somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মেঘে ঢাকা তারা’

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মেঘে ঢাকা তারা’ আসলে উন্মূল মধ্যবিত্ত এক পরিবারের জীবণ প্যাচালী- যা এক অবিচ্ছেদ্য চক্রাবর্তে আবদ্ধ। আর এই থিমকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ঘটক নীতা, গীতা, সনৎ, মা দাদা মন্টু বাবার মত চরিত্রগুলোর মাধ্যমে।

আর এই গল্প তথা চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রবিন্দু হলো একটি মেয়ে-নীতা। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সে সংসার চালায়, প্রথম লগ্নে তার পিতা তার সহযোগী হিসেবে আবের্ভূত হলেও ছবিটির মধ্যভাগে এসে সংসারের বোঝা নীতার উপর বর্তায়। তার এমন আত্মত্যাগ আর নিষ্ঠা একসময় আত্মহূতিতে পরিবর্তিত হয়- যখন সে দেখে তার প্রেমিক, যাকে সে ভেবেছিলো তার তওে আজীবণ অপেক্ষায় সদা প্রস্তুত এক সত্ত্বা হিসেবে সেই সনৎ যখন গীতা(নীতার ছোট বোন) কে বিবাহ করে। নির্মাতা চাইলে সনৎ কে অন্য কোন নারীর বাহুলগ্ন করতে পারতেন কিন্তু এমন এক মর্মান্তিক ট্রাজিডির রূপায়নে যথেষ্ট হতো না । ট্রাজেডি আরও ভয়াবহতা পায় আর নীতার জীবণ অর্থহীন বুদবুদে পরিণত হয় যখন নীতা বুঝতে পারে এর পেছনে রয়েছে তার মার ইন্ধন- আসলেই এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার দৃশ্যগত রূপায়ন।

ছবির শুরুতে নীতা ছিল কর্মে, উৎসাহে,যৌবনে ভরপুর এক ভাঙ্গালী রমনী আর তার এই বৈশিষ্ট্যকে রূপায়ন করতে গিয়ে নির্মাতা ক্যামেরা বন্দী করেচেন বিশাল বৃক্ষেও আলোক ছায়া, নদী স্নিগ্ধ জল, কোমল সূর্যালোক; তবে এই সবকিছু ভেঙ্গে চুরে ট্রেন এক কর্কশ ধ্বনি করে অজানায় পারি জমায়, যেমনটি ছবিটির শেষভাগে নীতার ঘটেছে। প্রকৃতির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে গলইটর রূপায়ন আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আপাত দৃষ্টিতে মেঘে ঢাকা তারাকে ত্রিভুজ প্রেমের এক নির্মম পরিণতি মনে হলেও এখানে নির্মাতা দেশবিভাগজনিত ছিন্নমূল পরিবারের টানাপোড়ন প্রতিভাসিত করেছেন। ঋত্বিক ঘটক কোন রাখঢাক না রেখেই পুরো চলচ্চিত্রে এটা বলতে চেয়েছেন এই পরিবারটি আসলে আর কিছুই নয় বরং আমাদেও বাংলা তার শরীর ভাঙ্গনের ছাপ, কন্ঠে ভাঙ্গনের সুর, হাতে ভাঙ্গনের পরিণতি দারিদ্র,চোখে ভাঙ্গনের কারণে সৃস্ট পারষ্পরিক অবিশ্বাস, দৃষ্টিতে ভাঙ্গনের কারণে সৃষ্ট স্বপ্নহীনতা, আর আছে কেবল অস্তিত্ব রক্ষার দিবারাত্রির সংগ্রাম- এসবই বঙ্গ-ভঙ্গেও অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। আর এই সবকিছুর রূপায়নে মেটাফোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে নীতার পরিবারটি।

নীতার অবক্ষয়ের ট্রেজেডিকে দেশ বিভাগের ট্রেজেডির সাথে একীভুত করেছেন ঘটক।এক ষড়যন্ত্রেও জাল দেশ বিভাগের মতো নীতাকেও টুকরো টুকরো করেছে আর ষড়যন্ত্রে রচয়িতা আপন জন কেবল সামান্য সুবিধা প্রাপ্তির আশায় !!!

পরাজিত আর বিধ্বস্ত হবার চিত্রটি আরও গভীরভাবে ফুটে ওঠে এই গানে-

যে রাতে মোর দুয়ার ভাঙলো ঝড়ে
জানি না তো তুমি এলে আমার ঘরে
গব যে হয়ে গেল কালো
ডনভে গেল দ্বীপের আলো
আকাশ পানে হাত বাড়ালাম কাহার তরে।

আর এই গানটি দর্শকের অন্তরকে ফালি ফলি করতে যথেষ্ট বলে আমার মনে হয়েছে। আর গানটি স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়া নীতার বিলাপ ধ্বনিতে পরিণত হয়।নির্মম এক কালান্তক বাসা বাধে তার শরীরে-তা হলো মৃত্যুর খোলা দরজা। দস্ত নীতা মুক্তি পেতে চায় এই নির্মম যাতনা থেকে। আঝোর বৃষ্টি রাতে সে বেরিয়ে পড়ে মহাকালের গর্ভে আশ্রয় নেবে বলে। কিন্তু বিগলিত এক কুরণা ধারা তাকে মুক্তি পেতে দেয় নি। সে হলো তার দাদা – যার গায়ক হয়ে ওঠা যে নীতার অক্লান্ত পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের ফলাফল সেই দাদার করুণা/ভালবাসা তাকে আকড়ে ধরে। সয়ংসম্পূর্ণা নীতা তথা বাংলা আজ সকলের করুণা প্রার্থী, কী অসাধারণ মেটাফোরিক রূপায়ন !!!!!!

কিন্তু জীবন মৃত্যুও সন্ধিক্ষণে দুরন্ত সেই নীতা আবার বাচতে চায় - দাদা আমি তো বাচঁতে চেয়েছিলঅম--------- আর এই দৃশ্যটির রূপায়নে নির্মাতার আবার আসাধারণ ক্যামেরার কাজ, ক্যামেরা উন্মাদেও মতো ঝাপিয়ে পড়ে প্রকৃতিতে পাহাড়ে , সবুজের মাঝে- নীতা তো এসব ধরে বাচঁতে চায়। আর এসব কিছু বর্তমার রেখে বাংলা ও বাচতে চেয়েছিলো।।

তবে চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত কেবল আত্মত্যাগ বা বিশ্বাস বিচ্যুতির গল্প হয় নি বরং অনবরত এক আশাভঙ্গের গল্পে রূপ নিয়েছে আর এই আশা ভঙ্গে ঘল্প যে কেবল কলকাতার রিফিউজি কলোনির কথকতা তা নয় বরং সমগ্র বাংলার । ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×