somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্ট”

২৯ শে মে, ২০১২ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘প্রচারই প্রসার’ - এই মুক্তবাণিজ্য ও আকাশ সংস্কৃতির যুগে প্রচার ও প্রসারের একচ্ছত্র আধিপত্য কর্পোরেট মিডিয়া হাউস এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তারা তাদের প্রচার বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন পন্থা অনুসরণ করছে। রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্ট তাদের এই প্রচার প্রচারণার এক নতুন হাতিয়ার। এ হেন প্রচার প্রচারণার ফলে আমরা পণ্যায়নের মদ্যে ডুবে আছি, এরা গ্রাস করছে আমাদের চিন্তা আর ধ্বংস করছে আমাদের সংস্কৃতিকে।


 রিয়েলিটি শো:
রিয়েলিটি শো কথাটি টেলিভিশনের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আগে কোনো আণ্ডুলিপি তৈরী করা হয় না। রসবোধে জারিত এ আয়োজনে থাকে সাধারণ অডিয়েন্সের সাবলীল অংশগ্রহণ। বিষয়গুলো নির্বঅচন করা হয় দৈনন্দিন জীবন থেকে।
রিয়েলিটি শো কী এটা বলতে গেলে প্রথমেই আমরা দুটা শব্দ পায়, রিয়েল এবং শো। সমাজের রিয়েল অর্থাৎ বাস্তব কোন কিছু দেখানোই হচ্ছে রিয়েলিটি শো।
উইকিপিডিয়ায় রিয়েলিটি শো সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে কোন টিভি অনুষ্ঠান কোন লিখিত স্ক্রিপ্টে তৈরী না হয়ে স্বাভাবিক হাস্যকর বা মানবিক পরিস্থিতি, প্রকৃত ঘটনা এবং সাধারণ জনগন দ্বারা চিত্রিত হলে তাই রিয়েলিটি শো,”
কিন্তু বর্তমান সময়ে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে দর্শক চাহিদা মিলিয়ে পরিবর্তন আনছে রিয়েলিটি শোর আধেয় ও ধরনের।
আর তা করতে গিয়ে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দর্শকদের ও সাধারণ জনগনকে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে খুবই সুচ্চুরভাবে।




 ট্যালেন্ট হান্ট:

ট্যালেন্ট হান্ট বলতে আমরা সাধারণত বুঝি মেধা অন্বেষণ করাকে বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে মেধা অন্বেষণ হলো, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেকের মধ্য থেকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সেরা কাউকে খুজে বের করা রেয়েলিটি শোর ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। আর এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো ট্যালেন্ট হান্ট বা মেধা অন্বেষণ। রিয়েলিটি শো গুলোতে মেধা যাচাইমুলক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ট্যালেন্ট হান্ট করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ট্যালেন্ট হান্ট বলতে বুঝায়, “লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ক্লোজ-আপ ওয়ান, ক্ষুদে গানরাজ, ইত্যাদি ধরনের রিয়েলিটি শো-গুলোকে।
আমাদের দেশে এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানগুলোর শুরু হয় মূলত ভারত ও পশ্চিম বিশ্বের দেশগুলোর অনুকরণে।

 রিয়েলিটি শো’র বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
রিয়েলিটি শোর যাত্রা শুরু হয়েছিল রেডিওতে। ১৯৪৭ সালে অ্যালেন ফান্ট “মাইক্রোফোন” অনুষ্ঠানে সাফল্য অর্জনের পর চালু করেন টেলিভিশনে রিয়েলিটি শো “ক্যানডিড ক্যামেরা”। এটিকে টিভি অনুষ্ঠানের রিয়েলিটি শো গুলোর দাদা বলা হয়। ১৯৫০ সালে, গেম শো “বেট দ্যা ক্লক” প্রতিযোগীদের হাস্যরসাতœক প্রতিযোগিতা ও বাস্তবভিত্তিক কৌতুকে জড়িত করে।
১৯৫৪ সালে “দি মিস আমেরিকা” নাতক একটি রিয়ালিটি শো প্রচারিত হত, যা এর বিজয়ীকে জাতীয় খ্যাতি এনে দেয় ১৯৫৪-৫৫ তে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কালভার সিটির পুলিশ সদস্যদের রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালনের ওপর প্রচার হতো ‘নাইটওয়াচ’ শিরোনামে রেডিও রিয়েলেটি শো, যেটি সে সময় খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
“ইউ আকসক ফর ইট” (১৯৫০-৫৯) অনুষ্ঠানটিতে দর্শকদের অনুরোধেই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন রকম আধেয় ঠিক করা হত। যা বর্তমানের দর্শকদের অংশগ্রহণমূলক টিভি অনুষ্ঠানের পথপ্রদর্শক।
১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথম প্রচারিত হয় “সেভেন আপ” নামক একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক রিয়েলেটি শো। এই শোতে জীবনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাক্ষাৎকার প্রচারিত হতো”। প্লাস সেভেন, টুয়েনটি ওয়ান আপ” এসব অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার ছাড়া আর কোন উপাদান থাকতো না। এসব অনুষ্ঠান সাধারণ মানুষকে তারকা বানিয়ে দিত।
ডাট টেলিভিশনে ১৯৯১ সালে, “নিউমার ২৮” নামে একটি রিয়েলিটি শো প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি বেশকিছু স্টাইলিস্ট প্রথার সূচনা করে, যা রিয়েলেটি শো’র মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। যেমন-এতে বাদ্যযন্ত্রের বহুল ব্যবহার হয়। এক বছর পর একই ধারণা এমটিভি তাদের নতুন ধারাবাহিক “দ্যা রিয়েল ওয়ার্ল্ড ও নিউমার ২৮” এ ব্যবহার করে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে রিয়েলেটি শো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। টেলিভিশনের শুরু থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরণের অনুষ্ঠানের প্রচার ঘটে নানা প্রকারের “গেম শো” হিসেবে। পরে পরিপক্কতা অর্জনের মাধ্যমে এটি আলাদা অনুষ্ঠান প্রকরণ হিসেবে স্বীকৃত হয়। “বিগ ব্রাদার হচ্ছে রিয়েলিটি শোর ক্ষেত্রে পাথিকৃৎ। এ অনুষ্ঠানটি প্রথম শুরু করে নেদারল্যান্ডসের ভেরানিকা টিভি চ্যানেল ১৯৯৯ সালে। অল্পদিনের মধ্যেই এর জনপ্রিয়তা অন্যান্য টিভি অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে যায়। একই বছর ব্রিটেনে এ রকম টিভি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এবং দারুণ সাড়া ফেলে দেয়। ২০০ সালে থেকে পুরো সময় জুড়ে আমেরিকা টেলিভিশনে উচ্চ মাত্রার দুটি রিয়েলিটি শো “সারভাইবার” ও আমেরিকান আইডল” সারভাইভার রেটিং এ উপরে থাকে ২০০১-০২ সালে। ২০০৪ থেকে ২০০৮ র্যন্ত আমেরিকান আইডল রেটিংয়ে উপরে থাকে। সারভাইভার, আমেরিকান আইডল, দ্যা অ্যামাজান রেস, সেসিং উইথ দ্যা স্টার, ফিয়ার ফ্যাক্টর, বিগ ব্রাদার এসব শো এর বিশ্বব্যাপী প্রভাব রয়েছে। আমেরিকান আইডলের ব্যাপক জনপ্রিয় পেল। আর এই জনপ্রিয়তার রেশ ধরেই বাংলাদেশে তৈরী হল ইন্ডিয়ান আইডলের অনুকরণে ট্যালেন্ট হান্টমূলক রিয়েলিটি শো “ক্লোজআপ-ওয়ান” আর এভাবেই ধীরে ধীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে রিয়েলেটি শোগুলোর জনপ্রিয়তা

 বাংলাদেশের রিয়েলিটি শো:
একবিংশ শতাব্দীতে এশে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে রিয়েলিটি শো’গুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মেধা অন্বেষণমূলক যেসব রিয়েলিটি শো’গুলো টেলিভিশনে প্রচারিত হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিচে তুলে ধরা হল:
১. লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার
২. ভিট-চ্যানেল আই সেরা সুন্দরী
৩. ক্ষুদে মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ
৪. মার্কস আল-রাউন্ডার
৫. হাউজফুল (চলচ্চিত্র বিষয়ক গেম শো)
৬. কে হতে চায় কোটি পতি
৭. ক্যাম্পাস হিরো
৮. চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ
৯. ক্লোজআপ-ওয়ান
১০. সুর-দড়িয়া এপার -ওপার
১১. শাহ্ সিমেন্ট নির্মানের তারকা
১২. এটিএন তারকাদের তারণা
১৩. ইউ গড দ্যা লুক
১৪. উত্তরাধিকার
১৫. ওয়ালটন সেরা বাইকার
১৬. নাচো বাংলাদেশ নাচো
১৭. মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

 গবেষণার পটভূমি ঃ
“আকাশ সংস্কৃতি আমাদের শিশুদের আরও বেশি সৃজনশীল করে তুলছে” -গত ৫ ডিসেম্বর ২০১১ এর দুপুরে বিটিভি তে এই বিষয়ে বিতর্ক শুনতে শুনতে আমার মনে উঁকি দিল “আসলেই কি এই স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল আমাদের শিশুকে সৃজনশীল আর প্রতিভা সম্পন্ন করে তুলছে?” নাকি তাদের মনে প্রতিভা জাহিরের তীব্র আকাঙ্খার জন্ম দিচ্ছে। উত্তর যাই হোক না কেন- শিশু মন, তরুণ মন এমনকি বৃদ্ধ মনও আজ চাইছে প্রতিভার স্বীকৃতি। আর এই জন্যই সবগুলো টিভি চ্যানেলে প্রতিভার সন্ধানে নতুন নতুন ঢঙ্গে আয়োজিত হচ্ছে হাজারো অনুষ্ঠান। কিছুটা রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারগুলোও যেন তাদের প্রতিভাবে প্রকাশ করতে চায়, একারণে ইসলামিক টিভিও শুরু করেছে প্রতিভা অন্বেষণের নানা প্রোগ্রাম। নাকি, গণমাধ্যমগুলো নিজের প্রয়োজনে তাদের দর্শকদের মনে প্রতিভা প্রকাশের তাড়নার জন্ম দিচ্ছে? এ এক দীর্ঘ গবেষণার বিষয়। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, বর্তমান সময়ে দেশে দেশে প্রতিভা অন্বেষণের অনুষ্ঠানগুলো বা জনপ্রিয় বাক্যে “ট্যালেন্টহান্ট” প্রোগ্রামগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ৪০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া “ক্যান্ডিড ক্যামেরা” নামক অনুষ্ঠানটির হাত ধরে সারা বিশ্বে হাজার হাজার অনুষ্ঠান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মুখকে ক্যামেরার সামনে নিয়ে আসছে।
আমাদের সমাজের সেই অতি সাধারণ “নোলক বাবু” “সোনিয়া” কিংবা “সালামা” আর বন্ধু মহলে সুন্দরী হিসেবে পরিচিত “মেহজাবীন” কিংবা “মুনমুন” আজ এক জাতীয় চরিত্র। ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো এভাবে সাধারণ চরিত্রকে অসাধারণ করে তোলে। এমন আদর্শ উদ্দেশ্যেই কেবল অনুষ্ঠানগুলো প্রচারিত হচ্ছে এমনটি নয় বরং প্রতিনিয়ত ম্যাগাজিন আর সাময়িকীতে এসব অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে যথেষ্ট। বলা হচ্ছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর নতুন পণ্যের নতুন ধারার প্রচারণার যন্ত্র হলো এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো। পাশাপাশি এ প্রোগ্রামগুলো আগাগোঁড়া পশ্চিমা সংস্কৃতির পূজারী হয়ে ধরা দিচ্ছে আমাদের দেশীয় গণমাধ্যমে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো সমাজ সংস্কৃতির উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কিন্তু তবুও এর প্রভাব কিংবা অনুষ্ঠানগুাের আধেয় নিয়ে খুব কম গবেষণা হয়েছে। তাই রিয়েলিটি শো ট্যালেন্ট হানট” শীর্ষক প্রতিবেদনধর্মী গবেষণাটি আমরা যথাযথভাবে করার চেষ্টা করছি।



