somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারুলতা

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি রঞ্জন।রঞ্জন চক্রবর্তী।সবেমাত্র অনার্স তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েছি।বিয়ের জন্য এ বয়সটা উত্তম হলেও এত তাড়াতাড়ি সংসারের চাপ মাথায় নিতে চাইছিলাম না।আমাদের পরিবার রক্ষণশীল।রক্ষণশীল পরিবারে গুরুজনের মতামতের বাইরে যাওয়া বড় রকমের গোঁয়াড়ামি।আমার বাবা রাজপাটনা এলাকার সম্ভ্র্তান্ত জমিদার।তাই বংশের পদানুক্রমে আমি জমিদারের একমাত্র ছেলে।অর্থ,বিত্ত,ভোগ-বিলাসিতা কোনকিছুর কমতি না থাকলেও এই মহলের সবার একটা জিনিসের বড় অভাব।তা হল ব্যক্তিস্বাধীনতা।

বাবার মতে বিয়ের বয়সে আমি আরো এক বছর আগে পার করে এসেছি।সুতরাং আর দেরী নয়।এই মাসের মধ্যেই ভাল পাত্রী দেখে আমাকে বিয়ে করতে হবে।সুযোগ্য পুত্রের মত আমি কথা না বাড়িয়ে তার প্রস্তাব মেনে নিলাম।

-তোমার কাছে একটু পর মিতালি একটা ছবি নিয়ে যাবে।ভাল করে দেখো কিন্তু,ওই মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ের দিন ধার্য করা হবে।কাল একবার দেখে এসো মেয়েটিকে।
''জ্বী আচ্ছা'' বলে আমি আমার উপরতলার রুমে গমন করলাম।

কিছুক্ষন পর মিতালি একটা ফটো এনে আমার হাতে দিয়ে বলল,''ভাবী না অনেক সুন্দর,দাদা।আমি নিস্চিত তাকে দেখলে তুমি নির্ঘাত তার প্রেমে পড়ে যাবে।সময় পেলে দেখো কিন্তু একবার।
কথাটি বলে মিতালি আমাকে খোঁচা দিয়ে মিষ্টি হেসে চলে গেল।এমনিতেই বিয়ের কথা শুনে আমার মন খারাপ,তাই সেইদিনকার মত ছবিটি না দেখে বরং একটা বইয়ের ভেতরে ছবিটা রেখে আমি বেরিয়ে পরলাম।

এদিকে বিয়ে নিয়ে আমার বিড়ম্বনা দেখে বন্ধু মহলে দিনের অর দিন আমাকে নিয়ে উপহাস বেড়েই চলেছে।আমি যেন তাদের কাছে আগের সেই বন্ধুটি নেই,যেন সার্কাসের ক্লাউন পরা কোন এক জোকার বনে গেছি!সেদিন আর আড্ডা না জমিয়ে ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম।তারপর ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে শাওয়ার নিলাম।খাওয়া দাওয়া শেষে হালকা মোমের আলোতে হূমায়ুনের ''হিমু সমগ্র'' নিয়ে পড়তে বসেছি।এক পাতা উল্টাতেই টপ করে পাতার ভাজ দিয়ে ছবিটা মাটিতে পড়ে গেল।মাটি থেকে তুলে মোমবাতির আলোতে ছবিটা ধরতেই মিষ্টি হাসির এক কিশোরী সুলভ চেহারা আমার চোখে ভেসে উঠল।বুঝতে বাকী রইলনা এই মিষ্টি হাসির মেয়েটিই কিছুদিনের মধ্যে আমার অর্ধাঙ্গী হতে চলেছে।কাঁচা হাতের তোলা ছবিতেও তাকে দেখতে দারুণ লাগছে।বড়জোর সতেরো হবে মেয়েটির বয়স।অথচ সারা শরীর জুড়ে যৌবনের কী গভীর প্রাচুড়্য!মিতালির কথা নিষ্ফল হয়নি।সত্যি আমি মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেলাম।বিবাহ নিয়ে মস্তিষ্কে যে কিঞ্চিত বিড়ম্বনা ছিল তা অচিরেই দূর হয়ে গেল।সেদিনের মত আমি আর ঘুমাতে পারলাম না।সারা রাত শুধু মেয়েটির স্বপ্নে আচ্ছন্ন ছিলাম।
সকালবেলা সচরাচর পাখপাখালির ডাকে ঘুম ভাঙলেও আজ মিতালির ডাকে আমার ঘুম ভাঙল।
-দাদা,এই দাদা,উঠ।বাবা জলদি তোমাকে ডেকেছে।
বাবার কথা শুনতেই আমি তড়িঘড়ি করে বিছানার নিকট হতে প্রস্থান করে তার রুমে গমন করলাম।
-কী ব্যাপার,আজ এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে?তোমাকে না বলেছিলাম আজ মেয়েটির সাথে দেখা করতে যেতে হবে…জলদি তৈরী হয়ে এসো,বাইরে তোমার জন্য ঘোড়ার গাড়ি অপেক্ষা করছে।

