somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিনজা সন্ধ্যা ও সারমেয় সকাল

০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘হাই, তুমি তাফসু মিয়ার মা, সাবরিনা। তাই না?’। সামনে দাঁড়ানো চওড়া কাঁধের লম্বা তরুনের উৎসুক প্রশ্ন।

‘ইয়ে, হ্যাঁ’ বলেই ঢোক গিললাম। তাফসু মিয়ার মা হিসেবে এ যাবতকালে ইশকুল থেকে অভিযোগ ছাড়া আর কিছু শুনি নি দেখে খটকা লাগছে। হয় অঙ্কে রসগোল্লা, নয় তো জার্মান ব্যকরনে বুন্দিয়া লাড্ডু। তাই ইশকুল-লাগোয়া এই স্পোর্টস হলের দরজায় ‘তাফসু মিয়ার মা’ সম্বোধনটা ঘাবড়ে দিল।

কিন্তু না, শঙ্কা হঠিয়ে ছেলেটা এক গাল হেসে স্বাগত জানালো, ‘হের্জলিশ ভিলকমেন। শেষ পর্যন্ত ছেলে তোমাকে পটিয়ে-পাটিয়ে পাঠিয়ে দিল। মা-ছেলে একসাথে ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং তলোয়ার ঘোরাবে। দারুন দারুন। বাই দ্যা ওয়ে, বিকালের ক্লাসে তাফসু মিয়া আজকে জটিল খেলেছে’। বোকাটে হাসিতে হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বুঝলাম, নাহ্ব, ছেলে এখানে কোনো প্যাঁচ লাগায় নি। বরং এই সোর্ড ফাইট ক্লাবে সামান্য হলেও তার নামডাক আছে দেখছি।

‘আমার নাম সেবাস্তিয়ান। কিন্তু বাস্তি বলে ডাকতে পারো। আর এই নাও ধরো, ক্যাচ!’। বলেই প্রকান্ড এক কাঠের তলবারি নাক বরাবর ছুড়ে দিল বাস্তি। সেটা মাটিতে পড়ে বিকট ঠকাশ্ হবার আগেই কোনোমতে জাপটে ধরে পতন ঠেকালাম।

তলোয়ার কাঠের হলে হবে কি, লোহার মত ভারি। ক্লাস থ্রি পড়ুয়া সাড়ে চার ফুটি তাফসু মিয়া এই বস্তু আলগায় কি করে, তাই ভাবছি। নাকি ছোটদের বিকালের ক্লাসের তলোয়ারও ছোট আর হালকা।

ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বাস্তি বললো, ‘তোমাকে তো বিগিনার্স সোর্ড দিয়েছি। তাফসু মিয়া তো অলরেডি ইয়েলো বেল্ট। তার তলোয়ার আরেকটু বড় আর ভারি। আর ধুর্, এতো ভেবো না তো। ছেলে পারলে মাও পারবে। চল বরং তোমাকে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেই।

বাস্তির পিছু পিছু এগোচ্ছি। ওদিকে মন খচখচ্ করছে। এই নভেম্বরের জাঁকানো শীতের গা কাঁপানো সন্ধ্যায় কোথায় ছেলে আর তার বাবার সাথে গরম গরম দু’টা ডাল-ভাত খেয়ে ঝিমোতে থাকবো। তা না করে কি এক ছেলেমানুষিতে নেমেছি। কিন্তু এ ছাড়া যে উপায়ও দেখছি না। হোম-অফিস নামক আজব এক চক্করে পড়ে নড়ন-চড়ন বন্ধ হয়ে গেছে আজ মাস খানেক। সারাদিন ঐ এক টেবিল-চেয়ার আঁকড়ে পড়ে থাকা। হাতে-পায়ে বট গাছের মত শিকড় গজিয়ে গেছে। তাই হাড়-গোড়ের জং ছুটাতে হাজির হয়েছি ‘রিমারলিঙ্গার স্পোর্টস ক্যাম্পাস’-এ। তাও যদি ক’টা বানর লাফ লাফিয়ে সারাদিনের আড়ষ্টতা কাটে আর কি।

যাহোক, বাকিদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। জনা বিশেকের মধ্যে এক-আধজন বাদে সবাই মোটামুটি টিন-এজ বয়সী ছেলেপুলে। এতগুলো তেরো-চৌদ্দ-পনেরো-ষোলোর মাঝে নিজেকে রীতিমত রোয়া ওঠা বুড়ো ভাম বিড়াল মনে হচ্ছে। ইশ্, কেন যে এলাম।