 প্রথম ভাগ
আধেয় বিশ্লেষণ
আমাদের গবেষণার জন্য আমরা প্রথমে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসরণ করেছি , এক্ষেত্রে আমরা দুুই ধরনের রিয়েলিটি শোঃ ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামকে বেছে নিয়ে আধেয় বিশ্লেষণের কাজটি সম্পাদন করার চেষ্টা করেছি । দুটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম বেছে নিতে আমরা একটি ফোকাস গ্র“প আলোচনার আধেয়কে বেছে নিয়েছি , যা এই প্রতিবেদনে উল্লেথ আছে ।যেখানে আলোচকরা এই দুই ধরনের প্রোগ্রামকে নিয়ে বেশি আলোচনা করেছে । এগুলো হলো ঃ
 ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা’
 গানের প্রতিযোগিতা

 ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা’- শুরুর ইতিহাসঃ
“নারী মাত্রই সৌন্দর্যের প্রতীক”। তাই নারীর সৌন্দর্য নিয়ে নানা কবির লেখা কবিতারও অভাব নেই। ঠিক তেমনি নারীর সৌন্দর্য নিয়ে ব্যবসার ধারণারও অভাব নেই। উদাহরণ- ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা’; তার আবার প্রকারভেদও আছে- ‘বিবাহিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ ‘অবিবাহিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ মোটাদের মধ্যে সুন্দরী প্রতিযোগিতা কিংবা কলিম্বিয়ার শুরু হওয়া বন্দী নারীদের সুন্দরী প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে আবার আছে “আদিবাসী সুন্দরী প্রতিযোগিতা” এ সকল প্রতিযোগীতার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো এগুলো নারীকে পণ্য রুপান্তরিত করে। তবুও ঊনিশ শতকের শুরু থেকে নারীর সৌন্দর্য্যরে বিকিকিনি চলে টিভি পর্দায়।

শুরু হয় ১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক সিটির হোটেল সমূহে। মূলত হোটেল সমূহের কর্তৃপক্ষরা হোটেলগুলোতে ভ্রমনকারীদের আরও অধিক সময় আটকে রাখার উপায় হিসেবে মেয়েদের সুইমসুট নির্ভর একটি প্রতিযোগিতার আদি নিদর্শন। অর্থাৎ শুরু থেকেই আকর্ষণ আর ব্যবসায়ের জন্যই নারীর সৌন্দর্যকে ব্যবহার চলছে। তবে এমন উদ্যোগ সেই সমাজে সমালোচিত না হয়ে বরং এরপর থেকেই নারীর সৌন্দর্য ও শরীর নির্ভর প্রতিযেগিতার বুম হয়। স্থানীয় এবং জাতীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানা রকম প্রতিযোগিতা হতে থাকে। এরপর বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় মিস ওয়ার্ল্ড (১৯৫১), মিস ইউনিভার্স (১৯৫২), মিস ইন্টার ন্যাশনাল (১৯৬০)। এছাড়াও আছে ‘মিসেস ওয়ার্ল্ড) প্রতিযোগিতা। বিগ বিউটি (২০০৩); মিস স্পোর্টস (২০০৩)
আর এ সকল বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বেশ ধরে নানান দেশে জাতীয় প্রতিযোগী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পর্যায়েও সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন শুরু হয়েছে। ‘ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া’ ‘সানান্দা তিলেত্তমা’ আর চীনে আছে “মিস চায়না” প্রতিযোগিতা।

 বাংলাদেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতাঃ
বর্তমান প্রগতিশীল আধুনিক বিশ্বে সুন্দরী প্রতিযোগিতা একটি সাধারণ বিষয়। পরাশক্তি ও কথিত নারী স্বাধীনতা প্রদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ও ব্রিটেনসহ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রতি বছর বেশ জাকজমক পূর্ণভাবে এর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। গত ৫ বছর ধরে চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত আয়োজন ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার’ (২০০৬)। এছাড়াও রয়েছে চলিশোর্ধক্ষ নারীদের নিয়ে প্রতিযোগিতা “প্যান্টিন ইই গট দ্যা লুক” বিনোদনের বিচিত্রা ফটো সুন্দরী। আর একবার হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে এটিএন এর সুপার হিরো সুপার হিরোইন। আর নতুন নতুন আসছে একুশে টিভির মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার। গত ৫ বছর ধরে এর আয়োজন চলছে আর উপহার হিসেবে দিয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশী সুন্দরী। তবে তাদের নাম মনে করতে হয়তো খোদ আয়োজকদেরকেই ফাইলপত্র ঘাটতে হবে।
সুন্দরী প্রতিযোগিতার আধেয় বিশ্লেষণঃ
(১) প্রাথমিক নির্বাচনঃ
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার জন্য যা প্রয়োজন তা মূলত নারীর দৈহিক সৌন্দর্য। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, সম্প্রতি আয়োজিত হতে যাওয়া “মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০১১” এর কথা। যার বিজ্ঞাপনে বলা আছে আবেদনকারীকে হতে হবে অবিবাহিত, সৌন্দর্য স্নিগ্ধ ও লাবণ্যময়ী, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী মেধা ও মননে শানিত আর উচ্চতা ৫’ ২” (পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি)। অর্থাৎ সুন্দরী হবার জন্য আপনাকে জ্ঞানী হতে হবে না বরং হতে হবে আকর্ষণীয়। নারীকে অবমাননা করার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু আর কি হতে পারে? এ যেন নব্য যৌনবৃত্তি। আর আবেদনের এ সকল ঘোষণা দেয়া হয় জাকজমকপূর্ণ পরিবেশে আর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে। যেমন ২০১০ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় শেরাটন হোটেলে। এ হলে দরিদ্র দেশের প্রতি ইউনিলিভার নামক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির তিরস্কার।

২. মূল পর্যায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াঃ
শুরু হলো আকাশ ছোঁয়ার যাত্রা’- স্বপ্ন সত্যি হবার পথে পাড়ি”- এমন শ্লোগানে ১০,০০০ আবেদনকারী প্রতিযোগিকে নিয়ে শুরু হলো সেরা সুন্দরী খোজার আয়োজন। বিচার্স নিয়ে হলেঃ প্রতিযোগীদের সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তা। আর এমন বিচারের জন্য ব্যবহৃত হলো ফটোগ্রাফারদের দ্বারা তোলা ঐ সকল নারীর পশ্চিমা ঢং এ আবেদনকারী ছবি। আর বিচারক তা দেখে একজন প্রতিযোগিকে বলেই ফেললেন তোমার এ ছবিতে আমি কোন আবেদন খুজেই পাই না। তোমাকে এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে যেন আমি প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়ে যাই। আফসানা মিমি ২০১০ সাল)। এ এক ভয়ঙ্কর উদাহরণ নারীকে খোদ মিডিয়া বলছে আকর্ষণীয় হতে, আবেদনময়ী হতে। এমন নব্য আধুনিকতার প্রয়োজন কেন? মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বাজার জাত পণ্যের ভোক্তা তৈরিতে নাকি অন্য কিছু।

৩. মূল পর্বঃ
বাংলাদেশেী সুন্দরীর খোঁজে আয়োজিত এ সুন্দরি প্রতিযোগিতায বাঙ্গালীত্বের দোয়া নেই। যেমন প্রতিযোগীদের পোশাকে নেই তেমনি নেই প্রতিযোগিতার ধরবো। মূল পর্বে ২৫ প্রতিযোগির বেশির ভাগকেই দেখা গেল পশ্চিমা খোলামেলা পোশাকে শপিং মলে ঘোরাঘুরি করতে, আবেদনময়ী ভঙ্গিতে ছবি তুলতে (যার নামকরণ করা হযেছে ইবযধাব ইবধঁঃরভঁষ এছাড়া ঈধসঢ় ঋরৎব আর চধৎঃু উধহপব এর মাধ্যমে পশ্চিমা ঠাডের নৃত্যে মেতে উঠতে। [প্রতিযোগিতা ২০১০]
এসব পর্বে বাঙ্গালী সংস্কৃতির --- খুঁজে পাওয়া যায় না। এবার আসা যাক ফেমিমিনিটি নামক পর্বের বিশ্লেষণে। ফেমিমিনিটি বলতে বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সামাজিক পরিসরে নারীর প্রত্যাশিত গুণ ও আচরণ। অর্থাৎ এটি কোন জৈবিক বিষয় নয় বরং সামাজিক। কিন্তু লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় এ পর্বে প্রতিযোগিরা ডিজাইনারদের শাড়ি পড়ে বিচারকদের সামনে কার্ডিয়াক করে গেলেন আর পেছনের উপস্থাপকের ঘোষণা আমরা দেখতে চাই আমাদের প্রতিযোগিরা কতখানি চৌকষ, আতœবিশ্বাসী ও সৃজনশীল হয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে। প্রশ্ন হলো আমাদের সামাজিক পরিসরে নারীর প্রত্যাশিত গুণ ও আচরণ কি নিজেকে উপস্থাপন? পাশাপাশি এ সময় ক্যামেরার ক্লোজ শর্টগুলো যেসব জায়গায় ধরবার চেষ্টা করা হয়েছে তাতে মৌনতার উপমহাদেশীয় ধারণাটি প্রবল হয়ে ওঠে। সুন্দরী খোঁজার এহেন প্রতিযোগিতার কথা বলতে গিয়ে ২০০৯ সালের প্রতিযোগির একটি পর্বের কথা মনে পড়ছে; যেখানে প্রতিযোগীদের একটি জঙ্গল থেকে একটি বাক্স খুঁজে বের করতে দেয়া হয় সেখানে কিন্তুু খন্ড বিখন্ড কাপড় আর অলংকার থাকে, তা দিয়ে ঐ দিনের র‌্যাম্প মডেলিং এর জন্য তারা পোশাক বানায় আর বিচারকদের সামনে মডেলিং করে। পরিধেয় পোশাক দেখে সচেতন দর্শকের মনে হঠাৎ প্রশ্ন ওঠবে বাঙ্গালী রমণীদের স্মরণে হঠাৎ আবার আফ্রিকান পোশাক কেন? অবশ্য সে সময় সবর্ণা মোস্তফার ভাষ্য এমন যে, এর মাধ্যমে তারা প্রতিযোগীদের ফ্যাশন সচেতনতা বোঝার চেষ্টা করেছেন। তবে আমাদের প্রশ্ন হলো বাঙ্গালীর আফ্রিকান রুপ ধারণ আবার কোন ধরনের ফ্যাশান সচেতনতা।
২০১০ সালে প্রতিযোগীতায় দেখা গেছে প্রতিযোগীরা আইল্যান্ডে গিয়ে ফটোসুঠ করলো। আই ফটোগ্রাফার এক প্রতিযোগীকে সৈকতে নিয়ে আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় বসার নির্দেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ সুন্দরী হতে হলে আপনাকে হতে হবে আকর্ষণীয়। পাশা পাশি দেখানো হলো ভোর পাঁচটায় ওঠে ব্যায়াম সেশান আর গভীর রাতে নামকরা গায়কের সাথে গানের আসরে নাচ-গান। প্রতিযোগিতার আয়োজকরা আবেগকেও ব্যবহার করলেন তাদের প্রোগ্রামে। মানিকগঞ্জে এক ক্যাম্পিংয়ে- এ প্রতিযোগিদের রাতের এক সময় মোবাইলফোনে পরিবারের সাথেকতা বলা সুযোগ দিয়ে তা ক্যামরাবন্দী করে প্রচারও করলো পরিচালক। এহন আবেগ ব্যবহার করে মানব মনে প্রভাব ফেলার চেষ্টা।
এছাড়াও প্রতিযোগিতার শেষ পর্বগুলোতে প্রতিযোগিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হয়। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে এ সকল বিজ্ঞাপন হলো লাক্স সাবানের। আর অবশ্যই সব বিজ্ঞাপনের মত এরও মূল কথা লাক্স ব্যবহারে আপনি হতে পারেন আরও সুন্দরী আরও লাবণ্যময়ী।
সকল বিষয় যাচাই বাচাই করে প্রতিযোগী যখন মাত্র ৫ জন, তখন তাদের দিয়ে ছোট নাটিকা অভিনয় করা হয় “পন্ডস মিস বিউটিফুল স্কীন” “সানসিল্ক মিস বিউটিফুল হেয়ার” এবং “ক্লোজআপ মিস বিউটিফুল স্মাইল” অর্থাৎ নারীর সৌন্দর্যের বিশেষায়িতকরণ। এখানে দেখুন কেবর দেখা হচ্ছে নারীর চুল সুন্দর কিনা? তার হাসি সুন্দর কিনা? এখানে কোন অর্থেই নারীর মেধাকে যাচাই করা হচ্ছে না কিংবা নারীর ক্ষমতায়ন ও ঘটছে না। কেবলই ঘটছে তার দৈহিক সৌন্দর্য্যরে ব্যবহার।

