somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওস্তাদ টান মারেন...

১৪ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাবিতে পড়ার সময় একদিন ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম৷ শীতের সুন্দর সকাল৷ সোনা রঙা রোদে ঝলমল করছে চারদিক৷ বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুখর আড্ডায় মুখর আমরা৷ এমন সময় খুব জোরে বিস্ফোরণের শব্দ৷ আমরা ভাবলাম বোধহয় আমাদের সোনা-রূপা-তামার ছেলেরা পরস্পরকে বোমা মেরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, তাই আমরা এরকম আরো বিস্ফোরণের অপেক্ষায় কান পাতলাম৷ কিন্তু দেখা গেলো ঘটনা অন্য৷ যে বিস্ফোরণের শব্দ আমরা শুনেছি, তা বোমার নয়, মানুষের মাথা বিস্ফোরণের শব্দ৷ বিস্ময়ে আমরা বাকরূদ্ধ হয়ে গেলাম৷

রাস্তায় নেমে দেখলাম কি ঘটনা৷ এক বৃদ্ধ জানালেন, তিনি ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন৷ পাশেই রাস্তায় রিকশায় বসে একাকী যাচ্ছিলো এক তরুণী৷ হঠাৎ ট্রাক এসে ধাক্কা দিলো রিকশাটাকে৷ তরুণী ছিটকে পরলো রাস্তায়৷ ট্রাকের ড্রাইভার ব্রেক কষলো প্রাণপণে, ট্রাকটা থেমে গেলো রাস্তায় পরে যাওয়া তরুণীর মাথার ঠিক পেছনটায়৷ বৃদ্ধ তরুণীকে বললেন, এই মেয়ে, তোমার কিছু হয় নি, উঠে পরো৷

তরুণী হয়তো উঠতো৷ সে নিশ্চয় আমাদের মহিলা রাজনীতিবিদ না যে রাস্তাতেই শুয়ে থাকবে৷ কিন্তু ঠিক সে মুহূর্তে ট্রাকের হেল্পার চেঁচিয়ে উঠলো, ওস্তাদ টান মারেন৷

ওস্তাদ টান মারলো৷ ট্রাকটা সোজা চলে গেলো তরুণীর মাথার উপর দিয়ে৷ আর সেই মাথা বিস্ফোরনের শব্দ পেয়েই আমরা বিহ্বল হয়ে গেছিলাম৷

আমি দেখেছিলাম সেই তরুণীর বিস্ফোরিত মাথা৷ না, সে দৃশ্য বর্ণনা করার ভাষা কারোরই নেই৷ কিন্তু সেই সে শব্দ- ওস্তাদ টান মারেন? সে শব্দ কতোবার শুনলাম এর পরে? সে শব্দে মরে গেলো বন্ধুর বোন, সে শব্দে মরে গেলো শিশু হামিম৷ আরো কতো প্রাণ ঝরে গেলো সে শব্দে কে তার হিসাব রাখে?

সম্প্রতি একই রকমভাবে মারা গেলো মটর সাইকেল আরোহী শাহিন আর তার স্ত্রী শম্পা৷ সেখানেও একইরকম কাহিনী৷ মটর সাইকেলটাকে ধাক্কা দেয়ার পর থেমে যায় বাসটা৷ আর তখনই হেল্পারের চীৎকার- ওস্তাদ টান মারেন! ওস্তাদ টান মারে, আর বাসটা চলে যায় ওদের মাথার উপর দিয়ে৷

এইসব দুর্ঘটনা, এইসব অনাহুত, অপঘাত মৃত্যু বড় করুণ, বড় দুঃখের৷ দুঃখের হলেও আমাদের এই ঠাটকাবাজির দেশে এমন মৃত্যু অহরহই ঘটে৷ আমরা দুঃখ পাই, কখনও কখনও ক্ষোভে দুঃখে কিছু গাড়ি টারি ভাঙচূর করি, আবার ভুলে যাই৷ তারপরও, যখন জানতে পারি যে দুর্ঘটনার পরও কারো বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, কিন্তু এই টান মারার ধাক্কায় তার বেঁচে থাকা হলো না, তখন কেমন জানি লাগে৷ আফসোস হয়৷ মনকে সান্ত্বনা দিই, তার নিয়তিই এমন ছিলো, তাই তার বেঁচে থাকা হলো না৷

এই সময়, এই দেশে জন্মে দিনকে দিন কেমন জানি নিয়তিবাদি হয়ে যাচ্ছি! কোথায় সেই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ? কোথায় সেই বিদ্রোহী, যার সব ভাঙচূর করার কথা ছিলো? ভগবানের বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিবার কথা ছিলো যার, সে আজ সিগারেটের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে বলে, লাভ নাই লাভ নাই৷ এইসব প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, সকলি অর্থহীন৷

শুধু যখন আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের খেলা দেখার সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, তখন না হয় কিছু ভাঙচূর করবো!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১০ বিকাল ৩:২০
১৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×