সকাল ৬ টা বাজে।
সারারাত ঘুমাই নি। চোখের বাতি নিভু নিভু করছে। এখন আর ঘুমিয়ে কাজ নেই। ভাবছি নাস্তাটা করে এসেই ঘুমাই। মানি ব্যাগ টা পকেটে নিয়ে বের হলাম।
শীতের সকাল। রাস্তা ঘাটে লোক জন তেমন নেই। দোকান গুলো এখনো খোলেনি। আমি আলী মিয়ার হোটেলের দিকে হাঁটছি। আসলে হাঁটছি না হাঁটার চেষ্টা করছি। ঘুমের কারনে চোখ খোলা রাখতে পারছি না।একটু দূর হাঁটার পর মনে হল কথাও কেও একজন ফুপিয়ে কাঁদছে। কয়েক কদম চলার পর দেখলাম গলির ফুটপাথে কে যেন বসে আছে। একটু কাছে গিয়ে দেখলাম হলুদ শাড়ি পরা একজন মহিলা ফুটপাথে বসে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। একবার মনেহল গিয়ে জিজ্ঞাস করি কি সমস্যা আপনার? আবার ভাবলাম ধুর আমার কি দরকার। আবার মনে হলো হয়ত বিপদে পরেছে। যাই গিয়ে জিজ্ঞাস করি?
: এই যে শুনছেন? কি সমস্যা আপনার ? কথা বলছেন না কেন ?
মেয়েটি মাথা তুলে তাকালো। আমার গা দিয়ে যেন ৪৪০ ভোল্ট এর বিদ্যুৎ ছুঁয়ে গেলও। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এ তো আকাশ থেকে নেমে আসা পরী। আমি মনে মনে বললাম পরী তোমার ডানা গুলো কোথায় ?
মেয়েটি আমার দিকে কান্না ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখে কিছু একটা আছে। অদ্ভুত এক মায়া যা দেখলে মনে হয় বুকের ভেতর কোথায় যেন এক আদ্ভুত শূন্যতা সৃষ্টি হয়।
আমি মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাস করলামঃ কি হয়েছে আপনার? আপনি কাঁদছেন কেন?
মেয়েটি কিছু বলল না। ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
আমি কি বলব বুজতে পারলাম না। অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। মনে হচ্ছে মেয়েটি আমাকে ভয় পাচ্ছে। অবশ্য ভয় পাবারই কথা। সারা রাত ঘুমাই নি। চোখ লাল টমেটো হয়ে আছে। চেহারার ১২ টা বেজে আছে।
আমি মেয়েটি কে বললামঃ আমি এ পাড়ায়ই থাকি। আপনি কি কোনো সমস্যায় পরেছেন ? এখনে বসে এভাবে কাঁদছেন কেন?
মেয়েটি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললঃ আমাকে একটু পানি খাওয়াতে পারবেন?
আমি ভ্যবচেকা খেয়ে গেলাম। বললামঃ পারব। আপনার সাথে কি কেউ নেই?
ঃ না।
ঃ ঠিক আছে আপনি একটু সামনে আসেন ওই মোড় টাতে একটা হোটেল আছে।
মেয়েটি উঠে দাঁড়ালো। আমি হাটা শুরু করলাম। মেয়েটি আমাকে অনুকরণ করছে............
২য় পর্ব
আমি আলী মিয়ার হোটেলে বসে আছি। শীতের সকাল তাই লোক জন তেমন নেই। মেয়েটি আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় এখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আলি মিয়া আমার দিকে সন্দহের চোখে তাকাচ্ছে। আমি নীরবতা ভেঙ্গে মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করলাম
ঃ আপনার নাম কি?
আমার কথায় মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
হঠাৎ মেয়েটি বলে উঠলঃ আমি তৃষ্ণা। আমার বাসা চট্টগ্রাম। আব্বুর সাথে ঢাকা যাচ্ছিলাম বড় আপুর বাসায়। এখানে বাস থেকে নেমেছিলাম। উঠার আগেই বাস ছেড়ে দিলো।
ঃ আপনার বাবা কোথায়?
ঃ বাবা বাসে ঘুমাচ্ছিল।
ঃ আপনার সাথে মোবাইল নেই।
ঃ না। আমি মোবাইল ব্যবহার করি না।
ঃ আপনার বাবার ফোন নাম্বার আছে?
ঃ আমি নম্বর মনে রাখতে পারি না।
ঃ তো এখন কি করবেন?
