আমাদের ব্লগের সনামধন্য লেখক জনাব সাইন বোর্ড সাহেবের রান্নাঘর পড়ে আমারো একটা কাহিনী মনে আসলো, তাই লিখতে বসলাম
সেটা অনেক দিন আগের কথা, হালিমার বিয়ে হয়েছিলো আজিজ এর সাথে। সে তখন মাদ্রাসায় পড়ে, তার ভাই ছিলো শিক্ষক, তাই তার শিক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিলো। বড় বোন ছিলো হাফেজা। হালিমা ছিলো ২য়, সবার বড় ভাইয়ের পর তার জন্ম। সবার আদরের আর বুদ্ধিমতী মেয়ে।
হালিমা শশুর বাড়িতে এলো, দেখলো তার শাশুড়ি একটু কৃপণ টাইপের মহিলা। তার অন্যান্য ননদ ঝাদের সাথে একটু ত্যারা ভাবেই কথা বলে। তবে হালিমাকে তার খুব পছন্দ, কারন সে সুন্দরী আর শিক্ষিত। সেই যুগে ওই টুকুই বেশি। তার উপর ধর্ম জ্ঞান জানা আছে ।
হালিমা ছিলো চালাক আর খুব দ্রুত সব পরিস্থিতি বুঝে যেতো। তাই কয়দিনেই শাশুড়ির মন জয় করে নিলো । যা অন্য কোন বউ পারেনি এই বাড়িতে আগে এসেও।
হালিমার শাশুড়ির অভ্যাস ছিলো, মানুষকে খাওয়ানো । সে কোন গরীব মানুষকে দুঃখী দেখতে পেতোনা। কেউ কাছে এসে কোন দুঃখ কষ্টের কথা বললে সে গলে যেতো। মমতাময়ী হয়ে উঠতো। এই গুণটা হালিমার স্বামীও পেয়েছে। তবে সে তার দাদার মতো একটু মিতব্যয়ী কিপটাও বলা যায়। তবে তার অভ্যাস হল প্রতিদিন দুপুরে কোন না কোন মানুষকে খাওয়াবে। অনেক দূর থেকে আসা কোন লোক যদি পথ হারিয়ে ফেলে। তাহলে সে তার বাড়ির বাহিরের বৈঠক ঘরে ঘুমাতে দেয়। আজিজ সাহেব লোকটাও নরম মনের মানুষ , তার ছোট এক ভাই মারা গেছেন। আরেক ভাই আছে। সেও খুব সহজ সরল আর রসিক ।
হালিমা তার শাশুড়িকে মাজান (আম্মা) বলে ডাকে। তাই তাকে খুব আদর করে । (আসল কথা হল, অনেক সময় পরিশ্রম করে সেবা করার চাইতে সম্মান দেখানোর বিষয়টাও বেশি বড় হয়ে যায়)
বাংলাদেশের অনেক নারীর অভিযোগ শাশুড়ি ভালোনা। আসলে তারাও অনেক ক্ষেত্রে সম্মান টা দেয়না। এটা কারো চিন্তায় আসেনা
এদিকে হালিমার এক ছেলে জন্ম নিলো। তার পর আরেক মেয়ে। এভাবে ৫ জন । তার শাশুড়ি একদিন মারা গেলো ।
সে তার সন্তানদের বিয়ে করালো। সেও শাশুড়ি হল।
তিনি কিন্তু নিজেকে আরো গুছিয়ে নিলেন, কারন তিনি জানেন কিভাবে তার শাশুড়ি তার সাথে আচরণ করেছে। আর যে আর ভুল কোনটা সঠিক কোনটা।
তার সব বউদের সাথে তার আচরণ অনেক ভালো। আর সেটা অন্য দশটা পরিবার হতেও বেশি৷
তবে সে খেয়াল করলো তার শাশুড়ির অনেক অভ্যাস তার ভিতরে ঢুকে গেছে। সে মাঝে মাঝে হেসে হেসে তার পুত্র বঁধুদের বলে ।
এতো বছর সাথে থাকতে থাকতে মা সাবের (শাশুড়ীর) অনেক অভ্যাস কিভাবে যেনো আমার ভিতরে বাসা বেধে নিয়েছে । সেই কাজ গুলো যেনো আমারো ভালো লাগে। আমার পছন্দ হয় করতে, ওই কাজ গুলো যেটা তোমাদের দাদি শাশুড়ি করতো।
আল্লাহর কি লিলা খেলা, কাল আমি বউ ছিলাম, আজ আমি শাশুড়ি। কালকে তোমরা এই জায়গায় আসবে ।
তাই এটা মনে রেখো, আজকের কাজ গুলোই তোমার আগামীকাল গড়ে দিবে।
তুমি তখনি সম্মান আশা করতে পারবে। যখন তুমি কাউকে ভালোবাসা দেখাবে৷ ভালোবাসা না দেখালে কেউ সম্মান পায়না।
মানুষকে মানসিক ভাবে আপন করে নেওয়াটা আসল। আর সেটার জন্য শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়না। প্রয়োজন হয় মুখের একটু সুন্দর ভাষা আর শ্রদ্ধাশীল আচরণ। তাহলে সেই আচরণ মানুষকে মানুষের কাছে করে তোলে প্রিয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২০