somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধূসর গল্প

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল মাত্র সাড়ে ছটা...
বালিশের পাশে রাখা ফোনটা বড্ড বিরক্ত করছে। ঘুমে আধ ভেজা চোখে ফোন টা হাতে নিলাম। নাম্বার টা পরিচিত নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিসিভ করলাম... X(X(
ঘুম ঘুম কণ্ঠ জড়িয়ে বললাম... হ্যালো।
অপর পাশ থেকে নারী কণ্ঠ ভেসে আসলো...
ঃ শুভ সকাল।
ঃ ধন্যবাদ। আপনাকে ঠিক চিনলাম না?
ঃ কথা বলার জন্য চেনা কি খুব দরকার।
ঃ আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।
ঃ ঠিক আছে কথা বলার দরকার নেই।
হালকা হাসির শব্দ। মেয়েটি ফোন কেটে দিলো। আমি পুরুপুরি জেগে উঠলাম। বিছানায় বসে ভাবতে লাগলাম মেয়েটি কে...?
আবার চোখে ঘুম জরিয়ে এল। ভাবলাম মেয়েটি কে তা আমি জেনে কি করব। তাই আবার ঘুমের দিকে মনোযোগ দিলাম।B-)B-)


আমি একটি গাড়ির সো রুমে হাঁটছি। হঠাৎ সো রুমের মালিক এগিয়ে এল।
আমার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকাল। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে গেল।
হঠাৎ সে হাসি মুখে বলল স্যার আপনি আমাদের লাকি বিজয়ি। তার পর একটা অডি আর-৮ এর চাবি দিয়ে বলল এই গাড়িটি আপনার। আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম।
গাড়িটা কোথায় গেল। ওহ দুর শালা স্বপ্ন ছিল ওইটা। খুব বাজে স্বপ্ন। :P:P
বিছানায় বসে মাকে ডাকলাম। মা চা কই...?
আমি উঠলাম। বাথরুম এ গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম মা চা দিয়ে গেছে। চায়ে মাত্র চুমুক দিয়েছি, দেখলাম ফোন বেজে উঠল। এসএমএস।
"এখনও ঘুম থেকে উঠেন নি? ভার্সিটি তে যাবেন না?"
আমি বিরক্ত হলাম। সেই নাম্বার টা।
কল করলাম। নাম্বার টা বন্ধ।
মনে করতে চেষ্টা করলাম সকালের মেয়েটির স্রর পরিচিত কিনা। চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না কার।
নিশ্চয় কেঊ দুষ্টামি করছে।
বিরক্ত হয়ে ভার্সিটির জন্য বের হলাম।

এমনি মেজাজ খারাপ তার উপর সিঁড়িতে পথ আগলে বসে আছে সিমি।
আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। X((X((
এই মেয়েটিকে দেখলে আমার গা জ্বলে যায়। সাত বছর ধরে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে আছি তবু এই মেয়ের সাথে কোন ভাল সম্পর্ক হয়নি। একে দেখলে মনে হয় সবসময় আমার বিরুদ্দে কোন না কোন ষড়যন্ত্র করছে। কেন মনে হয়,কারনটা বলি, যে দিন এই বাসায় এসেছে তার পর দিনের ঘটনা। আমি নিচে ক্রিকেট খেলছি। কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ আমার মাথায় উপর থেকে কিছু পরল। উপরে দেখলাম সিমি মায়লার ঝুড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মেজাজ টা এত খারাপ হল বলার মত না। হাত থেকে বেট ছুরে মারলাম। কিন্তু আমার নিশানা ভালো না তাই লাগলো না। সিমি দাড়িয়ে ভেংচি কাটল আর আমার বেট নিয়ে চলে গেল। বিকালে মাকে এসে বিচার দিলো আমি নাকি বেট ছুঁড়ে মেরেছি ওর দিকে। আর কি আমার নয় দিন খেলা বন্ধ। তার পর থেকে এসব চলছে রুটিন করে। সুযোগ পেলে সে আমার বারটা বাজানোর চেষ্টার ত্রুটি রাখেনা। আর আমিও সুযোগ পেলে তেরটা বাজিয়ে ছাড়ি। ;););)

