somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বয়স

০৩ রা জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"এই ছেলে, তোমার এস.এস.সি কত সালে?"
আমি কিছুটা রাগ করেই ছেলেটাকে জিজ্ঞাস করলাম।
যমুনা ফিউচার পার্কে গেছি মোবাইলের কভার কিনতে। দোকানদার ছেলেটা দাম চাইলো ৪০০ টাকা। আমি ওকে বললাম, এগুলোর দাম তো ১৫০-২০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না।
উত্তরে সে বললো, "আংকেল, এর চেয়ে কম দামে পুরা মার্কেটের কোথাও পাবেন না। আপনি মুরুব্বি মানুষ, হুদাই এত কস্ট করে না ঘুরে, এটাই নিয়ে যান!"
আমি মুরুব্বি মানুষ মানে! ছেলেটার আর আমার বয়সের পার্থক্য কি খুবই বেশি!! মনে তো হচ্ছে না!!! থাপরায়ে ওর দাঁত ফেলে দেয়া উচিত না!!!!
বয়স বোঝার জন্য, আমি ওকে ওর এস.এস.সি কত সালে জিজ্ঞাস করলাম।
সে বললো, "২০১০ সাল।"
ছেলেটা আমার চেয়ে মাত্র পাঁচ বছরের জুনিয়র!!
বাসায় ফিরে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে নিলাম। বয়স কি হঠাত করেই অনেক বেড়ে গেছে? চেহারা দেখে অবশ্য তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু মন তো মানতে চাচ্ছে না??
গত রমজানে, আল্লাহ তায়া’লা প্রথমবারের মত ওমরাহ হজ্জে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমাদের হজ্জের কাফেলায় (গ্রুপে) বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা ছিলেন।
কাবা ঘর তাওয়াফ করার সময় এইসব বৃদ্ধ মানুষ গুলোর, আমাদের সাথে তাল মেলাতে কস্ট হচ্ছিলো। আবার, মাঝে মধ্যেই একুশ জনের দল থেকে দুই, একজন হারায় যেত!
"হারায় যেত" শব্দটা বলাটা বোধয় ঠিক হলো না। আলহামদুলিল্লাহ, লাখো মানুষের ভিড়ের মধ্যেও, মক্কা মদিনায় কেউ হারায় না। কেউ সাময়িক সময়ের জন্য দলছুট হলেও, আল্লাহর কুদরতে একটু পর ঠিকই তাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
"আল্লাহর কুদরতে" শব্দটা কেন ব্যবহার করলাম? এটা বোঝানোর মত ভাষা আমার জানা নাই।
হজ্জের সম্পুর্ণ জার্নিটাই ছিলো স্প্রিচুয়াল, আল্লাহর কুদরতে ভরা। যা শুধুমাত্র অনুভব করা যায়। স্প্রিচুয়াল এই ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করার মতো ভাষা কি আসলেই আছে?
যাহোক,
যেহেতু আমাদের দলের মুরুব্বিদের, আমাদের সাথে তাল মেলাতে কস্ট হচ্ছিলো। আবার মাঝে মধ্যেই ওনারা দলছুট হতেন।
আমি মনে মনে ভাবতেছিলাম, "এইসব মুরুব্বিরা হুদাই হজ্জে আসে! হজ্জে আসবে ইয়াং পোলাপান!! তাহলে শান্তি মতো সবাই ইবাদত করতে পারবে!!!"
হেরা পর্বতের গুহায় যেদিন ভিজিট করতে গেলাম।
আমাদের মধ্যে যাদের আগের অভিজ্ঞতা ছিলো এখানে যাওয়ার (আমাদের দলের অনেকেরই একাধিকবার আল্লাহর মেহমান হওয়ার সুযোগ হয়েছে)। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৯০ ফিট উচু, ১৭৫০ ধাপ সিড়ি পার হয়ে উপরে উঠতে অনেক কস্ট হবে।
আমি যেহেতু ছাত্র জীবনে সবসময়ই স্কাউটিং করেছি। বেশ কয়েকটা এডভেঞ্চার ক্যাম্পে, পাহাড়-পর্বতে থেকেছি, ট্রাকিং করেছি। আমি ওনাদের কথার কোন পাত্তাই দিলাম না।
যাহোক, রমজান মাসে রোজা রেখে, দুপুর বেলা যখন ওঠা শুরু করলাম, কিছুদুর ওঠার পরই মনে হচ্ছিলো, এই পর্বতে উঠাটা এতটা সহজ হবে না।
আরো অনেক্ষন উঠার পর, যারা উপর থেকে ফিরে আসতেছিলো তাদের জিজ্ঞাস করলাম, "আর কতদুর আছে ভাই?"
উত্তরে ওনারা বললেন, "সবেমাত্র তিনভাগের এক ভাগ শেষ করেছেন। কিন্তু সমস্যা নাই, উপরে যান, এই কস্টের প্রতিদান পাবেন।"
যাহোক, উপরে উঠার পর, সত্যিই মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেছিলো। অনুভূতি ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার জানা নাই।
নিচে নামার সময় বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছিলো, আচ্ছা বয়স কি আসলেই বেড়ে গেল নাকি?
আমাদের কাফেলার মুয়াল্লিম ভাই (গ্রুপ লিডার), মক্কা-মদিনায় বিভিন্ন যায়গায় যাওয়ার আগে বলে দিতেন, "এই যায়গায় আল্লাহ তায়া’লার দোয়া কবুলের ওয়াদা আছে। সুতরাং, আপনারা মন খুলে যার যা নেক চাওয়া আছে চেয়ে নেন।"
আরাফার ময়দানে যেদিন যাই। মুয়াল্লিম ভাই দোয়া করতে বললেন।
আমরা সবাই যার যার মতো দোয়া করতেছিলাম। আমাদের গ্রুপের একজন বৃদ্ধ মহিলা আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিলো। উনি পাগলের মতো ডুকরে ডুকরে কান্না করতেছিলেন। দোয়ায় বলতেছিলেন, "আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও। জীবনে জেনে না জেনে অনেক পাপ করছি। সেগুলো শোধরানোর আর কোন সুযোগ নাই। এই বয়সে এসে তোমার পছন্দমত আমল করবো সেই শক্তিও আমার নাই। অল্প বয়স্কদের মত আবার/বারবার তোমার পবিত্র ভুমিতে এসে মাফ চাওয়ার সুযোগও হয়তো আর হবে না। তাই তুমি আমাকে মাফ করে দাও। তুমি এইবার মাফ না করলে আমার আর কিছুই করার নাই। মাফ করেই দাও, আল্লাহ মাফ করে দাও।"
আমি অবাক হয়ে ওনার কথা গুলো শুনতেছিলাম। আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি কি আদৌ এই বৃদ্ধর মত আবেগ আর আন্তরিকতা নিয়ে হজ্জের কাজ গুলো করতে পেরেছি। ইয়াং ছেলে মেয়েদের কারো পক্ষেই কি এই এমন আবেগ নিয়ে দোয়া করা সম্ভব??
এমন আবেগ দিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হলে আমাদের তো এই বৃদ্ধ বয়সেই হজ্জে আসতে হবে, তাইনা!!
আমি মনে মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলাম। "আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও। বার বার তোমার ঘরের মেহমান হওয়ার সুযোগ দিও। প্রত্যেক মুসলমানকে অন্তত একবার হলেও তোমার ঘর তাওয়াফের জন্য কবুল করো। যত বৃদ্ধ মানুষই হোক তোমার ঘরে এসে মাফ চাওয়ার সুযোগ দিও।"
গল্পের পিছনের গল্প:
মক্কা মদিনায় কাটানো প্রত্যেকটা সময় আল্লাহ তায়া’লা এত এত নিয়ামত দেখিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে একটা গল্প লেখার ইচ্ছা ছিলো। লেখা শুরুর পর কখন গল্পটা অন্যদিকে মোড় নিলো খেয়াল করি নাই।
তাছাড়া কেন জানি মনে হচ্ছে, সেই অনুভূতি গুলো, বলে বা লিখে ১০% ও প্রকাশ করা সম্ভব না।
একটা কথা শেয়ার না করে পারছি না,
মক্কা মদিনায় থাকার সময় আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি, হজ্জ করতে আসা প্রত্যেকটা মানুষই ব্যস্ত ছিলো নিজের জন্য দোয়া করতে।
আল্লাহ তায়া’লা তাকে মাফ করলেন কিনা? তার দোয়া কবুল করলেন কিনা? এই চিন্তায় ছিলো প্রত্যেকে পাগল।
পাশেরজন নামাজে কিভাবে দাঁড়ালো, কোথায় হাত বাঁধলো, কয় রাকাআত নামাজ পড়লো, আমিন জোরে না আস্তে বললো এগুলো দেখার সময় কারোরই ছিলো না।
অথচ দেশে ফিরে দেখি, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ব্যস্ত অন্যের ভুল ধরা নিয়ে। ভাবখানা এমন, জান্নাতে তার জন্য একটা সিট বুক করাই আছে, এখন তার একমাত্র দায়িত্ব হলো অন্যদের ভুল ধরিয়ে দেয়া। আপনি এভাবে নামাজ পড়তেছেন কেন? আপনার তো নামাজই হবে না!!
আমাদের দেশের মানুষ গুলোকে কি বলবো, আজব নাকি কিউট!!!
আরেকটা কথা, মন মানতে না চাইলেই কিছু করার নাই। আমাদের এই বয়সটাই অদ্ভুত। বুড়া হয়তো হই নাই, কিন্তু এখন আর বাচ্চাও নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস সরকার- অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫০

