খুব বেশি দিন আগের কথা না। ক্যাসেটের যুগের কথা বলছি। তখন ক্যাসেটের দুই পিঠ মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ টি গান থাকতো। একটি ৬০ মিনিট ব্যাপ্তির ক্যাসেটে ১২টি গান থাকবে এটাই যেন স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হতো। আবার কখনো কখনো ৭০ মিনিটের ক্যাসেটও প্রকাশ হতো। সেখানে তখন ন্যূনতম ১৪টি গান থাকতো। এরপর ক্যাসেট যুগের সমাপ্তি ঘটলো। এলো সিডি/ ভিসিডি/ ডিভিডি/ মেমোরী কার্ডের যুগ। আর এখন তো গান শোনার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্ধী মাধ্যম হলো ইউটিউব।
অনুরূপভাবে গানের সংখ্যার ক্ষেত্রেও আমুল পরিবর্তন এলো। অ্যালবামে গানের সংখ্যা কমতে কমতে এখন ১টি-তে এসে পৌঁছেছে। আগে একটি অ্যালবামে ১২টি গানের মধ্যে দেখা যেত ৩/৪ টি গান পছন্দের তালিকায় এসে যেত। এখন সেই বাছাইয়ের সুযোগ কোথায়! ১টি বা ৩টি গানের অ্যালবামে দেখা যায় একটি গানও ভালো নাও লাগতে পারে। ফলে কোন অ্যালবামের এই অল্প কয়টি গানের কোনটিই যদি শ্রোতার মনোঃপুত না হয়, তবে শ্রোতার মনে অটোমেটিক ভাবেই সেই শিল্পীর প্রতি একটি নেগেটিভ ইমপ্রেশন গড়ে ওঠে। সেই শিল্পীর আরেকটি অ্যালবামের গান শোনার প্রতি পরে আর আগ্রহ নাও জন্মাতে পারে।
সেজন্য প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পীদের জনপ্রিয়তা কি আসলেই বেড়েছে? নাকি প্রতিযোগীতাটা এখন আরো কঠিন আর অসম হয়ে গেছে?
অ্যালবামে গানের সংখ্যা না বাড়ানোর পেছনে যুক্তি হলো, এতে নাকি অ্যালবামের খরচ বেড়ে যায়। অথচ এখন লাখ টাকা দিয়ে ভিডিও নির্মাণ না করলে নাকি আর দর্শক-শ্রোতাদের কাছে গান জনপ্রিয় করা যায় না! অথচ ভিডিও পেছনে যে টাকা খরচ হয় সেটি দিয়ে তো গান আরো কয়টা করা যায়। তাহলে সকলে গানের চেয়ে ভিডিও'র পেছনে এতো জোর দেয় কেন? উপরন্তু ক্যাসেটের যুগে ভিডিও তেমন ছিল না বললেই চলে। তখন কি গান হিট হয় নি, শিল্পীরাও কি জনপ্রিয় হয় নি?
প্রযুক্তির এডভানটেজ ও ডিজএডভানটেজ উভয়ই আছে। তাই প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলাই স্মাটনেস নয়, বরং নিজের স্বকীয়তা টিকিয়ে রেখে চলার মাঝেই হলো আসল স্মাটনেস। ইউটিউবে গিয়ে পুরনো অ্যালবামগুলোর ভিউ দেখুন, তাহলেই বুঝবেন শ্রোতারা আসলে কি পছন্দ করে। তাই সংগীতাঙ্গনের বর্তমান দুরাবস্থার জন্য প্রযুক্তির মিসইউজ দায়ী কিনা সেটাও বোধহয় এখন ভাববার সময় এসেছে।