মানবজমিন, বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১১
কাফি কামাল/বামমু আল আমীন: বিচার কার্যক্রম সরাসরি সমপ্রচারসহ ট্রাইব্যুনালকে ৭ শর্ত দিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, এগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিচারকরা চাইলে আসছে বিজয় দিবসে চেম্বারে বসেই আমাকে ফাঁসির আদেশ দিতে ট্রাইব্যুনালকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে রাজি আছি। ’৭৩-এর ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের সংশোধনীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অবৈধ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫ কোটি মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং বাদীপক্ষের মধ্যে পার্থক্য করা মুশকিল বলেও শুনানিতে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন কাদেরের দেয়া শর্তগুলো হচ্ছে- মানবতাবিরোধী অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত ও সরাসরি সমপ্রচার, প্রসিকিউশনের মতো তাকেও সমপরিমাণ সময়-সুযোগ-সুবিধা (জনবলসহ) দেয়া, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের সুযোগ নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষর করা আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো তাকেও একই সুযোগ-সুবিধা দেয়া।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝখানে সাড়ে ১২টার দিকে দেড় ঘণ্টার বিরতি দিয়ে তা পৌনে চারটা পর্যন্ত চলে। তবে বিএনপি’র কোন আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে সালাহউদ্দিন কাদেরকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এজলাস গ্রহণ করেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে জিয়াদ আল মালুম বলেন, আসামি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কি এ মামলায় নিজেই লড়বেন নাকি নিজের পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ করবেন, তার সুরাহা হওয়া দরকার। এটি মিডিয়া ট্রায়াল নয়, আইনগতভাবে মামলা মোকাবিলা করলে শুরুতেই তার ফয়সালা হওয়া দরকার। সময়ক্ষেপণের জন্য বিভিন্ন আবেদন করা হচ্ছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে পরে সালাহউদ্দিনকে নিজের পক্ষে মামলা লড়ার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সংসদে যোগদানের অনুমতি চেয়ে করা দ্বিতীয় আবেদনটির ওপর আদেশ দেয়ার এখতিয়ার নেই বলে খারিজ করা হয়। এজলাস কক্ষে আইনজীবী ও দর্শনার্থী প্রবেশে ট্রাইব্যুনাল আইন ও বিধি অনুসারে নিয়ন্ত্রণ অরোপ করতে পারবেন বলে অন্য আবেদনের ওপর ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেয়। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আমার পিতা মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ ৫০০ আইনজীবী ছিলেন। সেখানে লোকজনের ভিড়ে দাঁড়াবার জায়গা ছিল না। কিন্তু আপনি এখানে ১০ জনের বেশি আইনজীবী অনুমতি না দিলে আমার কিছু করার নেই। সেটা আপনার ব্যাপার। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, স্যার, আমি একটি বিষয়ে প্রসিকিউশনকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তারা বারবার বলছেন, আমি সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছি। স্যার, আপনি আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। একইভাবে আপনারা চাইলে আসছে ১৬ই ডিসেম্বরেই চেম্বারে বসে আমার ফাঁসির আদেশ দিতে পারবেন। সে বিষয়ে আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন ১১ মাস সময় নিলো আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে। আমাকে সাত মাস পরে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অভিযোগ আনার আগেই আমাকে ১১ মাস জেল খাটানো হয়েছে। এতে কি সময়ক্ষেপণ হয়নি? এখন আমার হাত-পা বেঁেধ পানিতে ছেড়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সাঁতার কাটতে। শুনানি সংক্ষিপ্ত করতে বারবার তাগাদা দিলে ট্রাইব্যুনালকে সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, কথা দিচ্ছি ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম বিচার আপনি করতে পারবেন। চেম্বারে বসেও আমার ফাঁসির আদেশ দিতে পারবেন। আমি আপনাকে সহায়তা করবো। আমার বাবাকে ৫৪ বছর বয়সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল। আমাকে তো মহান আল্লাহ ৬৩ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। যা খুশি রায় দিতে পারেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশের আর কোন নাগরিকের আমার মতো ভাগ্য বরণ করতে না হয় সেজন্য আমি এই আবেদনটি আদালতের কাছে পেশ করেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ডিসিসি ভাগ করা হয়েছে। দেশে তো কোন ইস্যু নেই। চালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এটা কোন ইস্যু নয়। ইস্যু হলো যুদ্ধাপরাধ। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চেয়ে তো এই মামলা সেনসেটিভ নয়। সেটিও কিন্তু পাবলিক ট্রায়াল ছিল। এটি কি ক্যামেরা ট্রায়াল হচ্ছে? আইন বলছে এটি পাবলিক ট্রায়াল আর এখানে যেসব বিধি-নিষেধ দেখছি তাতে মনে হয় এটি ক্যামেরা ট্রায়াল। হাইকোর্টে আপনারা বসেন, সেখানে কি আপনারা আইন করেছেন যে, এখানে কেউ ঢুকতে পারবে না? হয় সংবিধান আইনের ঊর্ধ্বে না হয় আপনার আইন সংবিধানের ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন, আপনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক। আপনি যদি সংবিধান রক্ষা না করেন তো কে রক্ষা করবে? দেশের মানুষই বা কোথায় যাবে? আমি ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে। তিনি আমাকে কিছু লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিছু মৌখিকভাবে, কিছু শিখিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তারা যে গুম হয়ে যাচ্ছে। তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন আপনারা। তিনি বলেন, বিচারপতি জ্যাকসন বলেছেন- বিচারকরা শুধু টাকা-পয়সার জন্য দুর্নীতি করেন না। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আনুগত্যের জন্যও তারা দুর্নীতি করেন। আদালতে তার হাসি-তামাশার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, স্যার, উপহাস করতে গেলে অনেক সময় ঠাট্টার মতো মনে হয়। ক্ষমা করবেন। ভাল কথা একটু কম শোনা যায়। আসলে কমেডি অব এরর-এ আমি তো জীবনের জন্য লড়ছি (আই অ্যাম ফাইটিং ফর লাইফ)। আপনারা তিনজন বিচারকই আমার শ্রদ্ধাভাজন। আপনারা আমার উত্থাপিত পয়েন্টগুলো আশা করছি বিচারকের মন নিয়েই অনুধাবন করবেন। কারণ এখানে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শেকড় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক হলে আইসিসিপিআর ও ডমিস্টিক হলে সাক্ষ্য আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রয়োগ করুন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ১৯৭৩-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের যে সংশোধনী ২০০৯ সালে আনা হয়েছে সেটি একটি অবৈধ সন্তান। এই সংশোধনীর নাম দেয়া উচিত ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির সংশোধনী। তিনি বলেন, ’৭৩-এর ট্রাইব্যুনাল আইন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য করা হয়েছিল। ওই আইনে সশস্ত্র বাহিনী, এর সহায়ক বাহিনীসহ চার ধরনের লোকের বিচারের কথা ছিল। তার কোন একটির সঙ্গেও আমার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আইনটি সংশোধন করে ‘ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গ’ শব্দ যোগ করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। যারা ’৭১-এর পরে জন্ম গ্রহণ করেছে তাদেরও এখন এই আইনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা যাবে। তা থেকে রেহাই পেতে হলে আইসিটির ছাড়পত্র পকেটে নিয়ে ঘুরতে হবে। আবার গত ৩রা জুলাই সংবিধানের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে ২০০৯ সালে জন্ম দেয়া অবৈধ সংশোধনীকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তিনি সংবিধানকে উপরে তুলে ধরে বলেন, সব কিছুর উপরে সংবিধান। তার নিচে আইন এবং তার নিচে রুল। অথচ একটি বছর আমি জেল খেটেছি। সংবিধান, আইন, বিধি লঙ্ঘন করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ট্রাইব্যুনাল গঠনে আইনের সংশোধনী আনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা যেন বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তারের পর কিছু পত্রিকার উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর আমাকে গ্রেপ্তারের পর হিন্দুস্থান মার্কা কয়েকটি পত্রিকার হেডলাইন ছিল, ‘বিজয় দিবসের উপহার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার’। এবারের ১৬ই ডিসেম্বর হিন্দুস্থান মার্কা পত্রিকার হেডলাইন হবে ‘বিজয় দিবসের উপহার সালাহউদ্দিন কাদেরের বিচার’। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাড়াতাড়ি করুন, সময় নেই। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সময় আমাকে দিয়েছেন সেটাই আমার সময়। আপনি তা থেকে কমাতে পারবেন না। আপনি ধৈর্যহারা হবেন না। আপনার সময় আমি শর্ট করে দেবো। