কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখিত বিষয়সমূহ
অধ্যায় মূল বিষয় মূল বক্তব্য
১ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব মানবতা ও বিশ্বনাগরিক্ত নৈতিক মূল্যবোধ সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়ার শিক্ষা প্রয়োগ মুখি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুক‚লে কায়িক শ্রমের মর্যাদা দান,ম নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষা।
২ চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠণ শিক্ষার প্রত্যেক স্তরের ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতাকে জাগ্রত ও উন্নত করতে হবে।
৩ কর্ম অভিজ্ঞতা কর্মের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়া হবে এবং বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৪ শিক্ষার মাধ্যমে ও শিক্ষায় বিদেশী ভাষার স্থান শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা এবং ২য় ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা থাকবে। অন্যান্য ভাষা শেখার জন্য ভাষা ইনিষ্টটিউট স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করা হয়েছে।
৫ শিক্ষক শিক্ষার্থীর হার দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হার বিজ্ঞানসম্মত করতে হবে।
৬ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বিভিন্ন শিশুভবন উদ্যান ও গবেষণার জন্য শিশুশিক্ষা ইনষ্টিটিউট স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে।
৭ প্রাথমিক শিক্ষা ১ম থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা রূপে পরিগণিত করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা এবং অধিক সংখ্যক মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করা বালিকাদের কাছে শ্কিষাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য।
৮ মাধ্যমিক শিক্ষা ৯ম-১২দশ পর্যন্ত শিক্ষাকে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তগর্ত করা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কলেজগুলোতে ডিগ্রী না খুলে ৯ম-১০ম শ্রেণীর খোলার সুপারিশ করা হয়েছে।
৯ বৃত্তিমূলক শিক্ষা বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য প্রমচুর যন্ত্রপাতি সামজসরঝ্হাম এবং বহু সংখ্যক পুস্তক ও জমা শিক্ষা সরবরাহক করে জন সাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত উন্নতির কথা বলা হয়েছে।
১০ ডিপ্লোমা স্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিদ্যা এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকতর ফলপ্র“সূ করার জন্য শিক্ষাক্রম ও শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবভিত্তিক করার কথা বলা হয়েছে।
১১ মাদ্রাসা ও টোল শিক্ষা আরবি ও টোল শিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
১২ শিক্ষক শিক্ষণ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ও তাদের সকল সুযোগ সুবিধা দেবার কথা বলা হয়েছে।
১৩ উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা খুলনা বিভাগে ১টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা গ্রন্থাগারের নাম উন্নয়ন, গবেষণাগার স্থাপন ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবার কথা বলা হয়েছে।
১৪ ডিগ্রীস্তরে প্রকৌশল শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদ্যা এ ধরনের শিক্ষার মান উন্নয়ন কথা বলা হয়েছে।
১৫ বিজ্ঞান শিক্ষা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বাধ্যতামূলক বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।
১৬ কৃষি শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি শিক্ষাকে প্রাধান্য দোবার কথা বলা হয়েছে।
১৭ চিকিৎসা শিক্ষা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ডাক্তার তৈরি করা।
১৮ বাণিজ্য শিক্ষা অফিস, আদালত, ব্যাংক, শিল্প কারখানা প্রভৃতিতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
১৯ আইন শিক্ষা স্নাতকের পর তিন বছরের এল এল বি কোর্স চালু করার সুপারিশকরা হয়েছে।
২০ ললিতকলা শিক্ষা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের এর জন্য অনুষদ খোলা চাকুরী অর্থনৈতিক মান ও তাদের সামাজিক মান যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
২১ পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অধিকতর আধুনিক ও বাস্তবধর্মী হতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়ন ও যাচাই করা যায়।
