somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুড়ানো ( পর্ব ৪৮ )- সেদিন ফগুন ছিলো

২২ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাল অরণি কলিকাতা চলে যাবে, আমার মন ভালোনেই।
- মন খারাপ কেন আমি কি হারিয়ে যচ্ছি নাকি? সহসাই ফিরে আসবো, সামনে পরীক্ষা তার আগেই এসে পরবো।
দু'জনে স্বর্ণচাঁপা গাছের নিচে বসি, অরণিকে এত আনমনা কখনো দেখিনি। মঞ্জু মাসি এসে পাশে বসলেন।
- তুই সাথে গেলে বেশ হতো, হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে গেলি, বুঝতে পারছিনা, সামনে কি হবে।
ভুট্টো এসব কি বলছে। আমরা একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, ভুট্টোর সাথে কোয়ালিশন করতে হবে কেন, পশ্চিমাদের হাবভাব ভালো লাগছে না, সব সময় বঞ্চিত করেছে। আবার শুরু করছে নূতন ষড়যন্ত্র, তিন দিন ভুট্টো ঢাকায় থেকে গেলেন, কোন ফয়সলা হলো না।
- মাসি আমিও বুঝতে পারছিনা দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, তবে দেখে নিও জয় আমাদের হবেই।
- তোরা বসে গল্প কর আমি গরম গরম পাকুড়া ভেজে আনছি।
মাসি চলে গেলে অরণি একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে।
- যত দূরেই যাই মন পড়ে থাকবে এখানে, তোমার কাছে। তুমি এতো মন খারাপ করলে আমি কলিকাতা থাকবো কিভাবে।
- না অরণি, মন খারাপ নয়, তবে কেমন একটা শূন্যতাবোধ বুকের ভেতর। এমন আগে হয়নি কখনো।
- এসে পরবো, কয়েক দিন থাকতে পারবেনা, তোমাকে রোজ চিঠি দেবো, অনেক অনেক করে লিখবো, জবাব দিতে ভুলো না, সল্ট লেকের ঠিকানায়।
এই, একটা কবিতা শোনাও তোমার লেখা, অনেক দিন কোন কবিতা শুনিনি।
বেশ বুঝতে পারি অরণি নিজকে সামাল দিচ্ছে, এটা ওটা বলে।
- কাল রাতে ঘুম আসেনি, আকাশ পাতাল ভেবেছি, দেশকে নিয়ে, তোমাকে নিয়ে, একটা ফাগুনে কবিতা লিখেছি, শুনবে।
- হুম, শুনাও।

ফাগুনে আগুন

যে কথা হয়নি বলা, চলে যায় কালের গভীরে
আরো একটি সূর্যাস্ত,
শীত বিকেল হারিয়ে যায়, স্বর্ণচাঁপা হারায় সুবাস
সন্ধ্যামালতী সুবাসিত হয়নি,
কিছু নাবলা কথা রয়ে যায়, সেই কথা বুনোফুল,
অচেনা সুবাস।

বলা হয়নি হৃদয়ের মাঝে লালিত,
গোপন প্রণয়ের পদাবলী,
ছড়ায় বিহব্বলতা।
অনুভূতির সূখের পায়রা উড়ে নীল জ্যোস্নায়,
বেঁচে থাকে কিছু প্রেম, কিছু স্বপ্ন,কিছু আকাঙ্ক্ষা।
আজ ফাগুনে আগুন কেন?

হে প্রেম!
তোমাকে বলতে ইচ্ছে করে,
সময় ফুরিয়ে যায়নি, চলো
একটা স্বপ্নঘোর কবিতা চয়ন করি দু'জনে
সেখানে থাকবেনা কোন বিরহ!

- বাহ্ সেখানে থাকবেনা কোন বিরহ! বেশ লিখেছো, দাও কবিতাটা রেখে দেই সযতনে, আমাদের মাঝেও থাকবেনা কোন বিরহ।
কবিতাটা ভাঁজ করে বুকের মাঝে রেখে দেয়।
মঞ্জু মাসি গরম গরম পাকুড়া নিয়ে এলো, তোরা গল্প কর, আমি চা নিয়ে আসছি।

- শওকত ভালো থাকিস, কলকাতা আমার মোটেও ভালোলাগেনা, ইটপাথরে ঠাসা, টলদমলে জলের ঘাট নেই, আমাদের ঝিলটুলির মতো বাগান নেই, মহুয়ার মাতাল গন্ধ নেই। সেখানের মানুষজন গুলো ইটপাথরের মতো। এতো নাগরিকতা আমার ভালো লাগেনা। আমার ভালোলাগে রক্তজবা লাল, কামীনি ফুলের গন্ধ, শরৎ সকালে শিউলিতলায় ফুল বিছিয়ে থাকা উঠোন।
তোদের এতো ভালোলাগে, তুই আমার বড় আপন, সহসাই ফিরে আসবো, জানিস, আমার মন পড়ে থাকে চাঁপা গাছের নিচে ফুল বাগানে।
অরণি কিছু না ভেবেই গুনগুনিয়ে গাইলো।

'ওযে মানে না মানা
আঁখি ফিরাইলে বলে,
না না না
যত বলি নাই রাতি
মলিন হয়েছে বাতি।।
মুখ পানে চেয়ে বলে
না না না,

বিধুর বিকল হয়ে ক্ষেপা পাগলে
ফাগুন করেছে হা হা ফুলের বনে
আমি যত বলি তারে,
এবার যে যেতে হবে -'

মাসিও সাথে সাথে সুর মিলালেন।
আমার বুকের মাঝে হা হা করছে ফাগুন, হৃদয় বেজে উঠলো কি যেন হারিয়ে ফেলেছি, এমনটা হয়নি কখনো। কখন যে ভালোবাসা ডালপালা মেলেছে, নিজেও টের পাইনি।
সেদিন নিভৃতে অরণির রক্তজবা ওষ্ঠে ভালোবাসা একটি চুমো এঁকে দিয়েছি, স্বর্ণচাঁপা তখনি সুবাসিত হলো, অরণি জরিয়ে ধরে বলেছে, ভালোবাসি তোমাকে, ভালোথেকো।

সেই ভরা বসন্তে ফাগুন আগুন জ্বালিয়ে দিলো।

আচানক

ফেব্রুয়ারি ১৩, ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৩ মার্চ ঢাকায় পার্লামেন্ট আধিবেশন বসবে। তেজগাঁও পার্লামেন্ট ভবনে। সব আয়োজন সম্পন্ন। দেশের নির্বাচিত সংসদসদস্য গণ তেজগাঁ এমপি হোস্টেলে এসে গেছেন। পিপলস্ পার্টি কেউ আসেনি।
শেখ মুজিবর রহমান, পার্লামেন্টারি বোর্ডে নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। অধিবেশনে তিনি দেশের প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
আমরা আনন্দিত, জয় বাংলার জয় হয়েছে, চারিদিকে উৎসবে মুখরিত।
এমনি সময় আচানক, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, মার্চের ১ তারিখ বেতার ভাষণে, অনিদিষ্ট কালের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত করেন।

শওকত
#যে_স্মৃতি_ধূসর_হয়নি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×