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই তো শর্ট? সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আমি এত শর্ট করবো যে আপনি ক্ষেপে যাবেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাড়াতাড়ি করুন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, এটা আমার সন্তুষ্টি নয়। এটা ১৫ কোটি মানুষের সন্তুষ্টি। আমার সন্তুষ্টির তো তেরটা বাজিয়ে দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ৪৭-এর দেশ ভাগের সময় জমিদাররা চলে গেলেন দেশ ছেড়ে। রয়ে গেলেন দাশবাবুরা (প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত)। আমাদের অবস্থাও দাশবাবুদের মতো। দেশের বাইরে আর কোথাও যাবার নেই। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কথা নেই বার্তা নেই বাড়ির দারোয়ান এসে বাড়ির মালিককে বের করে দেবে এটা কেমন কথা। এজন্য সংবিধানের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সংশোধন করেছেন। গোপালগঞ্জের মেয়ে শেখ হাসিনা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মানুষ। ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেল খেটেছেন তো। তাই অভিজ্ঞতা আছে। তারা আমাদের সবাইকে খোয়াড়ে রেখেছিল। তখন সেনাবাহিনী পিছনে বসে অন্যকে দিয়ে ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। অবৈধভাবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী পরে সংবিধান সংশোধন করেছেন। কিন্তু সেখানে ‘সেনাবাহিনী’ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। বরং ‘অসাংবিধানিকভাবে’ শব্দটি ব্যবহার করেই মূল উদ্দেশ্য রক্ষা করা হয়েছে। এ সময় জিয়াদ আল মালুম ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের আমাদের সেনাবাহিনীকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আমি এরকম বলে থাকলে দুঃখিত। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আপনারা আমার আবেদন সরাসরি খারিজ করতে পারেন। সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু সরাসরি খারিজ করলে আমার মনে হয় তা প্রশংসনীয় না-ও হতে পারে। বিরতির পর সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে বাদীপক্ষ এবং বিচারকদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তিনি সাতটি শর্ত দিয়ে বলেন, স্টিফেন জে র্যাপ যে সুপারিশ দিয়েছিলেন তা থেকেই এগুলো উপস্থাপন করলাম। এগুলো বাস্তবায়ন না করলে বুঝবো আপনারা আমাকে বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চাইছেন। এগুলো আমার একার দাবি নয়। এগুলো ১৫ কোটি মানুষের দাবি। এ দাবি বিশ্ব সমপ্রদায়েরও। এর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি বিচার কার্যক্রমে অংশ নেবো না। আমাকে জোর করে আনতে পারবেন কিন্তু আমি নিজে থেকে আসবো না। ট্রাইব্যুনালে আংশ নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, হবে না? তিনি বলেন, না, হবে না। আপনি আমাকে চেম্বারে বসে ফাঁসির আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু এ সবের বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি শুনানিতে অংশ নেবো না। এর পরে ট্রাইব্যুনাল জিয়াদ আল মালুমকে বলেন, আমরা অতিরিক্ত কথা শুনতে চাই না। চৌধুরী সাহেব এই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে, এই ট্রাইব্যুনালের গঠন এবং এখানে সুপ্রিম কোর্টের দু’জন বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধান লঙ্ঘন বিষয়ক বেশ কিছু স্পষ্ট অভিযোগ এনেছেন। এ বিষয়ে আপনি নির্দিষ্ট করে বক্তব্য দিন। এ সময় জিয়াদ আল মালুম যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ টেনে আনলে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকই তাকে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিতে বলেন। একপর্যায়ে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিচারপতি তাকে যুক্তি খণ্ডনের পয়েন্ট নির্দিষ্ট করে দেন। জবাবে সালাহউদ্দিন কাদেরের সাংবিধানিক পয়েন্টের দিকে না গিয়ে জিয়াদ আল মালুম বলেন, সাংবিধানিক কোন বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার এ ট্রাইব্যুনালের নেই। এ সময় জিয়াদ আল মালুম বলেন, এখানে মিডিয়া আছে তাদের জানা দরকার। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মিডিয়া দেখে নয় আইন দেখেই রায় হবে। পরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম স্থগিত ও আসামির অনুপস্থিতিতে অভিযোগ আমলে নেয়ার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের রায় দেয়ার ব্যাপারে আগামী ৫ই ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়।মা
বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০১১
