবাবকদের ভাবিয়ে তোলায় এদের অনেকেই মন্ত্রনালয় বরাবরে চিটি দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
‘টেবিল নম্বর-২১’ অনেকেই মুভিটা দেখেছেন। কে কিভাবে নিয়েছেন জানিনা মূলতঃ মুভিটার মূল ম্যাসেজটা ছিল ‘‘Ragging is not a joke, it’s a CRIME!!’
এস,এস,সি কিংবা এইচ,এস,সি পাশ করে ভর্তি কোচিং কিংবা ভর্তি নামক ভয়ঙ্কর স্টেপগুলো পার করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্টাণে ভর্তি হয় অনেক স্বপ্ন নিয়ে। নতুন ছাত্র হয়ে এসে সে সবার আগে যে জিনিসটার মুখোমুখি হয় সেটা হল র্যাগিং !!!
র্যাগিং কি?
র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে ''পরিচয় পর্ব'' অর্থাৎ '' শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। প্রচীন গ্রীসে শিক্ষাপ্রতিষ্টান সমূহে সিনিয়র জুনিয়রদের পরিচিতির ক্ষেত্রে এই সংস্কৃতি প্রচলন ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে র্যাগিং এর রূপ পাল্টাতে থাকে বর্তমানে, সিনিয়ররা ভদ্রতা নামের গালভরা শব্দের আড়ালে জুনিয়রদের নিয়ে যথেচ্ছা শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রনা প্রদানের নামই র্যাগিং।
ইংরেজদের মাধ্যমে এই সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করলেও এর বিবর্তিত রুপটাই আমাদের মধ্যে রয়ে যায়। বিশেষ করে র্যাগিং এর খারাপ প্রভাব সবচেয়ে ভয়ংকর বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাতে। যেসব দেশে র্যাগিং এর উদ্ভব হয়েছে, সময়ের সাথে এরা র্যাগিং এর প্রভাব মুক্ত হলেও আমাদের উপমহাদেশে এটা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
কখনো কখনো সহপাঠীদের দিয়ে চড়-থাপ্পড় মারানো হয় এবং কান ধরিয়ে উপর থেকে নিচতলায় নামানো। বড় ভাইদের কাছে গিয়ে তোমার ব্রেস্টের মাপ দিয়ে আসতে বলা, ওড়না এত বড় কেন, বোতাম খোলা কেন, ভাইদের সামনে খাচ্ছ কেন, কখনো বলা হয় একগাদা লোকের সামনে "আশিক বানায়া", "মুন্নি বদনাম হুয়ি", কিংবা "পানি ওয়ালা ডান্স" এই জাতীয় গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচার জন্য...
মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া চার শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেওয়া হয় ডাস্টবিন থেকে পচা খাবার খাইয়ে, পরবর্তীতে তারা এটার বিরোধিতা করলে তাদেরকে অর্ধনগ্ন করে এক পায়ে রোদ এ দাড় করিয়ে রাখা হয়।
আর এসবের কারনেই, র্যাগিং এ আক্রান্ত নবীন শিক্ষার্থীরা কখনো শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই একাডেমী ছেড়ে দেয়, পালিয়ে যায়, এমনকি আত্মহত্যা করতে যাওয়ার পর্যায়েও চলে যায়।
অনেকেই এটাকে ট্র্যাডিশন মনে করেন। মূলতঃ এটা একটা নির্যাতনের চলমান প্রক্রিয়া, প্রতি জুনিয়র ব্যাচ তার সিনিয়র ব্যাচ এর কাছ থেকে এটার শিকার হয় এবং নিজেরাও একি মানসিকতায় পরিণত হয়। র্যাগিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বেয়াদবদের শিক্ষা দেয়া ভাল কথা তবে সেটার জন্য কতৃপক্ষ আছে। তাছাড়া বেয়াদবির শাস্তি কিন্তু নতুন করে তার সাথে বেয়াদবি করা বা তাকে বেয়াদবির ক্রিয়াকৌশল শিক্ষা দেয়া ??
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৫