somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি চলচ্চিত্র পিতা

১৯ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে হচ্ছে নতুন বছর টা বাংলা সিনেমা জগতের জন্য শুভ হবে । বলার উদ্দেশ্য আছে বৈকি .. ২০১৩ সালের শুরুর লগ্নেই আমার সুযোগ হলো একটি ভাল বাংলা সিনেমা দর্শনের । ‌সত্যি বলছি একটি যর্থার্থ মুভির দেখা মিলেছে আজ হঠাৎ বলাকায় ঢু মারার বদেৌলতে। ভাবছেন নাকি ‌‌‌‌চোরাবালির কথ বলছি , না মোটেো না বলছিলাম অন্য একটি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা পিতার কথা। যারা ইতোমধ্যেই সিনেমাটি দেখেছেন তাদের অভিনন্দন আর যারা দেখেননি তাদের বলি দেরি না করে কালই চলে যান । নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আপনার সিনোমাদর্শন বৃথা যাবে না।

৭১ এর প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই মুভিতে যুদ্ধের একটি নতুন ন্যারেটিভ আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। শুরুতেই সায়নের গান এইবার এইবার আপনাকে ছবির চরিত্রগুলোর দৃঢ়তার সাথে পরিচয় করানোর চেষ্টা চালাবে যা শেষ দৃশ্যপটে বাস্তবায়িত হতে বাধ্য।

নতুন পরিচালক মাসুদ আকন্দকে রীতিমতো শ্রদ্ধার চোখে দেখা শুরু করেছি ইতোমধ্যেই- যদিও আমি তাকে চিনি না , তবে সীমিত জ্ঞান ব্যবহার করে এটা বলতে পারি তিনি ছবির প্রত্যেকটি চিত্রায়ন করার জন্য রীতিমতো গবেষণা করেছেন।
সিনেমার বিষয়বস্তু আমাদের গ্রামবাংলা, একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের যুদ্ধকালীন সময়ের পরিস্থিতি নিয়েই এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত , তবে তার নায়ক বা প্রধান চরিত্র হিন্দুদের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা এক মুসলিম চরিত্র জলিল । তার পরিধেয় বস্ত্র, তার ভাষা তার পুরো চরিত্রের প্যাকেজ দিয়ে নিমাতা মূলত মানবতার জয়গান রচরা করেছেন ।



এই চলচ্চিত্রে নির্মাতা আরো বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ কেবল এদেশের একটি প্রজন্মকে ধ্বংস করেনি বরং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তিনটি প্রজন্ম কিংবা যদি ইতিবাচকভাবে বলতে চান তাহলে বলবো এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নির্মাতা তিনটি প্রজন্মের অবস্থান থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছেন ।আর তিনি যেভাবে এক মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনটি প্রজন্মের মেলবন্ধন করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।



অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা মানেই একদল পাক আর্মি হামলা করবে মানুষ মারবে , ধর্ষণ করবে ; তারপর বাঙালীর ট্রেনিং নিয়ে এসে যুদ্ধে নামবে , যুদ্ধ শেষে নির্যাতিত নারীরা ছেড়া শাড়ি আচল ছেড়ে দিয়ে বেড়িয়ে আসবে এমন ন্যারেটিভের ইতি টেনেছে এই চলচ্চিত্র। এখানে আক্রান্ত বাঙালী সাথে সাথেই প্রতিবাদ করে (প্রতিবাদের ধরনটিও প্রশংসনীয়), নারী ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো হয়নি , মুক্তিযুদ্ধের জয়টি একান্তই আমরা বাঙালীদের এ বিষয়টিও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন নির্মাতা ।

তবে পিতা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হলো রূপকের বলিষ্ট ব্যবহার । আমাদের বর্তমার চলচ্চিত্রগুলোতে শক্তিশালী ও যথার্থ রূপকের ব্যবহার খুব কম্ই দেখা যায় ।

চলচ্চিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করেছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়; চার ভাই-বোনদের মধ্যে ছোট ছোট খুনঁসুটি গুলো খুব উপভোগ্য ছিল , বড়ভাই ১৪-১৫ বছরের সামসুর অভিব্যক্তি দারুন লেগেছে। সিনেমায় ১২-১৩ বছরের বোন লীলা একাই পুরো সংসারটার সব কাজ করে। এখানে লীলা চরিত্রে অরা আর সামসু চরিত্রে আলিফ চমৎকার অভিনয় করেছে।দারুন লেগেছে শরৎ চরিত্রে কোরায়া আর পল্লবী চরিত্রে শায়না আমিনের অভিনয়।কমলা পিসির চরিত্রে ভাল অভিনয় করেছেন শামিমা নাজনীন। ছবিতে সবচেয়ে অসাধারণ ছিল পাকিস্তানি মেজর চরিত্রে মডেল মইন এর অভিনয় , একটাই মুগ্ধ হয়েছি যে বাসায় এসে তার নাম খুজে বের করলাম ,মইনের উর্দু-ইংরেজি কথা আর অভিনয় দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ! গেরিলা সিনেমায় শতাব্দী ওয়াদুদ কে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করার সমতুল্য ।
তথাপি সব সময়ের মতো ৭১ এর যুদ্ধে নারী ছিল অবলা - অসহায় সেই ধারনায় কোন পরিবর্তন এখানেও দেখা যায় নি, আশা করছি ভবিষ্যতে কোন একটি যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে একটি নারী মুক্তিযোদ্ধার দেখা মিলবে ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×