somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাশ

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আল্লাহ্‌গো...! এটা কোন জায়গা? ও মাগো...!! এটা কার লাশ?

এই জায়গাটা এমন শুনশান কেন? আচ্ছা, ওই লোকটা কে? ওনাকে জিজ্ঞাস করব নাকি, এটা কার লাশ?

-ও ভাই, এটা কার লাশ?
আরে আজব তো লোকটা এমন অদ্ভুতভাবে হাসতেছে কেন? এটা কার লাশ?

লোকটা হাসতে হাসতেই উত্তর দিলো,
-ভালোভাবে তাকায় দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন?

-মানে? কার লাশ?

-আরে বাইঞ্চোদ, এটা তোরই লাশ!! ভালোভাবে তাকায় দেখ?

-কি বলেন? আর গালাগালি করতেছেন কেন?

-মাদারচোদ, তুই মইরা গেছোস। অথচ টের পাইতেছস না! গাইলামুনাতো কি চুম্মা খামু।

-কি বলেন এইসব? আমি মারা যাই নাই তো। কবে মারা গেলাম? আরে আজব তো। বারবার এমন বিশ্রিভাবে হাসতেছেন কেন?

-আচ্ছা ঠিক আছে আপনে মরেন নাই। প্রমাণ করেন, আপনি মরেন নাই।
বলেই আবার সেই বিশ্রি হাসি।

-কিভাবে প্রমাণ করতে হবে?

-এই নেন মোবাইল। জীবিত থাকতে কেউ না কেউ তো আপনার আপনজন ছিলো, তারে ফোন দেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

কি বলে লোকটা! আমি কি আসলেই মারা গেছি? ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবতেছি, কাকে ফোন করা যায়।

-জয়ন্ত! হ্যাঁ, জয়ন্তকে ফোন দেই।

-জয়ন্তটা কে?

-আমার বন্ধু? চিলমারিতে থাকাকালীন শিশু নিকেতনে এক সাথে পড়তাম। আমি যখন চিলমারি ছেড়ে রৌমারী যাই প্রায় প্রতি মাসেই ওকে চিঠি লিখতাম। সেও, সবসময় চিঠির জবাব পাঠাতো।

-আচ্ছা। কোথায় থাকেন উনি?

-ঢাকায় থাকে। একটা টিভি চ্যানেলে কাজ করে।

-ঢাকায় থাকে? তাহলে তো প্রায়ই আপনার সাথে দেখা হইতো তাইনা। আপনিও তো ঢাকাতেই কাজ করতেন।

-না, ঢাকায় কোনদিন দেখা হয় নাই। ফেসবুকের মাধ্যমে ওর খোঁজ পাইতাম। কিছুদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম ওর গলায় একটা অপারেশন হইছে। এখন মনে হয় সুস্থ আছে।

-মনে হয়? আপনার কাছের বন্ধু! একসাথে ঢাকায় ছিলেন!! অথচ, জানেনই না, অপারেশনের পর তার বর্তমান অবস্থা কি? আবার, তাকেই ফোন দিতে চাচ্ছেন। আপনার মারা যাওয়ার খবর সে জানবে কোন দুঃখে!

-আচ্ছা বাদ দিন। রুবেলকে ফোন দেব! রুবেল আমার হাইস্কুলের বন্ধু, ডাক্তার। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে আছে?

-ডাক্তার মানুষ। আপনার ফোন রিসিভ করবে তো?

- ঠিকই বলেছেন। ব্যস্ততার কারনে সে এখন প্রায়ই ফোন রিসিভ করতে পারে না। খুবই ব্যাস্ত থাকে। ইদানীংতো, ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিলেও তিনদিন পর সিন করে। হুম, শুধু সিন করে। তিনদিন আগের বাসি ম্যাসেজে রিপ্লাই দেয়ার দরকার হয়না। তাই, রিপ্লাইও দেয় না।

-এমন কেন? আপনার না কাছের বন্ধু।

-আসলে সে ডাক্তার হওয়ার পর, আমার আশেপাশের যে কোন কারও ডাক্তারি কোন সমস্যা হলেই ওকে ফোন দিতাম। বেচারা হয়তো এ কারনেই বিরক্ত। আমার আজাইরা সময় থাকলেও সে আজাইরা সময় কই পাবে? সুমিকে ফোন দেয়া যেতে পারে। সুমিও আমার হাইস্কুলের বন্ধু।

-শেষ কবে কথা হয়েছে সুমির সাথে?

