বৃহস্পতিবার, ভোর সাড়ে ৫ টা, চারদিকে গগনবিদারী বাঁশির শব্দ। তবুও ঘুম ভাঙতে চায় না। হঠাৎ পাশে থেকে নাফিস এক লাথি মেরে বললো, ৩ মিনিট বাকি, পিটিতে যাবি না। কোনমতে ঘুম থেকে উঠে দেড় মিনিটের ভিতর রেডি হয়ে পিটির ফল ইন এ জয়েন করলাম। ফল ইন এগিয়ে চলল প্যারেড গ্রাউন্ড এর দিকে। আর কিছুক্ষন পরই দৌড় শুরু হবে। দৌড় শুরু।
ফল ইন এর ভিতর কে যেন বলে উঠল, 'সোহাগ কই?'
আরেফিনঃ মামা, ও তো সবার সামনে।
শুভঃ আরে ও তো সামনেই থাকবে। তোমরা তো ব্যাপারটা বুঝবা না।
সাজ্জাদঃ আরে মামা, দ্যাখ পলাশ ও গাইড এ।
পিটিআই মান্নানঃ এই কথা বলছ কেন?? কথা বলছ কেন??
সাময়িক নিস্তব্ধতা। আবার শুরু। সারা রাতের জমে থাকা কথা। এবার পিটির ফল ইন। স্কিপ জাম্প উইথ আর্ম রেইজং সাইড ওয়ে এন্ড ডাউনওয়ার্ড। পুশ আপ দিয়ে পিটি শেষ হল। সব ভেঙেচুরে দৌড়। উদ্দেশ্য একটাই,
আমিনুল, আমি তোর পরে, অনঘ, আমি তোর পরে, আমি তোর পরে।
ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট এর পালা। শামীম, আজ ক্যাডেটস টক এ বক্তৃতা দিবে।
-শামীম, দোস্ত, আজ ক্যাডেটস টক এ কি নিয়ে বলবি?
-এই তো বলবো
-আরে বল, আমরাও কিছু আইডিয়া দেই।
-জালাইস না।
ব্রেকফাস্ট শেষে মিনিট ১৫ পর সবাই অডিটোরিয়ামের দিকে। কে, কার আগে যেতে পারে? সামনে নয়, পেছনের দিকে বসার জন্য। অবশেষে ধৈর্য্যের পরীক্ষা শেষ হয়। ক্যাডেটস টক শেষ। এবার ক্লাস এর পালা। টি ব্রেক এর পর প্রথম ক্লাস ক্যাপ্টেন তৌফিক স্যারের। আজও সেই সেম রাডার নিয়েই পড়াবে, আর আমি ব্যাকবেঞ্চার আরামসে ঘুমাব, শর্ত একটাই, যতক্ষন পর্যন্ত মাথার উপর দিয়ে মার্কার ক্যাপ উঁড়ে না যায়। এর পরের দুইটা ক্লাশ সেই মনোযোগী ছাত্রের মত হোয়াইট বোর্ডে চোখ রেখে পার করে দিতাম।
লাঞ্চ ব্রেক। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। লাঞ্চের পর্ব পার করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন ঘুমের চেস্টা। ২০ মিনিট পর সিগনালিং ক্লাশ এ যেতে হবে। ঘুম দিয়ে উঠে দেখি ৪ টা বাজে। সাকিবের কথা শুনে ঘুম ভাঙলো।
-সিগনালিং ক্লাশ এ যাসনি ক্যান? কাউন্টিং হইছে। তুই তো চার্লি খাইয়া গেছিস।
মাথা পুরা হ্যাং। রেডি হয়ে গেলাম গেইমসে। গেইমসের পর জলদিয়া রাঙাদিয়ার পাহাড়ে যখন সন্ধ্যা নামতো, সারাদিনের সব কস্ট ভুলে যেতাম। রাতে প্রেপ এর পর ডিনার। ডিনারের পর ব্লু রুম খুলে দিলেই শুরু হত এমটিভি আর নাইনএক্সএম এর ফুল ভলিউম প্রদর্শন। রাউন্ডের পর জুনিয়র বলে যায় লাইটস অফ পাইপ ডাউন।
শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত। শাহরিয়ার ভাই গিটার হাতে বসে যায় মিজেন টপ গ্রাউন্ড এর লন এ। শত বেসুরো গলা সুরেলা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার মিটার দুরে। হঠাৎ শোনা যায় লং পাইপ, সিংগেল পাইপ। যে যার মত ভেঙেচুরে দৌড়। রাত ২ টারও পরে শেষ হয় আরেকটি বৃহস্পতিবার রাতের।
কত সুন্দর ছিল সে সব দিন রাত্রি। আজ ৩১১ দিন পার হচ্ছে। কেউ বা আজ নব উদ্যোমে পাড়ি দিচ্ছে আটলান্টিক, কেউ বা প্রশান্ত। কেউ কোন বন্দরে অপেক্ষায় আছে নতুন কোন বন্দরে যাওয়ার জন্য। আবার কেউ অপেক্ষায় আছে তার মেইডেন ভয়েজের। তোদের খুব মিস করছি। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর ৪৯তম ব্যাচ। জানি আর কোনদিন আমরা সবাই একসাথে হতে পারবো না। তবে ২ বছরের স্মৃতি নিয়ে পার করে দিব সারাজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৩