শেষের পরেঃ
আমার সামনে একটি অপ্সরী বসে আছে। শুধু বসে আছে বললে ভুল হবে। বসে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ভীষণ ইচ্ছা করছে তার হাতটা ধরতে। হাতে হাত রেখে তাকে বলতে মেয়ে আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু লজ্জাও লাগছে অনেকখানি।
শুরুর পরেঃ
সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটা। (আমার জন্য সাড়ে ১১টা সকালই) আমি যথারীতি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইল নামক তার বিহীন বার্ত যন্ত্রটা বেজে উঠল। বালিশের কাছে ঘুম চোখে হাতরে মোবাইলটা খুজে পেলাম। নাম্বার টা দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেল। সকাল বেলা এয়ারটেল জ্বালা দিচ্ছে।
Why airtel why?!!
ঃ হ্যালো।
ঃ শুভ সকাল স্যার। আমি এয়ারটেল থেকে সাবরিন বলছি।
কন্ঠ শুনে মনে হল আমার গায়ে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রনের বিপরীত ধারা প্রবাহিত হয়ে গেল।আমি ভাবছি একটা মানুষের কন্ঠ এতটা সুন্দর হয় কি করে?
ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো যখন সে আবার ফোনে ডাকলে, হ্যালো স্যার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
ঃ হুম। বলুন।
ঃ আপানি কি গত এক সপ্তাহ আগে এয়ারটেল এর ______ প্যাকেজটি কিনে ছিলেন?
ঃ কিনে ছিলাম নাকি? জানতাম না তো?
ঃ হালকা একটু হাসির শব্দ। ( সে হাসি যে হাসি আমার পাঁজর ভেদ করে হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করে। হা স্যার মনে হয় কিনেছিলেন।
ঃ ও তাই? তাহলে তো ভালো।
ঃ আপনি কি আবার ওই প্যাকেজ টি একটিভ করতে চান।
ঃ করলাম নাহয়।
ঃ তাহলে আপনাকে ১০০ টাকা রিচার্জ করতে হবে।
ঃ আমি তো ভাবলাম ফ্রি দিবেন। আচ্ছা কখন করতে হবে? ১ ঘন্টা পর করলে হবে?
ঃ জি হবে স্যার। আমি কি আপনাকে কল করে প্যাকেজ টি একটিভ করে দিবে?
ঃ আচ্ছা।
আজ কেন জানি মনটা ভালো লাগছে। কাস্টমার কেয়ারের কল পেয়ে মন ভালো লাগার কোন কারণ নেই তাও ভালো লাগছে। জানি না কেন? আর সব জানতে হবে এটা কে বলেছে? কিছু জিনিষ না হয় অজানাই থাক।
যথারীতি ভার্সিটি গেলাম। সেখানে মন উদাস করা ক্লাস করলাম। সেখান থেকে ছাত্র পড়াতে গেলাম। সেখান থেকে এরশাদ মামার চায়ের দোকানে গেলাম। এতো কিছুর মাঝে রিচার্জের কথা ভুলেই গেলাম। তনু আগে থেকেই বসা ছিল ওখানে। আমাকে দেখে হাতে থাকা বেনসন অ্যান্ড হেজেস্ টা এগিয়ে দিল।
আমি একটা টান দিতেই তনু বলল, দোস্ত কি হয়েছে জানিস? আজকে একটা #Unknown_Number থেকে ফোন এসেছে। তারপর.....
আমি বেনসন টা ওর হাতে দিয়ে বললাম তুই খা আমি আসছি। তনু আমার দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি কাছের রিচার্জের দোকান থেকে রিচার্জ করলাম।
তনুর কাছে ফিরে এসে দেখি মোবাইলে একটা খুদে বার্তা এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে আমাকে তারা কিছু মেগাবাইট দিয়েছে। আমার কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হল। আমি মেয়েটির ফোন আশা করে ছিলাম।
আরেকটা বেনসন জ্বালালাম। নিজের উপর ভীষণ বিরক্ত লাগছে। আমি কেন ওই মেয়ের ফোন আশা করব?
সাপ্তাহ খানেক কেটে গেল। আমি ওই সব ভুলে গেলাম। (আমার স্মৃতিশক্তি খারাপ কিছু করার নাই। :p)
সকাল সকাল ঘুম থেকে মা ডেকে তুলল। বলল মামার বাসায় যেতে। অনিচ্ছাকৃত ভাবে বাসা থেকে বের হলাম। গলির মোরে গিয়ে একটা বেনসন জ্বালাতেই ফোনটা বেজে উঠল। এয়ারটেল অফিসের নাম্বার। বিরক্ত হয়ে কল তা ধরলাম। মনে হল কিছুক্ষণ বকাঝকা করি। সব সময় কল দিয়ে জ্বালাতন করেন কেন?
ঃ হ্যালো
ঃ শুভ সকাল স্যার।
কন্ঠ শুনে আবার আমার শরীর দিয়ে ৪৪০ ভোল্টের বিদুৎ প্রবাহিত হয়ে গেল।
ঃ আপনি কি সেই মানুষটি যিনি গত সপ্তাহে আমাকে কল করছিলেন?
ঃ হুম। আমি সেই। স্যার।
ঃ আপনি কি আমাকে স্যার বলা বন্ধ করবেন?