অস্বস্তিটা বুঝে নিয়ে দলের একমাত্র বয়স্ক ভদ্রলোক গলা খাকরি দিয়ে বলে উঠলো, ‘আরে, এইখানে আমরা সবাই একবয়সী। দরজা ঠেলে হলে ঢোকার আগে আমার পঁচাত্তর বছর বয়সটাকে জুতা আর পানির বোতলের পাশে রেখে আসি। কেমন বুদ্ধি বলো তো? হাহাহা...’। কথাটা বেশ মনে ধরলো। ভাল করে তাকিয়ে দেখি, আরে ইনি তো অবিকল আমার শ্বশুর মশাইয়ের মত দেখতে। সেই রকম ছোট করে কাটা এক মাথা সাদা চুল আর হালকা চাপ দাড়ি। সাথে মিটিমিটি হাসি। হাসতে হাসতেই ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি পিট। চলো, এক পাঞ্জা তলবারি লড়ে ফেলি’।

কথা না বাড়িয়ে পিটের সাথে চলতে চলতে ভাবছি, শ্বশুর আব্বা যদি জানতেন যে তার সাদামাটা আটপৌরে ছেলের বউ তারই নাতির মন্ত্রনায় এই মাঝ বয়সে সোর্ড ফাইট ক্লাবে নাম লিখিয়েছে, তাহলে চেহারাটা কি দাঁড়াতো।

পিট একটা ছোট্ট ভূমিকা ঝেড়ে দিল, ‘বুঝলে, আমাদের টেকনিক কিন্তু সামুরাই-নিনজা-ভাইকিং-মিডিভাল, এই সব কিছুর জগা-খিচুড়ি। আবার কারাতে-তায়কোয়ান্দ থেকেও কিছু কায়দা-কানুন ধার করা। বহুৎ পুরানো সব লড়াইয়ের কলা-কৌশল মিলিয়ে ঝিলিয়ে নতুন নাম দিয়েছি, ‘মডার্ন সোর্ড আর্ট’। নতুন বোতলে পুরনো মদ, হাহা...’। পিটের কথা শুনে নিয়ে চারপাশে একবার চোখ বোলাতেই রোমাঞ্চ জাগলো। সবার পরনে নিনজাদের মত কালো ঢোলা পোশাক। কারো কারো মুখে ফেন্সিং-মুখোশের মত নেটের মুখোশ। গায়ে বুলেট-প্রুফ ভেস্ট-এর মত পুরু এক ধরনের বর্ম। দেখে-শুনে মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘরের মাচা থেকে লাফিয়ে নেমে ধড় থেকে মাথা ফেলে দেবে এক কোপে, বাবা গো!

হাতের তলোয়ার লগবগ নড়ছে। তাই দেখে পিট শুধরে দিয়ে দেখিয়ে দিল কি করে দুই হাতে ভারটুকু ভাগ করে দিয়ে অনায়াসে পাকা সৈন্যের মত অস্ত্র উঁচিয়ে ধরা যায়।

‘এবার তোমার পালা। দাও তো দেখি কাধ বরাবর জোরসে একটা মার’। পিটের দেখানো ভঙ্গিতে সভয়ে দিলাম মোলায়েম এক ঘ্যাচাং। জোরসে ঘ্যাচাং দিলে বুড়োর যদি মাথা ফেটে যায়, সেই ভয়ে। অবাক করে দিয়ে মুহূর্তেই পিট খুব অবলীলায় আক্রমনটা ঠেকিয়ে দিল তলবারি আলতো উঁচিয়ে।

‘ভয় পেয়ো না, এই বুড়োর মাথা ফাটবে না এত সহজে’। পিট দেখি মাইন্ড রিডার। লজ্জা পেয়ে চোখ পিটপিট করছি দেখে সে দ্বিগুন উৎসাহে বললো, ‘আবার দেখো। বুক চিতিয়ে এইভাবে পা বাড়িয়ে দাঁড়াবে আর তলোয়ারটা হালকা নুইয়ে বাতাস কেটে আঘাত করবে। নাও দেখি, এক-দুই-তিন, মারো। হাইয়াহ্!’।