২২ শিক্ষকদের দায়িত্ব মর্যাদা শিক্ষা দানের প্রধান ভূমিকা শিক্ষকই পালন করে বিধায় শিক্ষককে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে ও তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
২৩ নিরক্ষরতা দূরীকরণ বয়স্ক শিক্ষা ও অনুষ্ঠানিক শিক্ষা নিরক্ষরতা দূরীকরণে, নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তি ও মহিলাদের শিক্ষা দিতে হবে বিশেষ করে তাদের পেশাভিত্তিক শিক্ষা।
২৪ নারী শিক্ষা নারী শিক্ষা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
২৫ বিশেষ শিক্ষা শারীরিক ও মানসিক বাধাগ্রস্তদের জন্য এবং বিশেষ মেধাবীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
২৬ স্বাস্থ্য শিক্ষা, শরীরচার্চা ও সামরিক শিক্ষা প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে এগুলো থাকবো। এর প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ ও ব্যায়ামের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বছরে সাপ্তাহিক ছুেিট সহ ১২০দিন ছুটি থাকবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সময় ছুটি দিবে।
২৮ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক দেশের ও জগতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় উচ্চমানের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী এবং পাঠ্যপুস্তকের উন্নতি সাধন করতে হবে।
২৯ শিক্ষাগৃহ ও শিক্ষার উপকরণ শিক্ষা প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ রাখতে হবে। অধিক সংখ্যক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩০ গ্রন্থাগার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি গণগ্রন্থগার স্থাপন করতে হবে ও বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে।
৩১ শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার সমতাবিধান শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে ধনী দারিদ্র্য সকলে ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার সমতাবিধান করতে হবে।
৩২ ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দান ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান কর্মসূচী শিক্ষা ব্যবস্থার একটা অবিচ্ছেদ্য সঙ্গ হিসেবে পরিগণিত করার কথা বলা হয়েছে।
৩৩ ছাত্র কল্যাণ ও জাতীয়সেবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য কমমূল্যে পুস্তক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩৪ শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষা প্রশাসনকে বিদ্যমান ত্র“টি সমুহ দুর করতে হবে।
৩৫ শিক্ষার জন্য অর্থ সংস্থান শ্কিষা ব্যবস্থা প্রণয়ণের জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। যার বিভিন্ন পথ তুলে ধরা হয়েছে।
ইতিবাচক দিক ঃ
১. শিক্ষা ব্যবস্থাটি প্রায় সকল দিক দিয়েই পরিপূর্ণ ছিল।
২. একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ণের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে।
৩. বিজ্ঞান শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে যা বর্তমান শিক্ষানীতিতে দেয়া হয়নি।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
৫. খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
৬. বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কর্মঠ মানুষ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।
নেতিবাচক দিক-
১. এই শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত এ কথা অনস্বীকার্য কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দেশে তখন এবং এখন এরূপ বিলাসবহুল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করার সম্ভব ছিলনা এখনও নেই।
২. মাদ্রাসা ও টোল শিক্ষাকে (অধ্যায়-১১) ব্যবস্থা এই শিক্ষা কমিশনে কম গুরুত্ব পেয়েছে।
৩. জ্ঞান অর্জনের চেয়ে শিক্ষাকে অধিক কর্মসূচী করার কথা বলা হয়েছে। যা কোন জাতির মেরুদন্ডের জন্য ক্ষতিকর।
৪. প্রাথমিক শিক্ষা যা মূলত শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য দেয়া হয় সেখানেও বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
৫. ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কিছু বলা হয় নি।
৬. শিক্ষা নীতি হবে সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ কিন্তু সমাজতন্ত্র বাঙ্গালিজাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরক্ষেতার আদর্শ আর বাংলাদেশের সংবিধানের ভিত্তি নয়; যা শিক্ষানীতির এক প্রকার মূলনীতি।
৭. বিজ্ঞান প্রযুক্তির জ্যামিতিক অগ্রগতির ফলে বিশ্বে অনেক নতুন নুতন বিষয়ের উদ্ভব ঘটেছে এবং ইলেক্ট্রনিক্স কম্পিউটার সাইবারনেটিকস, জিনেটিকস ইত্যাদির কথা তখন কল্পনাও করা হয় নি।