(৪) বিচারক মন্ডলী ঃ
সুন্দরী প্রতিযোগীতার এমন নানাবিধ আয়োজকের বিচারক কিন্তু কেবল নারী নয়। বরং নারীর সৌন্দর্য বিচারের জন্য পুরুষ বিচারক আবশ্যক। আপনাকে হতে হবে লাস্যময়ী- লাবণ্যময়ী- আকর্ষণীয়। আর সুন্দরী এমন মুরমন্ত্র ভিত্তিক প্রতিযোগিতার বিচারক যখন একজন পুরুষ তখন বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতার অন্তরালে এই অনুষ্ঠানগুলো মূলত পুরুষের দৃষ্টিতে নারীর সৌন্দর্যকে বিষয় করে। এই কারণে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় প্রতিযোগীদের নিজস্ব উপস্থাপন। পাশাপাশি ক্যামরার ফোকাসও যৌনতাকে গুরুত্ব দেয়; আর হট সীটে আফসানা মিমি, সুবর্ণা মোস্তফার সাথে আমন্ত্রিত হন ‘সৈয়দ শামসুল’। সব মিলিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতা পুরুষতন্ত্রের জয়গান প্রতিধ্বনিত করে।

(৫) প্রতিযোগিতার লাভ-লোকসান
সুন্দরী প্রতিযোগীতগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এমন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য পণ্যের বাজারজাত করণ আর মুনাফা অর্জন। যেমন ২০১০ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের আয়োজনের ভিত্তিতে বলা যায় বিচারক আফসানা মিমির কাপড়ের ব্যবসা সুবর্ণা মোস্তফার নাটকের উপর আর এ নাটক সৈয়দ শামসুল হকের লেখার উপর ও তার প্রচার ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনের উপর আর বিজ্ঞাপন নির্মিত হয়েছে ফুয়াদের গানের উপর। যার জন্য প্রয়োজন একজন আকর্ষণীয় মডেল, আর মডেলের খোঁজে এ প্রতিযোগিতা। অর্থাৎ মূল উদ্দেশ্য ব্যবসায় মুনাফা অর্জন। আর বিচারক ও আয়োজকের মুনাফার উদ্দেশ্যেই প্রতিযোগীদের দিয়ে করানো হয় ফ্যাশান শো, বিজ্ঞাপন আর নাটকে অভিনয়। অর্থাৎ বিশ্বায়নকালে মুক্তবাজার অর্থনীতির দ্রুত হিসেবে এই সব সুন্দরীকে নির্বাচন করা হয়। উদাহরণস্বরুপ “গরংং টহরাবৎংরঃু ইধহমষধফবংয” এ বলাই আছে বিজয়ীরা হবে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর ব্রান্ড এ্যামবেসেডর।
আর আয়োজনের পিছনে এবং বিজয়ীদের পুরস্কারে আয়োজকদের যে খরচ হয় তার জন্য রয়েছে এসএমএস ভোটিং ব্যবস্থা। যা আয়োজকের লাভের পাল্লাকেই ভারী করে দেয়।এছাড়াও রয়েছে বিজ্ঞাপন , অনুষ্ঠান চলাকালীন কিকারে বিজ্ঞাপন , উপস্থাপকের কন্ঠে বিজ্ঞাপন , ডানে বিজ্ঞাপন বামেও বিজ্ঞাপন ,তার সাথে আছে আবার বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন । সব দিয়ে ভোক্তা সমাজ তৈরির চেষ্টা আর উদ্দেশ্য খুবই নগ্ন তা হলো মুনাফা ।

(৬) বিজয়ীর বক্তব্য ঃ
লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ২০০৯ এর বিজয়ী মেহজাবীনের বক্তব্য এমন “প্রতিটি সুন্দরী মেয়েই নিজেকে বড় স্ত্র“ীনে দেখতে চায়। যা আমার জন্য লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ২০০৯ ছাড়া সম্ভব ছিল না”। তার এ বক্তব্যে সুন্দরী মেয়ে বলতে কি বুঝানো হয়েছে? আর সুন্দরী মেয়ে বড় স্ক্রীনে দেখতে চায় মানে সুন্দরীদের কি নিজেকে উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক। আর সবশেষে বলা যায়, আয়োজক পক্ষ যা চেয়েছে নতুন মডেলকে সেই ধাঁচে বানিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে “লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার ছাড়া সম্ভব” হয়- সম্মতি উৎপাদনের দারুন এক প্রক্রিয়া।

(৭) সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামকরণ ঃ
বাংলাদেশে প্রচলিত সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো নামগুলো অনেকটা এ রকম “লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার” “প্যান্টিন ইউ গট দ্যা লুক” যা শুনলেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পণ্য গুলোর কথা দর্শক মনে উঁকি দেয়। এছাড়াও “সানসিল্ক মিস বিউটিফুল হেয়ার” “ক্লোজ আপ মিস বিউটিফুল স্মাইল” সবই পণ্যের প্রচার প্রচারণার কাজে লাগে। অর্থাৎ অনুষ্ঠানগুলো নারীর মনে সুন্দরী হবার তাড়না সৃষ্টি করে। পাশাপাশি বলে দে সুন্দরী হতে হলে আপনাকে এই পণ্যগুলোর দারস্থ হতে হবে।

সার্বিক পর্যালোচনা ঃ
সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো ভয়াবহ কারণ তা নির্দিষ্ট মাপকাঠির বাইরে সবাইকে আকর্ষণীয় আখ্যা দিয়ে থাকে। নারীকে তারা পণ্য বানিয়ে ফেলে; আর প্রতিযোগিতার গ্লামারের মাঝে নারী ও ভুলে যায় সে মানুষ, অনুভূতি বোধসম্পন্ন জীব। বরং সে বিদূষী গুণের সন্ধান বাদ দিয়ে বিদিশার খোঁজে নেমে পড়ে। তবে এ প্রক্রিয়ায়ং কারো কারো কিছু লাখ ও অর্জন ঘটে এটা সত্য, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় কিসের বিনিময়ে? আর কতখানি? উত্তরটা হলো নারী র‌্যাম্প মডেলিং করে সে মূলত নিজেকে বিক্রির এক নির্লজ্জ খেলার অংশিদার হয়। আর এভাবে সুন্দরী প্রতিযোগীতাগুলো কর্পোরেট পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখে- নারীরা করে বিক্রিত পণ্য আর দর্শককে করে ক্রেতা। আর বিনিময় কেবলই মুনাফা।
মজার ব্যাপার হলো পুঁজিবাদের বাহন এই সুন্দরী প্রতিযোগীতাগুলো তাদের প্রচার প্রচারণা বাড়ানো জন্য বলে উঠে তারা বাড়ির ক্ষমতায়ন ঘটার এবং প্রতিযোগীদের সৌন্দর্যই মূল ক্ষ নয় বরং তার বুদ্ধিমত্তা ও ট্যালেন্ট তাকে জিতিয়ে দেয়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন নৃৃ-বিজ্ঞানী সুসান রাঙ্কল (রাঙ্কল ২০০৪); তিনি মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বলেছেন মিস ইন্ডিয়ার জন্য নির্বাচিত ২৬ জন যেভাবে ঘষে মেপে মিস ইন্ডিয়া কিংবা মিস ইউনিভার্সের জন্য তৈরি করা হয় তাতে প্রতিযোগীর অবদান খুব সামান্য। এখানে প্রতিযোগীর ডায়েট, ভাষা ভঙ্গি, ত্বক, ফ্যাশন নানা বিষয়ে এক্সপার্ট দ্বারা নির্ধারিত। অর্থাৎ যে ট্যালেন্ট কিংবা সৌন্দর্যের সন্ধানে এমন আয়োজন তা মূলত অন্যদের দ্বারা নির্মিত। তাহলে বলা যায় প্রতিযোগীতাগুলো আসলে কেবলই উসিলা। মূলত এগুলো আয়োজকের পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারীদেহের আধুনিক ব্যবহারের মাধ্যম। তাদের প্রয়োজনে নতুন নতুন সুন্দরী মডেলের আগমন আর বছর ঘুরতেই বেশির ভাগই হারিয়ে যাওয়া; যেমন হারিয়ে গেছেন প্রথম লাক্স সুপার স্টার খ্যাত “শানু”। পাশাপাশি আধুনিক পোশাক আশাক বা আধুনিক ফ্যাশান নামে এসব প্রোগ্রামে সচরাচর চলছে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন।
পরিশেষে মানুষের প্রথাগত সামাজিক, রাজনৈতিক, সাং®কৃতিক মূল্যবোধকে বদলে দিয়ে কেবল মুনাফাভোগী মানুষে পরিণত করে তোলা, পণ্যের প্রচার প্রচারণা আর পুঁজিবাদের দীক্ষা দেবার জন্য মিডিয়ার কোন জুড়ি নেই। তাই আমেরিকা ইউরোপে সফরতা লাভ করার ফলাফল হিসেবে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে চলছে মিডিয়া প্রচারিত নতুন নতুন সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যার মূল লক্ষ্য কোন জাতির সাং®কৃতিক ভীতকে নষ্ট করে, একই ধরনের সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করে, পাশাপাশি পুঁজিবাদের বিকাশে নারীদেহকে ব্যবহার করে নারীর ক্ষমতায়নকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আর এসবের অগোচরে মূলত পুরুষতন্ত্রের জয়ধ্বনি প্রচারিত হয়। পাশাপাশি সমানতালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পুঁজিবাদের জয়গান। কারণ সুন্দরী নির্বাচিত হলে এসএমএস ভোটিং এর মাধ্যমে অর্থাৎ মেধা নির্বাচনে রয়েছে মোবাইল কোম্পানি তথা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ।

 মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ

আমাদের দেশে পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে স্থানীয়-জাতীয় পর্য়ায়ে সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনেক আগে থেকেই ছিল। সরকারী পৃষ্ঠোপোষকতায় এরকম অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে এবং হচ্ছে- কিন্তু আমাদের আলোচ্য সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের রিয়েলিটি শো তার চেয়ে কিছু আলাদা। আমাদের দেশে রিয়েলিটি শো’র বান ডাকবার অনেক আগেই নতুন কুঁড়ির মত প্রতিভার অন্বেষনের অনুষ্ঠান হয়েছে। সেইসব অনুষ্ঠানের সাথে বর্তমানের রিয়েলিটি শো’ এর পার্থক্য হল, নতুন কুঁড়ির মত অনুষ্ঠান হয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আর বর্তমানের ক্ষুদে গানরাজের মত প্রতিভার অন্বেষন হচ্ছে কর্পোরেট হাউসগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায়। পূর্বের নতুন কুঁড়ির তারকারা কোন এসএমএসের মাধ্যমে বিজয়ী হতেন না। তারা হারিয়েও যান নি। বর্তমানের তারকাদের বছর ঘুরতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু বাংলাদেশে হঠাৎ বহুজাতিকদের এবং কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর প্রতিভা অন্বেষণের চেষ্টা কেন? বহুজাতিক কোম্পানি তাদের যে কোন কর্মকান্ডের অগ্রভাগে চিন্তা করে বাণিজ্যের কথা। যেখানেই বাণিজ্য সেখানেই কর্পোরেট, সেখানেই বহুজাতিক কোম্পানি। সুতরাং তাদের এই মহানুভব কাজের পেছনে রয়েছে বানিজ্য। সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের রিয়েলিটি শো বহুজাতিকের প্রশ্রয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। গানের মতো বিষয়কে নিয়ে ব্যবসার প্রসারের জন্য। গান যে কোন অঞ্চলে, গোষ্ঠীর মানুষের কাছে সার্বজনীন ভালো লাগার বিষয়। এটা সহজেই মানুষের মনে আবেগের জন্ম দিতে পরে। তাই যে অঞ্চলে বা দেশে এ ধরণের আয়োজন করা হয় সেই দশেকেই বড় করে দেখানো হয়। সে দেশের সংস্কৃতিকে জাতে ওঠানোর কথা বলা হয়। আর একারণেই আমেরিকান আইডল থেকে ’ক্ষুদে গানরাজ’। প্রতিভা অন্বেষণ মূলত বহুজাতিকদের এবং কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর জন্য, বাংলাদেশের জন্য নয়। বহুজাতিক কোম্পানি মূলত তার বিজ্ঞাপনের জন্য, কোম্পানি হিসেবে সবার আস্থা অর্জনের জন্য এমন আয়োজন করেছে। আর এমন আয়োজনে ইউনিলিভারের সাথে সাথে আরো বেশ কয়েকটি পুঁজি লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান জড়িত। গণমাধ্যম হিসেবে এনটিভি এ ধরণের প্রতিষ্ঠান। গণসংস্কৃতি উৎপাদনের মাধ্যমে তারা এ সমাজকে ভোগবাদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটিই করে থাকে। দেশের স্কৃতি বেচে খাওয়ার দিকেই তাদের বেশি আগ্রহ। যার ফলে ’’উলা লা উলা লা উলা লা এ এ/ পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন’’ ধরনের ফিউশন উৎপাদিত হচ্ছে।
সঙ্গীত প্রতিভা অন্বেষণের কর্পোরেট পৃষ্ঠপেষকতার রিয়েলিটি শো এর ইতিহাস খুব সাম্প্রতিক। ২০০০ সালে আমেরিকায় শুরু হয় ‘আমেরিকান আইডল’। এই অনুষ্ঠানের অনুকরণে ভারতে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ান আইডল’। তারই পথ ধরে বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এনটিভিতে ২০০৫ সালে শুরু হয় সঙ্গীত অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘ক্লোজ-আপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’। এরপর একে একে আসতে থাকে ’চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ, ’তিন চাকার তারকা’, ’সুরদরিয়ার এপার ওপার’ ’বাঘা গাইন’, ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ এর মত প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’। ইজাজ খান স্বপনের নির্দেশনা ও পরিচালনায় চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে শিশুদের প্রতিভা অন্বেষনের এই অনুষ্ঠান শুরু করে।
শুরুর বছর ‘ক্ষুদে গান রাজ’-এর বিচারক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরী। ২০০৮ সালে ১১৫ জন নিয়ে প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়। ২০০৯-১০ সালে দ্বিতীয় ‘ক্ষুদে গান রাজ’ অনুষ্ঠিত হয়। সেটা পরিচালনা করেছিলেন তাহের শিপন। ওই প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এবং তার স্ত্রী অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন।
২০১১ এর তৃতীয় ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় শুরুতে সারা দেশ থেকে ১৮ হাজার প্রতিযোগী অংশ গ্রহন করে। ৬ জন ফাইনালিষ্টের মধ্যে বিচারকদের রায় এবং দর্শকদের ভোটের মাধ্যমে তৃতীয় মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গান রাজ নির্বাচিত হয় কুষ্টিয়ার মুন্না। প্রথম রানার আপ হয় নিলা আর দ্বিতীয় রানার আপ হয় চট্টগ্রামের আদিবাসী পায়েল। ক্ষুদে গান রাজ মুন্নাকে ৫ লাখ, প্রথম রানার-আপ নিলাকে ৩ লাখ এবং দ্বিতীয় রানার আপ পায়েলকে ২ লাখ টাকার চেক পুরস্কার হিসেবে তুলে দেয়া হয়।

১. প্রাথমিক নির্বাচনঃ
প্রাথমিক নির্বাচনে ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলায় অডিশনের আয়োজন করা হয়। শিশু-কিশোরেরা ওই অডিশনে ’ইয়েস কার্ড’ পেলে মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্য ঢাকায় আসার সুযোগ পায়। অডিশন রাউন্ডে মনোনয়ন পেতে সঙ্গীতের কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা আবশ্যক নয়। জনপ্রিয় ধাচের দু একটা গান গাইতে পারলেই হল। বিচারকগনও প্রতিযোগীদের এক দুই লাইন গাইয়েই সিদ্ধান্তে চলে আসেন। কারন মূল উদ্দেশ্য প্রকৃত প্রতিভার বিকাশ নয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু কিশোরদের নিয়ে ব্যবসা করা। সেখানে যত অভিভাবক শিশুদের নিয়ে ভীড় করবেন, এই অনুষ্ঠানের অডিয়েন্স তত বাড়াবে। যেমন- প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে মা-বাবা তার শিশুটিকে নিয়ে ঢাকায় আসবেন, তার এলাকার মানুষ জানবে তারা ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছে। ’মেরিডিয়ান’ পন্যের নামটা তাদের মাথায় গাঁথা হয়ে থাকবে। সুতরাং বাছাইয়ের ব্যাপার গৌন, মুখ্য হল সব অঞ্চলে পণ্যের নাম এবং গুনগান পৌছে দেয়া যাচ্ছে কি না।

২. মূল পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়াঃ
মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতার মূল পর্যায়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রথমে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নির্বাচিত শিল্পীদের দিয়ে খালি গলায় বিভিন্ন গান গাওয়ানো হয়। এরপর তাদের গানের সাথে বাদ্যযন্ত্র যোগ করা হয়। এর পরবর্তী রাউন্ডগুলো হয় স্পেশাল রাউন্ড। এসব রাউন্ডে লালন-নজরুল রবীন্দ্রনাথের ’ব্রান্ডিং’ করা হয়। যেমন, ’লালন স্পেশাল এপিসোডে’ সব প্রতিযোগী পড়ে হলুদ গেরুয়া, মেয়েরা হলুদ সুতী শাড়ী। রবীন্দ্র স্পেশালে লালপেড়ে সাদা শাড়ি। একইভাবে ’বিজয় দিবস স্পেশালে’ সেটি লাল-সুবজ পোশাকে পরিবর্তিত হয়। অনুষ্ঠানে জানিয়ে দেয়া হয় এই পোশাকগুলোর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং উপস্থাপক ও বিচারকদের কন্ঠে বারবার ধনিত হয় স্পনসরদের দেয়া পোশাকের নানা গুনকীর্তন। ২০১১ এর ক্ষুদে গান রাজের একটি এপিসোডে বিচারক সামিনা চৌধুরীকে দেখা যায় বারবার উপস্থাপক তানিশার পোশাকের প্রশংসা করতে এমনকি সেখানে তিনি তানিশার হাতের নেইলপলিশের প্রসংসা পর্যন্ত করেন! এভাবে এই অনুষ্ঠান এবং অনুষ্ঠানের ভেতরের বিজ্ঞাপনে উপস্থাপক, বিচারক প্রতিযোগীদের পোশাকের মাাধ্যমে একটা কাঙ্খিত জীবনের হাতছানি তৈরী করা হয়। যে জীবনে পোশাক পরতে হবে আড়ং কিংবা রং এর, সাজতে হলে যেতে হবে পারসোনা কিংবা ফারজানা শাকিল’স মেকওভার সেলুনে। এেেদশের বৃহদাংশ মানুষের নাগালের বাইরের এই জীবন। কিন্তু এই সব কালচারাল প্রোডাক্ট গলধঃকরণের মাধ্যমে প্রতিনিয়তই তারা এই হাতছানিতে আক্রান্ত হয়। এই ধরনের দৃশায়ন দর্শকদের করে তোলে ভোক্তা। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি যারা মূল দর্শক, তারা হোঁচট খায় বাস্তবতার সঙ্গে প্রত্যাশার মিল ঘটাতে গিয়ে।
৩. মূলপর্বঃ
এসএমএস ভোটিং এর মাধ্যমে ’মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ এ শুরু হয় ’এলিমিনেশন রাউন্ড’। প্রতিযোগীরা ’আপনার মোবাইলে এই লিখে আমাদের এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন এসএমএস! যত খুশি তত!’ এই আহ্বার নিয়ে দর্শকদের দোরগোড়ায় হাজির হয়। যেহেতু একটি নাম্বার থেকে অজস্র এসএমএস করার সুযোগ দেয়া হয়, তাই প্রতিযোগী এবং তাদের অভিভাবগন নামেন এসএমএস সংগ্রহের ইঁদুর দৌড়ে। এলাকায় এলাকায় পোষ্টারিং করা হয়, ক্যাম্পেইন করে ভোট চাওয়া হয়। টেলিভিশন চ্যানেলটিও ’জাতীয় সংসদের বাজেট পাশ’ ধরনের সংবাদের পাশাপাশি প্রাইম টাইম সংবাদে জানাতে থাকেন এসএমএস করার আহ্বান। এর ফলে যারা নেহায়েত খবর দেখতে টিভির সামনে বসেন তারাও এই যজ্ঞি আযোজন থেকে রেহাই পান না। উপস্থাপক বলেন আমার পোশাকের স্পন্সর অমুক কোম্পানি আবার দর্শকদের পুরস্কার হিসেবে বলা হয়, উপহার হিসেবে আপনারা পাচ্ছেন অমুক কোম্পানির ’ব্রান্ড নিউ পন্য’! এজন্য দর্শকদের এসএমএস করতে হয়। ’’আপনার মোবাইলে এই লিখে আমাদের এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন এসএমএস। যত খুশি তত। জিতে নিন আকর্ষণীয় সব পুরস্কার আর এগুলো আপনারা পাচ্ছেন ’ওমুক কোম্পানি’ এর সৌজন্যে।’’ রিয়েলিটি শো মানুষের আবেগকে কৌশলে পুঁজি করে ব্যবসা করছে, আর অজস্র এসএমএসের চাপে ফুলে-ফেঁপে উঠছে মোবাইল কোম্পানিগুলো।
৪. লাইভ ফাইনালঃ
’গানে গানে সুন্দর এক পৃথিবী সাজাও’ স্লোগানের মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ এর ফাইনাল পর্ব সব সময় লাইভ প্রচার করা হয়। সাধারনত মূলপর্বে এসএমএস এবং বিচারকদের মূল্যায়নে নির্বাচিত ৬ জন ফাইনালিষ্ট নিয়ে লাইভ প্রোগ্রামটি হয়। এর মধ্য থেকে তিনজনকে নির্বাচিত করা হয়। এদেরকে একটা নির্দিষ্ট টাকার অংকে পুরস্কৃত করা হয়। যে অঞ্চলে আয়োজন করা হয় তা ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানো হয়। মিডিয়া পার্টনার রেডিও চ্যানেল ও পত্রপত্রিকায় ফলাও করে এর নিউজ প্রচার করা হয়। এরা এমন ভাবে হেজিমনি তৈরী করে যে মনে হয় জাতীয় জীবনে এটি যেন খুব গুরুত্বপূর্ন ঘটনা। লাইভ প্রোগ্রামেও নির্দিষ্ট মেয়াদে বিরতি দেয়া হয় এবং পূর্বেও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে অনুষ্ঠানের মাঝখানে স্পনসরদের গুনকীর্তন করা হয়।