পরের ঘন্টায় পিট আমাকে মোটামুটি তলোয়ার চালানোর অ-আ-ক-খ দেখিয়ে দিলো। কি করে এফোঁড়-ওফোঁড় ঘচাৎ মেরে ভুড়ি গেলে দেয়া যায়, কি করে পাল্টা আঘাতে প্রতিপক্ষের ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেয়া যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি বহু জরুরী টেকনিক। সে বিদ্যা কতটুকু পেটে গেল, বলা মুশকিল। তবে নতুন কিছু শেখার মাঝে তিরতিরে আনন্দ আছে। তাছাড়া একঘেয়ে, ম্যারম্যারে যান্ত্রিক রুটিন জীবন থেকে বেড়িয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজেকে নব্য-নিনজা ভাবতে ভালই লাগছে। অতি অলস এই বাঙ্গাল তার কাছিম-খোলস ছেড়ে এই শীতের সন্ধ্যায় কতগুলো লড়াকু জার্মানের পাল্লায় পড়ে ভুলভাল ঠুক-ঠাক তলোয়ার ঠুকছে আর তিড়িং-বিড়িং ব্যাঙ লাফিয়ে ঘাম ঝরাচ্ছে-এও এক আজব ঘটনা বটে।

ঘড়ির কাটা ঘুরে রাত সাড়ে আটটায় থামলো। আজকের মত তলোয়ার ঘোরানোর এখানেই ইতি। সবাইকে এক সার হয়ে দাঁড়াতে বলছে সেবাস্তিয়ান ওরফে বাস্তি নামের ছেলেটা। লম্বা একটা ‘বাউ’ করে ছুটি মিলল সেদিনের মত।

হল থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে পিট শুধালো, ‘সামনের সপ্তাহে এসো। তলোয়ারের সাথে ঢাল থাকবে তখন। অফেন্স-ডিফেন্স-কাউন্টার অ্যাটাক, হাইয়াহ্! । কি আসবে তো?’। বলেই পিট সহাস্যে বিদায় নিয়ে পানির বোতল হাতে রওনা দিল। যাবার সময় সে তার বয়সটা সঙ্গে নিতে ভুলে গেল মনে হয়। পঁচাত্তরের পিটকে এখনও পঁচিশের ছোকরার মত দুরন্ত-দুর্বার দেখাচ্ছে।

ঢাল-তলোয়ারে মারমার-কাটকাট আরেকটা সন্ধ্যার হাতছানি উপেক্ষা করা কঠিন। সামনের সপ্তাহে আসতেই হবে। হালকা পায়ে ভারী কুয়াশা ফুঁড়ে ফুটপাথ ধরলাম। পাশ কাটিয়ে সাইকেল চেপে হুশ্ করে উড়ে গেল বাস্তি, ‘হেই সাবরিনা, পরের ক্লাসে তাফসু মিয়াকে নিয়ে এসো। মা-ছেলের ডুয়েল জমবে খুব। ওকে, বাইই...’।


নাহ্, ঘেউ ঘেউ কমছেই না। কফি হাতে কাজে বসেছি, এখন মুডটাই জেলো হয়ে যাচ্ছে। অস্থির হাঁক ডাকে বাধ্য হয়ে বারান্দায় উঁকি দিতে হল। আওয়াজটা আসছে উল্টো দিকের এক বাড়ি থেকে। মিউনিখ শহরতলীর এ তল্লাটে কম-বেশি অনেকেরই কুকুর আছে। কিন্তু সাত সকালে এমন গলা সাধার আয়োজন তো দেখি নি আগে। যাহোক, এ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। একটু পর একটা অনলাইন মিটিং আছে। কোঁচকানো পাজামার ওপরে ইস্ত্রি করা নির্ভাঁজ মনোক্রোম শার্ট আর রঙ্গীন স্কার্ফ পেঁচিয়ে কর্পোরেট ভেক ধরে নিখুঁত ছদ্মবেশে থাবা গাড়লাম স্ক্রিনের সামনে।

মিটিং শেষ হলে ঢলঢলে টি-শার্ট চাপিয়ে পেট চুলকাতে চুলকাতে কুমিরের মত বিশাল একটা হাই তুলে এলেবেলে হোম-অফিস লুকে ফিরে এসেছি। কি মনে করে বারান্দায় দাঁড়ালাম হাওয়া খেতে। কিন্তু হাওয়ার বদলে ধাওয়া খেলাম যেন। ঘেউ ঘেউ এখন সপ্তমে চড়েছে। ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগলাম। ও বাড়িতে কোন কান্ড হল নাকি? এই যেমন বাড়ির একমাত্র বয়স্ক বাসিন্দা হঠাৎ অসুস্থ আর কুকুরটা সাহায্যের জন্যে ডাকছে তারস্বরে।

