(কিছুদিন আগে একরাতে স্বপ্ন দেখি আমি ঘুড়ি হয়ে গেছি,কিন্তু আমি নিচে,নাটাই যার হাতে সে ওপরে।অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে জেগে উঠি,গলায় হাত দিলে সামান্য ব্যাথা অনুভূত হয়।বুঝতে পারি স্বপ্নে এখানেই সুতো বাধা ছিল।পাঠক বলুনতো পৃথিবীবাসি মানুষ আর অন্য গ্রহের কোন প্রানীর যদি প্রেম হয় সেই প্রেমের ভবিষ্যৎ কি?)
সাইদুর ভার্সিটি শেষে বাসায় ফিরছিলো।নিয়ম করে সে বাসায় ফেরে হেটে,চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে লক্ষ্য করলো উদ্যানের ভেতর থেকে অদ্ভুত রকমের এক সুগন্ধ ভেসে আসছে,কৌতূহলী সাইদুর কিছু না ভেবেই উদ্যানে প্রবেশ করলো।পঞ্চ ইন্দ্রীয়র তিনটি ব্যবহার করে সে পৌছে গেলো সেই সুগন্ধির উৎপত্তিস্থলে।নিশিকন্যা ভাবার কোন কারণ নেই,যেই মেয়েটা হাত পা গুটিয়ে বসে আছে সে আর যাইহোক নিশিকন্যা না।
-তুমি কে?
-আমি মারিসা।
-এটা কি পরে আছো?
-পোশাক পরে আছি।
-পোশাকটা এমন কেন?
-আমাদের পোশাক এমনই।
-মানে?
-আমি এসেছি এক বামন গ্রহ থেকে,তার নাম এরিস ।আমি যানে করে তোমাদের গ্রহের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম।যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আমি তোমাদের গ্রহে পরে যাই।
-তোমার যান কই?
-তোমার পাশেই আছে,আমি দেখতে দিচ্ছিনা বলে তুমি দেখতে পাচ্ছো না।
-এখন তুমি কি করবে?
-এরিসে যোগাযোগের চেষ্টা করছি,আশা করি সিগন্যাল পেলেই তারা আমাকে নিতে আসবে।
-তুমি কি এখানেই থাকবে?
-হ্যাঁ।তবে কেউ আমাকে দেখবে না।আমি একজন মেন্টালিস্ট,ইচ্ছে করলেই তোমার চোখে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি।
সাইদুরের ফিহার কথা মনে পরে গেলো।ঘোর কাটতেই সে পিছু ফিরে হাটা ধরলো।পিছনে মারিসা পরে আছে।মারিসার অবাক হওয়ার ক্ষমতা নেই নাহয় সে অবাক হতো।অন্য গ্রহের এক অদ্ভুত প্রানীর সম্পর্কের জানার কোন আগ্রহই দেখছি নেই এই জাতির।
পরের এক সপ্তাহ সাইদুর ভার্সিটি কামাই দেয়,সে মারিসার সাথে দেখা করে।খুব দ্রুতই সাইদুরকে পড়ে নেয় মারিসা।সাইদুরের হাত ধরে নীল শাড়ী আর খোলা চুলে সে বের হয়ে আসে অদ্ভুত পৃথিবী দেখতে।
সাইদুর তাকে শহর দেখায়,বসন্ত উৎসবে নিয়ে যায়,নজরুল সঙ্গীত শোনায়।সপ্তম দিনে পরম প্রেম আর ভালোবাসায় মারিসাতে ডুবে যায় সাইদুর,মারিসা সেই প্রেমের অর্থ বোঝে না।
**************
ঠিক দু'শো বছর পর এরিসের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে মারিসা আর তার মেয়ে ফাবিহা।মারিসা স্মৃতিচারণ করছে সেই দিনগুলোর।ফাবিহা জানতে পারে ১৫০বছর আগে তার বাবা মারা যায়,এর ৫০বছর আগেই সাইদুরের হিসেবে অষ্টম দিনে সে এরিসে ফিরে আসে।সাইদুর শেষ মুহূর্তে হাত ধরে ছিল,সাইদুর এরিসকে উপেক্ষা করতে পারেনি,যানে উঠে মারিসা চোখের ইশারা করে।সাইদুর উপেক্ষা করতে পারেনি পৃথিবীকে।সাইদুরের চোখে সেদিন পানি ছিল,কি অদ্ভুত মারিসার চোখে পানি নেই।
আজ দু'শো বছর পর পৃথিবীতে বসবাসরত গত হওয়া এক লোকের জন্য ফাবিহার চোখে পানি,মারিসা অবাক হননি।এটাইতো স্বাভাবিক।মানুষের ওরসে জন্ম নেওয়া কেউ কাঁদবে,হাসবে,ভালোবাসবে,অবাক হবে।
নাড়ীর টানে হোক আর কৌতূহল বশত হোক ফাবিহা সেই যানে চেপে বসেছে।৯৩মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থানরত এক গ্রহের মাটি কেঁপে উঠছে সেই যানের শব্দে।সেকেন্ডে ২০৫মাইল বেগে ছোটা সেই যানের লক্ষ্য "সাইদুরের পৃথিবী"।
ফাবিহা দেখলো তার আসনের পাশে ধূলো পরা এক মেশিন,যেই মেশিন সম্পর্কে সে অবগত না।সে জানে না দু'শো বছর আগে সাইদুর এই যন্ত্র তুলে দেয় মারিসাকে।
সে মেশিন হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে।অসাবধানতায় বেজে ওঠে সে মেশিন।মেশিনে সুর ওঠে...
"মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী,দেবো খোপায় তাঁরার ফুল"
ফাবিহার চোখ জলে ভিজে ওঠে,সে চোখ বোজে।হয়তো ঘুমিয়ে যায়,ঘুমের মধ্যেই তার কথা হয় এক পৃথিবীবাসির সাথে যে হারিয়ে গিয়েছিলো দু'শো উনচল্লিশ বছর আগে কিন্তু তার গান এখনো হারিয়ে যায়নি।
এরিসের এক যানে প্রতিধ্বনি হতে থাকে এক পৃথিবীবাসির নাম,কাজী নজরুল ইসলাম।
ফাবিহা অশ্রু ভেজা চোখে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই পৃথিবীবাসিকে।ফাবিহা কি জানে নতুন একটা সুরের মেশিন নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে বসে আছি আমি?ফাবিহা জানে হয়তো...হয়তো না।