somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেডিস ডে আউট-৩

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আগের পর্ব


৫.
ব্যাগ থেকে এক বাক্স আঙ্গুর উঁকি দিচ্ছে। ভরপেট থাকায় সেটা কারো নেক নজরে পড়লো না। বাক্সটা কাছে টেনে নিলাম আলপটকা। গাছের সুশীতল মৃদুমন্দ ছায়ায় কাৎ হয়ে শুয়ে একটা একটা করে আঙ্গুর মুখে পুরে দেবার মাঝে বেশ একটা আভিজাত্য টের পাচ্ছি। নিজেকে হঠাৎ টেগের্নসীর সুলতানা মনে হচ্ছে। মনে মনে অত্র অঞ্চলকে মুলক্-ই-টেগের্নসী ঘোষনা করলাম। এত বড় সালতানাত চালানো সহজ কথা নয়। পরিশ্রমের কাজ। প্রচুর আঙ্গুর খেতে হয়। দ্রুত চোয়াল চালাতে থাকলাম।

টলটলে পানির হাতছানি উপেক্ষা করা মুশকিল। মৌরি আপু আর তুনা গিয়ে দু’টো ঝপাং ডুব দিয়ে এসে হি হি করে কাঁপছে। কোন ফাঁকে যে গুনগুনিয়ে ভ্রমর এসে হাজির কেউ টের পেলাম না। তবে মানুষের তৃতীয় নয়নটা বোধহয় মাথার ঠিক পেছনে থাকে। তাতে ধরা পড়ে গেল কেউ একজন ড্যাবড্যাবিয়ে এদিকেই চেয়ে আছে। ঘাড় ঘোরাতেই তামিল চেহারার কালপ্রিট ধরা পড়ে গেল। লেকময় সাদা চামড়ার অমল ধবল রমনীদের জলকেলি রেখে আধভেজা ফতুয়া-তোয়ালে জড়ানো জবুথবু বঙ্গ ললনায় মজে যাবার কারন কি, ঠিক বোঝা গেল না। তামিলদের দক্ষিনে কি দুর্ভিক্ষ চলছে নাকি। কোথাও তো পড়ি নি যে, ‘চেন্নাই শহরে নারীদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। তামিল পুরুষরা দক্ষিন ছেড়ে উত্তরের বঙ্গ ললনার সন্ধানে দলে দলে দেশে ছাড়ছে। তাদের অবস্থা ‘যেইখানে পাইবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই’ ধরনের শোচনীয়...ইত্যাদি’।

এই পাজি রজনীকান্তের কি মা-বউ কেউ নেই নাকি ভেবে চারিদিক রেকি করতেই মোচওয়ালা এক তাগড়া মহিলা লোকটার পাশ থেকে খুনে চাহনি হানলো। বাবারে, কাজ নেই আর অভিযোগ জানিয়ে। সাক্ষাৎ বউয়ের পারমিশন নিয়ে ‘মিশন ড্যাবড্যাব’-এ নেমেছে এই তামিল হিরো। তাকে থামায় সাধ্যি কার। অতএব আমরাই পাততাড়ি গুটিয়ে কেটে পড়লাম।

অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়-কথাটার ভেতর ঘাপলা আছে। নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে উল্টো রসের সমুদ্দুরে এসে পড়েছি। এক যুগল খুবসে ভাব বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছে। একটু আগে যে ক’টা আঙ্গুর খেয়েছি এই নর-নারী এই পাঁচ মিনিটেই তার চেয়ে বেশি চুমু খেয়ে ফেলেছে। তারপর, আচমকাই চুমুবিদ্যার সর্ব-ইউরোপীয় কেতা বাদ দিয়ে বিশেষায়িত ফ্রেঞ্চ কায়দার দিকে ঝুঁকে পড়লো। তিন হাত দূরের এই লাইভ দৃশ্য তো আর টিভি পর্দার এইচবিও নয় যে রিমোট চেপে বিবিসি, সিএনএন এর জলবায়ু বিষয়ক খবরে লাফ দেবো। তাই দুর্বল হৃৎপিন্ড চেপে লেকের পাড়েই পালিয়ে এলাম লাফিয়ে। ছায়াবিথী তলে শুয়ে দু’লাইন কবিতাও চলে এসেছিল মাথায়। নটঘট তান্ডবে সেটুকুও গেল।

৬.
আঠালো জুটির ফরাসী ক্লাইমেক্সের খপ্পর থেকে বেরিয়ে ভালই হয়েছে। ইচ্ছেমত পানিতে নুড়ি ছুড়ে তোলপাড় ফেলে দিচ্ছি। একটা যুক্তিহীন আনন্দ কাজ করছে। মনের শিশু কিভাবে যেন ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে এসেছে। এগিয়ে এসে তার সাথে জুটেছে দু’টো আসল শিশু। আর আমাদের পায় কে। চিৎকার-চ্যাঁচামেচিতে এলাকা কাঁপিয়ে ফেলেছি। পাথর ছোড়া ব্যাপারটা দেখলাম বেশ থেরাপিউটিক। শহুরে শ্রান্তি পাথরে পেঁচিয়ে ছুড়ে মারলে তারা দেখছি উধাও যাচ্ছে পটাপট। ক্লান্তি জেঁকে ধরা না পর্যন্ত চলল বিনে পয়সার থেরাপি পর্ব।

