আজ ইন্টারভিউ বোর্ডে বসব। সেলস টিমে লোক লাগবে। যারা ইন্টারভিউ দিতে আসবে সবাই সাইন্স গ্র্যাজুয়েট। বেসিক জানার জন্য কি কি প্রশ্ন করা যায় মোটামুটি একটি প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছি। সঠিক লোক নির্বাচন করা একটা পবিত্র দায়িত্ব।
প্রথমে যে আসল, দেখেই পছন্দ হলো না। ইন্টারভিউ দিতে এসেছে জিন্স আর চামড়ার স্যান্ডেল পড়ে! এরা কি সামান্য প্রিপারেশন নেতে পারে না, নাকি জব নিড বোঝানোর জন্য ইচ্ছা করে এরকম পোশাক পড়ে আসে! প্রথম প্রশ্নেই দেখলাম তোতলাচ্ছে, বাদ দেয়া ছাড়া আর কোন গতি নাই।
এরকম পাঁচ-সাতজনকে ইন্টারভিউ করলাম। সবার একই অবস্হা, কোন প্রিপারেশন নাই! ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য সারারাত বাচ্চার বইগুলো উল্টেপাল্টে প্রিপারেশন নিলাম আর যাদের চাকরি দরকার তারা এসেছে কোন প্রিপারেশন ছাড়া! মেজাজটা ধীরে ধীরে গরম হয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক সে সময়েই ছেলেটা ঢুকল। স্মার্ট, প্রায় ছয় ফুট লম্বা, চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো, সদ্য কালি করা জুতো। দেখেই পছন্দ হয়ে গেল, মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম।
"স্লামালেকুম, স্যার",
"ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসুন।"
বসল ছেলেটি, খুবই অমায়িক ভঙ্গিতে।
"আপনি তোফাজ্জল হোসেন?"
"জ্বি, স্যার।"
"আপনার নামে বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লোক আছেন, জানেন?"
ছেলেটার চেহারা সাদা হয়ে গেল, বুঝলাম মানিক মিয়ার নাম শোনে নাই। হতেই পারে, এ যুগের ছেলে-মেয়েরা তার নাম নাই শুনতে পারে।
"ঠিক আছে, না চিনলে অসুবিধা নেই। উনি নামকরা সাংবাদিক ছিলেন।" ছেলেটাকে সহজ করার জন্য বললাম।
ছেলেটা কেমেস্ট্রিতে মাস্টার্স। সব প্রথম শ্রেনী। প্রথমেই চিন্তা করলাম, কেমিস্ট্রির কিছু বেসিক প্রশ্ন করি।
"আচ্ছা বলনতো, কোন জিনিস লাল লিটমাসকে নীল করে?"
মনে হলো সে প্রশ্নটা জীবনে প্রথম শুনেছে! কোন উত্তর নেই। আবারও চিন্তা করলাম, টেনশনে হয়ত ভুলে গেছে।
"আচ্ছা, ঠিক আছে, বলেনতো, এসিড আর ক্ষার বিক্রিয়া করে কি তৈরী হবে?" উত্তর নেই।
"পর্যায় সারনীতে কয়টা মৌলিক পদার্থ আছে?" "পি এইচ কাকে বলে?" "পানির সংকেত কি?" "কেমিস্ট্রি ইংরেজিতে বানান করেন।" এই প্রশ্নগুলো করলাম। বলা বাহুল্য, তার মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের করতে পারলাম না। চিন্তা করলাম, বেচা-বিক্রি করবে, সাইন্সের বেসিক না জানলেই কি! কিছু বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্ন করি।
"বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে?"
"১৬ই ডিসেম্বর, স্যার" এবার ঝটপট উত্তর! মাস্টার্স শেষ করা একজন স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসের তারিখ উলট-পালট বলছে, এবার বিরক্ত হলাম। দেশ সম্পর্কে লোকজন জানবে না, এটা মানতে কষ্ট হয় আমার।
"২১শে ফেব্রুয়ারি কিসের জন্য গুরুত্বপূর্ন?" পরবর্তি প্রশ্ন।
"জানি না, স্যার" সরাসরি স্বীকারোক্তি চরমভাবে হতাশ করল আমাকে।
"১৯৫২ সালে কি হয়েছিল, জানেন?"
"স্যার,রাস্তাঘাটে মাঝে মাঝে ব্যানার দেখেছি, ৫২, ২১শে ফেব্রুয়ারি, কিন্ত এগুলো কি জানি না।"
বিহবল হয়ে বললাম, "ভাষা আন্দোলনের কথা জানেন না আপনি?"
"আমি তো স্যার অলথ্রু সায়েন্সের ছাত্র, ইতিহাস জানি না।"
নিজের অক্ষমতা ঢাকার জন্য সায়েন্সের দোহাই দেয়াটা এই প্রথম শুনলাম। কিন্ত আসলেই কি সায়েন্সের ছাত্ররা নিজের দেশের ইতিহাস জানবে না! কেউ জানাবেও না!
এহেন শিক্ষিত লোক লইয়া আমরা এখন কি করিব!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৭