উচু তালার মানুষ গুলো মধ্যবিত্ত হওয়ার যন্ত্রণাটা কখনো বুঝতে পারবেনা। সদ্য যৌবন প্রাপ্ত মধ্যবিত্ত ছেলে-মেয়েদের গল্পটাও যেন মধ্যবিত্ত থেকেই শেষ হয়ে যায়। ছেলেগুলো কাছের কোন এক উপরিতলের কোন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে ভাবে সব সমস্যার সমাধান করে দিবে কিনা। তখন সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জীবনের গ্লানি টেনে ক্লান্ত বাবা আর কষ্ট জর্জরিত মায়ের মুখগুলো। সমাধানের পরাজয় হয় দায়িত্ববোধর কাছ।
মানুষ অদ্ভুত প্রাণী। তারা স্বপ্ন বাধে। স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর আবার স্বপ্ন বাধে। এভাবে চলতে থাকে ভাঙা গড়ার খেলা। এত কিছুর মাঝেও একটা জিনিষ মানুষকে সান্ত্বনা দেয়। সেটা হল আশা। আজকের দিনটা থেকে আগামিকাল ভালো হবে, সেই আশা। হয়তো কোন কিছুই বদলায়না। জীবন আগের মতই থাকে। তবু আসা বেচে থাকে।
#Hope_for_a_better_tomorrow.
গল্পটা শুরুটা হয়েছিল কোন এক শরৎকালে। ছেলেটা দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার অপর পাশে যখন মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল। কিছুকাল পর একদিন সকালে যখন মেয়েটি স্কুলে যাচ্ছিল তখন ছেলেটি সাহস করে বলেই ফেলল। মেয়েটা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেলল। কত সুন্দর অনুভূতিই না ছিল দুজনের জন্য। কিছুটা অসস্তিও ছিল। দিনটা ছিল শুক্রুবার। ভালই ছিল সময়টা ছোট একটা রেস্টুরেন্ট বসে ছিল তারা দুজন। সবকিছু ঠিকই ছিল ততক্ষন যতক্ষণ পর্যন্ত হাতে বিলের কাগজটানা এল। ছেলেটার মানিব্যাগে বহুদিন ধরে স্কুলের রিক্সাভাড়া জমানো টাকা গুলো ছিল। কিন্তু তাও কম পরে গেল। মেয়েটি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেল ব্যাপারটা। মেয়েটি কিছু না বলে সামান্য হেসে রঙ উঠা ব্যাগ থেকে কয়েকটা দুমড়ানো নেট বের করে দিল। এভাবে কখন যে কেটে গেল পাচটা বছর কেউ টেরই পেল না। অনেক ভালো কেটেছে তাও বলব না। তবে ভালোবাসাটা ছিল। কমেনি কখনো।
ছেলেটি তখন চাকরীর সন্ধানে ব্যস্ত যখন খবরটা এল। মেয়েটির জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। অবশেষে কাতার ফেরত একটা ভাল পাত্র মিলেও গেল। সর্ম্পকের কথাটা অনেকই জানতো। তবে মেয়ের বাবা একটা বেকার ছেলের ভালো চাকুরীর আশায় কাতার ফেরত পাত্র হাতছাড়া করতে চাননি।
বাড়িতে তখন হলুদ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে যখন মেয়েটি ছেলেটির কাছে এল। প্রশ্নটা কঠিন ছিল না মেয়েটির। উত্তরটা ও সোজা ছিল না। তবু কিছুই যেন ঠিক ছিল না। চিরকালের জন্য কিছু একটা যেন হারিয়ে যাচ্ছিল দুজনের কাছ থেকেই। প্রশ্নটি শোনার পরই ছেলেটির চোখে ভেসে উঠল, ঘরে অসুস্থ মা, জীবনের গ্লানি টেনে ক্লান্ত রিটায়ার্ড করা বাবা আর একমাত্র বিবাহের উপর্যুক্ত বোনের ছবি। অন্যদিকে পাচ বছরের অপূর্ণ ভালোবাসা। দায়িত্বের কাছে ভালোবাসা পরাজিত হল। ছেলেটির উত্তর না এল। একটি অসম্পূর্ণ ভালোবাসার মৃত্যু ঘটলো।
মেয়েটির বিয়ে হয়েছে প্রায় দুবছর হয়েছে। ছেলেটি এখনো চাকুরীর সন্ধান করছে। বাবার পেন্সানের টাকায় সংসার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। বিবাহযোগ্য বোনের জন্য দেখা পাত্রের বাবার চাহিদা পূরণ করাটাও জরুরী ছিল। উপায়ান্তর না পেয়ে ছেলেটি একটি কাপড়ের দোকানে কাজ নিল।
মাসখানেক ভালোই চলছিল সব। বেতন নেয়ার সময় হয়েছিল। ছেলেটা মনের ভিতর অনেকখানি আনন্দ নিয়ে হাজির হল দোকান মালিকের বাসায় হাজির হল বেতন নেয়ার জন্য। খানিক কথোপকথনের সময় একটি মেয়ে হাজির হল চা নিয়ে। মেয়েটিকে দেখার পর ছেলেটির হৃদস্পন্দন অনেক খানি বেড়ে গেল। ততক্ষনে মেয়েটিরও চোখ পরলো ছেলেটির দিকে। মেয়েটি দাড়িয়ে পরল চায়ের কাপ হাতে নিয়ে। সময় যেন থমকে দাড়ালো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। মেয়েটির চোখ টলমল করছিল। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েটির বাম চোখ থেকে গাল গড়িয়ে এক ফোটা জল এসে ঠোট স্পর্ষ করলো।
মধ্যবিত্ত জীবনের অসমাপ্ত গল্পগুলোর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে। তবুও জীবন চলে জীবনের অপ্রতিরোধ্য গতিতে। একসময় জীবন ফুরিয়ে যায়। রয়ে যায় কিছু স্মৃতি, আশা আর আসমাপ্ত কাহিনী।
বি দ্রঃ এই গল্পের (গল্প হয়েছে কিনা জানি না) লেখক গল্প লিখতে পারে না। গল্প লিখতে পারার ভান করে মাত্র।
কিছু কথাঃ (না পড়লেও চলবে)
# গল্পটা কিছুটা ব্যতিক্রম ধর্মী। সাধারণত এ ধরনের গল্প আমি লিখে অভস্ত নই। গল্পের মধ্যে বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা অনেক কঠিন কাজ। তবু চেষ্টা করলাম। জানি সফলতা অনেক দূরে তবু চেষ্টা না করলে শিখব কেমন করে।
# গল্পের মধ্যে বানানে ভুল হতেই পারে কারণ মানুষ মাত্রই ভুল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