৫. বিচারকমন্ডলীঃ
"কোনো এক উল্টো রাজার উল্টো বুঝলি প্রজার দেশে/
চলে সব উল্টো পথে উল্টো রথে উল্টো বেশে...''
দ্বিতীয় মেরিডিয়ান চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এবং তার স্ত্রী অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওন।
শুরুর বছর ‘ক্ষুদে গান রাজ’-এর বিচারক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ ও সামিনা চৌধুরী। তৃতীয়বারের প্রতিযোগীতায় বিচারক হন এস আই টুটুল, ফেরদৌস আরা এবং সামিনা চৌধুরী । প্রথম এবং তৃতীয়বারের বিচারক সংগীতশিল্পী হলেও দ্বিতীয়বারের বিচারক হিসেবে হুমায়ুন আহমেদের উপস্থিতিই প্রমান করে প্রতিযোগিতার আয়োজকদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বিপনন ও প্রসার। হুমায়ুন আহমেদকে টিভিতে আনলে প্রচার ভালো হবে, এটাই মুখ্য, একজন সাহিত্যিক হয়ে তিনি সংগীত প্রতিযোগীতার বিচারক কিভাবে হন সেটা বিবেচ্য নয়। ঠিক যেন উল্টো রাজার দেশে গানটির মত। যেখানে যাঁর থাকবার কথা নয় সেখানে শুধু বিপননের জন্য তাঁকে টেনে আনা হয়।

৬. পুরস্কারের ধরনঃ শিল্পের বিকাশ বনাম শিশু কিশোরদের মগজ ধোলাই
এই ধরনের প্রতিভা অন্বেষনের নামে চলছে এমন এক ধরনের ব্যবসা যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে রাতারাতি তারকা হবার স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে খুব ছোটবেলায় যা শেখা হয় বা শিখতে শুরু করে তা একটি মানুষের মাঝে অনেকদিন অমলিন থাকে, তা প্রতিভাই হোক অথবা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোন কিছু শেখাই হোক না কেন। কিন্ত আমরা আর ভালো করে বললে বলা যাতে পারে, কর্পোরেট দুনিয়ার হর্তাকর্তা অথবা আমাদের দেশের তথাকথিত সংস্কৃতি রক্ষার ধারক বাহকেরা ভবিষ্যত প্রজন্মটিকে লোভী একটা প্রজন্ম হিসেবে তৈরী করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
’এক বছরের তারকাখ্যাতি জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভালো গান গাওয়ার জন্যই নয়, স্পন্সরের দেওয়া টি-শার্ট পরে স্টেজে ওঠার জন্য। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীনকে বিচারক বানিয়ে তাদেরই গানের অপভ্রংশ তাদেরই সামনে গেয়ে আবার তাদের হাত থেকে তারকাখ্যাতি নেওয়ার প্রক্রিয়া বিজ্ঞাপনদাতার ফরমায়েশি আদেশে মানুষকে পণ্যের দাস বানানোর গণমাধ্যমের অভ্রান্ত চেষ্টা ছাড়া কী বলা যায়। আজকের দিনে কেউ তাই সাবিনা, রুনা বা সলিল চৌধুরী হতে চায় না; তারা চায় বিউটি, নোলক, সালমা বা সোনিয়া হতে। কারণ এ যে ‘গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে গান কপি করার’ মতো সহজে গায়কের খ্যাতি পাওয়ার রাস্তা।’ (চৌধুরী, সাইফুল আলম, ২০০৯)
৫ লাখ বা দু লাখ টাকা পুরস্কার দিয়ে এবং ধারন ক্ষমতা তৈরীর আগেই তারকাখ্যাতি তৈরী করে এই শিশুদের মনমগজ ধোলাই করা হয়।

৭. প্রতিযোগিতার লাভ লোকসানঃ
এই প্রতিযোগিতার অর্জন হল এই যে আগে ব্যান্ডগান দিয়ে বিজ্ঞাপনে মুড়ে যে পন্যায়ণ গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি তা লালনের নামে ফোক গানের মাধ্যমে গ্রামেও পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিগত বছরের একটি গবেষণা থেকে নিম্নের ফলাফল পাওয়া গেছে- ক্লোজ-আপ ওয়ান হিসেবে নির্বাচিত সালমার এসএমএস প্রাপ্তির হিসাবটা দেখা যাক। কুষ্টিয়ার অজপাড়াগাঁয়ের এই মেযেটিকে বাংলাদেশও দেশের বাইরের বাঙালিরা প্রায় ৩২ লাখ এসএমএস করেছে। যা এ আয়োজনে প্রাপ্ত মোট এসএমএসের প্রায় ৪০%। পত্রিকার প্রাপ্ত তথ্যমতে সালমার মোট ভোট ৩১,৫৮,৩৭৮ টি, যা এসেছে এসএমএসের মাধ্যমে। শেষ পর্বে সালমার প্রাপ্ত ভোট দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। গণমাধ্যম তাকে এমনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে যে, তার পক্ষে শেষ পর্বে ভোট পড়ে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮০টি। এর আগের পর্বগুলোতে সালমা ৩ লাখ ২৩ হাজার, ৩ লাখ ৮৪ হাজার, ৩ লাখ ৫৭ হাজার ও ২ লাখ ৯৬ হাজার করে ভোট পায়। হিসেব করে দেখা গেছে, শুধুমাত্র সালমার জন্য বাংলাদেশের জনগণের মোট অনুদান ছিল ৭২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আর তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে নগদ ১০ লাখ টাকা, একটি নিশান গাড়ি, দুই লাখ টাকার বৃত্তি আরও ছোটখাট কিছু পুরস্কার। সব মিলিয়ে বলতে গেলে সালমার পুরস্কারের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকার মত। ছকাকারে তুলে ধরা হলো:
প্রতিযোগীর নাম মোট প্রাপ্ত এসএমএসের মূল্য পুরস্কারের মূল্য অন্যান্য খরচ
সালমা প্রায় ৭২ লক্ষ প্রায় ২০ লক্ষ প্রায় ০৫ লাখ
মুহিন প্রায় ৩৯ লক্ষ প্রায় ১০ লক্ষ প্রায় ০৫ লাখ
নিশিতা প্রায় ২৫ লক্ষ প্রায় ০৪ লক্ষ প্রায় ০৫ লাখ

উপরের হিসাব থেকে দেখা যায়, সালমার জন্য খরচের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু তার মাধ্যমে এসএমএস এসেছে প্রায় ৭২ লাখ টাকার। এক্ষেত্রে ইউনিলিভার, মোবাইল কোম্পানি ও এনটিভির আয়ের পরিমাণ ৫৭ লাখ টাকা। (সূত্র: রিয়েলিটি শো- ট্যালেন্ট হান্ট, কোর্স-৩০৫, প্রতিবেদন ২০১০)

এছাড়া টিকারে বিজ্ঞাপন প্রদান থেকে শুরু করে পুরো অনুষ্ঠানের নামকরণে ব্রান্ডিং করে বিজ্ঞাপন দাতারা তাদের পন্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটাচ্ছে। বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ভোক্তার মধ্যে করপোরেট চরিত্র গড়ে তুলতে চায়। এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সে সৃষ্টি করতে চায় নতুন এক পৃথিবী। যে পৃথিবী শুধু তার পণ্যের কথা বলবে।

বিশ্বের সর্বত্র মুনাফামুখিতার জন্য ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বেড়ে গেছে। কোনো পুলিশি রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে এরূপ বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা মুসকিল। বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার উন্নততর উপায় হল সাংস্কৃতিক পন্য তৈরী করা যা তাদের দৈনন্দিন সমস্য থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখবে আরাম আয়েশযুক্ত জীবনের হাতছানি দেবে। আর মানুয়ের মধ্যে এই ধারনা তৈরী করবে যে মানুষ তাদের কর্পোরেটদের তৈরী করে দেয়া কাঙ্খিত স্থানে পৌছাতে না পারলে নিজেদেরই দূষবে। শোষনমূলক সিষ্টেমকে চিনতে পারবে না। ক্ষুদে গানরাজ এমন একটা সাংস্কৃতিক পন্য।


 সার্বিক পর্যালোচনায় “রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্ট”ঃ
“রিয়েলিটি শো: ট্যালেন্ট হান্ট” প্রোগ্রাম টেলিভিশনের প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেকে আবার এ ধরনের প্রোগ্রামগুলোকে অনুকরণের মহড়া বলেও আখ্যায়িত করেন। উদাহরণ সরুপ- অষ্ট্রেলিয়ার “মাষ্টার শেপ” ইন্ডিয়াতে “মাস্টার শেপ ইন্ডিয়া” নামে দ্বিতীয় সেশন জনপ্রিয়তার সাথেই প্রচার করছে। বাংলাদেশে ও শীঘ্রই এমন একটা রিয়েলিটি শো এর আবির্ভাব ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ এই ধরনের প্রোগ্রামগুলো পশ্চাত্য থেকে ধীরে ধীরে প্রাচ্য অনুসরণ করে তৈরি করছে। তবে কেবলই অনুকরণ করছে না বরং ঐ একই ধারার বা ধাঁচের অনুষ্ঠানই আমাদের সামনে তুলে আনছে। যেমনঃ ভারতীয় রিয়েলিটি শো “ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স” এর প্রথম সিজন শেষ না হতেই বাঙলাদেশে বাংলাভিশন টেলিভিশন শুরু করেছে “নাচো বাংলাদেশ নাচো” সেই একই হিপহপ, ওয়েস্টার্ণ ডান্স এর ধরন দিয়েই অডিশন পর্ব চলছে। আর এভাভে আমাদের সংস্কৃতির উপর ধুসর চাঁদর ঢাকা পড়ছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকে সমালোচনাও করেন এভাবে, “পালসার স্টান মিডিয়া” এর আদলে আমাদের দেশে শুরু হয়েছে “ওয়ালটন সেরা বাইকার” সেখানে ভারতীয় পালসারের স্থলাভিষিক্ত হলো বাংলাদেশে ওয়ালটন নামক দেশীয় কোম্পানীর মোটরবাইক। এখানে তো রিয়েলিটি শো দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করছে। তবে “ ক্লোজ আপ ওয়ান, তোমাকে খুজছে বাংলাদেশ শাহসিমেন্ট নির্মানে শ্রমিক”, “লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার” প্রোগ্রামগুলোর কথা বলতে গেলেই দেখা যায় অনুকরণ সং¯তৃতিতে আমরা কতটা অগ্রগামী পাশঅপাশি কপ্র্োেরট মিডিয়ার হাতে আমাদের কতটা বন্দী। আমাদের আজকের বিশ্লেষনের আলোকে বাংলাদেশের প্রচারিত রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলোঃ

 অনুকরণ ও অনুসরণঃ



“কন বানেগা ক্রোড়পাতি”- রিয়েলিটি শো এর জমজমাট জনপ্রিয়তার ভাগিদার হতে বাংলাদেশেও শুরু হলো আসাদুজ্জামন নূরের পরিচালনায় “কে হতে চায় কোটিপতি”- শোটি। শো এর ডেকোরেশন, প্রশ্নের ধরন, দর্শকের উপস্থিতি অংশগ্রহণ সবই “কনমবানেগা ক্রোড়পতির” অনুরূপ। এভাবেই “ক্লোজ আপ ওয়ান ” তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ, চ্যানেল আই সেরা কন্ঠ, “ওয়ালটন সেরা বাইকার” “সুপার হিরো সুপার হিরোইন” এ ধরণের বহুরুপী রিয়েলিটি শোগুলো ভারতের আদলে তৈরি হয়ে আমাদের মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত প্রচাতির হচ্ছে। পাশাপাশি “সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পাস” আমাদের দেশে এসে হয়ে গেল “ক্ষুদে গানরাজ” ভারতীয়দের মত বাঙালীরা ও শিশুদের –উপজীব্য করে রিয়েলিটি শো তৈরি করলো।

 ২. পন্যের বিজ্ঞাপন ও ভোক্তা উৎপাদনঃ
বিজ্ঞাপনের চেয়ে গেছে আমাদের গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমের সকর প্রোগ্রাম। রিয়েলিটি শোগুলো আগাগোড়াই পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরপুর। “ক্লেজ আপ ওয়ান” তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ। “লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার” “মার্কস অলরাউন্ডার” “প্যান্নি ইউ গর্ব দ্যা লুক” নামের মধ্যেই আছে পণ্যেল বিজ্ঞাপন। আর পুরো অনুষ্ঠানে পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই মিনিটের বিজ্ঞাপন। রিয়েলিটি শো এর দর্শকের কাছে পণ্যের নাম ও গুনাগুন মুখস্থ হয়ে পড়ে; তাই বাজার গিয়ে একটি বার হলেও এ পণ্যের ক্রেতা হবার ইচ্ছা তার মধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে। তাই আজ বাংলাদেশীদের ঘরে ঘরে টুথপেষ্ট হিসেবে “ক্লোজ আপ” ব্যবহার করা একটি সাধারণ বিষয়। অন্যদিকে ‘লাক্স’ সাবান এর বাজারের কাছে হেরে গেলে এরোমেটিক কিংবা তিব্বত সাবান কারণ হিসেবে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের ভূমিকা তো আছেই। এভাবে রিয়েলিটি শো প্রোগ্রামগুলো বহুজাতিক কেম্পানীগুলো পন্যের প্রচারনায় কাজ কের আর দর্শক জনপ্রিয়তা পাবার সাথে সাতে এই প্রোগামগুলো ধীরে ধীরে এ প্রোগ্রামের ভোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র অনুষ্ঠান চলাকালীন বিজ্ঞাপন বিরতিতে নয় বরং অনুষ।ঠানের সময় নীচে ফিগারে অনবরত চলমান বিজ্ঞাপন, ডানে বামে বিজ্ঞাপন আর প্রতিযোগীদের পোশাক- সাজ উপস্থাপনের সাজসজ্জার ব্রেন্ডিং বিজ্ঞাপন চলছেই। পাশাপাশি উপস্থাপক তো দুই মিনিটের অন্তর-অন্তর স্পন্সারের নাম বলেই চলছেন।

 নারী ও শিশুর পণ্যকরণঃ
বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে সকল রিয়েলিটি শো প্রচর করা হচ্ছে তার অধিকাংশেই শিশুদের কিংবা নারীকে উপজীব্য করা হয়। বিজ্ঞাপনের নারী ও শিশু, বিনোদনেও তাদের উপস্থিতি। যে কোন চ্যানেলের বিজ্ঞাপনে দেশীয় কিংবা বিদেশী বিজ্ঞাপন সবগুলোতেই তাদের উপস্থিতি। তারা বাদ যায়নি রিয়েলিটি শো এর অনুষ্ঠান হতেও।



নারী ও নারীর সৌন্দর্ডকে পণ্য করণের তাগিদেই “লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের” আগম। গত ছয় বছর ধরে তারা সুন্দরীরর জন্ম দিচ্ছে। লাইট ক্যামেরা একশানের জগতে নতুন নতুন মুখের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তাই “দুরুচিনির দ্বীপ” চলচ্চিত্রেও নতুন নায়িকার আগম; উৎস “লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার”। নতুন নায়িকার খোঁজে আমাদের মিডিয়ার কত আয়োজন। আর এমন আওেয়াজনের মধ্যেও নারীকে দিয়ে চরে পণ্যের বিজ্ঞাপন যেমন- প্রতিযোগীদের দিয়ে “লাক্স এর বিজ্ঞাপন” করা হয়, অন্যদিকে নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে প্রতিদিনই নারীকে দিয়ে আয়োজিত হয ‘ফ্যাশন শো’। নারীকে পণ্যে পরিনত করার এক নগ্ন প্রতিযোগীতা চলছে অহরত এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে। আর ফলাফলস্বরূপ কর্পোরেট মিয়িা ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জমজমাট ব্যবসা। আর এ কারণে নুতনভাবে আয়োজিত হতে যাচ্ছে “মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ”।
নারীর পণ্যকরণ শেষ হতেই মিডিয়া তাকে আবার ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে, খোঁজ শুরু করেছে নুতন মুখের। তাই অপরিণত, অর্ধশিক্তি সালমার ক্লোজ আপ ওয়ান হবার এক বছর পর যখন সে “তুমি দিওনাগো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া, তুমি অন্ধকারে বন্ধ করে যাবো মরিয়া” এমন অশ্লীল সংগীত গায় তখন সে তুমুল সমালোচিত হয় আর সরকার তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে চলছে নারীর পণ্যায়ন। অন্যদিকে বিচারকের মন্তব্য, পুরুষ বিচারক দিয়ে নারীর রূপের মুল্যায়ন সবকিছুই নারীর সত্ত্বাকে প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন করছে।

অন্যদিকে মিডিয়ার পণ্যকরণ থেকে শিশুরাও পিছিয়ে নেই। “মার্কস আলরাউন্ডার” দিয়ে যাত্রা শুরা আর এখন জমজমাটভাবে চলছে “ক্ষুদে গান রাজ”। “ওরে সম্পানওয়ালা তুই আমাদের করলি দেওয়ানা” শিশুকন্ঠে এমন গানে দর্শক শ্রোতা মাতোয়ারা। এভাবে চলছে শিশুর পন্যকরণ আর পন্যায়িত সমজে এই শিশুটি হয়ে উঠছে সম্ভব্য ক্রেতা অর্থাৎ বাড়ছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর পন্যের ভোক্তা।

 বিশ্বায়িত সংস্কৃতির সৃষ্টিঃ


আগেই আলোচিত হয়েছে এই রিয়েলিটি শোগুলো মুলত অনুকরণের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। তাই এগুলোর আধেয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তাদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। যেমন- ‘কন বানেগা ক্রোড়পতি’ এর অনুরূপ কে হতে চায় কোটিপতি-শো এর সেট থেকে শুরু করে সবই ভারতের অনুরূপ॥ আর “লাক্স চ্যারেণ আই সুপাস্টারে” প্রতিযোগীদের পেশাকা আর অনুষ্ঠানের আধেয় সবই পাশ্চাত্য। পাশাপাশি ভারতের সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পাস- এ যখন এক বাল ‘চুম্মা চুম্মা দে দে’ গানের সাথে নেচে ওঠে তখন আমাদের দেশও ‘ক্ষুদে গান রাজের’ প্রতিযোগীরা নেছে গেয়ে দর্শককে অনন্দ দানে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতির গলা টিপে ধরা হয় এই ‘রিয়েলিটি শো’ গুলোতে। এ জন্য লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগীতায় এক আমেরিকান প্রবাসী নারীকে বাঙ্গারী সুন্দরী হিসেবে উপস্থাপনের সময়ই আমাদের সঙ¯তৃতির উপর কালো থাবা পনে। পাশাপশি সবগুলো রিয়েলিটি শো এর আধেয় বিশ্লেষণ কবলে দেখা যায় এগুলোর আধেয়, বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য একই ধরনের। যেমন: অষ্ট্রেলিয়ার মাস্টারশেপ প্রোগ্রামের সাফল্যের সাথে সাথে ভারত ও একই প্রোগ্রাম তৈরি করলো, ফলে প্রতিযোগিতার ও ব্যবসায়িক স্বার্থের কাছে মিডিয়ার আধেয় ও বৈচিত্রহীন হয়ে পড়ছে। এভাে রিয়েলিটি শোর এর বিশ্বায়নের মাধ্যমে গ্লোবাল কালচারের আবির্ভাব ঘটেছে।

 ফোকাস গ্র“প আলোচনা ও তার ফলাফল ;

‘রিয়েলিটি শো ঃ ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রোগ্রামগুলো নিয়ে আমরা আমাদের বিভাগের কিছু শিক্ষর্থী নিয়ে একটি ফোকাস গ্র“প আরোচনার আয়োজন করি ।এই অংশগ্রহণকারীদেও মধ্যে ছিলেন আসমা উল হুসনা , আবু নোমান ও শারমীন আহমেদ ( ৬ ষ্ঠ সিমেস্টার) ,রেজাউল করীম ও মিসবাহ উদ্দীন আরিফ ( মাস্টার্স) এবং রেজাউল ইসলাম ( ৮ ম সিমেস্টার) । আমাদের এই ফোকাস গ্র“প আলোচনা থেকে আমি যেসব বিষয় বের করে আনার চেষ্টা করেছিলাম তা হলো ;
ক্স দর্শকেরা কি ধরনের ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম দেখে ?
ক্স ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম নিয়ে তাদের মতামত?
ক্স দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের মধ্যে গুণগত পার্থক্য কী?
ক্স ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো দেশীয় সংস্কৃতির কতটা ধারক –বাহক ?
আলোচনা থেকে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীরা ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে গানের প্রতিযোগিতাগুলোই বেশী দেখে , তবে তারা সবাই সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলোর সমালোচনা করেছে । তবে তাদেও মতে এগুলো ভারতীয় প্রোগ্রামের অনুকরণে তৈরি হয়েছে , ফলে এদেও নামকরণেও মিল দেখা যায় যেমন ; সম্প্রতি অডিশান হচ্ছে “ নাচো বাংলাদেশ নাচো নামের এক নাচের রিয়েলিটি শো এর যা পুরোপুরি “ ডান্স ইন্ডিয়ি ডান্স ’ এর অনুকরণে আর স্টানমিনিয়ার অনুকরণে “ওয়ালটন সুপারবাইক ” ।এছাড়াও অন্যান্য প্রোগ্রামগুলো দেখলেও একই প্রতিচ্ছবি দেখা যায় । এই প্রোগ্রাগুলোর আধেয়গুলো ও আনেকটা ভারতীয় । তাই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো দেশীয় সংস্কৃতির নয় বরং ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে । পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীরা একে নতুন ধারার প্রচার মাধ্যম বলে আখ্যায়িত করেছেন । কেউ কেউ এই রিয়েলিটি শো’গুলো পশ্চিমা ধাঁচে তৈরী বলে সাংস্কৃতিকভাবে আগ্রাসন করার ব্যাপারটিও রয়েছে বলে মনে করেন।



 রিয়েলিটি শো এর দর্শকের উপর মতামত জরিপ


এ অধায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন শিক্ষার্থীর কাছে রিয়েলিটি শো বিষয়ে ১৪ টি প্রশ্ন করা হয় ।যার মাধ্যমে আমরা রিয়েলিটি শো বিষয়ে তাদেও ভাবনা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছি ।
 জরিপের ফলাফল ঃ

আমাদেও এই জরিপে আমরা দেখলঅম প্রায় ৯৫% শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের রিয়েলিটি শো:ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর অনিয়মিত দর্শক , তাদেও সাথে কথা লে দেখা যায় তারা বাংলাদেশী বাদ দিয়ে ভঅরতীয় বা আমেরিকান রিয়েলিটি শো বেশি দেখে । বেশির ভাগই রিয়েলিটি শো বলতে বর্তমানে মাস্টার শেফ ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান আইডলকে বুঝিয়ে থাকে । তবে দেশীয় ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হলো ক্লোজ আপ ওয়ান, তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ ; ক্ষুদে গান রাজ ; লাক্স চ্যানেল সুপাস্টারই বেশি দর্শখগ্রহণযোগগ্যতা পেয়েছে । তবে গানের প্রতিভা অন্বেষনের প্রোগ্রামগুলোই ৩৪% শিক্ষর্থীর কাছে প্রিয় ।এক্ষেত্রে ৬০% দর্শখই দখল করেছে চ্যানেল আই ; ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুদে গান রাজ ও সুরদরিয়া এপা ওপারই শিক্ষার্থীরা বেশি পছন্দ কওে । জরিপের ফলাফল অনুসাওে ৮৫% উত্তরদাতা কেবল হালকা বিনোদনের জন্যই এই ট্যালেন্ট হান্ট শোগুলো উপভোগ কওে । বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন অনুষ্ঠান নির্মাতারা এক্ষেত্রে অনুকরণের সংস্কৃতির ধারক বাহক (৬৫%) আর এজন্য তারা ভারতীয় রিয়েলিটি শো( প্রায় ৮৯%) এর মুখাপেক্ষী ।দেশীয় সংস্কৃতির সাথে কিছুটা (৬৭.১৫% উত্তরদাতার মতে) সামজ্ঞস্যপূর্ণ এই রিয়েলিটি শোগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্য (প্রায়৭৬% শিক্ষার্থীর মত অনুসারে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬৭% শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন এই অনুষ্ঠানগুলো সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি ফেলে যার দবুণ দেশীয় সংস্কৃতি অবমূল্যায়িত হয় , আমরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হই , পণ্যেও বিজ্ঞাপনের নতুন ধারা উনোমাচিত হয় যা আমাদেও মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির পণ্যেও ভোক্তায় পরিণত কওে । তবে ৩৩.৩৩% শিক্ষার্থী মনে কওে এই শোগুলোর মাধ্যমে আমাদেও সমাজের অধুনিকায়ন তরান্বিত হচ্ছে । আশঙ্কার বিষয় হলো সুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ৭৬.৬৬%শিক্ষার্থী মনে কওে এর দরুণ নারী জাতির পণ্যায়ন করা হচ্ছে ও প্রায় ১৩% শিক্ষার্থীর মতে এ প্রোগ্রামগুলো নারীকে সৌন্দর্য চর্চায় মাতিয়ে রাখছে তাকে বলছে তার যা বর্তমান তার যতœ নিয়ে তাকে মিডিয়া মুখাপেক্ষী হতে , যা তার স্বপ্ন পূরণ করবে - নারীর বাণিজ্যকরণের কী অদ্ভূদ খেলা । জরিপ থেকে আমরা আরও দেখি ট্যালেন্ট হান্ট শোগুলো ১২.৫% শিক্ষার্থীকে এমন আয়োজনে অংশ নিতে আগ্রাহী কওে যারা কিনা নারী শিক্ষার্থী আর তারা চায় “লাক্স চ্যানেল আই সুপাস্টার ” এখানেই রিয়েলিঠি শো: ট্যালেন্ট হান্টের জয়গান । “

 তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
কালচারেল হেজিমনিঃ
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল পুজিকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিচ্ছে এমনটি নয় বরং একটি সংস্কৃতির আধিপত্র কায়েম করছে। অনেকে মনে করেন, মিডিয়া পাশ্চাত্য সং¯তৃতিকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিচ্ছে আবার অনেকে বলেন ভোগবাদী সংস্কৃতি। যার দরুন মিডিয়াগুলো পৃথিবীজুড়ে করপোরেট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভোক্তাশ্রেণী তৈরি করছে। বিশ্বায়িত মিডিয়ার আধিপত্রেল মাধ্যমে অন্যান্য উন্নয়নশলি দেশের মত আমাদের দেশেও ভোক্তবাদী সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠছে আর মারাত্মক হারে বাড়ছে পণ্যের আরাধনা। যেমনঃ আগে গ্রামবাংলায় লালন আসর জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু নোলক বাবু কিংবা বিউটি সালমার মত চরিত্র যখন “নিঃস করেছো আমায়” ভালো লাগে জোৎছনা রাতে এমন ব্যান্ড সংগীত গেয়ে ভোটের আবেদন জানায়, তখন গ্রামের সেই কৃষক মুজরুও ব্যান্ড সংগীতের গ্রাহকে পরিণত হয়। পাশাপাশি সে চিনে যায় “ক্লোজ আপ” কে। সে বাবে এ বুঝি তার ঘরের আপনজন, আড়ালে থেকে যায় বহুজাতিক কোম্পানী ইউনিলবাবেরর নাম। এভাবে নিজের অজান্তেই ‘রিয়েলিটি শো’ এর মাধ্যমে মানুষে মগজ ধোলইয়ের কাজটি ঘটে আর চর্চা হয ভোক্তা সংস্কৃতির। বাঙ্গালী পাশ্চাত্য ঢং এর গান, পোশাক াার সাজসজ্জার ভোক্তা হয়। াার এভাবে মিডিয়া যেমন বহুজাতিক কোম্পানি ভোক্তা তেরি করে তেমনি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রচার-প্রচারনায় কাজ কের। তাই আজকে গ্রামবাংলার মেয়েদের পড়নেও হরহামেশাই জিন্স টিশার্ট ফতুয়া শোভা পায়; সবই যেন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হাবার দাবিদার। এভাবে রিয়েলিটি শো গুলো বিনোদনের মোড়কে মানব মনে পন্য আর ভিন্ন স্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে, কারণ মুনাফা অর্জন। তাই ফ্রাঙ্কফুট স্কুলের তাত্তিকরা যেমন বলেন- “সংস্কৃতি আজ পরিণন হয়েছে বিশাল মুনাফা অর্জনকারী শিল্পে’ তেমনি প্রতিভা অন্বেষনের এমন সংস্কৃতি ব্যবহার করে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো মুনাফা বাড়াচ্ছে। আর এবাবে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে বি¯তৃত হচ্ছে পাশ্চাত্যের নব উপনিবেশ, চাপা পড়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্বতা।”

এভাবে রিয়েলিটি শোতে পণ্যের প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আর পর্ব। আধেয় উপস্থাপনের মাধ্যমে দর্শক মনে শূন্যতা তৈরি করে, যা তাদের পণ্যে কিনতে, পণ্যের ভোক্তা হতে আগ্রহী করে তোলে। এখানেই এ্যান্টোনিও গ্রামসির “ঞযবড়ৎু ড়ভ ঐবমবসড়হু”- র বাস্তব রূপায়ন।


বিশ্বায়ন ও বিশ্বায়িত মিডিয়াঃ
যুগটা আজ বিশ্বায়নের। আর এই বিশ্বায়নের কারণ ও ফলাফল উভয়ই মিডিয়া। মিডিয়ার কারণে পৃথিবীটা আজ ছোট হয়ে আসছে। ঘরে বসেই আজ শেখা যায় “আষ্ট্রেলিয়ার রান্নার ধরন” মাস্টার শেফ অষ্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে। আর হিন্দি গানের রমরমা গানের আসরকে উপভোগ করা যায় “সারেগামা পা” নামের ভারতীয় রিয়েলিটি শো এর মাধ্যমে। পৃথিবী ত্ াআিজ আমাদের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীজুড়ে রিয়েলিটি শো এর জনপ্রিয়তার দরুন বাংলাদেশে ও “রিয়েলিটি শো” গুলো ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকে। পশ্চিমা ধারা অনুকরণে তৈরি করা নতুন নতুন রিয়েলিটি শোগুলো আমাদের সমাজকে আজ গিলে খাচ্ছে। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ মেলে যখন ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স এর অনুকরণে বাংলাভিশন শুরু করে ‘নাচো বাংলাদেশ’ নাচো কিংবা যখন আমাদের বিচারকে দেখা যায় ভারতীয় বিচারককে অনুকরণ করতে যেমন: বিচারক হলেই যেন স্টেজে একে নেচে গেয়ে জনসাধারনকে আনন্দ দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের ব্যবহার করে বিনোদন বিশ্বায়িত গণমাধ্যমের ফলাফল।

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সত্তরটি দেশে নানা ধরনের রিয়েলিটি শো প্রচারিত হচ্ছে- সেগুলো প্রচারের ধরন, উপস্থিতি, বিচার পদ্ধতি (এসএমএসর মাধ্যমে ভোচিং করা আর প্রতিযোগিদের দিয়ে ভোটের আবেদন), বিচারকের আচরণ, উপস্থাপকের আচরণ (প্রতিদিন নুতন জিাইনের ডিজাইনার পোশাক, সাজসজ্জা আর স্পন্সারের নামের বুলি বাড়ানো) সবকিছু একই ধরণের। এভাবে বিশ্বের সর্বত্র মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত রিয়েলিটি শো এর চরিত্র এক নেই কোন বৈচিত্র। তাই ভারতীয় রিয়েলিটি শো “স্পিটসভিলা”র “ক্যাম্পফায়ার” আর “ফার্টি জন্স” সংস্কৃতির অনুকরণে আমাদের দেশেও “লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০১০” - আধেয় সাজানো হলো। আর আমরা ভারতের যে রিয়েলিটি শোর এর অনুকরণে এমন অনুষ্ঠান করছি তা আবার অস্ট্রেলিযঅর ভার্জিন আকশন এর অনুকূলে যা কিনা তরুন-তরুনীদের কুমারীত্ব বিক্রির অভিযোগ অভিযুক্ত।

আমাদের স্বদেশ আর তার দেশী সংস্কৃতি কতটা বিশ্বায়ন প্রভাবিত তা আর বুঝতে বাকি থাকে না যখন দেশীয় জারি গান সারি গান বাদ দিয়ে রিয়েলিটি শোগুলো চলে পাশ্চাত্য ঢং এর ব্যাস্ত সংগীত (জড়পশংঃধৎ প্রতিযোগীতা) আর হিপহপ নচের যাচাই-বাছাই (নাচো বাংলাদেশ নাচো)

স্পষ্টতই বিশ্বায়ন আর রিয়েলিটি শো াাজ মিলে মিলে একাকার হয়ে গেছে মানুষ গণমাধ্যমের বিশ্বায়নের ফলাফলকে পছন্দ করছে তাই সে এসএমএস দিয়ে পছন্দের শিল্পীকে বিজয়ী করছে, হতে পারে এটা তার দুর্দান্ত ভালবাসার প্রকাশ কিংবা পুরস্কার পাবার লোভ (আপনিও হতে পারেন লাকি ত্রিজতা।)

বিশ্বায়িত গণমাধ্যমে কারনে আজ বিশ্বজুড়ে রিয়েলিটি শোগুলোতে তেন কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। যদি অমাার পার ফরম্যোন্স আপনাদের এতটুকুও অভল লাগে তবে পিজ­ প্লিজ আমাকে ভোট করুন (পৃথিবীর সব দেশের সকল রিয়েলিটি শোতে ভোটিং অবেদন একই ধরনের); তারপর সুন্দরী প্রতিযোগীতাতে আধুনিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে ক্যাট ওয়াক।
এভাবেই বিশ্বায়নের তোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্বতা; তরুন-তরুনী আজ সবাই স্টার হবার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে অনুসরণ করছে পাশ্চাত্যকে। নাম নিবন্ধন, অডিশন, তারপর ইয়েস কার্ড, একবছর মিডিয়া আর গণমাধ্যম তাদের নিয়ে করলো বিদেশ ভ্রমন, তারপর সব পুরিয়ে যায়, হারিয়ে যায় সে নতুন স্টার, কিন্তু ততদিনে উদ্দেশ্য সাধিত হয় ঐ কর্পোরেট হাউজগুলোর। সারা পৃথিবী জুড়ে এই একই সংস্কৃতি।