দ্বিধা আর কৌতূহল ভাল দোটানায় ফেলে দিল। এমনিতে সাতে-পাঁচে না থাকা স্বার্থপর, সুবিধাবাদী মানুষ। তবুও কি মনে করে ঘর থেকে বেরোলাম। এদিকে, সেই কখন থেকে টিপির টিপির বৃষ্টি পড়ছে। সাথে কনকনে হাড় কাঁপানো শীত। ছাতাটা নিতে ভুললাম না। কিন্তু, কি হল আজ। এলাকার বাকি লোকজন সব কই। চারপাশ খা খা করছে যেন। ধুৎ, শুধু শুধু কি এক ভূতের বেগাড় খাটতে যাচ্ছি। গিয়ে যদি দেখি, ড্রইংরুমের মেঝেতে কুকুরের মালিক কাত হয়ে পড়ে আছে আর মুখ থেকে গ্যাঁজলা দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে, তাহলে? জোর করে এই গ্রাফিক দৃশ্য মন থেকে সরিয়ে ছাতা মেললাম।

বাড়ির সামনে বেড়া দেয়া। ওপাশে ছোট্ট এক টুকরো উঠান। আরে, কুকুরটা গেল কই? ডানে-বামে ভ্যাবলার মত তাকাচ্ছি। আর তখনই উঠোনের আরেক প্রান্ত থেকে দুদ্দাড় করে ছুটে এসে বেড়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সারমেয় মহাশয়। গররর্...ঘউ ঘউ ঘউও...খ্যাক খ্যাক, খ্যাঅ্যাঅ্যাক্...। তাড়া খেয়ে ভয়ে আতঙ্কে ছাতা ফেলে ঝেড়ে দৌড় দিলাম। এক ঝলকে বাড়ির ফটকে লটকানো প্লেটটা চোখে পড়লো, ‘কুকুর হইতে সাবধান’। কেনো যে মরতে এসেছিলাম, বাবা রে...। ইশ্, ছাতাটা গেলো।

কোনোমতে ডেরায় ঢুকে হাঁপ ছাড়লাম। ও বাড়ির কাঠের বেড়াটা উঁচু হওয়াতে বাঁচোয়া। নইলে পায়ের গোঁড়ালিতে অবধারিত খ্যাক কামড় নিয়ে ফুটপাথে গড়িয়ে পড়া ঠেকানো যেত না। কিন্তু ঘরে ফিরেও শান্তি নেই। বজ্জাত কুকুরটা এখনও প্রানান্ত গলায় চেঁচিয়ে যাচ্ছে। তবে স্বর পাল্টে গেছে। ঘউ ঘউ উবে গিয়ে প্রবল কেউ কেউ কানে আসছে। এমন সর্বনাশা কান্নাকাটিতে একটু আগের প্রবল ভয়টা পর্যন্ত ভিজে গেল। নাহ্ব, অবলা প্রানী। মুখে ভাষা নেই, তাই বাড়ির অঘটনটা জানান দিতে পারছে না।

’হ্যালো, ওয়ান ওয়ান টু?’, দিলাম টিপে জরুরি নম্বর।

‘কে বলছেন, কোত্থেকে বলছেন আর কি ঘটনা, সংক্ষেপে বলুন’।

‘ডক্টর সাবরিনা সরকার, অটোব্রুন থেকে বলছি। সামনের এক বাড়িতে কুকুর ডাকছে তিন-চার ঘন্টা ধরে। দেখতে গিয়ে তাড়া খেয়ে ফিরে এসেছি। কিছু একটা ঘটেছে ওখানে। কেউ অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে। আপনাদের সাহায্য পেতে পারি কি?’।

‘সলিড ইনফরমেশন ছাড়া তো আমরা অ্যাকশন নিতে পারছি না। আপনি বরং আরেকবার গিয়ে ও বাসার কলিংবেল টিপে দেখুন। আর বাইরে থেকেও দেখুন মেঝেতে কাউকে পড়ে থাকতে দেখা যায় কিনা। তাহলে সাথে সাথে ফোন দেবেন। আমরা পৌঁছে যাবো। আর আপনি ভেতরে ঢুকতে পারলে অবস্থা বুঝে ফার্স্ট রেসপন্স শুরু করতে পারেন, ডক্টর সরকার।‘

‘এ্যা, ইয়ে, আমি ডাক্তার নই, বায়োলজির পিএইচডি। ফার্স্ট রেসপন্স- টেসপন্স ও সব তো পারি না’।

