শীতের রাতে ভাবুক শালিক এদিক-সেদিক উড়ে,
অবশেষে থামল গিয়ে দুষ্ট কাকের ঘরে।
কাক মশাই বড্ড ক্ষ্যাপা, ডাকল জোরে হাক-
মস্ত সাহস দেখি তোর! জান বাঁচাতে ভাগ!
নত মাথায় ভীতু শালিক চাপা স্বরে বলে-
একটু দয়া কর ভাই, যাব ভোর হলে।
শীতের প্রকোপ বড্ড বেশী, কুয়াশায় চোখ ভার,
এখন যদি উড়তে যাই, ঠান্ডায় খাব মার।
নিঠুর কাক পাষাণ অতি, দয়া নাহি করে,
তাড়িয়ে দেয় শালিকটিরে, সজোরে ঘাড় ধরে।
কষ্ট পেয়ে দুখী শালিক যেতে যেতে বলে-
এর প্রতিদান নিশ্চয়ই তুই একদিন পাবি ছলে।
শীত পেরিয়ে গ্রীষ্ম আসে, খাঁ খাঁ করে রোদ্দুর,
জল না পেয়ে পিপাসার্ত কাকের বুক করে ধুর-ধুর।
হেথায় ছুটে, হোথায় ছুটে নাই কো জলের দেখা,
যতদূর তার চোখ যায় দেখে মাঠ-ঘাট সব ফাঁকা।
ধীরলয়ে সে কাবু হয়ে যায়, দ্বিগ্বিদিক ছুটে,
উড়তে উড়তে অবশেষে তার শালিকের সাক্ষাত জুটে।
শালিক পাখিটি একান্ত মনে পানি করছিল পান,
তা দেখে তৃষ্ণাতুর কাকের যেন ফিরে আসল প্রাণ।
ফুড়ুত করে উড়ে এসে সে পুচ্ছ মেলে আকুতি করে,
ওহে শালিক, এক চুমুক জলদি পানি দাও খেতে—
এই মৃতপ্রায় কাক সজোরে মিনতি করে।
শালিক পাখি অট্টহেসে তুচ্ছ স্বরে বলে—
কি মুখে তুমি করো মিনতি, আমায় করেছিলে কি দয়া?
যেদিক থেকে এসেছ, ছুটে যাও সেদিক—
আমিও দেখাব না মায়া।
লজ্জায় কাক এতটুকু হয়ে মাথা নিচু করে,
উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে শেষে জলের অভাবে মরে।
undefinedundefined