ইউনূস সরকার –অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?
আজকের বাংলাদেশ এক অস্থির, আতঙ্কিত ও শোষণমুখর সময় পার করছে। রাজনৈতিকভাবে যে সরকার বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায়, তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ‘অন্তবর্তীকালীন’ সরকার হিসেবে। আবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৮০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৬



প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন খুব সাহসের একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি এবং তোমার মা সাতার জানি না। তুমিও সাতার জানো না। বিকেলে আমরা তূরাগ নদীর পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। তোমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ১৬ বছরে রাজনৈতিক স্পেস না পাওয়া জামায়াতের এমন সমাবেশ ‘অবিশ্বাস্য’:

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯





বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আজকের জাতীয় সমাবেশকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি মনে করেন, এ সমাবেশ বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউ আর সুনামির ঢেউ আলাদা

লিখেছেন অপলক , ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১



সব কিছু একটা রিদমে চলে। সেই রিদম ভেঙ্গে গেলে ধ্বংস বা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র একটা সমন্বয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

“নুহাশ পল্লীর যাদুকর“

লিখেছেন আহেমদ ইউসুফ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

এইখানে শুয়ে আছে স্বপ্নের কারিগর
আবেগের ফেরি করে, হৃদয়ে ঝড় তুলে
থেমে গেছে এক যাদুকর।
নুহাশ পল্লীতে মিশে আছে একাকার।

হিমুর চোখে জল, মিসিরের শোকানল
শুভ্রর শুদ্ধতা, রুপার কোমল মন,
আজও ঠিক অম্লান।

হাজারো ভক্তের মনে
মিশে আছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×