রিয়েলিটি শো: ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার রাজনৈতিক অর্থনীতি :
রাজনৈতিক অর্থনীতি অর্থশাস্ত্রেও একটি পুরোনো নাম যা প্রথম ব্যবহার করেন আন্তুয়া দ্য মক্রেঁতিয়ে তবে পওে এই ধারনাটি মার্কসবাদীদের মতবাদে প্রভাবিত হয় যার আলোকেই গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়টি আলোচিত । ওয়েবস্টার ডিকশানারিতে গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতিকে এভাবে বলা হয ,ক্ষমতা ও মালিকানা সম্পর্কেও বৃহত্তর কাঠামোর অনিবার্য পরিণতিতে গণমাধ্যমের পণ্য তৈরিতে যে প্রভাব পড়ে, রাজনৈতিক অর্থনীতি তার নেপথ্যকে বুঝতে চায় । আর ম্যাকচেজনি বলেন , যোগাযোগের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদগণ বিজ্ঞাপন ও বাণিজ্যিক মূল্যবোধ কিভাবে মিডিয়া কনটে›টের প্রকৃতিকে প্রভাবিত কওে তার স্বরূপ উন্মোচন করে (ম্যাকচেজনি ২০০১)। এই কারণে গণমাধ্যমগুলো তাদেও কথাই বলে যারা সেখানে অর্থায়ন কওে ।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত মালিক অভিমুখী , ধনিক অভিমুখী বাজার অভিমুখী এবং সর্বশেষে পুরুষ অভিমুখী । গণমাধ্যম গবেষক রোবায়েত ফেরদৌসের মতে , বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোরভিত্তিকাঠানো যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই এর বুপরিকাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করছে ফওে গণমাধ্যমের আধেয়ও তারাই নিয়নাত্রণ করছে । (ফেরদৌস,২০০৭)।অর্থাৎ এদেশের গণমাধ্যম গণমানুষের নয় বরং বণিক শ্রেণীর , তার প্রভাব লক্ষণীয় গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানমালাতে।এ কারণেই এদেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত নতুন ধাচের রিয়েলিঠি শো প্রচার করছে কারণ এর পিছনে লুকিয়ে আছে মিডিয়ার মালিক পক্ষেও আর্থিক লাভালাভ ।যেমন আজকে আমাদেও টিভি চ্যানেলগুলোতে সুন্দরী প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি, যেমন: লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার , প্যান্টিন ইউ গট দ্য লুক , মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-সবগুলোই নতুন নারী মুখের সন্ধানে , কারণ ইউনিভার্সালের মত আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো চায় এদেশের পণ্য বাজাওে একচেটিয়া আধিপত্য। আর এর জন্য তারা ব্যবহার কওে নারীকে, তাই এই প্রতিভার খোঁজ যা আগাগোড়াই বিজ্ঞাপনের মোড়কে ঢাকা । বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য ভোক্তার মধ্যে করপোরেট চরিত্র গড়ে তুলতে চায়। এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সে সৃষ্টি করতে চায় নতুন এক পৃথিবী। যে পৃথিবী শুধু তার পণ্যের কথা বলবে।
আমার পোশাকের স্পন্সর অমুক কোম্পানিআবার দর্শকদের পুরস্কার হিসেবে বলা হয়,
উপহার হিসেবে আপনারা পাচ্ছেন অমুক কোম্পানির টুথব্রাশ কিংবা অমুক কোম্পানির টুথপেস্ট (!)।ভালো কথা, এই উপহার কিন্তু তারা ফ্রি পাচ্ছেন না। তাহলে কী করতে হবে তাদের?হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। এসএমএস কিংবা পণ্য ক্রয়।আপনার মোবাইলে এই এই লিখে আমাদের এই ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন এসএমএস। যত খুশি তত। জিতে নিন আকর্ষণীয় সব পুরস্কার আর এগুলো আপনারা পাচ্ছেন ঃএর সৌজন্যে।অজস্র এসএমএসের চাপে ফুলে-ফেঁপে উঠছে মোবাইল কোম্পানিগুলো।
আগেই বলেছি বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের গণমাধ্যম পুরুষ অভিমুখী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যে বদ্ধমূল ধারণা ‘নারীরা অক্রিয়’, তা প্রমাণ করার নতুন রূপ যেন এই শো; ফলে কেবলই তাদেও প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত হয় অভিনয় তাও আবার স্পন্সারের পণ্যের বিজ্ঞাপনে আর মডেলিং কিংবা বলা যায় কেবলই ক্যাট ওয়াক । আর বিচারকরা যখন বলেন ‘ তোমাকে নিজেকে আরও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে’ তখন সন্দেহের বাকি থাকে না আমাদের গণমাধ্যম সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চেতনাকে জিইয়ে রাখছে । এভাবে মালিকের স্বার্থ রক্ষার জন্য রিয়েলিটি শোগুলোর নতুন উপাদান আজ শিশু , প্রতিভা অন্বেষনের নামে চলছে এমন এক ধরনের ব্যবসা যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে রাতারাতি তারকা হবার স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে খুব ছোটবেলায় যা শেখা হয় বা শিখতে শুরু করে তা একটি মানুষের মাঝে অনেকদিন অমলিন থাকে, তা প্রতিভাই হোক অথবা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কোন কিছু শেখাই হোকনা কেন। কিন্ত আমরা আর ভালো করে বললে বলা যাতে পারে, কর্পোরেট দুনিয়ার হর্তাকর্তা অথবা আমাদের দেশের তথাকথিত সংস্কৃতি রক্ষার ধারক বাহকেরা ভবিষ্যত প্রজন্মটিকে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে বিপুলমাত্রায় প্রভাবান্বিত হয়ে আলোকিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

’এক বছরের তারকাখ্যাতি জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভালো গান গাওয়ার জন্যই নয়, স্পন্সরের দেওয়া টি-শার্ট পরে স্টেজে ওঠার জন্য। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীনকে বিচারক বানিয়ে তাদেরই গানের অপভ্রংশ তাদেরই সামনে গেয়ে আবার তাদের হাত থেকে তারকাখ্যাতি নেওয়ার প্রক্রিয়া বিজ্ঞাপনদাতার ফরমায়েশি আদেশে মানুষকে পণ্যের দাস বানানোর গণমাধ্যমের অভ্রান্ত চেষ্টা ছাড়া কী বলা যায়। আজকের দিনে কেউ তাই সাবিনা, রুনা বা সলিল চৌধুরী হতে চায় না; তারা চায় বিউটি, নোলক, সালমা বা সোনিয়া হতে। কারণ এ যে ‘গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে গান কপি করার’ মতো সহজে গায়কের খ্যাতি পাওয়ার রাস্তা।’

 আমাদের মতামত
এই প্রতিবেদনের কাজটি করার সময় শিক্ষার্থীও ওপর রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর প্রভাব নির্ণয়ের সময় আমার কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ টির অধিক রিয়েলিটি শো প্রচারিত হলেও রিয়েলিটি শো : ট্যালেন্ট হান্টের কথা বলতেই জনমনে প্রথম নাড়া দেয় ভারতীয় ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো। যেমন: মাস্টার শেফ ইন্ডিয়া, ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স, ইন্ডিয়ান আইডল। তারপর যখন বাংলাদেশের রিয়েলিটি শো সম্পর্কে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয় তখন ক্লোজ আপ ওয়ান , তোমাকে খুজঁছে বাংলাদেশ, ক্ষুদে গান রাজ, লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার এর নামই বের হয়ে আসে। এ থেকে বলা যায়, ভারতীয় ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলোর চাহিদা ও জনপ্রিয়তার কারণে আমাতের টিভি চ্যানেলে এ ধরনের প্রোগ্রাতের আয়েজন হয়। তাই তাতে ভারতীয় অনুষ্ঠানগুলোর প্রভাব দারুণভাবে ফুটে উঠে- স্টেজ ডিজাইন , পোশাক , সাজ সজ্জ্বা, এমনকি সিলেকশন পদ্ধতিও তাদরে অনুকরণে তৈরি হয়। অন্যদিকে, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চেতনা ফুঠে ওঠে। যেমন : বিচারক পুরুষ ( পুরুষের দৃষ্টিতে নারীর সৌন্দর্য বিচার), ক্যামেরায় নারীর উপস্থাপন - সবই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ধারক বাহক। এখানেই যেন গণমাধ্যম গবেষক রোবায়েত ফেরদৌস এর “ মেল মিডিয়া” শব্দটির সফল বাস্তবায়ন।
পরিশেষে, দেশীয় সংস্কৃদরি আধেয় দিয়ে রিয়েলিটি শোগুলো তৈরি করা হলে আর স্পন্সর হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলো যদি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বেছে নিতো তবে তা আমাদের আর্থনীতি ও সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়ক হতো বলে আশা করা যায়।










 উপসংহার ঃ

পৃথিবী থেকে উপনিবেশবাদেও বিদায় ঘটেছে বহু আগে , কিন্তু নব্য উপনিবেশ তৈরির চেষ্টায় আছে আজকের বহুজাতিক কোম্পানি । তারা চায় পৃথিবী প্রত্যেক দেশে তাদেও পণ্যেও ভোক্তা , ছোট-বড় সকল বাজাওে তাদেও আধিপত্য । আর এই জন্য প্রয়োজন প্রচার-প্রচারনা , জনগনের কাছে পণ্যেও পরিচিতি ।তাই জনমনে তড়িৎ প্রভাব ফেলার মাধ্যম হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে বাস্তবতাকে বা বাস্তবতার রূপক উপস্থাপনের আদলে তৈরি গণমাধ্যমের নতুন আধেয় “রিয়েলিটি শো”।। শোষক যেমন তার শিকারে পরিণত শোষিতের অন্তরে তার সুখ স্বপ্নটির ছদ্মবেশে নিজের নায়কসুলভ সম্মোহনী ভাবমূর্তিটি চিরঞ্জীব করে রাখতে সমর্থ হয়তেমনি বহুজাতিক সংস্থাগুলো দেশে দেশে তার শোষণের বীজকণা ঐ দেশের মিডিয়ার মাধ্যমে বা মিডিয়া প্রচারিত রিয়েলিটি শো ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে রোপন করে থাকে দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষার নামে ভোক্তা সংস্কৃতির প্রচার-প্রচারনা আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের জয়গানই এই প্রতিভা অন্বেষণের অনুষ্ঠানগুলোর মূল আধেয় ।
কর্পেরেট হাউজের আদলে তৈরি এ ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামগুলো এক নতুন সঙস্কৃতির প্রচার প্রচরণা করছে। কিন্তু এর অন্তরালে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ক্ষীনকন্ঠে আর্তনাদ করছে। এই প্রশ্নে গণযোগাযোগ ও সাঙবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন,“ জাপানের মেয়েরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ছোঁয়ায় শর্ট স্কার্ট পরছে সত্য কিন্তু লোক সম্মুক্ষে ঠিকই লজ্জ্বায় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে”। অর্থাৎ মিড়িয়া পাশ্চাত্য সংস্কৃেিতক তাদের প্রতিদিনের জীবনে জড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু মনের অন্তরালে আজো তারা নিজস্বতাকে টিকিয়ে রেখেছে। তবে এর মাঝেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো জাপানের বাজারটিকে কিনে নিয়েছে। তেমনিভাবে রিয়েলিটি শো ট্যালেন্টা হান্ট প্রোগ্রামগুলো বাংলার লালন সংগীতকে পাশ্চাত্য ঢং এ গাইয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা তৈরি করে বাড়াচ্ছে ব্যান্ড যন্ত্রাংশের বাজার। অন্যদিকে বাঙালি ললনাকে পাশ্চাত্য পোশাকে সজ্জিত করে সুন্দরী ঘোষণার মাধ্যমে বাড়াচ্ছে পণ্যেে প্রচার প্রচারণা। তাই বলা যায়, ‘ জয় হোক বহুজাতিক কোম্পানির’, ‘জয় হোক কর্পোরেট মিডিয়ার’, ‘জয় হোক পাশ্চাত্য প্রবাবিত রিয়ালিটি শো ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের ’।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×