somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। যে ভবনের ছাদ কখনো খোলা হয় না ।।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমু ঠিক করে রেখেছে, আজ মধ্যরাতের পর সে ছাদে উঠবে। চুপি চুপি, একা। প্রকৃতির নির্জনতার রহস্যে নিজেকে বের করে আনবে। অখন্ড নির্জনতার সুরে কন্ঠ মেলাবে।

ইমু ভেবে রাখে। ছাদে রেলিংয়ের ধারে সার বেঁধে থাকা গাছগুলোর গায়ে মৃদু পরশ বুলিয়ে দেবে। চুপি চুপি বলবে। কি সবুজের দেবীরা সব! বলি, এত সবুজ কোথা থেকে আনো? তোমাদের রাজ্যে কি কোন দুঃখ নেই? দাও না, তোমাদের সবুজ প্রাণের আতর আমার গায়ে মাখিয়ে! সবচেয়ে সবুজ বনসাইটার কাছে গিয়ে সে শুধাবে - হে “মৃত্তিকার বীর সন্তান” তোমার মহিমাময় সবুজের আলাপন শোনাও।

ইমু লিখতে থাকে। দুহাত পেছনে দিয়ে উঁচু হয়ে চাঁদের দিকে তাকাবে। কি চন্দ্রাবতী! চাঁপাচন্দ্র! শুনতে পাও? ভালো আছো তো। খুব তো চারদিক আলোকিত করে রেখেছো । এত হাসি কোথা থেকে পাও, শুনি!

আচ্ছা তোমার এত হাসি, এত রূপ, রাত হলেই বুঝি ফোটে? বলো তো, কোন সে রাজপুত্র, যার কথা মনে করে এত হাসির ফোয়ারা ফোটাও। লে বাবা। রাজপুত্রের কথা বলতেই, চন্দ্রাবতী’র মুখ যেন এক পেঁজা তুলোর মতো ধূসর মেঘে ঢেকে যায়। উঁহু। লজ্জা পেয়েছো না। সে যাই হোক। তোমার ঐ হাসি কিন্তু কভু ভুলো না । ঐ হাসিতেই তো শত মানুষের মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। তা জানো?

তোমার রাজপুত্রের ঠিকানা দিয়ো। খুব করে একদিন বকে দিবো। অমাবস্যা তিথি দির্ঘায়িত করে সে যেন আবার শিকারে না যায়। হা হা হা। মেঘ সরে গিয়ে লাজুক হাসি ভীর করে চন্দ্রবতীর মুখে ।

তারপর, শীতল সমীরণের মিষ্টি পরশ গায়ে মেখে, ইমু দু পাক ঘুরে আসবে ছাদের চারপাশে। কি খবর? দখিনা বাতাস। কোথায় লুকাও হে । ডুমুরের ফুল হয়ে । চৈত্রের দাবদাহে।

ইমু ফেইরী টেলস এ পড়া পরীদের কথা স্মরণ করে। লাল পরী, নীল পরী, ফুল পরী, জল পরী, মেঘেদের পরী। ইমু সব পরীদের সাথে কথা বলে। পরীরা তাকে পরীর দেশের গল্প শোনায়!

আচ্ছা, তখন বৃষ্টি এলে কেমন হবে? ঝম ঝম নুপূরের শব্দে সে দুহাত ছড়িয়ে ভিজবে। বৃষ্টিতে। আর কারও ভ্রুক্ষেপিত দৃষ্টি আসবে না গায়ে। “আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা”।

তারপরই। সেই ভয়ংকর কান্ডটি ঘটবে। প্রকৃতির নির্জনতায় কোন এক চন্দ্রাহত রজনীতে, ইমু তার মধ্যে জমে থাকা সমস্ত পাগলামির অন্ত ঘটাবে। তারজন্যেই তো এত প্রস্তুতি!

ঘড়ির কাটা দুইটা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। ইমু ছাদে। এখানে ছাদে উঠা বারণ। অবশ্য বারণ অমান্য করার মত অনেক বড় হয়েছে ইমু। তারপরও বড়দের কথা বলে সে অনেক বারণই মেনে চলে।

ইমু ধীরে ধীরে রেলিংয়ের একদম ধারে চলে যায়। তাকে কেমন পাগলামিতে পেয়ে বসে। হা হা হা করে অট্টহাসিতে সে ফেটে পড়ে। নিচের দিকে তাকাতেই তার মাথা কেমন যেন দুলে উঠে। সে চাইলেও মনে হচ্ছে এখন আর বুঝি সামলাতে পারবে না। ভয় হচ্ছে সে ঘুরে পরে যাচ্ছে বহু নীচের দূর্বাঘাসের শিশির ভেজা জমিনে। তার চোখে শেষবারের মতো অনেক রহস্যের দ্বার উম্মোচিত হয়। সে ঢের বুঝতে পারে। এভাবেই মানবের জীবনে এক একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

রহস্যে ঘেরা এই প্রকৃতি...। সব কিছুর মূলে নিজের অবদানকে কখনই প্রত্যক্ষ হতে দেয় না। প্রচ্ছন্নই থেকে যায় অনেক প্রশ্নের উত্তর। যেমন প্রচ্ছন্নই আছে ইমুর অন্তর্ধান রহস্যে প্রকৃতির ইন্ধন। সেদিন কিন্তু বৃষ্টিও নেমেছিলো। ডায়রীতে দুদিন আগের লেখা কিছু নোট ছিলো। গাছগুলোয় পানি স্প্রে করা হয়ে ছিলো। ইমুর হাত দুটো ভোরের শিশিরে সিক্ত হয়ে ছিলো। শুধু ছিলো না ইমু!!! অন্য কোন রহস্যময় পৃথিবীতে সে তখন বাঁধা।

সে কি ইচ্ছে করেই পড়ে গিয়েছিলো? নাকি না বুঝে তাল সামলাতে পারে নি? ইচ্ছে করেই কি হেঁয়ালির বশে সে এই পাগলামির কথাগুলো লিখেছিলো? যেমন হেঁয়ালি সে করতো সবসময়। নাকি প্রকৃতি খুব নিঁখুত ভাবেই শ্রাবণে’র পর ইমুকেও খুন করলো।
আফসোস! এই খুনের কোন আসামীই যে নেই!

সেই থেকে A11 ভবনের ছাদ আর কখনো খোলা হয় না।।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×