সমালোচনা ঃ-
কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট নিঃসন্দেহে একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার স্মারক পত্র ছি ল। সেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আবেদন করা হয়। কিন্ত যুদ্ধোত্তর একটি দেশের জন্য তা কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। কারণ তখন আর্থিক সংকট সহ অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছিল দেশকে। সেই মুহুর্তে তখনকার উপযোগীও তুলনামূলক সুদূর প্রসারী একটা নীতি প্রণয়ন করার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ কর্মমূখী করার চেষ্টা একটা জাতির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ যা এখানে করা হয়েছে। ইংরেজি ব্যবস্থার উপর আরো জোর দেয়া দরকার ছিল। যেহেতু এটি আর্ন্তজাতিক ভাষা বিশ্বে সাথে তাল মিলানোর জন্য ইংরেজি ভাষার আবশ্যিবতা অন্বীকার্য। আবার শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সৎ, চরিত্রবান ও সকল মানবিক গুণে গুনান্বিত মানুষ সৃষ্টি আর ধর্মের প্রতি আনুগত্য ব্যতীত অ ন্য কোনভাবেই সৎ ও চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভবপর নয়, তাই ধর্ম শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে তার কিছুটা ঘাটতি দেখা গিয়েছে।
সব কিছুর পর অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ণ বিদ্যালয়ে সার্বিক সুবিধার নীতি ছাড়াও আরো অনেক বিষয় যা এই রিপোর্টে প্রণয়ন করা হয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
কিছু ত্র“টি থাকা স্বাভাবিক । এগুলো বর্তমান যুগোপযোগী করলে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন একটি আদর্শ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট।
মজিদ খান শিক্ষনীতি : ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ
প্রেক্ষাপট
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের শিক্ষামন্ত্র্রী ড. আব্দুল মজিদ খান অত্যন্ত- নগ্নভাবে সাম্প্রদায়িক শিক্ষার প্রসার এবং সরকারি শিক্ষা সংকোচন নীতি অবলম্বন করে শিক্ষানীতি ঘোষণা করে। প্রথম শ্রেণী থেকেই বাংলার সঙ্গে আরবি এবং দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজী অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি ভাষা বাধ্যতাম‚লক করা হয়। এসএসসি কোর্স ১২ বছর, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও শিক্ষার ব্যয়ভার যারা ৫০% বহন করতে পারবে তাদের রেজাল্ট খারাপ হলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়। ছাত্র ইউনিয়ন এই গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ছাত্র সমাজকে আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারী শিক্ষানীতি বাতিল ও সামরিক আইন প্রত্যাহার দাবিতে স্মরণকালের বৃহত্তম ছাত্র মিছিল হয়। সেদিন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর ট্রাক উঠিয়ে দেয় এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী। শহীদ হয় দিপালী, কাঞ্চন সহ আরো অনেকে। শুধু শিক্ষানীতির আন্দোলন নয়, শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, ক−াসরুম সংকট নিরসন, সেশন জ্যাম নিরসন, শিক্ষার্থিদের ইউনিফর্ম নিশ্চিতকরণ, ক−াস শুরুর প‚র্বে এসেম্বলি, শিক্ষকদের জীবনমান উন্নতকরণ, স¡লম‚ল্যে শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিতকরণ, বিজ্ঞান গবেষণাগার- কম্পিউটার ল্যাব নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়াসহ শিক্ষা সংক্রান্ত- বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় আদোলনে ছাত্র ইউনিয়ন নিরন্তর সংগ্রাম করে।
মজিদ খান শিক্ষনীতির সুপারিশমালা
বিষয় বিষয়বস্তু
শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে কোন সমস্যা ও সংকট মোকাবেলার জন্য ভবিষত বংশধরদের জ্ঞান র্স্পহা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষানীদের প্রস্তুতকরন।
প্রাথমিক শিক্ষা সকল নাগারিকের জন্য কম্পক্ষে ৫ বছরের সার্বজনীন করা হয়ে এবং ভবিষ্যতে এটা ৮ বছরে করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাধ্যমিকশিক্ষা প্রস্তুতি স্তরের পরবর্তী পর্যায়ে ৪ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা করা। এতে চূড়ান্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ নবম-দশম শ্রেণীতে সমন্বিত শিক্ষা কর্ম প্রবর্তিত হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা উচ্চ মাদ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠসূচীকে ৫ টি প্রধান শাখার বিভক্ত থাকবে
