অামার েশ ১৬/০৫/১১
হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ জন বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হলো এবার। মাত্র দু’দিন আগে জ্যেষ্ঠতা ডিঙ্গিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পর গতকাল এ ঘটনা ঘটল। হাইকোর্টের অর্ধশত বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে (সুপারসিড করে) বিচারপতি মো. মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বিচারপতি মো. শামসুল হুদা মানিককে আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মাত্র দুই বছর আগে তারা হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের বর্তমান তালিকা ক্রমানুযায়ী বিচারপতি মমতাজউদ্দিনের সিরিয়াল নাম্বার হচ্ছে ৪৭ এবং বিচারপতি শামসুল হুদা রয়েছেন ৫০ নম্বরে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গতকাল তাদের নিয়োগ দেন।
তালিকায় ৫০ জনের জুনিয়রকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা সুপ্রিমকোর্ট নজিরবিহীন। এর আগে কখনও এরকম ঘটনা ঘটেনি। আপিল বিভাগের রায়েও বলা হয়েছিল তাদের স্থায়ী নিয়োগের দিন থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে। সে অনুযায়ী তারা শপথ নিয়েছেন এবং তালিকায় ক্রমানুসারে স্থান পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেয়ার আগে তাদেরকে হাইকোর্ট বিভাগে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি হিসেবে অনেকের চাকরি স্থায়ী হলেও তারা বাদ পড়েন। সংবিধান অনুযায়ী অস্থায়ী মেয়াদের দুই বছর পার হওয়ার পর স্থায়ী নিয়োগ দেয়া না হলে বাদ পড়েন বিচারপতি পদ থেকে। তাদের কেন স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি জানতে চেয়ে তারা তখন হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করেছিলেন। তখন হাইকোর্ট বিভাগ সরকারের প্রতি কারণ দর্শানোর রুল জারি করেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায়ের পর তারা রুলের শুনানি করেন। হাইকোর্ট বিভাগে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে তখন তাদের বিষয়টি শুনানি হয়। শুনানি শেষে তাদেরকে জ্যেষ্ঠতাসহ স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার আদেশ দেয় হাইকোর্ট বিভাগ। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ১৯ জন বিচারপতি। তারা মনে করেছিলেন জ্যেষ্ঠতাসহ নিয়োগ দেয়া হলে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। এ নিয়ে আপিল বিভাগে দীর্ঘ শুনানি হয়। ১৯ বিচারপতির আপিল গ্রহণ করে রায় দেন আপিল বিভাগ। এতে বলা হয়, যেদিন থেকে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে সেদিন থেকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে। অর্থাত্ স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে তখন যারা কর্মরত ছিলেন তাদের জুনিয়র হিসেবে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এই রায় মেনেই তারা স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। এখন আপিলকারী ১৯ বিচারপতিসহ ৫০ জনকে ডিঙ্গিয়ে আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তারা।
নতুন দু’জন নিয়োগ পাওয়ায় আপিল বিভাগে বর্তমানে বিচারপতির সংখ্যা নয়জনে উন্নীত হলো। নয়জনই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আপিল বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন। বিচারপতি শামসুল হুদা হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাজাপ্রাপ্ত অনেক নেতার শাস্তি বাতিল করে আলোচনায় আসেন।
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি শামসুল হুদার স্থায়ী নিয়োগের তারিখ ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ।