somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষণিকের ভালোলাগা

০৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হঠাৎ করে গা কাঁপছে সাজ্জাদের।মাথার উপর তাকিয়ে দেখে বিশাল ওজনের এসিটা চালু করা হয়েছে।একটু গুজে বসল সে।চারপাশের মানুষজন ক্যামন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে,যেন চিড়িয়াখানার কোন পশু দেখছে। হ্যাঁ, সাজ্জাদ একটা পশু, ও একটা কুত্তা, গলায় দড়ি ঝুলানো পোষা কুত্তা। সে তার বাবার কুত্তা। কখনো ছেলের মত আদর পায়নি সে বাবার কাছ থেকে, পেয়েছে পশুর মত তাচ্ছিল্য আর চোখ ভরা ঘৃণা। চেয়েছিল আজীবন সয়ে যাবে কষ্টগুলো, কিন্তু পারল না। না পারলে কিছু বিসর্জন দিতে হয়। সাজ্জাদ পরিবারের মায়া বিসর্জন দিল এবং ঢাকায় এল।

ঢাকায় পৌঁছে খিদে লাগে তার। সামনে একটা হোটেল টাইপের কিছু দেখে আট-পাঁচ না ভেবেই ঢুকে পড়ে তাতে।হোটেলে ঢুকা মাত্রই যত রকমের বিপত্তি ঘটতে শুরু করে। লাল, নীল, সবুজ ক্ষীণ আলোর মাঝে সারি সারি অনেক টেবিল সাজানো। হোটেলে ঢুকতেই পাশে একটা কৃত্রিম ঝর্ণা চোখে পড়ে। কিছুটা ঘাবড়ে যায় সাজ্জাদ। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কোণার এক টেবিলে বসে সে। মানুষগুলো কেমন জানি তার মত নয়। টান টান চোখ, বেটে আকৃতির গঠন, অনেকটা তাদের গ্রামের আদিবাসীদের মত। তবে এরা পোষাক-আষাকে অনেক মার্জিত আর ফর্সা তাদের গায়ের রং। বুঝতে বাকি রইলনা তার যে সে ভূল করে দামী রেস্তোরাতে ঢুকে পড়েছে। তার বেরিয়ে যেতেও লজ্জা লাগছে, আবার বসে থাকতেও মন চাইছে না।

কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এল।

''What would you like to take,sir?''

সাজ্জাদ হা করে ওয়েটারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কী বলে কিছুই তো বুঝতে পারছেনা সে.....

''Excuse me,sir.What would you like to take?''

এবারো নিশ্চুপ সাজ্জাদ।

অনেক্ষন থেকেই পাশের টেবিলে বসে সাজ্জাদের কান্ডকারখানা দেখছে সুস্মিতা। বুঝতে পারছে ছেলেটা বিপদে পড়েছে। বিপদে পড়া মানুষদের জন্যে কেন জানি সবসময় মায়া জাগে তার। সাজ্জাদের অসহায়ত্ব দেখে তার মায়া জাগল। নিজের সীট থেকে উঠে সাজ্জাদের কাছে গিয়ে দাড়ায় সুস্মিতা।

''যদি কিছু মনে না করেন,বসতে পারি?''

সাজ্জাদ এবার আরো ঘাবড়ে গেল। এতক্ষন ছিল একটা মানুষ, তারওপর চেনাজানা নেই এমন আরেকজন এসে জড়ো হয়েছে। কপালটাই খারাপ তার, মনে মনে ভাবে সে।

এদিকে উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে সাজ্জাদের পাশের সীটে বসে পড়ে সুস্মিতা। কিছুটা বিব্রত হয় সাজ্জাদ। তবে আস্তে আস্তে মানিয়ে উঠার চেষ্টা করে সে।

''কী খাবেন?''

-বুঝলাম না।

''এতক্ষন তো জানতাম ইংরেজি বুঝেন না আপনি, এখন তো দেখছি বাংলা বুঝতেও সমস্যা আছে।''

কথাটা বলে মুচকি হাসে সুস্মিতা। সাজ্জাদ লজ্জা পায়, লজ্জায় মুখটা আপেলের মত লাল হয়ে উঠে। পরক্ষনেই জবাব দেয়,

-কঁচুর চচ্চরি,আলুভর্তা,ভাত আর ডাল।

''কী বলছেন এসব?এগুলো তো এখানে পাওয়া যায়না।''

-তাহলে?এখানে কী পাওয়া যায়?

''পিজ্জা,বার্গার,কফি,চিকেন এসবই।''

-এগুলোর তো মেলা দাম!! আমিতো ভেবেছিলাম এটা ভাতের হোটেল। আমার কাছে তো ওসব খাওয়ার টাকা নেই।

সাজ্জাদের কথা শুনে আবার হেসে দেয় সুস্মিতা।সাজ্জাদের লজ্জা এবার দ্বিগুণ বাড়ে।

''আপনাকে টাকা দিতে হবেনা,আমি দিয়ে দিব।এখন বলুন কী খাবেন?''

--চিকেন।

''চিকেন আর কোল্ড ড্রিংকস,ওকে?''

