somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোর

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড শব্দে দুটো নারকেল, গাছ থেকে পড়ল।
-একটু সাবধানে।মানু মাইররা হালাবি।দেইখ্যা ফালা।
চেচিয়ে বললেন সেলিম মৃধা।সোলেমান গাছের উপড়ে।সেলিম সাহেব সোলেমানকে দিয়ে ঝুনা নারকেল পাড়াচ্ছেন।
-সইররা খাড়ায়ন।গোড়ায় খাড়াইলে তো মরবেনই।
উপড় থেকে চেচায় সোলেমানও।

সোলেমান শেখ।পটুয়াখালির এক অজপাড়া গাঁ "বাজিতা ১ম খন্ডের" অধিবাসি।নামের শেষে শেখ পদবি থাকলেও সোলেমান পারিবারিক ভাবে মোটেও সম্ভ্রান্ত নয়।তদুপরি লেখাপড়া করার মত মেধা কিংবা সামর্থ কোনোটিই ওর নেই।সমগ্র কূলে রুগ্ন মা ছাড়া আর কেউ নেই।গ্রামের মানুষের ফাই ফরমাশ খেটে কিছু রোজগার।সোলেমানের মা এই সেলিম মৃধার বাড়িতেই কাজ করে।

সেলিম মৃধাই এই গ্রামের সবচে ধনী আর সম্মানী ব্যাক্তি।লোক হিসেবে তার সুখ্যাতি সারা জেলাময়।কিন্তু সকল ভালোর মাঝেও যে কিছু একটা থাকে,যা কদাচিৎ কারো চোখে পড়ে না।

ছ খানেক গাছ বেয়ে সোলেমান নিচে নামে।সব মিলিয়ে আটাশ টি নারকেল পেড়েছে।
-কাক্কু, মোরে চাইড্ডা নাহোইল (নারকেল) দেওয়া লাগবে।
-চাইড্ডা?
-হয়।
-এ হালার ফো হালা।ফহিন্নির পো।পাড়ছ কয়ডা?
-খামাড় (গালি) দেন ক্যা?এত কষ্ট হইররা পাড়ছিও।আর.....
-নে, এই দুইডা নে।
-না মোর চাইড্ডাই লাগবে।
-চোফারের (চড়) চোডে কান কোন গরম হইররা হালামু।বেদপ।মোহে (মুখে) মোহে কতা কও।হগুনের (শকুন) ফো।
সোলেমান আর প্রতিবাদ করে না।
-নে,এই ছোট্টডাও ল।যা ভাগ।
তিনটে নারকেল নিয়ে সোলেমান নিঃশব্দে প্রস্থান করে।

সেদিন ছিল বুধবার।বাজিতা গ্রামের বিখ্যাত হাট, শিশুর হাট। প্রতি রবিবার ও বুধবার এখানে হাটবার।সোলেমানের চারটে নারকেল হলে ভালো হত।একটু বেশী টাকায় বিকোতে পারত।যাও ভালো তিনটে আছে।মৃধা সাহেবের সাথে পীড়াপীড়ি না করলে হয়ত একটি দুটিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হত।
-কিরে সোলেমান।অ কি? নাহোইল?
-হয়, মজিদ কাক্কু।কেনবেন?
-কত তে দিবি?
-একশ বিশ টাহা।
-ছেমড়া অ চাও কি?
-ক্যা?কত দেবেন?
-পঞ্চাশ টাহা।
-না।
-না কি? বেশী কতা না কইয়্যা ব্যাগে ভর।
-এত কমে পারমুনা।
-দিমুয়ানে পড়ে। আগে ব্যাগে ঢুকা।
এর থেকে বেশী প্রতিবাদ করার ক্ষমতা সোলেমার নেই।অনেক তর্কের পর ষাট টাকা নিতে পেরেছে সে।
বাপ ছাড়া,এতিম সোলেমানকে ঠকাতে ভারী আনন্দ।তবুও ঠকার বাজারে কিছু উপরি লাভ করতে হলে একটু তর্কে জড়াতেই হয়।শিশুর হাটে,শিশু সোলেমান বরাবর এভাবেই ঠকে যাচ্ছে।

