গতকাল ছিল ২৪ জানুয়ারী ২০২১ ইং। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরার সময় বাসার সামনে দেখি বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে আছে। এরই মধ্যে চলে এলো একটি লাশবাহী ফ্রিজিং ভেন। মনটা খারাপ হলো, কার মৃতদেহ জানতে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। জবাববে ব্যাক্তিটির চাকরীর পদবী বল্লেন, বুঝে নিলাম আমার বাসার সামনের বাড়িওয়ালা পরলোক গমন করেছেন। বাসায় ওঠে বারান্দ দয়ে লক্ষ করে দেখলাম রাস্তার উপরেই রেখেছে লাশবাহী গাড়ীটি এবং কিছু চেয়ার মহল্লার বাড়ী ওয়ালা এবং আগত ব্যক্তিগন কেউ কেউ বসেছে আবার কেউ কেউ দাড়িয়ে আছে নিরব দর্শক হয়ে। ভদ্রলোক বেশ ভাল একটি চাকরী করতেছেন। চাকরী শেষে জীবনের উপার্জন দিয়ে ৫ তলা ৩ ইউনিটের একটি বাড়ি সম্পন্ন করে নিজে পরিবার নিয়ে দোতলায় পুরো ইউনিটে বসবাস করতেন। নিজ বাসার লাগোয়া আরো একটি যায়গায় ১০ তলা আরোকটি বাড়ী স্পূর্ণ ছাদ ঢালাই শেষ করেছেন (সম্পদের হিসাব বলার কারন হলো তিনি বেশ পয়সার মালিক সেইটা বুঝানো)। তবে চলাফেরা তেমন করতে পারতেন না অল্পতেই হাপিয়ে যেতেন এবং প্রায়ই দেখতাম চিকিৎসা শেষে চিকিৎসা পত্র এবং অনেক ঐষধ হাতে ফিরতেন এবং লোকজন হাতে ধরে ধীরস্থিত গতিতে বাসায় নিয়ে যেতেন। কেমন ভাগ্য ভদ্রলোকের মৃত্যুর পরে তার যায়গা হলো ফ্রিজিং কারে, থাকলেন সারাটা রাত রাস্তার উপরে। এত যত্ন করে বাড়িটি তৈরী করলেন অথচ সেই বাড়ির ভিতরে গাড়ীটি রাখার যায়গা হলো না, থাকবে কি করে? ভদ্রলোকের এক সন্তানের একটি প্রাইভেট কার আছে সেই কারটি রাখার পরে আর যায় গা থাকেনা গেরেজে। আমি গভীর রাতে এবং খুব ভোরে খেলাল করলাম গাড়ীটির কাছে কেউ নেই এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বসবাস করা বাসায় জ্বলছেনা কোন আলো। আমার ধারনা শীতের রাতে শীতের সাথে বাহাদুরী না করে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়েছে। নিথর দেহখানি ফ্রিজিং কারে রেখেছে উনার অতি আদরে লালন করা মেয়ে থাকেন জার্মানে হয়তো শেষবারের মতো দেখার জন্য আসবে নিজ জন্মভূমিতে। এত সম্পদ, বাড়ী, গাড়ী কি হবে? এই জীবনের জন্যই আমরা কত কিছু করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৭