চট-জলদি প্রস্তুত হয়ে আমি নিচে নেমে এসে ঘোড়ার গাড়িতে উঠে বসলাম।ওতে উঠার পর থেকেই মনের মাঝে কীসব দুশ্চিন্তা খেলা করতে শুরু করে দিয়েছে।থেমে থেমে রুমাল দিয়ে আমি ঘাম মুছছি।আমার এহেন অবস্থা দেখে আমার একমাত্র যাত্রাসঙ্গী মিতালি হা হা করে হেসে দিল।সেই হাসি দেখে আমার ঠোঁটে-কপালে বিরক্তির রেখা ফোটে উঠল।তা দেখেই হয়ত পরক্ষনেই নিজ হাসিতে সজোরে ব্রেক কষে মিতালি চুপ বনে গেল।

-আচ্ছা,মেয়েটার নাম কীরে?
-চারুলতা,চারুলতা সেন।
বাহ,কী চমৎকার নাম,চারুলতা সেন।যেমন অপরুপ,তেমনি সুন্দর তার নাম।এবার আমি তার নামের প্রেমে পড়ে গেলাম।
এদিকে হাসি-আড্ডার ছলে কবে যে রাজনগর এসে পৌছেছি তার খেয়ালই ছিলনা।ভেবেছিলাম রাজনগর নামটার মত বিশাল দালানের সামনে এসে গাড়িটা থামবে।কিন্তু অচিরেই আমার বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণিত করে গাড়িটা লাল ইটের আবরনে গেরা পর্তূগীজ আমলের আদলে তৈরী একটা পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে এসে থামল।সেই বাড়ি থেকে বাড়িটির মত প্রাচীন আর জবুথবু শরীরের দুজন বয়স্ক লোক আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে অন্দর মহলে নিয়ে গেলেন।বাড়ির ভেতরে ঢুকেই জানতে পারলাম ওই জবুথবু শরীরের অধিকারী দুজনের একজন আমার হবু শ্বশুরমশাই।বিজয়বসু সেন তার নাম।

নাস্তা বিতরনের ফাঁকে ফাঁকে একে একে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে অবশেষে তিনি ক্ষান্ত হলেন।এত এত মুরব্বির সামনে এভাবে মাথা নিচু করে ভদ্র বালক সেজে বসে থাকতে আমার আর ভাল লাগছেনা।এহেন বিব্রকর অবস্থায় আমাকে পাঠানোর জন্যে মনে মনে বাবার সাথে শত ঝগড়া করতে লাগলাম।