আজ বদ মেয়েটা আমার পথ আগলে বসে আছে। বসে বসে মোবাইল টেপাটেপি করছে। একবার আমার দিকে দেখল কিন্তু সরলো না। আমার মেজাজ ১৮০ ডিগ্রি তে ফুটতে শুরু করল।
আমি বললামঃ এই সিমির বাচ্চা এইখানে বসে থাকলে মানুষ যাবে ক্যামনে ?
সিমি বললঃ মানুষ ক্যামনে যাবে এইটা আমি কি করে বলল। এইটা তো মানুষ জানে।
ঃ সিমি এইটা বসার জায়গা হইল? সইরা বস।
ঃ সুন্দর করে বল। তাইলে বিবেচনা করে দেখব।
ঃ সিমি উঠ নাইলে থাপ্পড় খাবি।
ঃ বল সিমি আপু একটু উঠবে...?
আমি কিছু না বলে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রইলাম। চোখ থেকে আগুন বের হওয়ার যদি কোনো উপায় থাকতো তাহলে সিমি এতক্ষণে কাবাব হয়ে যেত।
আমার রক্ত চক্ষু দেখে সিমি কিছু না বলে উঠে গেল। আমি হাল ছেরে বাঁচলাম।

কাকুর দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম রনি এসে পাশে বসলো।
রনি পকেট থেকে এক বেনসন বের করে জ্বালাল। একটা সুখ টান দিয়ে বলল, দোস্ত দিনের ফাস্ট বিড়ি। সারা সকাল বিড়ি খাই নাই।
আমি জিজ্ঞাস করলাম কেন?
ঃআর কইসনা দোস্ত। অর্পার লগে থাকলে বিড়ি ছুইতেও দেয় না।
ঃ আগেই কইছিলাম শালা প্রেম কইরা মাইনকার চিপায় পরিস না। এখন বোঝ ঠেলা।
ঃ কিতা করন দোস্ত।
ঃ কিছু করার নাই বিড়ি ডা দে। B-)B-)
এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল। এসএমএস।
" কি করেন? ক্লাস কেমন হল? মন ভালো হয়েছে?"
রনিকে মোবাইল দিয়ে বললাম, নাম্বারটা দেখ চিনস কিনা?
রনি এসএমএস দেখে বলল, মামা তুই প্রেম করতাছস আর আমি জানি না। যা তর লগে আমার দোস্তি খতম।
আমি বললাম,শালা এই নাম্বার টা চিনস নি ক। এই নাম্বার থাইকা একটা মাইয়া বিরক্ত করতাছে।
ঃ তরে আজকাল মাইয়া ও বিরক্ত করে। আগে জানতাম পোলারা মাইয়ারারে বিরক্ত করে।
এমন সময় আব্রার এসে বসলো। রনি বলল আব্রার জানছনি আমগোর পার্থরে আজকাল মাইয়ারা বিরক্তও করে।
আব্রার বলল মামা মাইয়াডা কে?
আমি বললাম সেইডা তো আমার ও প্রশ্ন, মাইয়া ডা কে?