ক) প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষন
খ) কারিগর
গ) সাধারন ও কারিগরি উভয় ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারন।
খ) ব্যবসা বানিজ্য ও ব্যবস্থাপনা
ঙ) নার্সিং
উচ্চশিক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ পাঠ্যক্রম নির্বাচনে। এবঙ এর জন্য যোগ্যতার একটা নূন্যতম মান নির্ধারন
ক্রীড়া শিক্ষা প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত খেলাধুলা, **** কর্মসূচীর জন্য ৫ ঘন্টার কার্যক্রম প্রবর্তন করা।
ভোকেশনাল/কারিগরি শিক্ষা ভোকেশনাল ও ইনস্টিটিউট গুলো আগে শক্তিশালী করা ও নতুন ইনস্টিটিউট স্থাপন
শিক্ষকদের মান্নোয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্কিষকদের প্রশিক্ষন ও ভাষা শিক্ষা ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষাকদের মান্নোয়নের জন্য মুদ্রিত ও ইলেকট্রনিক উপাকরন ব্যবহারে প্রশিক্ষা দান।
ইতিবাচক দিক:
১. সরকারী খরচে প্রথমে ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য এবং ক্রমান্বয়ে সকল শ্রেণীর হবে।
২. বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও লেখাধুলার সরঞ্চামের ব্যবস্থা করা হবে।
৩. প্রথমিক শিক্ষদের জন্য দুই বছর প্রশিক্ষনের মেয়াদ বাড়ানো হবে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৫. বিদ্যালয়ে অভিভাগ শ্কিষক সমিতি গঠনে উৎসাহিত করা হবে। এব্যাপারে ১৯৮৬ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হবে।
৬. বিদ্যারয়ে নতুন পাঠপুস্তক প্রবর্তন করার পূর্বে পাঠ্যপুস্তকের প্রাক-নিরীক্ষা ও চুড়ান্ত মুল্যায়নের ব্যাপারে সকল বিদ্যালয়ের শ্কিষককে জড়িত করার জন্য কর্মসূচি তৈলি করা হয়েছে।
৭. সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর বিদ্যালয়ত্যাগী শিক্ষার্থী এবং বা দাতের পিতা মাতাদের সুযোগ প্রদনের জন্য কম্যুনিটি স্কুল প্রকল্পের মাধ্যমে ৫টি (২ টি মহিরাদের জন্য ও ৩টি পুরুষদের জন্য) বিভিন্ন ট্রেড কোর্সের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
নেতিবাচক দিক:
১. শিক্ষানীতিটির কোন সুনির্দিষ্ঠ দর্শন নেই
২. শিক্ষাস্তরগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা সুস্পষ্ঠভাবে উল্লেখ
৩. শিক্ষার মান্নোয়নের কোন সুনির্দিষ্ঠ দিক নিদেৃশনা নেই
৪. মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলা হয়নি।
৫. ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা বরা হয় নি।
৬. শিক্ষকদের মান্নোয়নের সুনিদিষ্ঠ দিক নির্দেশনা নেই।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতি দূর করা হবে বলা হলে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা নাই।
৮. শিক্ষকদের সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো হবে তার দিক নির্দেশান নেই
সমালোচনা
প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে সামাজিক অর্থনৈতিক এবং শিল্প বানিজ্যের উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনবির্ন্যস্ত করা। বৃত্তি মুলক এবং কারিগরী শ্কিষাকে উৎপাদন পদ্ধতি ও বাস্তব পেশাসমূহের সংগে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করা হবে। বানির্জেক ভিত্তিতে শিক্ষা উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহ করার জন্য সরকার শিল্প স্থাপন করেন। এতদ্ব্যতীত নির্বাচিত মাধ্যমিক স্কুল গুলিতে খন্ডকালীন চাকুরীর সমন্বয়ে বৃত্তি মূলক লোর্সের প্রবতৃন করা হবে। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বেশকিচু সংখ্যক জুনিয়ার টেকনিকাল স্কুল খোলা হবে। এই ক্যাক্টরীযুক্ত শ্খিসা প্রতিষ্ঠান গুলি যথাসময়ে দেশের শিল্প ্ন্নয়নের সহায়তা করবে।
দেশের সর্বত্র শিক্ষার জন্য মানের সমন্বয় সাধন একটি কাঠিন সমস্যা এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার সঠিক উন্নতি সম্ভব নয়। এই দূর শিক্ষণকে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম পত্র পত্রিকা ডাক, রেডিও টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন দূর দুরান্তে অবস্থানরত প্রাথমিক শিক্ষকগন শিক্ষার আধুনিক ভাবধারা। এছাড়া মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের ভাষা শেখানো এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষকদের শিক্ষকতার মানউন্নয়নে দূর শিক্ষণ সাহায্য করবেন।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি ৪
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৯