অবশেষে আমাকে দীর্ঘ অপেক্ষার সাগরে ভাসিয়ে,আমার ধৈর্য্যের চরম পরীক্ষা নিয়ে লাল রঙের শাড়ি পরে চারুলতা আগমন করল।হালকা লাল রঙের শাড়িতে আবৃত সেই মায়াবি শরীরের অধিকারিনী আমার সামনে এসে বসতেই আমি আবার ঘামতে শুরু করলাম।এইবার আমার এইরকম পরিস্থিতি দেখে মিতালি একা না,চারুলতাকে সঙ্গে নিয়ে হাসতে লাগল।উপায়ান্তর না দেখে লজ্জায় আমি সাজাপ্রাপ্ত বালকের মত মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

মাঝে মাঝে আড়চোখে চারুলতাকে দেখছিলাম।মিতালির সঙ্গে ইতিমধ্যে বেশ ভাব করে নিয়েছে সে।যারা বলে ভাবী-ননদে কখনো জমেনা,তাদের আচ্ছা করে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিতে পারবে এই হবু ভাবী-ননদ জুটি।

আড্ডার ছলে দুপুর গড়িয়ে এল।এবার অন্নভোজের পালা।আমাকে রীতিমত অবাক করে দিয়ে খাবার টেবিল একে একে নানা পদে পরিপূর্ণ হতে লাগল।কী নেই তাতে,পাবদা মাছের ঝোল,সরষে দিয়ে মাখা আলুভর্তা,চিংড়ি কারী সহ আরো কত কী!বুজতে বাকী রইলনা যে জীবনের সব জমানো অর্থ মেয়ের বিয়ের জন্য একে একে বিলিয়ে দিচ্ছেন হবু শ্বশুর মশাই,হোক যত কষ্ট।

বাড়ির লোকেদের অতিরিক্ত আপ্যায়ন শেষে যখন হাত ধুয়ে আয়নার নিকট চোখ বারালাম,দেখলাম নিজের ভুড়িটা ততক্ষনে ছোটখাট একটা ফুটবলে পরিণত হয়েছে।যা হোক,সেদিকে আর না তাকিয়ে অবশেষে তাদের কাছ দেখে বিদায় নিলাম।যেতে যেতে চারুলতার মুখখানি আরো একবার স্মৃতিপটে একে নিয়ে গেলাম।
দিনপঞ্জিকার পাতায় একের পর এক সময় পেরিয়ে যেতে লাগল।অথচ বিয়ের শুভ লগ্ন কিছুতেই বের করা সম্ভব হচ্ছিল না।অবশেষে পণ্ডিত মশাই বিয়ের শুভ দিন ধার্য করলেন।আসছে ৩রা ফাল্গুন আমার বিয়ে।

অবশেষে সেই শুভ দিনটি সামনে এল।চারিদিকে কত শত লোকজন।তার মাঝে বিশেষ সাজে সেজে আমি একা মন্ডপে বসে আছি।কেমন যেন অদ্ভুৎ লাগছে।পরক্ষনেই যখন চারুলতার হাতখানি আমার হাতের উপর পড়ল,মনের মাঝে হালকা একটা শীতল প্রবাহ অনুভব করলাম।সেদিনই আমি বুঝতে পারলাম,এই মেয়ে অধিকারের কোন বস্তু নয়,সে আমার জীবনের অমূল্য ঐশ্বর্য।

