somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিত্র যখন আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধে অবতীর্ন( মিশর বনাম আমিরাত)

০১ লা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিত্র যখন আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধে অবতীর্ন( মিশর বনাম আমিরাত)
উপসাগরীয় দেশগুলুর কাতারের উপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে মিশরীয় স্বৈরশাসক সিসির গালে চরম আঘাতের মত অনুভূত হয়েছে ঠিক একই সময়ে ওয়াশিংটনে নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহনের দ্বারপ্রান্তে।
মিশরের স্বৈরশাসক আবদেল-ফাত্তাহ আল-সিসি আগেই বলেছিলেন, তিনি এই সপ্তাহে কাতারের সাথে আঞ্চলিক বিরোধের সমাপ্তি উপলক্ষে সৌদি আরবে উপসাগরীয় আরব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন না।যদিও তিনি এই চুক্তির প্রশংসা করেছিলেন। তিনি তার স্থলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামে শৌকরিকে প্রেরণ করেছিলেন,সিসি চুক্তির কিছু ধারাতে সন্তুষ্ট হননি, যা তিনি কাতারের কাছে অতিরঞ্জিত ছাড় এবং মিশরের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকারক হিসাবে দেখেন।এর মধ্যে উল্লখযোগ্য হল আল জাজিরা বন্ধ করার দাবি প্রত্যাখ্যান এবং কাতারকে মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করা বন্ধ করতে হবে। এই শর্তগুলু প্রত্যাহারের কারনে সিসি বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর দ্বারা কাতারে বয়কট এবং নিষেধাজ্ঞা উত্তোলনে চুক্তির এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ২০১৩ সালে সিসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে আল জাজিরা সম্পর্কে কায়রো'র অবস্থান এবং ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে তাঁর সর্বাত্মক যুদ্ধের কারণেই মিশর কাতারের সাথে বর্জনে যোগ দিয়েছিল।যদিও সিসি সৌদি আরবের নীতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করতে পারেন না এবং কাতারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার দেশের ভাবমূর্তি পুনর্বাসনের প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। তাই তিনি নিজেকে জিসিসি সামিটে নিজে উপস্থিত না থেকে একজন প্রতিনিধি প্রেরন করেন। তবে সৌদি আরবের সাথে মিশরের সম্পর্ক একসময় স্থিতিশীল হিসাবে দেখা গিয়েছিল। যতক্ষণ না সংযুক্ত আরব আমিরাত,বাহরাইন,সৌদি এবং মিশর বনাম কাতারের সাথে একই ফ্রন্টে ছিল। সেই সম্পর্কে এখন বরফ গলতে শুরু করেছে। এটি মূলত মিশরের এই ভয়ের কারনে যে উপসাগরীয় দেশগুলি মধ্যপ্রাচ্য এবং ওয়াশিংটনে এর মর্যাদার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিশর এবং আমিরাতের দন্দ বাড়তে শুরু করে ২০২০ সাল থেকে।সিসিকে অন্ধকারে রেখে ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ঘোষণা দেয়া।হারেৎজের মতে সিসি এই পরিকল্পনা জানতেন তবে তিনি বিশ্বাস করতেন তাকে বাদ দিয়ে এটা করা হবে না কারন ক্যাম্প ডেভিড থেকে চুক্তি থেকে শুরু আজ অবধি যা হয়েছে সেখানে মিশরের মুখ্য ভুমিকা ছিল কারন ফিলিস্তিনের সাথে মিশর সীমান্ত অবস্থিত।এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন আরন ইস্যুতে মিশরের ভুমিকাকে মুল্যায়ন করা হয়নি।
সিসি আমিরাতের ভুমিকায় অসন্তুষ্ট হলেও সেটা লুকিয়ে রেখে ওয়াশিংটনে চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রেরন করেছিলেন। তবুও, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস এর পক্ষে তার সমর্থন মানে এই নয় যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডি ফ্যাক্টো শাসক আবু ধাবি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদের সাথে তার সমস্ত পার্থক্যকে কটাক্ষ করা হয়েছে।
লিবিয়ায়, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত,লিবিয়ার স্বীকৃত সরকার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী জেনারেল খলিফা হাফতারের মধ্যে বর্তমান গৃহযুদ্ধের বিষয়ে একমত নন। এখানেও মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত জেনারেল হাফতারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক ও কাতারের সমর্থিত আন্তরজাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনএ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য।লিবিয়া এই দুই দেশই ফ্রান্সের সাথে একই পতনের জন্য সাহায্য করার জন্য একটি সামরিক জোটের অংশীদার।কিন্তু জায়েদ জিএনএ সরকারের প্রতি কিছুটা নমনীয় হলেও মিশর শক্ত অবস্থানে ছিল কারন জিএনএ সরকার হল ব্রাদারহুড সমর্থিত।আর এটাকেই সিসি তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।পক্ষান্তরে জায়েদের ব্রাদারহুড ভিতি থাকলেও তার মুল উদ্ধেশ্য হল পুরু উপসাগরের আধিপত্য বিস্তার করা।সিসি এটা বুঝতে পেরে গত ডিসেম্বরে জিএনএ সরকারের প্রতিনিধিকে মিশরে আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন।