একটি শার্ট সোলেমানের খুবইদরকার।চেয়েছিল আজকের নারকেল বিক্রির টাকা আর আগের জমানো কিছু মিলিয়ে নতুন একটি শার্ট কিনবে।কিন্তু শার্টের দাম সে তুলতে পারল না।
একটি পুরোনো শার্ট কিনতে পেরেছে।লাল জামাটি কিনেছে মোসলেম চৌকিদারের কাছ থেকে।লোকটি কোথা হতে যেন পুরোনো সব জিনিস জোগার করে।

সেলিম মৃধার বাড়িতে চুরি হয়েছে। ওনার নাতি বেড়াতে এসেছে।ওরই শার্ট চুরি গেছে।উঠোনের দড়িতে শুকোতে দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

-সোলেমান রে।ও সোলেমান।
-কি মা?
-তোর সেলিম কাক্কুগো বাড়ি যাইয়া ক যে মোর শরীল বালো না।মুই আইজগো যামু না।
কোনোমতে কথাগুলো শেষ করতে পারলেন তিনি।বেদম কাশিতে দম আটকানো পরিস্থিতি।
অগত্যা সোলেমান সেলিম মৃধার বাড়ি যায়।

-ও কাকি।
-তোর মায় কই?
সেলিম সাহেবের গিন্নি জেগেস করেন।
-মায়র অসুখ।আইজ আইবে না।
সেলিম সাহেব এরই মধ্যে ওখানে উপস্থিত হয়।একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সোলেমানের দিকে।
-এই শার্ট কই পাইছ?
-কিনছি।
-কেনছ? চোরের জাত। তুই শার্ট কেনছ কিদ্যা (কি দিয়ে)?
চুরির দায়ে সোলেমানকে তৎক্ষনাৎ নেওয়া হলো গাঁয়ের মেম্বার হালিম মোল্লার কাছে।সোলেমান যতই অস্বীকার করুক,সে যে গ্যাঁড়াকলে ফেসে গেছে, তা থেকে বের হওয়া সোলেমানের মত দুর্ভাগা এতিমের পক্ষে সম্ভব নয়।সকল প্রমাণ ওর বিপক্ষে।বিচার হলো।কঠিন বিচার।
-ও মাগো।ও মাগো।মুই চুরি হরি নাই।
সোলেমানের চিৎকার কেউ শোনেনি।ওর মাও না।

একশ জুতোর আঘাতে জর্জরিত সোলেমান ধীরে ধীরে বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হয়।সেখানে অনেক লোকের ভিড়।মুহুর্তেই সোলামান যা বোঝার বুঝে যায়।তার যে আর আপন বলে কেউ রইল না।ওর মা বিশ্ব সংসারের সকল লেন-দেন চুকিয়ে ফেলেছে।

খুপড়ির পায়রাগুলি ভয়ের চমকে উড়ে চলে গেল।সোলেমানের শোক চিৎকারে পুকুরের পানিতে ঢেউ খেলে যায়।চোখের পানিতে ভিজে গেছে উঠোনের মাটি।
গোড় কবরে নামানো হলো।কিন্তু সোলেমানের চিৎকার থামে না।অনেক রাতে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

পরদিন............

মৃধা বাড়ির সবাই দেখল।সবাই।সেলিম সাহেবের নাতি ওর হারানো শার্টটি পড়ে বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে।গতকাল সেটা উঠোন হতে নিয়ে ঘরেই রাখা হয়েছিল।

কিন্তু, সোলেমান?

সেদিনের পর থেকে সোলেমানকে ওই গ্রামের কোথাও কোনোদিন দেখা যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×