ইতিমধ্যেই বাড়িতে বউ হয়ে আসার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই চারু আমার মাকে জয় করে নিয়েছে।মাও নিজের আপন মেয়ের মতই আগলে রাখছে তাকে সারাক্ষন।একে একে সংসারের সব নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরম মায়া ভরে।কিন্তু বাবার মন কেন জানি জয় করতে ব্যর্থ হচ্ছিল সে বারবার।
এজন্য চারুর মনটা খুব খারাপ।কিন্তু নিজের দুঃখ-কষ্ট সহজে প্রকাশ করতনা সে,বরং চরম শোকেও সে পরম হাসি মুখে নিয়ে সারা ঘর মাতিয়ে রাখতে সদা ব্যস্ত থাকত।শুধু রাত যখন গভীর হয়,আমাদের বাড়ির দক্ষিন দিকে যে ছাদটা আছে,সেখানটার এক কোনায় বসে কাউকে না দেখিয়ে নিরবে চোখের জল ঝরাত।আমি অনেকবার তা অবলোকন করলেও প্রথম প্রথম তেমন একটা পাত্তা দেই নি।সেই পাত্তা না দেওয়া যে আমার জীবনে এভাবে কাল হয়ে দাড়াবে তা যদি আগে জানতাম, তাহলে তখনই নিজেকে শুধরে নিতাম।এক বিন্দুও দেরী করতাম না।
সেদিন ক্লাশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক গুচ্ছ অপরাজিতা কিনে নিয়েছি ফুলের দোকান থেকে।অপরাজিতা ফুল চারুর খুব পছন্দ।এই ফুলের সাথে তার অনেকদিনের বন্ধুত্ব,অনেক সুমধুর আর পবিত্র তার ঘ্রাণ।বাড়ি ফিরে যখন ফুলগুলো তার হাতে দিলাম,সে শুধু মুচকি হাসি দিয়ে ফুলগুলো নিয়ে চলে গেল।সে হাসি যে কতটা ম্লান ছিল তা বুঝতে বাকী রইলনা।আমি রান্নাঘরে ঢুকে চারুর হাত ধরে আমার রুমে নিয়ে আসি,আর তাকে বলি জলদি রেডি হয়ে নিতে।সে লক্ষী মেয়ের মত তৈরী হয়ে আমার সাথে বেরিয়ে পড়ল।

উত্তর-পশ্চিম দিকে আমাদের যে আমের বাগানটা আছে,সেখানটায় চারুকে নিয়ে এলাম।বিকেল গড়িয়ে এসেছে।আকাশে কড়া রৌদের প্রাচুর্য এখন অনেকটা কম।পুরো বাগান জুড়ে শুধু গাছের ছায়া।পাকা আমের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত হয়ে আছে চারপাশ।সেখানটায় গাছের ছায়ার নিচে বসে চারুকে আড়কোলো করে শুইয়ে চুলে হাত বুলিয়ে আদর করছি।

-চারু,একটা কথা বলি?
-হুম,বল?
-তোমার হাসিটা কেমন জানি ম্লান হয়ে যাচ্ছে।নেই আগের মত সেই উদ্দামতা যেমনটি তোমায় প্রথমবার দেখেছিলাম।তুমি আমার জীবনের প্রতিটি মূহূর্তের সাথে এমনভাবে পেঁচিয়ে আছো,তোমাকে ছাড়া আমার এক মূহূর্তও চলা কষ্টের।সংসারে মানিয়ে নিতে গেলে একটু আধটু সমস্যা হয় সেটা আমি জানি।তোমার যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে বলতে পার।সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করব।
চারু নিশ্চুপ।কোন কথা বলছেনা।চোখে,মুখে,ঠোঁটে নেই তার কোন অভিযোগের সুর।আমার কথাটার যে কোন বাস্তব প্রয়োগ হবেনা তা আমি যেমন জানি,হয়ত চারুও তা জানত।তাইতো কোন কিছু না বলে ''চল,এবার যাওয়া যাক'' বলে চারু বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।আমিও আর কিছু না বলে চারুর পিছু অনুসরন করলাম।

পরদিন সকালে বাড়িতে বিজয়বসু সেন মানে আমার শ্বশুরের আগমন ঘটল।বাবাকে পেয়ে চারু সমস্ত কাজ ফেলে ছুটে এসে প্রণাম করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।শ্বশুর মশাইও চারুলতাকে অনেকদিন পর পেয়ে ভালবাসার বাহুডোরে শক্ত করে আগলে রাখলেন অনেক্ষন।চরম এই খুশির দিনেও বাবা-মেয়ের চোখের কোনায় কিছু একটা চিকচিক করে উঠল।বুঝলাম,এরা অন্য জগতের বাসিন্দা।