তারপর ক্লান্তিটা ক্যাঁক করে চেপে ধরার সাথে সাথে নুড়ি খেলায় ইস্তফা দিয়ে ধপ্ করে বসে পড়লাম ঘাসে। মৌরি আপু আর তুনা ততক্ষনে রোদে শুকিয়ে খটখট। তারা প্রস্তাব তুললো, এক দফা গানের কলি খেলা যাক। প্রস্তাব শুনে মাঝারি সাইজের ঢোক গিললাম। দুইজনেরই গানের সাথে ওঠাবসা আছে বেশ। কিন্তু এই শর্মা তাতে যোগ দিলে গান আর সঙ্গীত থাকবে না। ইমোশোনাল অত্যাচারে গিয়ে ঠেকবে। শিল্পের এই কলায় আমি একদম কাঁচকলা। দেখা গেল, এমন গান গাইলাম যে বিকিনি সুন্দরী পিঠের ফিতা না বেঁধেই পালিয়ে গেল, ছোকরাগুলোও তাস ফেলে ছুটলো তার পিছু পিছু। আর লোলুপ রজনীকান্ত রমনীদর্শন বাদ দিয়ে দৌড় লাগালো। রাসলীলায় ব্যস্ত যুগলও রাগে দুঃখে বিলা হয়ে রওনা দিল আরেক দিক।

এত অঘটনের সাক্ষী হতে পারবো না। তাই শ্রোতা বনে বাকিদের উৎসাহ দিয়ে অনুরোধের আসর শুরু করে দিলাম। জোর বাতাসের তোড়ে ঢেউ ভাঙ্গা টেগের্নসীর পাড়ে ‘ওরে নীল দরিয়া’ খুব জমে উঠলো। তারপরের গানগুলো কিভাবে যেন আরো ব্যাক গিয়ার দিয়ে কয়েক দশক পিছিয়ে উত্তম-সুচিত্রার যুগে ঘুরে গেল। হেমন্তের ‘এই পথ যদি না শেষ হয়‘ দিয়ে শুরু করে কিশোরকুমার ছুঁয়ে, শেষে সন্ধ্যা নামিয়ে দিলাম সন্ধ্যা মুখার্জিতে। এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার...। বাংলা ভাষা আসলে শার্টের বুকপকেটের মত। গায়ে চাপিয়ে যতদূরেই যাই না কেন, সুর হয়ে সে থেকে যায় বুকের ভেতর।

হেলে পড়া সূর্যটার তাড়ায় লটবহর গুছিয়ে অনেকখানি পা চালিয়ে বব গাড়ি ধরেছি আবার। বাচ্চারাও পুরানো মেজাজে ফিরে গেছে। গলা সপ্তকে চড়িয়ে শেয়ালের হুক্কা হুয়া তান ধরেছে তারা। ট্রেনের শেষ মাথা থেকে আরো কতগুলো শেয়ালের ছাও একই রবে তাদের অস্তিত্ব জানান দিল। এটা তাদের নিজস্ব মোর্স কোড। বাকি পথ এই টরে টক্কা সিগনাল চালাচালির মাঝে বসে যেতে হবে ভেবেই মাথা ধরে গেল চিং করে।

সব কিছু উপেক্ষা করে চোখ বুজে গা এলিয়ে দিলাম। টেগের্নসীময় টই টই না ঘুরেও মন আজকে তৃপ্তিতে টইটুম্বুর। কাছেপিঠে কোথাও বেরিয়ে পড়ে পাটি বিছিয়ে আকাশ দেখাটাও দেখছি একধরনের ভ্রমন। কে জানতো, দুই পয়সার বাজেট ঘোরাঘুরিতেও যে দশ পয়সার আনন্দ আর রোমাঞ্চ মিলতে পারে। এই না হলে ইকোনমিক লেডিস বুদ্ধি!

নতুন একটা ফন্দি উঁকি দিল হঠাৎ। মিউনিখের বাঙালি প্রমীলা সমাজকে এক করে একটা ক্লাব খুলে ফেললে কেমন হয়। ক্লাবের নাম হবে, ‘লেডিস স্যু ক্লাব’। মাঝে মাঝেই আমরা দল বেঁধে এক-আধ বেলার ঝটিকা সফরে চলে যাবো। আর দিন শেষে সব ক’জোড়া জুতো নানান ঢঙে জড়ো করে অ্যাস্থেটিক এক ফটো খিঁচে বাড়ি ফিরে আসবো। সম্ভাব্য আরেকটা মিনি ভ্রমনের প্রস্তাব তুলে আমরা লেডিস স্যু ক্লাবের প্রথম সদস্যরা আলাপে মশগুল হয়ে পড়লাম। শিশুদের হুক্কা হুয়া ছাপিয়ে আমাদের গল্প আড্ডা আর হাসিতে বব গাড়ির কামরা তরল হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে। (সমাপ্ত)
মিউনিখ, জার্মানি

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×