somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

-লুটের রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়-

০৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখের সামনেই ওরা থেকে যায়, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত... তবু আমরা শুধু তাকিয়ে দেখি ওদের, অনেক কিছুই জানি, তবু মানতে চাই না, বুঝতে চাই না। অন্ধভাবে অনুকরণ করেই কিসের যেন শান্তি পাই। ওদের ফ্যাশন জানলেই 'আধুনিক' বলে দাবি করি নিজেদের!! আরো কত কি!!


অল্প কিছু ব্যাপার তুলে ধরার চেষ্টা করবো। দেখা যাক কতদূর পারি...
পত্র-পত্রিকায় কয়দিন ধরেই চোখে পড়ছে, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর Diamond Jubilee বা হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে নানা আয়োজন। এর মধ্যে সেদিন দেখলাম হীরা-প্রদর্শনীর উৎসবও চলছে। নিঃসন্দেহে বহুল জাঁক-জমকপূর্ণ। গত ৩০০ বছরে রাজপরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেছেন এমন প্রায় ১০০০০ হীরা নিয়ে প্রদর্শনী, কম কথা নাকি?

কিন্তু ওহে ইউরোপ-আমেরিকা, কোন সম্পদ নিয়ে তোমাদের অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না? হীরা নিয়ে যে প্রদর্শনী আজ ইংল্যান্ডের প্রাসাদে, তার কয়টা আসলে তোমাদের?......
বিশ্বাস হচ্ছে না?

আচ্ছা, ফিরে যাই কিছুটা আগে...
উপমহাদেশে ১৯৪৭ এর আগের ইতিহাস নতুন করে বলার কিছু নাই। পলাশীর যুদ্ধের আগে থেকেই ব্রিটিশ লুটপাট শুরু হয়ে যায় ও পরবর্তী ২০০ বছর চলতে থাকে। আমাদের কি পরিমাণ অর্থ-বিত্ত এই সময় ওদের দেশে পাচার হয় তার পরিমাণ আজ পর্যন্ত জানা যায় নাই। যদিও গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী অঞ্চলটাকে সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলে পরিণত করতে কতটা লুটপাট করা লাগে তা সহজেই বোধগম্য।
ইউরোপ আজ যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অনেকটাই হলো ১৭৭০ এর পর থেকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের অবদান।
আর এই সময়টা আমাদের উপমহাদেশে কি চলছিলো জানেন??
দুর্ভিক্ষ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। যেই দুর্ভিক্ষের এক পর্যায়ে জীবিত মানুষ মৃত মানুষের গোস্ত খাওয়া শুরু করে, আর কোম্পানী গদিতে বসে রাজস্ব আরো বাড়ানোর নীলনকশা চালিয়ে যায়। এরপরও কি বিশ্বাস করা উচিত এটা প্রাকৃতিক কারণে?
গোটা ইংল্যান্ডে যেখানে সব মিলিয়ে ১২ টা ব্যাঙ্ক ছিলো, এরপর রাতারাতি কিভাবে সেখানে বাজারে বাজারে ব্যাঙ্ক গড়ে ওঠে?? এই প্রশ্নের উত্তর ব্রিটিশরা আজো দিতে পারে নি।
আরেকপক্ষও এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রচুর লাভবান হয়, তারা হলো আমেরিকা। পণ্য রপ্তানী ক্ষেত্রে তারা এসময় শুল্ক কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর ইংরেজদের চোরাই অর্থের জোরে, শিল্প বিপ্লবের প্রসারে ইংল্যান্ডও বাণিজ্য বাড়াতে থাকে আমেরিকার সাথে, আর এভাবেই ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে আমেরিকা।

জগদ্বিবিখ্যাত যেই কোহীনূর ইংল্যান্ড এর রানীর মুকুটে আজ শোভা পায়, তা কিন্তু আমাদের উপমহাদেশ থেকে আক্ষরিক অর্থেই লুট করা। আর তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসী এর উদ্যোগে ১৮৫০সালে এই মহামূল্যবান হীরা রানী ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেয়া হয়।
অনেকেই জানে না, ব্রিটিশদের দখলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোহীনূর ছিলো ১৮৬ ক্যারেটের যা ব্রিটিশরা নিজেদের মত কেটে নিয়ে ১০৫ ক্যারেটে পরিণত করে।

উপমহাদেশের আমাদের হারানো আরেকটা মহামূল্যবান সম্পদ ময়ূর সিংহাসন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এটি তৈরীতে তাজমহলের দ্বিগুন অর্থব্যয় হয়। কারণ এর পুরোটাই ছিলো স্বর্ণ, হীরক আর মূল্যবান সব পাথরখচিত। আর এই ময়ূর সিংহাসনও ইংরেজদের সর্বগ্রাসী লোভের স্বীকার। জানা যায়, যুদ্ধকালীন হাত-বদলের ফলে এটি ভেঙে যাওয়ার পর এর ভাঙ্গা অংশ লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় জাহাজ-ডুবিতে এটি হারিয়ে যায়।
এরপর এই ময়ূর সিংহাসনের হদিস আর ইতিহাসে নেই, তবে এটি সহজে অনুমেয় যে এর গায়ের মূল্যবান পাথর পাচার হয়। আর হয়তো ইংল্যান্ডের রাজপরিবারে পৌঁছে আজ ঐসব Diamond Jubilee তে প্রদর্শিতও হচ্ছে।।

এমন আমাদের আরো কত মহার্ঘ সম্পদে সময়ের পালাবদলে ব্রিটিশরা নিজেদের সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ করেছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। সম্রাট জাহাঙ্গীর এর স্বর্ণের তলোয়ার, মুঘল ইতিহাসের দলিল বাদশাহনামা, ঐতিহাসিক মূল্যবান চিত্রকর্ম-চারুকর্ম... কোন কিছুই লুট করতে বাকি রাখে নি ইংরেজরা।

মহীশুরের বীর শাসক টিপু সুলতান ইংরেজদের প্রতি নিজের ঘৃণাস্বরূপ এক অনন্যসাধারণ ‘খেলনা’ তৈরি করিয়েছিলেন, যা ইতিহাসে ‘টিপু সুলতানের বাঘ’ নামে পরিচিত।
বাঘের থাবার ভূলুণ্ঠিত এক ইংরেজের প্রতিকৃতির মাধ্যমে তিনি বিদেশীদের উপর বাংলার মর্যাদাকে তুলে ধরেছিলেন।
কিন্তু টিপু সুলতান পরবর্তিতে ১৭৯৯ সালে ইংরেজদের কাছে পরাজিত ও নিহত হলে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনও ইংল্যান্ডে পাচার হয়। আশ্চর্য হলেও সত্যি, তাদের প্রতি ঘৃণার কারণে তৈরি হলেও এই প্রতিকৃতি ইংল্যান্ডে প্রদর্শিত হয়ে ব্যাপক প্রশংসা পায়।
বর্তমানে এটি সংরক্ষিত আছে ইংল্যান্ডের Victoria and Albert Museum এ।।

অবাক লাগে ভাবলে, কি অবস্থায় আছি, আর কি অবস্থায় থাকতে পারতাম।।
মীরজাফর, রাজবল্লভ, ঘষেটি বেগমরা না থাকলে হয়তো গোটা বিশ্বে আরো ২০০ বছর আগে থেকেই ছড়ি ঘোরাতে পারতাম...

হায়রে আমাদের ভাগ্য . . .
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×