-মনে নাই। ওর কোন খবরও জানিনা। কেমন যে আছে? আচ্ছা, এক কাজ করি শোয়েবকে ফোন দেই। ময়মনসিংহ ক্যান্ট পাবলিক কলেজে এক সাথে পড়েছি। সে আমার খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড।

-শিওর তো?

-হুম শিওর। কিন্তু, শোয়েব তো আবার ফ্রিল্যান্সিং করে। গতকাল সারারাতই হয়তো অনলাইনে কাজ করেছে, এখন ঘুমাচ্ছে। দিনের বেলা ওকে ফোন দেয়া কি ঠিক হবে? ফোন দিলে হয়তো ফোনই রিরিভ করবে না?

-তাহলে?

-আতাউলকে ফোন দেয়া যায়। আতাউল, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার খুব কাছের বন্ধু ছিলো। এখন ইংল্যান্ডে আছে। পিএইচডি করতেছে?

-ইংল্যান্ডে এখন কয়টা বাজে জানেন? আপনার এই বন্ধুও নিশ্চই ঘুমাচ্ছে। অন্য কেউ আছে?

-তরু, ভার্সিটিতে সেও আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল।

-তরু? আপনার বন্ধু ছিল?

-আচ্ছা বাদ দিন। বন্ধু-বান্ধবীর বাইরে কারও নাম বলি? শাপলা আপু, স্কাউটিং এ আমার মেন্টর ছিলো। আরে, উনিও তো অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। অস্ট্রেলিয়ায় এখন কয়টা বাজে? নিলাকে ফোন দেয়া যায় না। ক্যাম্পাসের ছোটবোন। দুনিয়ার সবাই ভুলে গেলেও, নিয়ম করে প্রতি বছর সে আমার বার্থডেতে উইশ করে। একসাথে কম্পাসের হয়ে থিয়েটারে কত কাজ করেছি। সে তো আবার মেজিস্ট্রেট হয়ে গেছে। সে কি এই সময় ফ্রি থাকবে? ম্যাজিস্ট্রেটদের কত কাজ। কি করা যায়?

-আপনি বাদ দিন। একটা আস্ত জীবন পেয়েও, আপনি একটা আপনজন বানাতে পারেন নাই। বলতে পারবেন, শেষ কবে আপনি আপনার আপনজনের খোঁজ নিয়েছিলেন। কবে তারা আপনার খোঁজ নিয়েছে। এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন, আপনি মারা গেছেন। ভালো হইছে? এই বালের জীবন নিয়ে বেচে থেকেই বা আপনি কি করতেন?

-আমি মারা যাই নাই? আমি এই অসময়ে মারা যাব কেন?
আরে, আবারো সেই বিশ্রী হাসি শুরু করেছেন। চুপ করেন! আল্লাহ্‌র দোহাই লাগে চুপ করেন!!

বিশ্রী হাসিটা কানের সামনে বেজে চলছে তো চলছেই। আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। একটু পর চোখ খুলে দেখি, চারপাশে সব কিছু অন্ধকার। আমি চোখে কিছু দেখতেছিনা। শুধু অসহ্য যন্ত্রণায় হাসির শব্দটা একদম আমার পাশে বেজেই চলছে।

এতক্ষণ কি এটা স্বপ্ন ছিলো? আর এই হাসির এলার্ম-টোন! বালিশের পাশে রাখা মোবাইলে বাজতেছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে এলার্মটা বন্ধ করলাম। আছাড় দিয়ে মোবাইলটা ভেংগে ফেলতে ইচ্ছা করতেছে।

গল্পের পেছনের গল্পঃ
আমার বউ-ছেলে গতকাল গ্রামের বাড়ি গেছে। বাসায় আমি একা। গতকাল রাতে টিভিএফ পিচার-২ শেষ করে অনেক রাতে ঘুমাতে গেছি।
বাইঞ্চোদরা, সিরিয়ালে এতো এতো গালি দেখাইছে, মাথার ভিতরে খালি গালিই ঘুরতেছে।
আমি সহ আমার কাছের সবাই নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যাস্ত আছি। এর মানে এই না যে আমরা মারা গেছি। আমরা সবাই বেচে আছি। এই বালের স্বপ্নের কোন মানে নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×