বাড়িতে এসে বাবার সাথে আগে কুশল বিনিময় না করে চারুকে নিয়ে অযথা মেতে উঠা বাবার চোখে দৃষ্টিকটু মনে হল।আর তা স্পষ্টভাবেই তার কথা বলার ঢং এ ফোটে উঠল।
-বেয়াই,কেমন আছেন?
-কেমন আছি তার কী কেউ খোঁজ রাখে?আছি কোনরকম।তা কী মনে করে এখানে আসা?
বাবার এমন প্রশ্নে বিজয়বসু বাবু খানিকটা হকচকিয়ে গেলেন।পরক্ষনেই নিজেকে সামলিয়ে তিনি বলেন,''তেমন কোন কারন নেই,মেয়ের কথা হঠাৎ মনে পড়ল তাই দেখতে চলে এলাম।''
-ভাবছেন আমাদের কাছে দিয়ে মেয়ে অসুখী আছে,আমরা ঠিকমত আদর-যত্ন করছি কীনা তা পরখ করতে এসেছেন??নিজ চোখেই তো দেখতে পাচ্ছেন আপনার মেয়ে এই রাজপ্রাসাদে কেমন সুখে আছে।

শ্বশুর মশাই বাবার ইঙ্গিত বুঝতে পারলেন।তাই অহেতুক কথ না বাড়িয়ে তিনি চুপচাপ প্রস্থান করতে লাগলেন।যেতে যেতে শুধু আমার দিকে চেয়ে কী জানি বলার বৃথা চেষ্টা করে গেলেন।আমি সে চোখের ভাষা বুঝতে পারলাম না।

রান্নাঘর থেকে চা-নাস্তা নিয়ে এসে চারু বারান্দায় এসে দেখে বিজয়বসু বাবু নেই,আছি শুধু আমি আর আমার বাবা।এ অবস্থা দেখার সাথে সাথেই হৃদয়্টা ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে গেছে তার।কিন্তু সেই বেদনা আমাদের চোখের আড়াল করে চারু আমাকে আর বাবাকে চা বিতরণ করে অন্দর মহলে চলে গেল।সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে মিতালির কাছ থেকে জানতে পারলাম,একা একা রুমে দরজা লাগিয়ে অনেক্ষন কেঁদেছে চারু।শেষে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আমি আস্তে করে রুমে ঢুকে চারুর পাশে বসি।মোমবাতির আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাই তার মায়াবি দুটো চোখের নিচে সমানভাবে কালি পড়েছে।চেহারাটাও কেমন জানি ফ্যাকাশে আর বিলীন হয়ে গেছে, বুজতে পারলাম মানষিক যন্ত্রণায় তিলে তিলে মরছে সে।যে মেয়ে বেড়ে উঠেছে প্রকৃতির অবাধ মুক্তস্বাধীনতায়,খেলাধুলায় চষে বেড়িয়েছে সমস্ত মাঠ-ঘাট,তার কাছে মায়াহীন এই রাজপ্রাসাদ স্পষ্টতই কারাতুল্য।কিন্তু এ থেকে যে তার মুক্তি নেই।কেননা এই রাজপ্রাসাদেরই উত্তরসুরীর সাথে সে সাতপাঁকে বাধা পড়েছে যে তাকে ভালবাসতে জানে,কিন্তু মুক্তি দিতে জানেনা।

হঠাৎ এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি চারু জেগে উঠেছে।
-তুমি এসেছো,ডাকনি কেন?
-তোমাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।তাই ভাবলাম তোমাকে ডাকা ঠিক হবেনা।
-কই,আমি ক্লান্ত না তো,একা একা বসে ছিলাম,তাই হয়ত ঘুমে কাবু করে নিয়েছে।তুমি বস,আমি এক্ষুনি ভাত বেড়ে দিচ্ছি।
-লাগবেনা।আমি খেয়ে নিয়েছি।
-ওমা কবে খেলে?
-একটু আগে,মিতালি বেড়ে দিয়েছে।
-তাহলে তোমার জন্য এক কাপ চা করে আনি।তুমি বস।
-চারু,চল ছাদে যাই,তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে।