রাত প্রায় সাড়ে আটটা। ছাদের গ্রিলে বসে আছি। হাতে একটা জ্বলন্ত বেনসন। কানে হেড ফোন দিয়ে গান শুনছিলাম। ফোন বেজে উঠল।
সেই অপরিচিত নাম্বার। বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম।
ঃ হ্যালো আপনি আবার ফোন করেছেন।
ঃ বেশি বিরক্ত করছি?
ঃ হ্যাঁ।
ঃ কিছু করার নাই আপনি ও আমাকে বিরক্ত করছেন।
ঃ মানে কি? আমি কি ভাবে আপনাকে বিরক্ত করছি?
ঃ সেটা আরেক দিন বলব
এটা বলেই ফোন কেটে দিলো। আমি কল করলাম। নাম্বার অফ। আমি অস্বস্তি নিয়ে বসে রইলাম।
ঃ কার সাথে কথা বলছিলি?
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সিমি দাড়িয়ে আছে।
ঃগার্লফ্রেন্ড? সিমি প্রশ্ন করল।
ঃসিমি যা তো বিরক্ত করিস না।
জানি সিমি যাবে না। গেলও না। দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
ঃ পার্থ সিগারেট টা ফালা। আমার সিগারেটের গন্ধে বমি আসছে।
ঃ তাইলে দুরে যা এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?
ঃ না যাব না। তুই ফালা।
সিমি একটু পিছিয়ে গেল। হঠাৎ সিমি বমি করা শুরু করল। আমি দৌড়ে গেলাম। সিমি পরে যেতে লাগলো। আমি সিমিকে ধরলাম। সিমিকে নিচে নিয়ে সিঁড়ি তে দিয়ে এলাম। সিমি কিছু বলল না। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ওই দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল। কিন্তু কি ছিল আমি বুঝতে পারলাম না। শুধু মনে হল এ দৃষ্টি যেন আমার বুকের পাজর ভেদ করে চলে গেল।

ঃ হ্যালো।
ঃ শুভ সকাল।
ঃ আপনি আবার ফোন করেছেন? আপনি আমাকে কেন ফোন করেন?
ঃ জানি না।
ঃ জানেন না তো ফোন করেন কেন?
ঃ তাই তো! ঠিক আছে আর ফোন করব না।
ঃ ধন্যবাদ।


আজ প্রায় এক সাপ্তাহ পর ছাদে উঠলাম। অনেক দিন হল সিমিকে দেখি না। ওই ফোন টা ও আর আসে না। মনে হয় আমি ওই ফোন টাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এখন ফোন টা না আসায় মিস করছি। সিমির সাথে ঝগড়া করতে করতে এখন ঝগড়া না করলে মনে হয় ভালো লাগে না। মানুষের মন ও অদ্ভুত।
ওই নাম্বার টাতে একটা কল দিলে কেমন হয়?

রিং হচ্ছে...
ওপাশ থেকে বাচ্চা গলায় কেও বলল
ঃ হ্যালো। আপনি কে?
ঃ আমি মানে... আসলে আমি...
ঃ আপু ঘুমাচ্ছে আপনি পরে ফোন করেন।
ঃ তুমি কে ভাইয়া ?
ঃ আমি রিমি। আপনি কে? আপনি কি আপুর ফ্রেন্ড?
ঃ হুম।
আমি ফোন কেটে দিলাম।

তাহলে সিমিই আমাকে ফোন করছিল। কিন্তু কেন...?
সিমি কি আমাকে ভালবাসে...?
না তা হতে পারে না সে তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না। তাহলে কেন? সিমির সাথে কথা বলতে হবে।

ছাঁদে দাড়িয়ে আছি। সিমি এসে পেছনে দাঁড়ালো।
আমি বললামঃ তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।
ঃ বল।
ঃ তুই আমার সাথে ফোনে এমন করলি কেন ?
ঃ জানি না।
আমি তাকিয়ে দেখলাম সিমির চোখ ভেজা।
ঃ সিমি কাঁদছিস কেন কি হয়েছে?
সিমি কিছু না বলে আমার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকাল। সেই দৃষ্টি যা আমার পাজর ভেদ করে চলে যায়।
সিমি বলল, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
আমার মেরুদণ্ড দিয়ে হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল। আমার মনে হল আমি দাড়িয়ে থাকতে পারব না।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমার এমন লাগছে কেন...? তাহলে কি আমি ও সিমি কে......

সিমি চলে যাচ্ছে আমি নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছি। সিমি কে খুব বলতে ইচ্ছা করছে। সিমি তুমি আমায় ছেরে যেও না। তুমি চলে গেলে কে আমাকে জ্বালাবে। জানি সিমি চলে গেলে আমি আর কোন দিন সিমিকে এই কথা গুলো বলতে পারব না।
সিমি চলে যাচ্ছে আমি নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছি খোলা আকাশের নিচে......
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×