ঃ জানি না। মেয়েটি আবার ফুপিয়ে কান্না শুরু করল।
ঃ আচ্ছা আপনি কান্না থামান। আপনি কাঁদবেন না। প্লীজ। আপনার আপুর বাসার ঠিকানা জানেন?
ঃ জানি।
ঃ ঠিক আছে আমি আপনাকে ওখানে পৌছে দিয়ে আসব। আপনি চিন্তা করবেন না।
ঃ আপনি কিছু খেয়েছেন?
ঃ না। ঠিক আছে নাস্তা করেন আমার সাথে। তার পর আমার রওনা দিব।
আমি নাস্তা করতে করতে দেখলাম মেয়েটি কিছুই খাচ্ছে না। আলি মিয়া আবারও আমাদের দিকে সন্দেহর চোখে তাকাচ্ছে।
আলি মিয়ার হোটেল থেকে বের হয়ে মেয়েটিকে নিয়ে বাস ষ্টেশনে গেলাম। বাসে মাঝামাঝি একটা সিটে বসলাম। বাসে উঠেই মেয়েটি ঘুমিয়ে গেল। আমি ভাবছি গতকাল টিউশনির টাকাটা পেয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম ভাল একটা হেডফোন কিনব। আর হল না। মেয়েটি আরামে ঘুমাচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি মেয়েটি দিকে। কি নিস্পাপ মুখ। ঘুমন্ত মানুষ কে দেখতে নিস্পাপ লাগে। মেয়েটি দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে আমি আদ্ভুত এক মায়ার জালে আটকা পরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমি এই মেয়েটির প্রেমে পরে গেছি। জানি না এমন কেন মনে হচ্ছে।
আমরা তৃষ্ণার আপুর বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি। তৃষ্ণা আমাকে বললঃ ভিতরে আসুন। আপু আপনাকে দেখলে খুব খুশী হবে।
ঃ না থাক আজ যাব না। আমার আবার ফিরতে হবে। দেরি হলে বাস পাব না।
ঃ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা আমি কখনো ভুলব না।
ঃ না এটা তেমন কিছু না।
ঃ ঠিক আছে আমি যাই। সবাই নিশ্চয় চিন্তা করছে।
খুব বলতে ইচ্ছা করছে যেওনা তুমি। আমাকে ফেলে যেও না। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। আমি দাড়িয়ে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে আছি। তৃষ্ণা চলে যাচ্ছে। নিজের অজান্তে চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরল।
আমি ফিরে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হল আমি কেনো যাচ্ছি তৃষ্ণার বোনের সাথে দেখা করে গেলেইতো হয়।
আমি কলিং বেল বাজালাম। এটা মাঝ বয়সী মহিলা দরজা খুলে দিলো। চেহারা একদম তৃষ্ণার মত। আমি বললাম আপনি নিশ্চয় তৃষ্ণার বোন। মহিলা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
কয়েক মুহূর্ত পর উনি বলল “তুমি তৃষ্ণাকে কীভাবে চেন?”
ঃ আমি আসলে একটু আগে ওকে এখানে নিয়ে এসে ছিলাম। ও আমার কথা বলে নি?
উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমাকে কিছু না বলে উনি ভিতরে চলে গেলেন। আমি বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম। আমি কি করব না বুজে চলে আসতে শুরু করলাম। মহিলা পেছন থেকে ডাক দিলেন। আমি মহিলার কাছে গেলাম। মহিলা আমাকে একটি ছবি দেখাল। ছবিটি তৃষ্ণার।
ঃ তুমি কি ওর কথা বলছ?
ঃ জি ওই ত। কিছুক্ষণ আগে ওকে আমি এখানে দিয়ে গেলাম।
মহিলা আবার ও অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর বললঃ
তৃষ্ণা আমার ছোট বোন। গত মাসে সে বাবার সাথে আমার বাসায় আসছিল। পথে কুমিল্লার কাছে কোনো একটি জায়গায় বাস এক্সিডেন্ট করে। ওই এক্সিডেন্টে আমার বাবা ও তৃষ্ণা মারা যায়।
এই গল্পের বাস্তবের সাথে কোন মিল নেই। এইটি লেখকের উদ্ভট কল্পনা।
বি. দ্র. এই লেখক গল্প লেখতে পারে না। কিন্তু লিখতে শিখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এই গল্পের লেখক সামুর অভিজ্ঞ লেখকদের কাছে সাহায্য প্রাথী।