রাত তিনটা।আকাশে অজস্র তারাদের আনাগোনা।আমি আর চারু দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি।এই ফাঁকে আমার কবিবন্ধু ''ডি মুন'' কে দিয়ে চারুকে উৎসর্গ করে সদ্য লেখা কবিতাটা পাঠ করে শুনালামঃ
চারু, তুমি কি জানো
তোমার নরম হাতের ছোয়ায় কতটা উষ্ণতা
তোমার নিশ্চুপ নীরবতায় কতটা মৌনতা!

প্রকৃতি তার শেষ সঞ্চয় বুঝি তুলে দিয়েছে তোমার অবয়বে
তোমার নিটল চোখে, তোমার কেশবিন্যাসে
সৌন্দর্য পিপাসু এ পোড়া চোখ তাই ভিড়েছে তোমার বন্দরে
তোমার অভিমানে তোমার হাসিতে তোমার বচনে
পেয়েছি আমার শেষ আশ্রয়।

চারু, তুমি কি জানো
তোমার নিশ্বাসের শব্দটাও আমার কতোটা প্রিয়;
মাঝরাতে তোমার দিকে চেয়ে থেকে কতবার শুনেছি তা
তোমার অলক্ষ্যে, তোমার অজান্তে;
আমি হারিয়েছি নিজেকে তোমার গভীরে
চেয়ে চেয়ে দেখেছি তোমার সৌন্দর্য অনিমেষ দৃষ্টিতে

তোমার হাসিতে মুগ্ধ হয়েছে এই মন
তোমার স্পর্শে আজন্ম অশান্ত আমি ভীষন তৃপ্ত এখন
বেদনার যদি কিছু থেকে থাকে তোমার হৃদয়ে
নাহয় তা ভিড়িয়ে দাও আমার বন্দরে
তোমার করস্পর্শে মনে আজ আসুক প্লাবন
ভালোবাসায় ভেসে যাক মৌনতার শিথিল বাঁধন

চারু, তোমার হাতের উষ্ণতাটুকু আমাকে দাও
চলো নক্ষত্রমন্ডলীর নিচে এই জোসনায় দুজনে করি অবগাহন।

