কোচিং বন্ধ করতে সরকার কঠিন নীতি গ্রহণ করেছে এবং বলা হয়েছে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো যাবে না। শিক্ষা ও শিক্ষককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত আনতে এই ব্যবস্থা। শিক্ষাটিকে যেভাবে পণ্যে রূপান্তরিত করা হয়েছে সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তকে সবাই সাধুবাদ জানাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর সাথে আরো অনেকগুলো প্রশ্ন জড়িত আছে যেগুলোর উত্তর পাওয়া না গেলে এই উদ্যোগ সফল করা আসলেই কষ্টকর।
আমাদের দেশে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা কতটুকু? ঢাকা বা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং করে কোটিপতি হলেও গ্রামগঞ্জের সাধারণ শিক্ষকরা কিন্তু এখনো ছাপোষা। স্কুল কলেজ থেকে বেতন কতটা আসে তা সবাই জানে। সরকার যে অনুদান দেন তা কেবল মূল বেতনের ১০০ শতাংশ হলেও এর সাথে বাড়ী ভাড়া, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, চিকিৎসা ভাতা এগুলো অতি নগণ্য্।
তাহলে এই সব শিক্ষকরা যারা ছাত্র পড়িয়ে কিছুটা বাড়তি আয় করতেন তাদের কিভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা এখনো নেই।
বলা হচ্ছে নিজ কলেজের ছাত্রছাত্রী পড়ানো যাবে না। তাহলে শিক্ষকরা যদি ছাত্র বদল করে ফেলে তখন কি হবে? নীতির ফাক দিয়ে কোচিং চলতেই থাকবে।
এখন পাবলিক পরীক্ষায় প্র্যাকটিকাল কিন্তু নিজ কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হওয়ার কথা না। তাহলে যে সেন্টারে পরীক্ষা হবে সেই সেন্টারের শিক্ষকরা এই কাজে যুক্ত হলে সেখানেও কোচিং এর নামে ঘুষ গ্রহণ এবং বেশি নম্বর দেওয়ার প্রবণতা থেকেই যাবে। তাহলে এই নীতি কাজে আসলো কি?
বর্তমানে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রি কোচিং এর নামে ছাত্রদের কাছ থেকে মাসিক বেতনই বাড়িয়ে নেয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্লাসে কতটাকু পড়াচ্ছে? তার চেয়ে বেশি পড়াচ্ছে কোচিং এ। মাসিক বেতনের সাথে সাথেই কোচিং ফি নিয়ে নিচ্ছে। এরা তো কোচিংকে প্রাতিষ্ঠানিক করে ফেলেছে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করলে শতভাগই বন্ধ করতে হবে। শর্ত সাপেক্ষে নয়। ১০ জনকে পড়ানোর সুযোগ দিলে সেটি ১০০ জন হবে না তার গ্যারান্টি কি? কে দেখবে এটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি বাড়ী বাড়ী গিয়ে শিক্ষকদের কার্যক্রম তদারক করবেন? সেটা কি সম্ভব?
কোচিং বন্ধ করতে হলে শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল ( যেটি অবশ্যই সম্মানজনক) দিতে হবে। তাদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকের নিয়োগ হতে হবে স্বচ্ছ এবং এর পরিচালনা থেকে রাজনীতিক এবং দুর্নীতিবাজদের বাদ দিতে হবে।
ডাক্তার সাহেবদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার বিধান আছে। তারা অনেকেই সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ছাড়িয়ে নিজেদের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। তাদের ক্ষেত্রে কি হবে?
সরকার শিক্ষকদের শতভাগ বেতন দেন ঠিকই কিন্তু এখনো তা বেতন নয়, অনুদান। আর কথায় কথায় তা বন্ধ করার হুমকি। তাছাড়া, এই অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা বিদ্যমান।
শিক্ষকদের প্রাইভেট টুইশনি আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয় নি কোনোদিন। এই নতুন নীতি কার্যকর করার পন্থা কি হবে তাও ঠিক করা হয় নি।
আসলে নীতি গ্রহণ করাটাই বড় কথা নয় তা বাস্তবায়ন করাটাই আসল। তা না হলে সমস্ত পরিকল্পনার পরী উড়ে যাবে, যা থাকবে তা হলো কল্পনা।