গতকাল প্রথম আলোতে দেখলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছেন। ভারত মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, টিপাইমুখ বাঁধ হলে নাকি বাংলাদেশেরই লাভ। ওরা নাকি কোন পানি প্রত্যাহার করবে না। গ্রীষ্মকালে পানি নাকি কম আসবে, তাতে সিলেট অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ কমে যাবে। আবার শীতকালে পানি বেশি আসবে। তাতে নাকি নদীর নাব্যতা বাড়বে। সেচের নাকি সুবিধা হবে।
এবার দেখি বিভিন্ন ঋতুতে পানির প্রবাহের পরিমান নিয়ে তারা কি বলেছে? প্রথম আলোর রিপোর্ট আনুযায়ী বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে ২০২১ কিউসেক এবং শীতকালে ২৮২ কিউসেক পানি আসে বরাক নদী দিয়ে। ভাল কথা, বাঁধ নির্মান হলে গ্রীষ্মকালে ১৬৪৮ কিউসেক আর শীতকালে ৫৩৭ কিউসেক পানি আসবে। এবার আসুন, একটা অংক করি। বাংলাদেশে বরাক নদী দিয়ে এখন মোট পানি আসে (২০২১+২৮২) = ২৩০৩ কিউসেক পানি। আর বাঁধ নির্মান করলে আসবে (১৬৪৮+৫৩৭) = ২১৮৫ কিউসেক পানি। ভারত বলেছে তারা কোন পানি প্রত্যাহার করবে না। তাহলে (২৩০৩-২১৮৫) = ১১৮ কিউসেক পানি কোথায় যাবে? কোথায় উধাও হবে? ভারতের হিসাব যে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি তা এই হিসাবই প্রমান করে।
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা নিয়ে হঠাৎ ভারতের এত মাথাব্যথা কেন? বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার জন্য তো আগাগোড়া ভারতই দায়ী। বর্ষায় ওরা পদ্মা, তিস্তা নদীর বাঁধ ছেড়ে দেয়। যার পরিনামে পুরো দেশে বন্যা হয়। বরাক নদীর কারনে বাংলাদেশে কখনোই বন্যা হত না। বরং বন্যার সময় পদ্মার পানির চাপে বরাক নদীর পানি সহজে নামতে পারে না বলেই সিলেট অঞ্চলে বন্যা হয়। নইলে প্রাকৃতিক কারনেই সিলেটে হাওড় বাওড় এলাকা বন্যাকে রুখে দিত। বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে এত মাথাব্যথা থাকলে ওরা সবসময়ের জন্য ফারাক্কা বাঁধ তুলে দিক। সেটা তো তারা করবে না।
টিপাইমুখ বাঁধ দিলে শীতকালে নাকি বেশি পানি আসবে। তখন নাকি সেচের জন্য বেশি পানি পাওয়া যাবে। বেশি পানি তো আমাদের দরকার নেই। শীতকালে যখন পানি কমে যায় তখন সিলেট হাওড় বাওড় অঞ্চলে বোরো চাষ হয়। পানি বেড়ে গেলে এই অঞ্চল আর বোরো চাষাবাদের উপযোগী থাকবে না। জমি যদি ডুবেই থাকে, তবে বেশি সেচের পানি দিয়ে কি করব?
টিপাইমুখের পরিকল্পনা অনুযায়ী এটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম পানি রিজার্ভার হবে। ২/৩ বছর লাগবে এই রিজার্ভ তৈরি করতে। তখন তো সিলেট ব্রাহ্মনবাড়িয়া অঞ্চলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে মরুকরন শুরু হয়ে যাবে। পরে পানির গতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও এই ক্ষতি তো আর পূরন হবে না।
ভারত যখন ফারাক্কা বাঁধ তৈরী করা শুরু করে, তখনও কিন্তু নানান মিষ্টি কথায় বাংলাদেশকে ভুলিয়েছিল। এখনও তারা একি ট্রিকস অবলম্বন করছে। ওদের মিষ্টি কথায় ভুলে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি এই বাঁধের কাজে সমর্থন দেয়, তার পরিনাম বাংলাদেশকে ভুগতে হবে যুগ যুগ ধরে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