-বাহ,বেশ ভাল হয়েছে কবিতাটা।তাহলে এই ছিল তোমার সারপ্রাইজ?আমার বেশ মনে ধরেছে,সত্যি বলছি।
-ধন্যবাদ।
-তোমার জন্যেও কিন্তু একটা সারপ্রাইজ আছে।
-আমার জন্যে??বল দেখি সারপ্রাইজটা কেমন?
-কাছে আস,কানটা এইদিকে পাত।আমি মা হতে চলেছি।
-কী বললে!তুমি মা হতে চলেছ,তার মানে.....তার মানে আমি বা-বা হতে চলেছি?আমি বাবা হতে চলেছি,আমি বাবা হতে চলেছি,চারু...আমি বাবা হতে চলেছি।
বলে চারুকে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে জীবনের সবচেয়ে বড় খুশি আকাশে-বাতসে ছড়িয়ে দিলাম।মাঝরাতে আমাদের দুজনের এরুপ অনর্থক হৈচৈ শুনতে পেয়ে ততক্ষনে পুরু বাড়ি সজাগ।শুনতে পেলাম বাবা নিচ থেকে চেচিয়ে আমাদের ডকছেন।মুহূর্তের মধ্যেই সব আনন্দে জল ছিটিয়ে আমরা নিচে গমন করলাম।
নিচে নেমে দেখি বাবা ঘুমে কাতর চোখে বিরক্তির আভা মাখিয়ে দাড়িয়ে আছেন।অন্যান্য সদস্যরাও আছে তার পাশে। -বলি,মাঝরাতে এভাবে চেঁচামেচি করে সবার ঘুম না ভাংলেই কী নয়?তা কীসের এত চেঁচামেচি শুনি? আমি বারাবরের মতই বাবার সামনে কিছু বলতে পারলাম না।অগত্যা চারুকেই মুখ খুলতে হল। -বাবা,আপনি দাদা হতে চলেছেন।কথাটা শুনে পরিবারের সবাই খুশি হলেও বাবার চোখে তেমন উচ্ছ্বাস ধরা পড়েনি।
-দাদা হতে চলেছি বেশ ভাল কথা।তাই বলে কী সারা বাড়ি এক করে ফেলতে হবে নাকি?তুমিও না বউমা কিছু বুঝ না।বলি বাড়ি থেকে কোন আদব-কায়দা শিখে এসেছ,নাকি নতুন করে শেখাতে হবে?
পরিবারের চরম এই খুশির দিনেও বাবা চারুকে ছোট করতে এক বিন্দুও পিছপা হলেন না।বাবার কথা শুনে চারুর চোখে সঙ্গে সঙ্গে পানি চলে এল,কিন্তু বেয়ে পড়ল না।চারুর চোখে জল দেখে এবার আর নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারলাম না।চেঁচিয়ে বাবাকে কিছু বলতে যাব অমনি আমার হাতখানা ধরে চারু আমাকে থামিয়ে দিল।আশ্চর্য!এই মেয়েটা পারে কেমনে এত অপমান সহ্য করতে??আমি বারেবারে বিস্মিত না হয়ে পারিনা।
-শোন,বউমা।আমাদের পরিবারের একটা রীতি আছে যে,বংশের প্রথম সন্তান ছেলে হতে হবে।তোমাকেও কিন্তু একটা নাতি উপহার দিতে হবে,নাতির ব্যতিক্রম যেন না হয়।
কথাটি শুনেই চারু মনে মনে আরও একবার মূর্ছা গেল।অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলো তার চারপাশ।কী হবে যদি সে একটি পুত্র সন্তান উপহার দিতে না পারে,কী হবে যদি একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়,সে কী টিকে থাকতে পারবে এই প্রাচীন সমাজব্যাবস্থায়,বেড়ে উঠতে কী পারবে স্বাধীনভাবে?নাকি ফুল হয়ে আত্মপ্রকাশ করার আগে অঙ্কুরেই ঝরে যাবে?মনে মনে অজানা আসু বিপদের কথা ভাবতে থাকে সে।
-কী হল,চারু?কী এমন ভাবছ?
"কিছু না" বলেই সেদিনের মত চারু ঘুমাতে চলে গেল।আমি আনমনে বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে সিগারেট টান্তে লাগলাম।সেদিন আমি কেন জানি ঘুমাতে পারলাম না।
এদিকে গোদভরাই রসম উপলক্ষে বাড়িতে অতিথিদের আগমন ঘটেছে।সারা বাড়ি জুড়ে শুধু হৈচৈ আর হৈচৈ।সবাই নাতবউয়ের গুণের প্রশংসা করলেও নাতি উপহার দেওয়ার কথা বারেবারে স্মরণ করিয়ে দিতে মোটেও ভুলছে না।আমার জেঠিমা তো বলেই উঠল,দেখ বউমা কোনকিছুর হেরফের যাতে না হয়,জানই তো,তোমার শ্বশুর মশাই কেমন প্রকৃতির লোক।ছেলে সন্তান জন্ম না দিলে তোমার কপালে খারাপই আছে বলে দিলাম,হুম!!