--জ্বী ঠিকাছে।

ওয়েটার দুটো চিকেন আর দুটো কোল্ড ড্রিংকস এর অর্ডার নিয়ে চলে যায়।

''ও হ্যাঁ,পরিচয় তো হলনা,আমি সুস্মিতা।''

--আমি সাজ্জাদ।

''দেখে তো মনে হয় ঢাকায় আপনি নতুন।''

--জ্বী,নতুন।আমি গ্রামের ছেলে।দক্ষিণ কাঞ্চনা আমার বাড়ি।এই প্রথম ঢাকা আসলাম,তাও পালিয়ে।

''পালিয়ে কেন?''

সাজ্জাদ তার ঘটনা খুলে বলে। শুনে সুস্মিতার মায়া জাগে। মনে মনে ভাবে ছেলেটাকে তার বাসায় নিয়ে রাখবে,তার সাথে সাথেই থাকবে।ততক্ষনে খাবার এসে গেছে।

''নিন, খাওয়া শুরু করুন।''

--আপনি খাবেন না?

''খাচ্ছি,আগে আপনি তো শুরু করুন।''

কাটা চামচ,ছুরি দিয়ে আগে কখনো এভাবে খাইনি সাজ্জাদ।তাই এভাবে খেতে কষ্ট হচ্ছে।

''সমস্যা নেই,হাতে ধরে খান।''

খাবার শেষে এবার যাবার পালা। সুস্মিতা সাজ্জাদকে তার সাথে তার বাসায় যেতে বলে। সাজ্জাদ রাজি হয় না। এই অচেনা শহরে প্রথম দিনেই সুস্মিতা তার যথেষ্ট উপকার করে ফেলেছে। এক অচেনা মেয়ে থেকে এর বেশী কিছু চাওয়াটা ধৃষ্টতার পর্যায়ে পড়ে যায়। সুস্মিতার গাড়ি তার জন্যে অপেক্ষা করছে। সাজ্জাদ সুস্মিতাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।

******

কিছুদিন পর..…

ফার্মগেটে একটা মেসে ভাড়ায় থাকে সাজ্জাদ। সেদিনের রেস্তোরাঁর ঘটনার পর থেকে সুস্মিতার সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। কিন্তু ইদানিং এলাকার লোকজন কেমন জানি ফ্যালফ্যাল করে সুস্মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। সুস্মিতাকে নিয়ে ঘুরতে বেরুলেই মানুষ সমালোচনা করে উঠে। সুস্মিতার বাবাও ব্যাপারটাকে ভাল চোখে দেখতে পারছেন না, বুঝতে পারে সাজ্জাদ।একা একা বারান্দায় দাড়িয়ে কী করা যায় ভাবছে সে। অমনি মোবাইলে সুস্মিতার নাম্বার ভেসে উঠে।

''শুন,কাল আমার সাথে একটু বের হতে হবে তোমাকে।''

--কোথায় যাবেন আপনি?

'' তোমাকে নিয়ে ঘুরব সারাদিন।গতকাল একটা নতুন শাড়ি কিনেছি। ভাবছি ওটা গায়ে দিয়ে তোমার সাথে ঘুরে বেড়াব।''

--"আশা করি শাড়িটিতে আপনাকে মানাবে ভীষণ।"

''ঠিকাছে কাল সকাল সকাল রেডি থেকো কিন্তু।''

সুস্মিতার কথার জবাব না দিয়ে ফোন রেখে দেয় সাজ্জাদ।

*****

কতক্ষন হল সুস্মিতা রেডি হয়ে বসে আছে,কিন্তু সাজ্জাদ এখনো এল না। তার মোবাইলে হাজারটা কল করেও তার হদিস মেলে না। সকাল পেরিয়ে দুপুর, দুপুর পেরিয়ে বিকেল। সুস্মিতার মনে অভিমান জাগে। সহ্য করতে না পেরে ছুটে যায় সে সাজ্জাদের মেসে। গিয়ে দেখে সাজ্জাদের রুম খালি,সাজ্জাদ নেই। সাজ্জাদের কাপড়-চোপড় ও দেখা যাচ্ছে না। মেসের বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলে, তিনি তার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দেন।

হাতে নিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করে সুস্মিতা।

''প্রিয় সুস্মিতা,

আমার বিপদে আপনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেজন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ।সময় হয়েছে,এবার আমার কিছু করার পালা।এলাকার মানুষজন আমার সাথে চলাফেরার করার কারনে আপনাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।এ নিয়ে আপনার বাবাও বেশ চিন্তিত।আমি চাইনা আমার কারনে আপনার বদনাম হোক।তাই দ্রুত সরে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করলাম।আমার জন্য চিন্তা করবেন না।এত দিনে ঢাকা শহরটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।কোথাও না কোথাও মাথা গুজাবার ঠাই যোগাড় হয়ে যাবে আশা করি। ভাল থাকবেন, আর আমার জন্য দোয়া করবেন।বড় ইচ্ছে ছিল শাড়িটাতে আপনাকে কেমন লাগে তা দেখে যাবার। তা আর হয়ে উঠল না।

ইতি,

সাজ্জাদ।''

সুস্মিতা দাড়িয়ে আছে।তার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।সে কি করবে কিছুই বুঝ উঠতে পারছেনা। কিছু না বুঝলে কান্না করাই শ্রেয়। তাতে মনটা হালকা হয়। সুস্মিতা কাঁদছে।এ কান্না যেন থামার নয়..…
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×