(১)চলো আজ রাতটাকে দেই ঘুম পাড়িয়ে
আর জাগিয়ে তুলি সন্ধাতারা আর সান্ধ্যপ্রদীপগুলোকে
একমুঠো হাসনাহেনার সুবাস ছড়িয়ে তোমার চারপাশে
নীলমোমটার নিভুনিভু আলোছায়ার লুকোচুরি আর
একটুখানি মাদকতার ছোঁয়াভরা কফির চুমুকে
শান্ত করে দিয়ে নগরীর সমস্ত কোলাহল
চোখ হারাবে ওই কালোচোখের গভীরে
সময়ের ঘড়িটার পায়ে পরিয়ে বন্দিত্বের শেকল
জানা হবে সব না বলা কথা
নিমিষেই মিলিয়ে যাবে সব বিষন্নতা
আর তৈরী হবে স্বপ্নের মায়াজাল
চোখের পাপড়ির ব্যালকনিতে..................
(২)সময়টাকে যদি এখানেই থামিয়ে দেয়া যেতো
মোহনীয় সে মুহূর্তটাকে ফ্রেমে বন্দী করে
একান্তই নিজের করে রাখা যেতো
যখন তোমার নিকোটিনে পোড়া ঠোঁটে প্রথমবার
এক চিলতে হাসি ফুটেছিলো আমার কারণে
হাজারো শব্দ হার মেনে মুখ থুবড়ে পরে যাচ্ছিলো
তোমার উচ্ছ্বাসিত কন্ঠের এক একটা কথার সামনে
যেন অমাবস্যার ছায়াটা দূর হয়ে গিয়েছিলো একেবারেই।
বিষাদের কালো ছায়াটা এসে ঘিরে ফেলার পূর্বেই
এই ক্ষণটাকে যদি নিশ্চল করে রাখতে পারতাম
কিন্তু তা আর হলো কই??
সময় বয়ে গেলো আর স্রোতের মতোই সাথে নিয়ে গেলো সব
আর আমি?? চেয়ে চেয়ে দেখলাম শুধু
শূন্যদৃষ্টি মেলে, উদাস নয়নে........................
(৩)আজকে ইচ্ছেগুলো সব বন্দী অদৃশ্য এক কারাগারে
মুক্ত হাওয়ার স্বাদ নিতে চায় তেষ্টায় শুকিয়ে যাওয়া ভেতরটা
তবুও অনুমতি মেলে না বালিকার ক্ষণিকের জন্যেও
মোটা জানালার গ্রিলটাকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে
বালিকার শান্তদৃষ্টি স্থির হয় ঐ উড়ন্ত শালিকটা
অথবা ডানামেলা শঙ্খচিলটার পানে
আহা! মুক্তির স্বাদটুকু, আনন্দটুকু মনে হয়
অধরাই থেকে যাবে চিরকাল...........
(৪) আমার যদি থাকতো একটা রূপালি কাঠি তাহলে-
প্রতিটি নিঃশ্বাসের মধ্যেও তোমার নামটা লিখে দিতাম
অস্তিত্বকে করে বিলীন তোমার মাঝেই নিজেকে খুঁজে নিতাম
ভয় পেলে তোমার ছায়াতেই পরম নির্ভরতায় লুকিয়ে যেতাম
তোমার মুগ্ধদৃষ্টিকে শুধুই নিজের সম্পত্তি করে নিতাম
তোমার সব ভাবনাগুলোতে আমার স্বাক্ষর করিয়ে দিতাম
যখন অনেক পিপাসার্ত আর অশান্ত হয়ে যাবে মন
তোমার ভরাট কন্ঠ দিয়ে করে নিতাম সমস্ত তৃষ্ণা পূরণ
হাজারটা বাহানা আর অজুহাত বানিয়ে নিতাম
তোমার কিছুটা সাহচর্য পাবার লোভে
আর চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়ার অভিলাসে ।।
মিনিট সেকেন্ড আর ঘন্টার ছকেবাঁধা সময়টুকু
এভাবে স্রোতের মতই পেরিয়ে যায়
আর এ এলোমেলো কথার মালাগুলো
অদৃশ্যমান ডায়রীতেই বন্দী থেকে যায়..................
(৫) আবারো একটি অসমাপ্ত কবিতা
যার ব্যক্ততার ভাষা শুধুই মৌনতা
একট অসহায় চোখের কাতরতা
অথবা হঠাতই নেমে আসা নিস্তব্ধতা
আবারও একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস
জানান দিয়ে যায় অজানা ঝড়ের পূর্বাভাস......
(৬) ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা সময় শেষে
নগরীর শেষ সোডিয়াম বাতিটিও যখন নিভে অবশেষে
ঘুমন্ত নগরীর শব্দহীন জমাট কালো রাত্রির মাঝে
ঘোর লাগা দুটো চোখের নিশ্চুপ দৃষ্টি আজ
হারিয়ে যায় বারান্দার ওপারে দূরের আকাশপানে
পথ চলতে চলতে হঠাত ছিটকে পরা আকাশের ওই
অসংলগ্ন উল্কাটির গতিপথের মতোই
আবাসহীন ভবঘুরে আর শেকলহীন জীবনটা
আজো বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকে।
আর এপাশে, একজোড়া কাতর দৃষ্টি
গুমরে মরে মুক্তির আশায়
বারান্দার এপাশে, সবার অগোচরে..................
(৭) পেন্ডুলাম দুলিয়ে ঘড়িটা জানান দিয়ে গেলো সময় ফুরোনোর কথা
একরাশ ধোঁয়া ছড়িয়ে ঊষ্ণতা হারালো একের পর এক কফি
রোজকার মতো পাপড়ি ছড়িয়ে বিদায় নিলো লাল গোলাপগুলো
কোলাহল হারিয়ে নিষ্প্রাণ হলো একের পর এক আলোকনগরী
এভাবে শেষ হলো একে একে শেষের সব মুহূর্তগুলোও
মুখোমুখি বসে অনেক অনেক কথা বলা হয়ে গেলো
সেই ঘাসফড়িংটার গল্প, সেই ডানাহারানো মৌমাছিটার গল্প
পীচঢালা পথে পরে যাওয়া ভাঙা কাঁচের নীলচুড়ির টুকরোগুলোর গল্প,
সব বলা হলো কিন্তু শুধু বলা হলো না
বহুকালের খুব চেনা দুজন মানুষের অচেনা হওয়ার গল্পটা.............................
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৩