আফ্রিকার কন্টকাকীর্ণ পলিসি।
এদিকে ইথিওপিয়া অর্থনৈতিক সংকট কাটানোর লক্ষে আমিরাত ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩ বিলিয়ন ডলার ডিপোজিট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।এবং ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যকার চলমান সংকটে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে।২০২০ সালে তিগরায়ান অঞ্চলে ইথিওপিয়ার সামরিক অভিযানের সময় আমিরাত ড্রোন দিয়ে সাহায্য করেছে এবং ইজরায়েলের সাথে সমন্বয় করে এই অঞ্চলের দেশগুলুর উপর গোয়েন্দাগিরি চলমান রেখেছে।
কায়রো উদ্বিগ্ন যে আফ্রিকান হর্নে সব কিছু তার মত করে চলতেছে না। মিশর,সুদানকে ত্রিগ্রীয়দের সমর্থন করার জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিল এবং ইথিওপিয়া নীল নদের উপর যে বাঁধ তৈরি করছে সে সম্পর্কে মিশরের দাবি মেনে নিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ইথিওপিয়ার উপর অর্থনৈতিক চাপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।যাতে এটি নিশ্চিত করা যায় নীলের পানিতে যেন মিশরের এক্সেস যেন বাধাগ্রস্থ না হয়।কিন্তু সেটা হয়নি।
তবে কায়রো বিশ্বাস করেন যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইথিওপিয়াকে চাপ দেওয়ার কাজটি করেনি। ইজরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরাত লোহিত সাগর থেকে ইলাত হয়ে হাইফা বন্দর পর্যন্ত একটি খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, ইলাত ও আশদোদের মধ্যে তেল পাইপলাইন স্থাপনের ধারণা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত হেইফা বন্দর কেনার বিডের কারনে মিশরকে আশঙ্কা করছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইজরায়েল সুয়েজ খালকে বাইপাস করে নতুন খাল খনন করে এই অঞ্চলে মিশরের মর্যাদা ও আয়ের মূল উৎসকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
সুদানের ব্যাপারে আবুধাবির ব্যাপক সম্পৃক্ততাও মিশরকেও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আবুধাবি ইজরায়েল ও সুদানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন প্রক্রিয়ায় মুল ভুমিকা পালন করেছে এবং ইজরায়েলের সহায়তায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে সন্ত্রাসী-পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রগুলির তালিকা থেকে সুদানকে বাদ দেওয়ার জন্য রাজি করিয়েছিলেন এবং ট্র্যাম্প সেটা করেছিলেন।উপরন্তু আমিরাত,রাশিয়া এবং সুদানের মধ্যে সামরিক চুক্তির মধ্যস্থতা করে।গত ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তির ফলে পোর্ট সুদানে রাশিয়ার নৌ ঘাঁটি স্থাপিত হবে।এর ফলে রাশিয়া সেখানে কমপক্ষে ৪টি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন রাখতে পারবে।পোর্ট সুদান এবং পোর্ট তার্তুসে(সিরিয়া) রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে রাশিয়া বুঝিয়ে দিল এই অঞ্চলে ভুমিকা রাখার শক্তি রাশিয়ার আছে।
ইয়েমেনের যুদ্ধের জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক জোটের গুরুত্বপুর্ন অংশীদার হল মিশর।কিন্তু দক্ষিন ইয়েমেনের ঘটনাবলী,বিশেষত এডেন এবং সকোট্রা আর্কিপ্লেগোতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবকে উদ্বেগজনকভাবে পর্যবেক্ষন করছে। আবুধাবি দক্ষিণ ইয়েমেনে স্বাধীন রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইছে। দক্ষিনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রধান সামরিক-অর্থনৈতিক ভিত্তি হল আমিরাত।
নভেম্বর,২০১৯ এ, দক্ষিনের আমিরাতের প্রক্সি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হাদি সরকারের সাথে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।যা বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরব চেষ্টা করেছিল।কেবলমাত্র গত মাসে হাদি সরকার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একক সরকার গঠন করেছিল, কিন্তু এই চুক্তির পরেও আবুধাবির সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা থামছে না। তারা একসাথে সোকোট্রা আর্কিপেলাগো দখল করেছে। এখানেও ইজরায়েল একটি সামরিক দুর্গ পাওয়ার আশা করছে।এটা আরো তরান্বিত হবে যদি হুতিদের/ইরানকে পরাজিত করা যায়।
লোহিত সাগরে মিশরের অবস্থানের অবনতির সূচনা হয় তখন, যখন মিশর বিশাল অর্থনৈতিক সহায়তার বিনিময়ে সৌদি আরবকে সানাফির এবং তিরান দ্বীপপুঞ্জের দখল বুঝিয়ে দেয়।মুলত এই কারনেই আমিরাত তার ইনফ্লুয়েনশ ধরে রাখতে ইজরায়েল-আমিরাত লোহিত সাগর থেকে হাইফা পর্যন্ত নতুন খাল নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:০৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×