ইন্টারনেট ডট ওআরজির নাম বদলে একে ফ্রি বেসিকস বলছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ইন্টারনেট ডট ওআরজি নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে নাম পরিবর্তনের এ ঘোষণা এসেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ইন্টারনেট ডট অর্গ হচ্ছে অলাভজনক একটি উদ্যোগ যাতে বিনা মূল্যে বেসিক ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
মূলত ইন্টারনেটকে কম খরচের মধ্যে আনা, অল্প ডেটা ব্যবহার করে ওয়েবসাইট, নতুন সব অ্যাপ ও স্মার্টফোনের ব্যবহার আরও সহজলভ্য করতে ইন্টারনেটভিত্তিক এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইন্টারনেটের ব্যবহার বিশ্বে সহজলভ্য করতে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্রকল্প। আমাদের সবাই সবখানে, পরস্পর যুক্ত (এভরি ওয়ান অব আস, এভরি হোয়ার, কানেকটেড)-এমন স্লোগানে চালু হওয়া এ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ৫০০ কোটি সাধারণ মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা। ফেসবুকের এ উদ্যোগটি সফল করে বিভিন্ন টেলিকম অপারেটর ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ফেসবুক যাতে বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষ ইন্টারনেটের আওতায় আসতে পারে।
ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিস ড্যানিয়েলস বলেন, ‘আমাদের ড্রোন, কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ, লেজার প্রযুক্তি, এক্সপ্রেস ওয়াই-ফাই কিংবা ফ্রি বেসিকসের মতো প্রকল্প আছে। টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি করে ফ্রি বেসিকস সার্ভিসটি দেওয়া হয়।’
ড্রোন বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ভবিষ্যতে হয়তো ইন্টারনেট সেবা দেবে ফেসবুক। এখনও এ প্রকল্পগুলো পরীক্ষাধীন। তবে বেশ কিছুদিন আগে চালু করা ইন্টারনেট ডট ওআরজির মাধ্যমে বেসিক ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ফেসবুক। এর মাধ্যমে বিনা মূল্যে কয়েকটি ওয়েবসাইট দেখতে পারেন ব্যবহারকারীরা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ইন্টারনেট ডট ওআরজির মাধ্যমে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন।
ইন্টারনেট ডট ওআরজির সমস্যা
ইন্টারনেট ডট ওআরজির উদ্যোগটি মহৎ হলেও তা ভারতে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে। নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ও নেট নিউট্রালিটি বিষয়ে সমালোচনা শুরু হয় এর বিরুদ্ধে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মার্ক জাকারবার্গের ইন্টারনেট ডট ওআরজি নামের সেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। নেট নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় প্রকল্পটি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। নেট নিউট্রালিটি বা ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা হচ্ছে একটি ধারণা, যাতে সব ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে একইভাবে বা সমানভাবে দেখা হবে। ইন্টারনেট সবার জন্য সমান। এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে সমানভাবে সব ওয়েবসাইট দেখার সুযোগ থাকতে হবে, তা না হলে ইন্টারনেট নিরপেক্ষ থাকবে না।
জাকারবার্গ তাঁর স্বপক্ষে নানা যুক্তি দিয়ে ইন্টারনেট ডট ওআরজিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার বিষয়টির সঙ্গে অধিক মানুষকে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আনার বিষয়টিতে কোনো সংঘর্ষ হবে না। আমরা মানুষকে অন্য ওয়েবসাইট দেখতে নিষেধ করছি না বা আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা নিচ্ছি না।’ তবে জাকারবার্গের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ফ্রি বেসিকসের বেসিকস
ইন্টারনেট ডট ওআরজির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ফ্রি বেসিকস। ফ্রি বেসিকস সার্ভিসের মোবাইল ও ওয়েব সংস্করণে এখন এইচটিটিপিএস নামের ডেটা এনক্রিপশন ব্যবহার করা হয়েছে যা আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ। এখন সবার জন্য এই ফ্রি বেসিকসে যুক্ত হওয়ার সুবিধা উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফ্রি বেসিকসে যুক্ত হওয়ার কারিগরি ও ডেভেলপার গাইডলাইন মেনে যেকোনো সেবা এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। আগের ইন্টারনেট ডট ওআরজির ওয়েবসাইটে গেলেই ফ্রি বেসিকসের নতুন ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে। মোবাইলে ব্যবহারের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং চালিত ব্যবহারকারীরা এ ঠিকানা থেকে (
https://play.google.com/store/apps/details?id=org.internet
) অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
নেটওয়ার্ক ক্যারিয়ারগুলো কীভাবে লাভ করবে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস ড্যানিয়েলস বলেছেন, ফ্রি বেসিকসের জন্য ফেসবুক সেবাদাতাদের কোনো অর্থ দেয় না বা কোনো অর্থ গ্রহণ করে না। এই সেবাটি যে মোবাইল অপারেটর চালু করে তারা নতুন গ্রাহক পায়। বিনা মূল্যে বেসিক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করতে ব্যবহারকারীরা ক্রমশ অর্থ খরচ করে ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে শুরু করেন।