ঃ আসলে আমারদের নিয়ম এটা। সরি।
ঃ নিয়ম ভঙ্গ করার জন্যই তৈরি হয়।
ঃ এখনো নিয়ম ভঙ্গ করার সময় আসে নি।
আমি হাসলাম বললাম, আপনি কি জানেন গত এক মিনিটে আপনি আমাকে কতবার স্যার বলেছেন?
ঃ আসলে সরি স্যার।
ঃ আবার স্যার?
ঃ আচ্ছা, আপনি কি গত সপ্তাহের প্যাকেজটা এসপ্তাহে আবার কিনতে চান?
ঃ প্যাকেজটা কিনলে কি আপনি একটিভ করে দেয়ার জন্য আবার কল করবেন?
ঃ আপনার কেন সমস্যা না হলে করব।
ঃ আমি অপেক্ষায় থাকব।
আমি সারা বিকাল অপেক্ষ করে গেলাম। সেই একটি কলের।
কল এল ৫.২১ মিনিটে। ধরেই বললাম অপেক্ষায় ছিলাম।
ঃ কেন?
ঃ জনি না।
ঃ কেমন আছেন স্যার?
ঃ আবার স্যার। আপনার স্যার ভালো আছে। আমি ভালো নেই আমি ভালো আছি।
হাসির শব্দ আসলো ফোনের ওপাশ থেকে। সে হাসি যা আমার পাজর ভেদ করে চলে যায়।
ঃ কেন?
ঃ সেটা নাহয় নাই বললাম।
ঃ আচ্ছা আমি আগামি সপ্তাহে ছুটিতে যাব। আমি কি অন্য কেউকে বলে যাব আপনাকে প্যাকেজটি একটিভ করে দিতে?
জানি না কেন ভয় লাগছে। ভীষণ বলতে ইচ্ছা করছে। চলে যাবে? অনেক দিন আর কথা হবে না। কিন্তু আমি বললাম না।
ঃ না লাগবে না। অনেক দিন তো আর কথা হবে না।
ঃ হু
ঃ আপনি কি ফেসবুক ব্যবহার করেন?
ঃ করি কিন্তু সেটা তো...
ঃ আমি জানি। আমার আইডি টা লেখেন______। পারলে একটা নক দিবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
মন খারাপ করে ফোন কেটে দিলাম।
দুই সপ্তাহ কেটে গেছে। দুইটি ব্যাপার ঘটলো এই দুই সপ্তাহে। প্রথমত এখনো কোন নক আসেনি। এবং পরেরটি আমি আবিষ্কার করলাম আমি এখন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বস থাকি ফোনের অপেক্ষায়!!!
প্রেমে মনে হয় পরেই গেছি।
শেষ কথাঃ
আজ মনটা একটু বেশিই খারাপ। কারণ আমি বুঝতে পারলাম সেই ফোনটা আর কখনোই আসবে না।
মামার দোকানে বসে আছি। কেউ আসে নি আজ। অন্যদিন এ সময় তনুটা থাকে।আজ নেই। কষ্টটা মনে হয় একাই অনুভব করতে হয়।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছি মাত্র, পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠল। নাম্বারটা অপরিচিত। ধরতে ইচ্ছা করছে না। তবুও ধরলাম।
ঃ হ্যালো
অপর পাশ থেকে হ্যালো শোনা গেল। পরিচিত কণ্ঠ। অনেকখানি পরিচিত। সেই কন্ঠ যা শুনলে আমার হৃদপিন্ড স্পন্দনের গতি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
ঃ চিনতে পেরেছেন স্যার?
ঃ জি।
ঃ আমি বিকেল ৫ টায় গুলশান পার্কে থাকব। আমি কিন্তু সেখানে আপনাকে স্যার বলব না।
ঃ আমি আপনাকে কি করে চিনব?....
ফোন কেটে গেল। এখন আর আমি ভয় পাচ্ছি না। কারণ আমি জানি যে আমার তাকে চিনতে অসুবিধা হবে না। কিছু কিছু কথা মন আগে থেকেই বুঝে যায়। কি করে বুঝে? সেটা নাহয় অজানাই থাক।
বি দ্রঃ এই গল্পের লেখক গল্প লিখতে পারে না। গল্প লিখতে পারার ভান করে মাত্র। tongue emoticon
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এটা পরে সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। tongue emoticon
কিছু কথা (না পড়লেও চলবে) wink emoticon
#এই গল্পটি শুরু করেছিলাম কোন এক বৃষ্টির দিনে। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে ভালো লাগে। তাই আমার খিচুড়ি খাওয়ার শখ খিচুড়ি মার্কা গল্প দিয়ে পূরণ করলাম।
#গল্পের সকাল ঘটনা কাল্পনিক। (হতেই হবে কারণ লেখক #কল্পনার_রাজত্ব) বস্তবে কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়বদ্ধ নয়।
#একে খিচুড়ি বলার কারণ হল এর কোন শুরু নাই। শেষ কথা গুলো দিয়ে গল্প শুরু হয়েছে।
#গল্পটার প্লট ভালো ছিল। মনে হয় এটা আরো ভালো লিখতে পারতাম। কিন্তু আজ মন ভালো নেই।
#বানানে ভুল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই। কারণ আমি বানানে কাচা। (কাচা বানানটাই ভুল :p)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