somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

In Time (2011) সিনেমা রিভিউ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



**ভূমিকা:**

অ্যান্ড্রু নিকোল পরিচালিত এবং জাস্টিন টিম্বারলেক ও আমান্ডা সেফ্রিড অভিনীত *In Time* (২০১১) সিনেমাটি এক ব্যতিক্রমী বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এটি এমন এক ভবিষ্যৎ সমাজের গল্প বলে যেখানে সময়ই হল একমাত্র মুদ্রা। অর্থাৎ, মানুষের বয়স ২৫ বছর পর্যন্ত বাড়ে, এরপর বেঁচে থাকার জন্য তাদের সময় কিনতে হয় বা উপার্জন করতে হয়। এই অনন্য ধারণার ভিত্তিতে সিনেমাটি সামাজিক বৈষম্য, পুঁজিবাদ এবং শ্রেণিবৈষম্যের গভীর সমালোচনা করে।

### **পটভূমি ও কাহিনি:**

সিনেমার কাহিনি ভবিষ্যতের এক সমাজে, যেখানে জিনগতভাবে মানুষের বয়স ২৫ বছরেই থেমে যায়, কিন্তু তারা কেবল এক বছর অতিরিক্ত সময় পায়। এর পর থেকে সময়ই একমাত্র মুদ্রা। মানুষ যদি আরও বেশি সময় অর্জন করতে না পারে, তবে তাদের জীবন থেমে যায়। ধনী লোকেরা শত শত বছর বেঁচে থাকে, আর গরিবেরা প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে।



উইল স্যালাস (জাস্টিন টিম্বারলেক) হলেন এক গরিব যুবক, যিনি প্রতিদিন কাজ করে সময় উপার্জন করেন। একদিন, তিনি হেনরি হ্যামিলটন নামের এক শতবর্ষী ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন, যিনি জীবনের প্রতি হতাশ। হেনরি উইলকে তার বেঁচে থাকার ১০০ বছর দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই বিশাল সময় নিয়ে উইল ধনী সমাজে প্রবেশ করেন এবং সিলভিয়া ওয়েইস (আমান্ডা সেফ্রিড) নামের এক ধনী পরিবারের মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় পুলিশের (Timekeepers) সাথে তার লড়াই।


### **চরিত্রায়ন ও অভিনয়:**

**জাস্টিন টিম্বারলেক** উইল স্যালাস চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার চরিত্র একজন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ থেকে ধনীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কাহিনি তুলে ধরে।

**আমান্ডা সেফ্রিড** ধনী ব্যাংকারের মেয়ে সিলভিয়া ওয়েইস হিসেবে চমৎকার অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রটি ধনী সমাজের বিলাসী জীবন থেকে বেরিয়ে এসে উইলের সাথে একটি বিপ্লবী যাত্রায় অংশ নেয়।

**কিলিয়ান মারফি** পুলিশের প্রধান টাইমকিপার লিওন চরিত্রে ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। তার চরিত্র সময় ব্যবস্থার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে-ও বুঝতে পারে এই ব্যবস্থার অন্যায় দিক।


### **চিত্রনাট্য ও পরিচালনা:**

অ্যান্ড্রু নিকোলের পরিচালনা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তিনি এই সিনেমার মাধ্যমে একটি দার্শনিক ও সামাজিক বার্তা দিয়েছেন— "সময়ই আসল সম্পদ, এবং ধনীরা এটি ধরে রাখে, গরিবরা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য।" সিনেমার স্ক্রিপ্ট দ্রুতগতির এবং থ্রিলারধর্মী। যদিও কিছু জায়গায় গল্প আরও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা যেত, তবে সামগ্রিকভাবে এটি একটি চমৎকার সাই-ফাই থ্রিলার।



### **থিম ও বার্তা:**

সিনেমাটির প্রধান থিম সময়ের অসম বণ্টন। এটি বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজের একটি রূপক চিত্র তুলে ধরে, যেখানে ধনীরা সম্পদ ধরে রাখে, আর দরিদ্ররা সারাজীবন সংগ্রাম করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ থিম:

- **ধনী বনাম গরিব:** সিনেমায় ধনী শ্রেণির মানুষের জীবন বিলাসিতায় ভরা, যেখানে গরিবরা প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে।
- **পুঁজিবাদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য:** এখানে সময়ই টাকা, যা বাস্তব জীবনে টাকার মতোই কাজ করে। ধনীরা যত বেশি সময় ধরে রাখে, দরিদ্ররা তত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- **বিদ্রোহ ও বিপ্লব:** উইল এবং সিলভিয়া ধনী সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যা সমাজ পরিবর্তনের বার্তা দেয়।


### **সিনেমাটির দুর্বল দিক:**

যদিও *In Time* কনসেপ্ট এবং পরিবেশনায় অনন্য, তবুও কিছু জায়গায় এটি দুর্বল।

- **গভীরতা কম:** সময়ের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসাধারণ ধারণা থাকলেও, গল্পের গভীরতা আরও বাড়ানো যেত।
- **পার্শ্বচরিত্রের অভাব:** মূলত উইল, সিলভিয়া, এবং টাইমকিপার লিওন ছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
- **অবাস্তবতা:** যদিও এটি একটি সাই-ফাই সিনেমা, কিছু জায়গায় যুক্তির অভাব ছিল। যেমন, ধনী সমাজ এত সুরক্ষিত থাকার পরেও উইল সহজেই তাদের ভিতরে ঢুকে যায়।




### **চিত্রগ্রহণ ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক:**

সিনেমার চিত্রগ্রহণ অত্যন্ত সুন্দর, বিশেষ করে ধনী ও দরিদ্র সমাজের বৈষম্য দৃশ্যায়ন বেশ বাস্তবসম্মতভাবে দেখানো হয়েছে। ধনী এলাকার বিলাসবহুল পরিবেশ এবং দরিদ্র এলাকার হতাশাজনক চিত্র অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

**ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক** উত্তেজনাপূর্ণ, যা সিনেমার থ্রিলার অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। ক্রেগ আরমস্ট্রংয়ের কম্পোজিশন সিনেমার বিভিন্ন মুহূর্তকে আরও বেশি নাটকীয় করে তুলেছে।


### **শেষ কথা:**

*In Time (2011)* শুধুমাত্র একটি সাই-ফাই থ্রিলার নয়, বরং এটি আমাদের বাস্তব সমাজের প্রতিফলন। এটি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতি একটি তীব্র প্রতীকী সমালোচনা। যদিও কিছু জায়গায় গল্পের গভীরতা আরও বাড়ানো যেত, তবে এর অভিনব কনসেপ্ট, শক্তিশালী অভিনয় এবং দার্শনিক বার্তার কারণে এটি অবশ্যই দেখার মতো একটি সিনেমা।

**রেটিং:** ৮/১০

আপনি যদি থ্রিলার ও সাই-ফাই মুভি পছন্দ করেন এবং সমাজ নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন, তাহলে *In Time* আপনার জন্য অবশ্যই উপভোগ্য হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×