অনেকটা হেঁটেছি সেদিন। গাইডসহ আমাদের ৪১ জনের একটা গ্রুপ। গ্রুপের মধ্যে সবাই ট্যুরিস্ট। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। বেশীরভাগই রিসার্চার বা কলেজ-ইউনিভার্সিটির লেকচারার স্টুডেন্ট আমেরিকা আর নিউজিল্যান্ড থেকে আসা। তবে আমার মত আউলা ট্যুরিস্টও আছে।
ইউক্রেন সরকার অবশ্য এইসব ট্যুরিস্টদের ট্যুরিস্ট বলতে রাজি নয়। সরকার বলে - এজুকেশনাল ভিজিটর। কারণ চেরনোবিলের দূর্ঘটনা মজা দেখা বা করার কিছু নয় যে দেশবিদেশ থেকে মানুষ আসবে মজা করতে।
ভীষণ সতর্কভাবে হাঁটতে হয়। কোন গাছ, পাতা, বিল্ডিং কিছুই ছোঁয়া যাবে না। কোথায় কোন রেডিয়েশন ঘাতক লুকিয়ে আছে কে জানে! খুবই সতর্ক হয়ে হেঁটেছি যাতে গায়ের কাপড়ও কোথাও না লাগে।
ট্যুর বুকিং দেয়ার পর সব নীতিমালা ইমেইলে পেয়েছি। ফুলহাতা টপ, ফুল ট্রাউজার্স, পা পুরো ঢাকে এমন জুতো, স্যান্ডেল জাতিয় জুতা একেবারেই নিষেধ। লুজ কাপড়ও যেন না থাকে। মোটকথা মাথা ছাড়া পুরো শরীর ঢাকা থাকতে হবে কিন্ত লুজ কাপড়ে নয়।
চেরনোবিলে নিউক্লিয়ার প্লান্ট বানিয়েছিল সোভিয়েত সরকার গোপনে, নিজেদের অর্থায়নে। এমনকি রাশিয়ার মানুষজনও সবকিছু জানতো না।
দুইঘন্টা পর পৌঁছলাম রাডারকেন্দ্রে।
চেরনোবিলে একটা রাডারও স্থাপন করেছিল ভীষণ গোপনে, লোক চক্ষুর আড়ালে কেবলমাত্র আমেরিকার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য। আমেরিকা কোন ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করলে যেন অন্তত ৩০ মিনিট আগে ওরা সংকেত পায় এই রাডারের মাধ্যমে। রাশিয়া আর আমেরিকা জন্মশত্রু তা বলাই বাহুল্য।
এই রাডারের অস্তিত্ব কেবল গভমেন্ট আর যেসব লোকজন সেখানে কাজ করতো তারাই জানতো। নিউক্লিয়ার ডিজাস্টার হওয়ার পর এই রাডার সম্পর্কে মানুষজন জানতে পেরেছে।
এমনকি চেরনোবিলের মুল রাস্তা থেকেও এত উঁচু প্রোজেক্টটা দেখা যায় না। কেমন যেন একটা হিল আর গাছের আড়ালে। রং ও এমনভাবে করা যাতে আকাশের সাথে মিলিয়ে যায়।
রাডারের কাছে পৌঁছে মুখ হা হয়ে যাবার জোগাড়! এত বড় একটা স্থাপনা। নীচে দাঁড়িয়ে ঘাড় উপড়ের দিকে করে তাকালেও পুরোটা ঠিক মত দেখা যায় না।
যারা রাডারকেন্দ্রে কাজ করতো তারা তাদের ফ্যামিলিসহ সে এলাকায় থাকতো। বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে। বাইরের কেউ কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ওরা বলতো চকলেট ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। স্পেশাল উপহার হিসেবে গভমেন্ট ওইসব ফ্যামিলিদের প্রচুর চকলেট, কলা, কমলা সাপ্লাই দিতো। এই তিন জিনিস ছিল তখন সোনার হরিণের মত। আমেরিকান সেনকশনের কারণে রাশিয়ায় চকলেট, কলা আর কমলা ছিল দুস্প্রাপ্য জিনিস।
এই রাডারটায় কত মেটাল, কত স্টীল, কত লোহা ব্যবহার করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। শুধু হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে এটার ব্যপ্তি বুঝার চেষ্টা করছিলাম।
মজার ব্যাপার হলো এই রাডার কোনদিন কাজ করেনি। ফেইল প্রোজেক্ট
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৭