পরদিন বিকেলবেলা চারুর প্রচন্ড প্রসব বেদনা উঠে।আমি ভার্সিটির কাজে ভোরে কলকাতা চলে যাই।তিনদিন পর বাড়ি ফিরে জানতে পারি চারু আর এই দুনিয়াতে নেই।মাসের পর মাস তীব্র মানষিক যন্ত্রণা এবং শেষে প্রসব বেদনার সাথে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে পাড়ি জমিয়েছে সে।শুধু তার অস্তিত্ব হিসেবে রেখে গেছে তারই মত দেখতে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান।অবশ্য মেয়েটিকে না দেখে মৃত্যুবরণ করে ভাল করেছে চারু।তা না হলে ফুটফুটে এই কন্যা সন্তানকে নিয়ে আমার উপর যে ধকল গিয়েছে তা যদি দেখত সে,বেঁচে থেকেও নির্ঘাত মৃত্যুবরণ করত সে।তারচেয়ে এসব না দেখেই মৃত্যুবরণ তার জন্য মঙ্গলকর হয়েছে।
রাতের দিকে চারুর নিথর দেহে আগুন দিয়ে এক বুক বিষণ্ণতা নিয়ে বাড়ি ফিরলে বাবাকে বলতে শুনি,আমার নয়নের মণি কন্যা সন্তানকে যেন দূরে কোথাও আবর্জনায় ফেলে আসা হয়।সেদিন আর আমার হাত ধরে বাঁধা দেওয়ার জন্য চারু ছিলনা।বাবার এ ধরনের কথা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না।তীব্র কষ্টের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ বাবার গালে চড় লাগিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে চিরতরে বেরিয়ে আসলাম ঘর থেকে।তারপর থেকে আর এক মুহূর্ত পিছু না ফিরে চারুর আদরশে মেয়েকে মানুষ করে তুলতে পাড়ি জমাই সূদূর অস্ট্রেলিয়ায়।
* * * * * * * * * * * * *
বিশ বছর পর......
চারু অবশেষে ফিরে এসেছে।দীর্ঘ চার বছরের দূরত্ব কাটিয়ে মেয়ে আমার পড়ালেখা শেষে অবশেষে বাবার কোলে ফিরে এসেছে।ব্যবসার কাজে আমি আগেই বাংলাদেশে ফিরে আসলেও মেয়ে আমার পড়ালেখার জন্য এতদিন ওখানেই ছিল।সেখানে মানুষ হয়েছে দূরসম্পরকের এক খালার কাছে।এতদিন পর তাকে দেখে মনে হল যেন চারুলতাকে ফিরে পেলাম আবার আমি।যেন মনে হল পুনর্জন্ম নিয়ে আমার মেয়ে হয়ে আবার আমার মাঝে ফিরে এল আমারই চারুলতা সেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ ডি মুন,গল্পের স্বার্থে চাওয়া মাত্রই সুন্দর একটি কবিতা লিখে দেবার জন্যে।

কিছু কথাঃ আমাদের সমাজব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।পরিবর্তন এসেছে নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও।কিন্তু সেই পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গিতে আছে কতটা স্বচ্ছতা,নাকি আছে লৌকিকতা?সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে আমরা ভাল ভাল জামা কাপড় গায়ে দিয়ে ভাল ভাল খাবার খেয়ে যতই আধুনিক মানুষ বলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করি না কেন,একবারের জন্যেও আমরা কী ভেবে দেখেছি আমরা আজো কতটা প্রাচীন রয়ে গেছি?আমাদের চিন্তা ভাবনার প্রতিটি পরিধিই প্রাচীন বেষ্টনীর আবরণীতে ঘেরা।তা না হলে কেন একজন মহিলাকে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে স্বামী,সন্তান,ঘরছাড়া হতে হবে?কেনই বা তাকে হাস্পাতালের বেডে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে ঢুকে ঢুকে মরতে হবে?আমরা কী পারিনা কন্যা সন্তানসহ তাদের বুকে জড়িয়ে নিতে,পারি কী না তাদের জীবন রঙিন স্বপ্নে ভরিয়ে দিতে?বিবেকবান জাতির কাছে প্রশ্ন রইল।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×