কাফি কামাল/বামমু আল আমীন: বিচার কার্যক্রম সরাসরি সমপ্রচারসহ ট্রাইব্যুনালকে ৭ শর্ত দিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছেন, এগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিচারকরা চাইলে আসছে বিজয় দিবসে চেম্বারে বসেই আমাকে ফাঁসির আদেশ দিতে ট্রাইব্যুনালকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে রাজি আছি। ’৭৩-এর ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের সংশোধনীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই অবৈধ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫ কোটি মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং বাদীপক্ষের মধ্যে পার্থক্য করা মুশকিল বলেও শুনানিতে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন কাদেরের দেয়া শর্তগুলো হচ্ছে- মানবতাবিরোধী অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত ও সরাসরি সমপ্রচার, প্রসিকিউশনের মতো তাকেও সমপরিমাণ সময়-সুযোগ-সুবিধা (জনবলসহ) দেয়া, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের সুযোগ নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষর করা আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো তাকেও একই সুযোগ-সুবিধা দেয়া।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝখানে সাড়ে ১২টার দিকে দেড় ঘণ্টার বিরতি দিয়ে তা পৌনে চারটা পর্যন্ত চলে। তবে বিএনপি’র কোন আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এর আগে সালাহউদ্দিন কাদেরকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এজলাস গ্রহণ করেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে জিয়াদ আল মালুম বলেন, আসামি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কি এ মামলায় নিজেই লড়বেন নাকি নিজের পক্ষে কোন আইনজীবী নিয়োগ করবেন, তার সুরাহা হওয়া দরকার। এটি মিডিয়া ট্রায়াল নয়, আইনগতভাবে মামলা মোকাবিলা করলে শুরুতেই তার ফয়সালা হওয়া দরকার। সময়ক্ষেপণের জন্য বিভিন্ন আবেদন করা হচ্ছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে পরে সালাহউদ্দিনকে নিজের পক্ষে মামলা লড়ার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সংসদে যোগদানের অনুমতি চেয়ে করা দ্বিতীয় আবেদনটির ওপর আদেশ দেয়ার এখতিয়ার নেই বলে খারিজ করা হয়। এজলাস কক্ষে আইনজীবী ও দর্শনার্থী প্রবেশে ট্রাইব্যুনাল আইন ও বিধি অনুসারে নিয়ন্ত্রণ অরোপ করতে পারবেন বলে অন্য আবেদনের ওপর ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেয়। এ সময় সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আমার পিতা মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ ৫০০ আইনজীবী ছিলেন। সেখানে লোকজনের ভিড়ে দাঁড়াবার জায়গা ছিল না। কিন্তু আপনি এখানে ১০ জনের বেশি আইনজীবী অনুমতি না দিলে আমার কিছু করার নেই। সেটা আপনার ব্যাপার। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, স্যার, আমি একটি বিষয়ে প্রসিকিউশনকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, তারা বারবার বলছেন, আমি সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছি। স্যার, আপনি আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। একইভাবে আপনারা চাইলে আসছে ১৬ই ডিসেম্বরেই চেম্বারে বসে আমার ফাঁসির আদেশ দিতে পারবেন। সে বিষয়ে আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন ১১ মাস সময় নিলো আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে। আমাকে সাত মাস পরে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অভিযোগ আনার আগেই আমাকে ১১ মাস জেল খাটানো হয়েছে। এতে কি সময়ক্ষেপণ হয়নি? এখন আমার হাত-পা বেঁেধ পানিতে ছেড়ে দিয়ে বলা হচ্ছে সাঁতার কাটতে। শুনানি সংক্ষিপ্ত করতে বারবার তাগাদা দিলে ট্রাইব্যুনালকে সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, কথা দিচ্ছি ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম বিচার আপনি করতে পারবেন। চেম্বারে বসেও আমার ফাঁসির আদেশ দিতে পারবেন। আমি আপনাকে সহায়তা করবো। আমার বাবাকে ৫৪ বছর বয়সে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়েছিল। আমাকে তো মহান আল্লাহ ৬৩ বছর পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন। যা খুশি রায় দিতে পারেন। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে বাংলাদেশের আর কোন নাগরিকের আমার মতো ভাগ্য বরণ করতে না হয় সেজন্য আমি এই আবেদনটি আদালতের কাছে পেশ করেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ডিসিসি ভাগ করা হয়েছে। দেশে তো কোন ইস্যু নেই। চালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এটা কোন ইস্যু নয়। ইস্যু হলো যুদ্ধাপরাধ। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চেয়ে তো এই মামলা সেনসেটিভ নয়। সেটিও কিন্তু পাবলিক ট্রায়াল ছিল। এটি কি ক্যামেরা ট্রায়াল হচ্ছে? আইন বলছে এটি পাবলিক ট্রায়াল আর এখানে যেসব বিধি-নিষেধ দেখছি তাতে মনে হয় এটি ক্যামেরা ট্রায়াল। হাইকোর্টে আপনারা বসেন, সেখানে কি আপনারা আইন করেছেন যে, এখানে কেউ ঢুকতে পারবে না? হয় সংবিধান আইনের ঊর্ধ্বে না হয় আপনার আইন সংবিধানের ঊর্ধ্বে। তিনি বলেন, আপনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক। আপনি যদি সংবিধান রক্ষা না করেন তো কে রক্ষা করবে? দেশের মানুষই বা কোথায় যাবে? আমি ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে। তিনি আমাকে কিছু লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিছু মৌখিকভাবে, কিছু শিখিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? তারা যে গুম হয়ে যাচ্ছে। তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন আপনারা। তিনি বলেন, বিচারপতি জ্যাকসন বলেছেন- বিচারকরা শুধু টাকা-পয়সার জন্য দুর্নীতি করেন না। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আনুগত্যের জন্যও তারা দুর্নীতি করেন। আদালতে তার হাসি-তামাশার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, স্যার, উপহাস করতে গেলে অনেক সময় ঠাট্টার মতো মনে হয়। ক্ষমা করবেন। ভাল কথা একটু কম শোনা যায়। আসলে কমেডি অব এরর-এ আমি তো জীবনের জন্য লড়ছি (আই অ্যাম ফাইটিং ফর লাইফ)। আপনারা তিনজন বিচারকই আমার শ্রদ্ধাভাজন। আপনারা আমার উত্থাপিত পয়েন্টগুলো আশা করছি বিচারকের মন নিয়েই অনুধাবন করবেন। কারণ এখানে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শেকড় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক হলে আইসিসিপিআর ও ডমিস্টিক হলে সাক্ষ্য আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রয়োগ করুন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, ১৯৭৩-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের যে সংশোধনী ২০০৯ সালে আনা হয়েছে সেটি একটি অবৈধ সন্তান। এই সংশোধনীর নাম দেয়া উচিত ছিল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির সংশোধনী। তিনি বলেন, ’৭৩-এর ট্রাইব্যুনাল আইন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য করা হয়েছিল। ওই আইনে সশস্ত্র বাহিনী, এর সহায়ক বাহিনীসহ চার ধরনের লোকের বিচারের কথা ছিল। তার কোন একটির সঙ্গেও আমার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আইনটি সংশোধন করে ‘ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গ’ শব্দ যোগ করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। যারা ’৭১-এর পরে জন্ম গ্রহণ করেছে তাদেরও এখন এই আইনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা যাবে। তা থেকে রেহাই পেতে হলে আইসিটির ছাড়পত্র পকেটে নিয়ে ঘুরতে হবে। আবার গত ৩রা জুলাই সংবিধানের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাতে ২০০৯ সালে জন্ম দেয়া অবৈধ সংশোধনীকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তিনি সংবিধানকে উপরে তুলে ধরে বলেন, সব কিছুর উপরে সংবিধান। তার নিচে আইন এবং তার নিচে রুল। অথচ একটি বছর আমি জেল খেটেছি। সংবিধান, আইন, বিধি লঙ্ঘন করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ট্রাইব্যুনাল গঠনে আইনের সংশোধনী আনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা যেন বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তারের পর কিছু পত্রিকার উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর আমাকে গ্রেপ্তারের পর হিন্দুস্থান মার্কা কয়েকটি পত্রিকার হেডলাইন ছিল, ‘বিজয় দিবসের উপহার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার’। এবারের ১৬ই ডিসেম্বর হিন্দুস্থান মার্কা পত্রিকার হেডলাইন হবে ‘বিজয় দিবসের উপহার সালাহউদ্দিন কাদেরের বিচার’। এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাড়াতাড়ি করুন, সময় নেই। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সময় আমাকে দিয়েছেন সেটাই আমার সময়। আপনি তা থেকে কমাতে পারবেন না। আপনি ধৈর্যহারা হবেন না। আপনার সময় আমি শর্ট করে দেবো। ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই তো শর্ট? সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আমি এত শর্ট করবো যে আপনি ক্ষেপে যাবেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাড়াতাড়ি করুন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, এটা আমার সন্তুষ্টি নয়। এটা ১৫ কোটি মানুষের সন্তুষ্টি। আমার সন্তুষ্টির তো তেরটা বাজিয়ে দিয়েছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ৪৭-এর দেশ ভাগের সময় জমিদাররা চলে গেলেন দেশ ছেড়ে। রয়ে গেলেন দাশবাবুরা (প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত)। আমাদের অবস্থাও দাশবাবুদের মতো। দেশের বাইরে আর কোথাও যাবার নেই। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কথা নেই বার্তা নেই বাড়ির দারোয়ান এসে বাড়ির মালিককে বের করে দেবে এটা কেমন কথা। এজন্য সংবিধানের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সংশোধন করেছেন। গোপালগঞ্জের মেয়ে শেখ হাসিনা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির মানুষ। ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেল খেটেছেন তো। তাই অভিজ্ঞতা আছে। তারা আমাদের সবাইকে খোয়াড়ে রেখেছিল। তখন সেনাবাহিনী পিছনে বসে অন্যকে দিয়ে ক্ষমতা ব্যবহার করেছে। অবৈধভাবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী পরে সংবিধান সংশোধন করেছেন। কিন্তু সেখানে ‘সেনাবাহিনী’ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। বরং ‘অসাংবিধানিকভাবে’ শব্দটি ব্যবহার করেই মূল উদ্দেশ্য রক্ষা করা হয়েছে। এ সময় জিয়াদ আল মালুম ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের আমাদের সেনাবাহিনীকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, আমি এরকম বলে থাকলে দুঃখিত। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আপনারা আমার আবেদন সরাসরি খারিজ করতে পারেন। সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু সরাসরি খারিজ করলে আমার মনে হয় তা প্রশংসনীয় না-ও হতে পারে। বিরতির পর সালাহউদ্দিন কাদের বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে বাদীপক্ষ এবং বিচারকদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তিনি সাতটি শর্ত দিয়ে বলেন, স্টিফেন জে র্যাপ যে সুপারিশ দিয়েছিলেন তা থেকেই এগুলো উপস্থাপন করলাম। এগুলো বাস্তবায়ন না করলে বুঝবো আপনারা আমাকে বিচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চাইছেন। এগুলো আমার একার দাবি নয়। এগুলো ১৫ কোটি মানুষের দাবি। এ দাবি বিশ্ব সমপ্রদায়েরও। এর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি বিচার কার্যক্রমে অংশ নেবো না। আমাকে জোর করে আনতে পারবেন কিন্তু আমি নিজে থেকে আসবো না। ট্রাইব্যুনালে আংশ নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, হবে না? তিনি বলেন, না, হবে না। আপনি আমাকে চেম্বারে বসে ফাঁসির আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু এ সবের বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি শুনানিতে অংশ নেবো না। এর পরে ট্রাইব্যুনাল জিয়াদ আল মালুমকে বলেন, আমরা অতিরিক্ত কথা শুনতে চাই না। চৌধুরী সাহেব এই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে, এই ট্রাইব্যুনালের গঠন এবং এখানে সুপ্রিম কোর্টের দু’জন বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধান লঙ্ঘন বিষয়ক বেশ কিছু স্পষ্ট অভিযোগ এনেছেন। এ বিষয়ে আপনি নির্দিষ্ট করে বক্তব্য দিন। এ সময় জিয়াদ আল মালুম যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ টেনে আনলে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকই তাকে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিতে বলেন। একপর্যায়ে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিচারপতি তাকে যুক্তি খণ্ডনের পয়েন্ট নির্দিষ্ট করে দেন। জবাবে সালাহউদ্দিন কাদেরের সাংবিধানিক পয়েন্টের দিকে না গিয়ে জিয়াদ আল মালুম বলেন, সাংবিধানিক কোন বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ার এ ট্রাইব্যুনালের নেই। এ সময় জিয়াদ আল মালুম বলেন, এখানে মিডিয়া আছে তাদের জানা দরকার। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, মিডিয়া দেখে নয় আইন দেখেই রায় হবে। পরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম স্থগিত ও আসামির অনুপস্থিতিতে অভিযোগ আমলে নেয়ার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের রায় দেয়ার ব্যাপারে আগামী ৫ই ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
‘আপনারা চাইলে চেম্বারে বসেই আমার ফাঁসির আদেশ দিতে পারেন’
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!
হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ



ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন
মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।