বর্তমান বিশ্বে যে সকল স্কলারশীপগুলো অত্যন্ত্য আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হয় তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে ‘ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশীপ’।প্রতিবছরইউরোপিয়ানকমিশনহতেসারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে ইউরোপের প্রায় সবগুলোদেশে নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এই ‘ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশীপ’দেওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে সংস্কৃতির আদান-প্রদান, পড়াশোনার পাশাপাশি ভাষা, মানুষ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারা। এছাড়া এই স্কলারশিপের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে শিক্ষাবৃত্তির পরিমান। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশের শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, ভ্রমণ ভাতা, স্বাস্থ্য বিমার পাশাপাশি বসবাসের জন্য মাসিক বৃত্তি পেয়ে থাকে। এই স্কলারশীপের Action 1 ও Action 2 এর অধীনে প্রায় ১৫০ টির মত বিষয়ে ২০০ টিরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে সকল কোর্সই আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষায় সাজানো। প্রতিটি মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি প্রোগ্রামেথাকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুক্তি থাকে যার ফলে শিক্ষার্থীরা তার কোর্সের সময়কালে পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়।এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে নুন্যতম ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করতে হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেয়ে ইউরোপে পড়তে যাচ্ছে। এই স্কলারশীপে সর্বাধিক সংখ্যক বৃত্তি দেওয়া হয় মূলতAction 1এর অধীনে।পরবর্তী বছরের সেপ্টেম্বর সেমিস্টারের জন্য সাধারণত অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর – জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই স্কলারশীপের জন্য আবেদন করা যায়।তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক প্রোগ্রামে আবেদন করার সময়সীমা ও আবেদন করার নুন্যতম যোগ্যতা ভিন্ন ভিন্ন থাকে। Action 1এ শুধুমাত্র মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়।মনে রাখতে হবে মাস্টার্স কোর্সে আবেদন করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৩টি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। Action 1এর অধীনে আবেদন করার জন্য বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই ওয়েবপেজটিতে
http://eacea.ec.europa.eu/erasmus_mundus/programme/action1_en.php
।এছাড়া Action 2এর অধীনে যে প্রোগ্রামগুলো আছে সেখানে শুধুমাত্র পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়যে দেশে অবস্থিত ঐ দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে যেখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি এর পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে। Action 2এর অধীনে আবেদন করার জন্য বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই ওয়েবপেজটি থেকে Click This Link
কিভাবে আবেদন করতে হবেঃ
অল্প কিছু প্রোগ্রাম ছাড়া প্রায় সবগুলো প্রোগ্রামেই অনলাইনে আবেদন করা যায়। আর আবেদন করার জন্য কোন প্রকার ফি দিতে হয়না। সাধারণত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড অথবা ইমেইল করতে হয়। প্রতিটি প্রোগ্রামের ওয়েবপেজ এ আবেদন করার প্রক্রিয়া, আবেদনকারীর নুন্যতম যোগ্যতা, আবেদন করার সময়সূচী দেওয়া থাকে। সাধারণত মাস্টার্স এবং পিএইচডিপ্রোগ্রামে আবেদন করার জন্য স্নাতক পরীক্ষার সনদপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট এর পাশাপাশি প্রয়োজন হয় ইংরেজি ভাষা শিক্ষার স্কোর (IELTS/TOFEL অথবা সমমানের যোগ্যতা), জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae), শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী পড়াশোনা বা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ২ জন ব্যক্তির Recommendation Letter এবং ব্যক্তিগতMotivation Letter. এছাড়া, শিক্ষার্থীর যদি দেশি বিদেশী জার্নাল বা সেমিনারে প্রকাশিত গবেষণাপত্র যদি প্রকাশ হয়ে থাকে সেটি আবেদন প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। শিক্ষার্থীর যে বিষয়ে পড়তে চায় সে বিষয় সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতাও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আলাদাভাবে Research Proposal বা প্রস্তাবিত গবেষণাপত্র জমা দিতে হয়। এই সকল কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড বা ইমেইল করে পাঠাতে হবে। তবে, যে প্রোগ্রামগুলোতে সরাসরি কাগজপত্র চায় সেখানে নির্দিস্ট সময়ের মাঝে ডাকযোগে পাঠাতে হবে। এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আলাদাভাবে কোন ইন্টারভিউ নেওয়া হয়না।
প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শঃ
১। আবেদনকারীর ইংরেজি ভাষা শিক্ষার স্কোর (IELTS/TOFEL) অবশ্যই আবেদন করার সময়সীমার মাঝে থাকতে হবে, এই সনদপত্র শুধুমাত্র স্ক্যানকপি পাঠালেই হবে, অফিসিয়ালভাবে IELTS/TOFEL থেকে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না। যদি IELTS/TOFEL স্কোর না থাকে সেক্ষেত্রে স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়েরবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা যদি ইংরেজিতে হয় তাহলে Medium of Instruction (MoI) সনদ দিয়ে আবেদন করা যেতে পারে। আবেদন করার আগে পছন্দসই প্রোগ্রামের কোঅরডিনেটরকেইমেইল করলে জেনে নেওয়া যাবে ঐ প্রোগ্রামেMoIদিয়ে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে কিনা।
২। ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশীপের জন্য জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae) EUROPASS ফরমেট ব্যবহার করাটা সুবিধাজনক। EUROPASS ফরমেট ডাউনলোড করা যাবে http://europass.cedefop.europa.eu/en/home থেকে।
৩। শিক্ষার্থীর পূর্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচিত শিক্ষক বা কর্মস্থলের ঊর্ধ্বতনব্যক্তি থেকে Recommendation Letter নেওয়াটা ভাল। যদিও এক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, পরিচিত যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে Recommendation Letter নেওয়া যেতে পারে।
৪। ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশীপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয় Motivation Letterকে। Motivation Letter এ শিক্ষার্থীকে তার একাডেমীক বা প্রফেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড, অভিজ্ঞতা, কেন সে ঐ পছন্দসই প্রোগ্রামে আবেদন করতে আগ্রহী, ঐ প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করলে নিজের দেশ বা প্রতিষ্ঠান কিভাবে উপকৃত হবে, ভবিষ্যৎ গবেষণার ইচ্ছা, ইত্যাদিউল্লেখ করতে হয়। সাধারণত ২-৩ পাতার মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৫। Action 1এর অধীনে পরবর্তীশিক্ষাবর্ষের জন্য নভেম্বর থেকে ফ্রেব্রুয়ারী-মার্চ মাস আবেদন করার জন্য সঠিক সময়। তাই, দেরী না করে প্রয়োজনীয় কাগজপ্রত্র প্রস্তুত করেযথাসময়ে আবেদন সম্পন্ন করে রাখাই উত্তম।প্রতিবছর এপ্রিল-মে মাসেস্কলারশীপের ফলাফল ইমেইল করে জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে, Action 2 এর জন্য আবেদন সময়সীমাAction 1থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।
Action 1 মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামের তালিকা ও ওয়েবলিংক পাওয়া যাবে নিম্নোক্ত ওয়েবপেজ থেকেঃ
http://eacea.ec.europa.eu/erasmus_mundus/results_compendia/selected_projects_action_1_master_courses_en.php
http://eacea.ec.europa.eu/erasmus_mundus/results_compendia/selected_projects_action_1_joint_doctorates_en.php
রামকৃষ্ণ মজুমদার
কান্ট্রি অ্যাম্বাসেডর, বাংলাদেশ
ইরাসমাস মুন্ডুস স্টুডেন্টস অ্যান্ড এলামন্যাই এ্যাসোসিয়েশন (EMA)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