‘ওহ্, ফ্রাউ সরকার, চিন্তা করবেন না। দেখে আসুন আগে। প্রয়োজনে জানাবেন, রাখছি’।

এক ধাক্কায় সাধের পিএইচডি টাইটেলটা নামিয়ে দিয়ে ‘ফ্রাউ’ তকমা জুড়ে দেয়া হল দেখে খানিকটা চুপসে গেলাম। কিন্তু ওবাড়িতে দ্বিতীয়বার যাবার সাহসটা কোনোভাবেই জোটাতে পারলাম না। এবার গেলে আর আস্ত ঠ্যাঙ নিয়ে ফিরতে হবে না। গোঁড়ালি কি কবজি গচ্চা দিয়ে আসতে হবে কুকুরের দাঁতে। ওদিকে, রাস্তার ওধারে নীল ছাতাটা উল্টে পড়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে তার এধার-ওধার টইটুম্বুর। কিন্তু কে আনতে যাবে। চুলোয় যাক দু’টাকার সস্তা ছাতা।

এদিকে অফিসের দ্বিতীয় মিটিং শুরু হবে এখনই। অফিস বাদ দিয়ে এলাকা উদ্ধার করে বেড়ালে ফাঁকতলে চাকরিটা ছুটে যেতে পারে। চিরকালের কর্মী-বান্ধব জার্মান কোম্পানিগুলোতে ইদানীং আমেরিকান কায়দায় টপাটপ হায়ার-এ্যান্ড-ফায়ার চালু হয়েছে। সুতরাং, লম্বা দম নিয়ে কাজে বসলাম আবার। কিন্তু মন পড়ে থাকলো রহস্যময় বাড়িতে। জানালায় হুড়কো তুলে কুকুরের ডাক আর বৃষ্টির ছাঁট-দুটোকেই দূরে ঠেলে রাখলাম।

সুদীর্ঘ মিটিং ফুরিয়ে এল দুপুর গড়িয়ে। জানালার পাল্লা খুলতেই গাড়ির হর্নের শব্দে সচকিত হতে হল। দৌড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ও বাড়িতে কেউ এসেছে। গাড়ি থেকে বয়স্কা এক ভদ্রমহিলা নামলেন। তার কোলে হটডগের সসেজের মত বাদামী একটা নতুন কুকুর। আরেকটা স্বজাতি দেখে আমাদের বদ কুকুরটা গর্জে হুংকারে পাড়া মাথায় তুললো রীতিমত। ‘পুরান পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি’, এমন এক তিরিক্ষে মেজাজে সে তেড়ে এল নতুন আমদানির দিকে। মুহূর্তেই বেঁধে গেল কুরুক্ষেত্র। ছোট্ট উঠানে দুই কুকুর আর তাদের বুড়ো মনিব এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি করছে। মনিবের মুখে ভয়ংকর সব জার্মান গালি খই হয়ে ফুটছে। এক্কেবারে মরা জাগানিয়া, রোম খাড়া দেয়া এক্স-রেটেড গালিগালাজ। কিন্তু সারমেয় লেজ তাতে সোজা হবার নয়।

এক কাপ চা হাতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে গোলমাল দেখতে খারাপ লাগছে না। ফেনা তুলে মরে পড়ে থাকা ডেডবডি দেখার তুলনায় এ দৃশ্য প্রায় স্বর্গীয়।
-মিউনিখ, জার্মানি

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:০৩
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফিরে দেখা ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০০

অতীতে গরুর মাংসে হাড় বেশি হওয়ার জের ধরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে দেখেছি,
.
ও ভাই মুজে মারো মুজে মারো নেহি মাজাক হ রাহে
.
ঢাল-সড়কি,টেঁটা-বল্লম, গুলতি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে তারা দলে দলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা কেন শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করলো?

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১১



ব্লগে কে কে বলেন, আমেরিকা শেখকে হত্যা করেছে? খুব বেশী ব্লগার ইহা বলেন না; তারা শেখের দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের দোষ টোষ নিয়ে বলেন যে, কিছু বিপথগামী সৈনিক শেখকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় বিএসএফের বর্বরতা: পঞ্চগড় সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২১

আরেকটি নিরীহ প্রাণের বলিদান

আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বাংলাদেশের সীমান্তে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আনোয়ার হোসেন নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা এলাকাবাসীর মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

ইন্ডিয়া আমাদের দেশ দখল করে নেবে......

এতো সোজা!
চাইলেই কেউ কোনো দেশ দখল করে নিতে পারে না- তা সে যতই শক্তিধর দেশ হোক। বড়ো, শক্তিশালী রাষ্ট্র হলেই যদি ছোট এবং দুর্বল দেশকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসো বসো গল্প শুনি

লিখেছেন শায়মা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১২


ছোট থেকেই আমি বকবক করতে পারি। তখনও আমি গল্পের বই পড়তে শিখিনি, তখনও আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারতাম। আর আমার সে সব গল্প শুনে বাড়ির সকলে হাসতে হাসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×