বিসমিল্লাহ! আল্লাহর নাম নিয়ে এই কলামটি আবারও শুরু করতে যাচ্ছি। লিখতে হলে জানতে হয়। আমি ঘরে বসে থেকে যেটুকু জানার তা চেষ্টা করে জানছি। তবে নিজের আলসেমির কারণেই অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। পাঠকদের আগ্রহে বারবারই ফিরে আসি লেখার কাছে। কলমের স্বচ্ছন্দ গতি আছে। এতে সহসা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে মনটা অস্বস্তিতে ভরে যায়। যা হোক, লেখাটা যে আবার শুরু করতে পারছি, এর জন্য আমার প্রভুর কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জীবনে কত লেখাই তো শুরু করেছিলাম; কিন্তু সেসব লেখা শেষ করতে পারিনি। যা হোক, এসব কথা বলে আমার কলামটিকে কণ্টকাকীর্ণ করতে চাই না।
যারা পত্রিকায় লেখে তাদের বিবেচনাবোধ একটু অন্যরকম। তারা রাগ, দ্বেষ, হিংসা এসব দূরে সরিয়ে রেখে কালের সাক্ষ্য দেয়ার মতো সততা আয়ত্ত করে নেন। আমি লেখক মানুষ। তাও আবার কবি। স্বপ্ন বিক্রি করে খাই বলে দুর্নাম আছে। কিন্তু স্বপ্ন ছাড়া মানুষের দিন গুজরান হয় না। কিছুক্ষণ বাস্তবের মধ্যে থাকলে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। সেজন্যই স্বপ্নের দরকার। খানিকটা সত্য, খানিকটা কল্পনার মধ্যে আমরা বাস করি।
এই বাস্তব ও কল্পনা মিশ্রিত হয়ে আমাদের জ্ঞানের রাজ্য উন্মুক্ত করে। আমরা পাখা না থাকলেও উড়াল দিতে জানি। সবকিছুই নির্ভর করে দেশের অবস্থার ওপর। কল্পনাজীবী হলেও দেশের পরিস্থিতি যেভাবে আমাদের চিন্তার জগতকে পরিচ্ছন্ন করে, আমরা সেভাবেই দেখতে অভ্যস্ত। কোনো কিছুই গায়ের জোরে বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। কারণ প্রতিবন্ধকতা মানুষকে নতুন রাস্তা বের করার তাগাদা দেয়। সবচেয়ে ভালো হলো লেখকের নিরপেক্ষতা। এই নিরপেক্ষতার বিঘ্ন সৃষ্টি হলে সহজতার বদলে কৃপণতা এসে সবকিছু দখল করে নেয়। কথায়, চলায়, বলায় কার্পণ্য সৃষ্টি হলে মানুষের মনটা কৃপণ হয়ে যায়। তখন সে কথা বলতে হিসেব করে বলে, কৃপণের মতো অক্ষর গণনা করে রচনা তৈরি করে।
আমার জীবন বহু প্রতিবন্ধকতা, পত্র-পত্রিকাকে নিবারণের চেষ্টা আমি দেখে এসেছি। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা বিজয়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত লেখকের কলমই দিগ্বিজয়ী হয়েছে। আরেকটা কথা, মানুষের স্বভাব হলো উড়াল দেয়া। অথচ মানুষের তো ডানা গজায় না। ডানাহীন মানুষ পাখির স্বভাব পেলে সে মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। আমি এই দেশে জন্মেছি। ভালোমন্দ অনেক কিছুই এদেশ আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। আমি থামতে জানি। তাছাড়া কবি হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমার চোখের সামনে যা কিছু ঘটে তার সাক্ষ্য দিতে আমাকে সময় এসে কালের কাঠগড়ায় ঠেলে তুলে দেয়। আমি শপথ করি, যাহা কিছুু বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না। তাহলে দেশের পরিস্থিতি কীভাবে এদেশের মানুষ নীরব থেকে হজম করবে। তবু কোনো কিছুই থেমে নেই। সবকিছুই চলছে সামনের দিকে। পেছনে তাকানোর কোনো ফুরসত নেই। এই সামনে চলাটাই হলো গতি। যাকে আমরা বলি কালের গতি। এই বেগ সহ্য করার জন্য বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ আছাড়িপিছাড়ি খেয়ে দৌড়ুচ্ছে। তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো পেছনে পড়ে না থাকা। যারা এক পা পিছিয়ে যায় তারা আর কালের গতির মধ্যে থাকে না। তারা পিছিয়েই যায়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে, বাংলাদেশকে কেউ পশ্চাত্পদ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেনি। সে গতির মধ্যে প্রগতি এবং রক্ষণশীলতার মধ্যে দিগ্বিজয়ী বলে নিজকে দাবি করছে। কারণ দেশ বলতে শুধু একটি মানচিত্রকে বোঝায় না। বোঝায় দেশের প্রজাকুঞ্জ, নরনারী, যুবক-যুবতী সবাইকেই। এহেন দেশকে সহজে পরাজয় মানানো সম্ভব নয়।
লেখক : কবি
[সূত্রঃ আমার দেশ, ২৭/০৭/১০]
Click This Link